মাওলানা হাবিবুস সুবহানী রহ.-এর কথা খুব বেশি মনে পড়ে। এক অসম বয়সী বন্ধুর চিরপ্রস্থানে আমি মাঝেমধ্যে নিজেকে চরম নিঃসঙ্গ ভাবি। অভিজ্ঞতায় ভরপুর এই মানুষটিকে নিয়ে যখনই অভিজ্ঞতা বিনিময় করতাম তখনই বিমুগ্ধ হয়ে যেতাম। দেশ-বিদেশের হাজারও অভিজ্ঞতার কথা আমাকে শোনাতেন তিনি। মন্ত্রমুগ্ধের মতো আমি তার সে সব কথা শুনতাম। আজ তিনি নেই- আল্লাহ তা‘আলা তার রুহের মাগফিরাত করুন- কিন্তু তার বলা একটা ঘটনা বেশ মনে পড়ে আমার। তিনি সম্ভবত কোনো পত্রিকায় পড়েছিলেন বা সাংবাদিকের মুখে শুনেছিলেন ঘটনাটি।
ঢাকা ভার্সিটির এক ছাত্রীর অভিভাবক। ছাত্রীদের পার্কে বা ভার্সিটির বিভিন্ন স্থানে ছেলে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দেয়া কতটুকু ঠিক? এই প্রশ্নে তিনি প্রশ্নকারীর প্রতি চরম ক্ষুদ্ধ হয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘আমার মেয়ে যখন উপযুক্ত বয়সে উপনীত হবে, ভালোমন্দ পার্থক্য করার জ্ঞান অর্জন করবে তখন সে যা ইচ্ছা তাই করবে। আর এটাও এক ধরনের অভিজ্ঞতা। আমার মেয়ে কি তবে অভিজ্ঞতাশূন্য থাকবে!
জবাব শোনার পর প্রশ্নকারী ভদ্রলোক আর কথা বাড়াননি। কথাটা একজন বাঙালী মুসলিমের মুখে উচ্চারিত হলেও আসলে কথাটা তরঙ্গমালায় ভেসে এসেছে আরও পূর্বদিক থেকে। বিত্তে উন্নত মালয়শিয়ার কথাই ধরুন। বিশ্বে অর্থনীতিতে এই দেশটি একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই এবং দেশটি অন্যতম মুসলিমরাষ্ট্র হিসেবেও পরিচিত। মালয়েশিয়ায় সফরকারী এক লোকের মুখে শুনেছি ঠিক এধরনের কথা! তিনি একবার তার পরিচিত এক মালয় মুসলিমের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, এই যে তোমাদের মুসলিম ছেলেরা খিস্ট্রান মেয়েদের সাথে এবং মুসলিম মেয়েরা অমুসলিম ছেলেদের সাথে মেলামেশা করে, কখনও তাদেরকে বাড়িতে নিয়ে এসে এক সাথে রাত যাপন করে কখনও আবার তাদের বাড়িতে গিয়ে রাত যাপন করে- এতে তোমরা আপত্তি করো না?
তার কথায় মালয় লোকটি খুব সরলভাবে বলেছিলেন- ‘নাহ্। আল্লাহ তা‘আলা ওদেরকে বিবেক দিয়েছেন, জ্ঞান দিয়েছেন সেই বিবেক ও জ্ঞান তাদের পথপ্রদর্শক। এ অনুযায়ী ওরা যদি কোনোকিছুকে ভালো মনে করে তবে তা করবে! এতে আমরা আপত্তি করব কেন?’
#মালয়েশিয়া আর #বাংলাদেশ উভয়টি মুসলিম রাষ্ট্র হলেও উভয় দেশের মধ্যে ধর্ম পালনের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। বাংলাদেশ অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ দেশ হিসেবে সারাবিশ্বে সমধিক পরিচিত। মালয়েশিয়া কিন্তু তা নয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এখানেই যে, আমরা ক্রমেই নিজেদের ধর্মীয় স্বকীয়তা ও কঠোর পর্দাপালনের সুনাম থেকে ‘ফিরে আসা অসম্ভব দূরত্বে’ সরে যেতে শুরু করেছি এবং আমাদের এই যাত্রা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে।
তারই ফলাফল এই যে, একজন পিতা তার কন্যাকে পার্ক বা বাগানের আড়ালে, ঝোঁপঝাড়ে আড্ডা দেয়া, মাখামাখি ও ঢলাঢলি করাকেও খারাপ নজরে দেখছেন না। এগুলো তাদের বিবেকের পরাকাষ্ঠায় ছেড়ে দিচ্ছেন এবং উন্নতি ও প্রগতির ধারক বলে জ্ঞান করছেন। কিন্তু পারিবারিক এই শিথিলতা কি মানুষকে স্বস্তিতে থাকতে দিচ্ছে? হাজারও কলঙ্কজনক ঘটনা কি এই পারিবারিক শিথিলতার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে না? কত ঘটনা আর কত উদাহরণ পেশ করতে হবে মানুষকে জাগ্রত করতে? মানুষের এই কাঁচাবুদ্ধির জন্য? নিচের ঘটনাটা দেখুন :
ঢাকা সিটি কলেজের মেধাবী ছাত্রী শামীমা নাসরিন সুইটি (২১)। বিবিএ মার্কেটিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এই মেধাবী ছাত্রী সংসার জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এবং বাবা মায়ের মুখ উজ্জ্বল করার পথে সুন্দর পদক্ষেপে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু পারিবারিক শিথিলতা আর শাসনের দৈন্যতা তাকে বেশি দূর অগ্রসর হতে দিল না। ভাগ্নের (বড় বোনের ছেলে) সাথে প্রেমে জড়িয়ে পড়ে একুশটি বছরের তিলে তিলে গড়ে ওঠা সাধনা নিমিষেই আর অতি নিষ্ঠুরভাবে নিঃশেষ হয়ে গেল। ভাগ্নের সাথে সুইটি অনেকদিন ধরেই এধরনের সম্পর্ক স্থাপন করে এসেছিলেন।
পরিবারের লোকেরাও তা জানতেন। সুইটির বড়বোন জানান, ‘তাদের মধ্যে অনেক দিন ধরেই সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সম্পর্কে ভাগ্নে-খালা হওয়ায় আমরা এটাকে খারাপ চোখে দেখি নি। তারা প্রায়ই ঘুরতে যেতো, ভাগ্নে এসে এখানে দুইতিন দিন করে থাকত, কখনও সুইটি ভাগ্নের বাসায় গিয়ে কয়েকদিন ধরে থাকত। কিন্তু আমরা ওই এক কারণে তাদেরকে বাধা দিইনি এবং এটাকে খারাপও মনে করিনি।’
কিন্তু তাদের এই মনে না করা এবং খারাপ না জানার ফল মোটেও শুভ হয়নি। শরীয়ত যেটাকে খারাপ বলতে বলেছে এবং ‘কিছু মনে করতে’ বলেছে সেটাকে খারাপ না জানলে এবং কিছু মনে না করলে বিপর্যয় আবশ্যক সেটা যেন নতুন করে জানলেন সুইটির পরিবার। কথিত ভাগ্নে খালাকে আগের মতোই বেড়াতে নিয়ে গেল নিজ বাড়ি নিকুঞ্জে। বাবা মাকে বলে এবং তাদের দু‘আ নিয়েই সুইটি ‘ভাগ্নের’ সাথে চললেন তাদের বাড়িতে।
বাড়ি থেকে বের হওয়ার আজ দুদিন হয় কিন্তু সুইটির কোনো খবর বা যোগাযোগ নেই। একদিন বাসা থেকে তার নাম্বারে ফোন দেয়া হলো। ফোন রিসিভ করে ‘মেয়েটি’ বলল, আমি ভালো আছি। সমস্যা নেই। এইতো বাসায় আসব। কথাগুলো খুব দ্রুত বলে ফোন রেখে দিল ‘সুইটি’। এরপর আরও কয়েকবার তার নাম্বারে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলো। কিন্তু এর পরে আর ফোনটি খোলা পাওয়া গেল না। অবশেষে নিকুঞ্জের সেই বাসায় এসে দেখা গেল এক বীভৎস দৃশ্য। দুইদিন যাবত সুইটি তার ভাগ্নের ঘরে #লাশ হয়ে পড়ে আছেন। লাশ পঁচতেও শুরু করেছে। ঘরের সবাই পলাতক। সেই ভাগ্নেও নিখোঁজ। তথ্য নিয়ে জানা গেল যে মেয়ে ফোন ধরে নিজেকে বলে সুইটি পরিচয় দিয়েছিল সে ছিল ভাগ্নের ভাড়াটে লোক। তাকে সুইটির অভিনয় করে কথা বলতে বলা হয়েছিল। [তথ্যসূত্র : দৈনিক আমার দেশ ২৪/০৯/২০১১ ইং]
একটা মুসলিম পরিবারের লোকেরা কী করে পারল ঘুণে ধরা এই সমাজে কেবলই দূরতম খালা-ভাগ্নের সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে নিজেদের মেয়েকে এভাবে ছেড়ে দিতে? আমাদের চারিত্রিক উৎকর্ষ কি এতই মজবুত ও সুদৃঢ় যে, ক্ষীণ সুতার ওপর টাঙানো এই একটিমাত্র পরিচয়ই আমাদের যুবকদেরকে নিবৃত রাখবে? পাপের যেখানে এত আনাগোনা সেখানে এই আত্মতৃপ্তি কিন্তু মোটেই শুভ লক্ষণ নয়। কখনও কখনও আত্মতৃপ্তি ধ্বংস আর বরবাদীর বার্তা নিয়ে আসে সে কথাও মনে রাখতে হবে।
আপনি পড়ছেনঃ মুক্তবাসিনী-২ বই থেকে।
The post মুক্তবিহঙ্গ | ভাগ্নের সাথে প্রেম করে লাশ হলে তরুণী appeared first on Amar Bangla Post.