আর্টিকেলের বর্ণনাঃ বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হওয়ার কারণ, বিকলাঙ্গ শিশু জন্মানোর প্রবণতা কখন বেশি, কী ধরণের বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হতে পারে, রোগনির্ণয়, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ইত্যাদি।
প্রত্যেক গর্ভবতী একটি শারীরিক ও মানসিক সুস্থ সবল শিশু কামনা করে। বড় ধরনের ক্রটি বিচ্যুতি নিয়ে জন্মানো একটি শিশু শুধু পিতা-মাতা ও পরিবারের কাছেই নয়, সমাজের ও দেশের কাছেও বোঝাস্বরূপ।
প্রায় দু’শতাংশ ক্ষেত্রে জন্মগত ক্রটি (Congenital anomale) নিয়ে শিশুর জন্ম হতে দেখা যায়। প্রতি ৫০০ জন ভূমিষ্ঠ শিশুর মধ্যে একজনের বড় ধরনের জন্মগত ক্রটি দেখা যায়। এই বিকালাঙ্গ অবস্থার জন্য বহু শিশু মৃত অবস্থায় জন্মায়। যে সমস্ত বিকলাঙ্গ শিশু জন্মায় তাঁর প্রায় ৫০ শতাংশের ক্রটি স্নায়ুতন্ত্র ঘটিত।

বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হওয়ার কারণ
মুখ্যত দুটিঃ
- প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে জিনগত কারণে এটা হয় এবং
- ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে কারণ হল পারিপার্শ্বিক পরিবেশ।
জেনেটিক কারণ
জেনেটিক কারণের মধ্যে ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে একটিমাত্র জিনের ক্রটির জন্য হয়, সেখানে ডিম্বাণু বা শুক্রাণুর মধ্যের জিনের মাধ্যমে এই ক্রটি উত্তরাধিকার সূত্রে (lnherited) সন্তান লাভ করে। একটিমাত্র জিনের ক্রটি অটোজোমের অথবা এক্স-সংযুক্ত (X-linked) জিনের হতে পারে।
এই ক্রটিসম্পন্ন শিশুর উদাহরণ হলঃ
- গ্যালাক্টোসোমিয়া
- হিমোফিলিয়া
- গ্লুকোজ-৬ পিডি ডেফিসিয়েন্সি (Glucose 6 P.D. deficiency) ।
৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ক্রোমোজোমের ক্রটির জন্য যে বিকালাঙ্গ শিশুর জন্ম হয়, তাঁর উদাহরণ হলঃ
- ট্রাইজোমি-২১ (ডাউনস সিনড্রোম),
- ট্রাইজোমি-১৮ (এডওয়ার্ড সিনড্রোম) ও
- টারনারস সিনড্রোম।
৬৫ শতাংশ ক্ষেত্রে একাধিক জিনের ক্রটির জন্য বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হয়। সম্ভবত এটা জিনের ক্রটির সঙ্গে পরিবর্তিত পরিবেশের জন্য হয়। এর উদাহরণ হলঃ
- নিউরাল টিউব ডিফেক্ট,
- জন্মগত হার্টের ক্রটি,
- ক্লাব ফুট (Club foot) ও,
- ক্লেফ্ট প্যালেট এবং ক্লেফ্ট লিপ।
পারিপার্শ্বিক কারণ
ভেষজ পদার্থের প্রভাব, সংক্রমণ, বিকিরণজনিত কারণ, মদ ও তামাকের প্রভাব, অক্সিজেনের অভাব ইত্যাদির জন্য গর্ভস্থ শিশুর জন্মগত ক্রটি হতে পারে।
বিকলাঙ্গ শিশু জন্মানোর প্রবণতা কখন বেশি
- মায়ের বয়সঃ বেশি বয়সে (৩৫ বছরের বেশি) সন্তান ধারণ করলে প্রায় ১ শতাংশ ক্ষেত্রে ডাউনস সিনড্রোম ধরণের বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হতে পারে। আবার অল্প বয়সে সন্তানধারণ করলেও শিশুর জন্মগত ক্রটি-বিচ্যুতির প্রবণতা বেশি।
- গর্ভাবস্থায় মায়ের পুষ্টিঃ মায়ের অপুষ্টির কারনেও বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় মায়ের সংক্রমণঃ মায়ের রুবেলা নামক সংক্রমণ হলে জন্মগত ক্রটি নিয়ে শিশু জন্মাতে পারে।
- বিকিরণজনিত কারণঃ গর্ভাবস্থায় বিকিরণজনিত কারণে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হতে পারে। হিরোসিমা ও নাগাসাকিতে হাইড্রোজেন বোমার বিকিরণের কারণে বহু বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হয়েছিল।
কি ধরণের বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হতে পারে
মাথা ও স্নায়ুতন্ত্রের ক্রটি
- Anencephaly—এক্ষেত্রে মাথার খুলির ওপরের অংশ বিকশিত থাকে না।
- Hydrocephaly—এক্ষেত্রে মাথা খুব বড় হয়।
- Microcephaly—যেখানে মাথা খুব ছোট হয়।
- Meningocele—স্নায়ুতন্ত্রের আব।
- Spina bifida—এক্ষেত্রে Spine—এর সঠিক Fusion হয়নি (জোড়া লাগেনি)।
মুখ
- Hare lip—ঠোঁটের অসম্পূর্ণ বিকাশ।
- Cleft palate—তালুর অসম্পূর্ণ বিকাশ।
হার্ট
- জন্মগত হার্টের রোগ।
অন্ত্র
- Oesophagial atresia, Pyloric, Umbilical hernia, মলদ্বার বন্ধ থাকা ইত্যাদি।
অঙ্গপ্রত্যঙ্গ
- Telepcs, ছোট হাত ও পা (Phocomelia), হাতে অতিরিক্ত আঙ্গুল।
রোগ নির্ণয়
একটি জন্মগত ক্রটিসম্পন্ন শিশুর জন্ম হলে পরবর্তীকালে জন্মগত ক্রটি নিয়ে শিশু জন্মানোর বিপদ প্রায় ৬ গুণ বেড়ে যায়। পরপর দুটি বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হলে পরবর্তীকালে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে বিকলাঙ্গ শিশু জন্মানোর সম্ভাবনা থাকে। এ ব্যাপারে পিতা-মাতাকে সম্পূর্ণ সচেতন করে দেওয়া উচিৎ।
যে-সমস্ত ক্ষেত্রে বাছাই করা দরকার তা হলঃ
- মায়ের বয়স যখন ৩৫ বছরের বেশি।
- যেখানে পরিবারে কারো বিকলাঙ্গ শিশু জন্মানোর ইতিহাস থাকে।
- যখন পূর্বের শিশু স্নায়বিক বিকলাঙ্গ অবস্থায় নিয়ে জন্মায়।
- যেখানে একটি মানসিক প্রতিবন্ধী শিশু পূর্বেই হয়েছে।
- যখন বারে বারে গর্ভপাতের ঘটনা ঘটে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
গর্ভাবস্থায় যত শীঘ্র সম্ভব জন্মগত ক্রটির জন্য পরীক্ষা করা উচিৎ। গর্ভের শিশু বিকলাঙ্গ হলে গর্ভপাত করানোর প্রয়োজন হয়। যে-সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করা হয়, তা হল এইরকম—
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে
- Amniocentesis—এক্ষেত্রে গর্ভস্থ জরায়ুর মধ্যে যে জল থাকে (Amniotic fluid) তাঁর একটু বের করে পরীক্ষা করা।
- অ্যামনিয়টিক ফ্লুইডের আলফা ফিটো প্রোটিনের মাত্রা (Alfa feto protein) নির্ণয়।
- আলট্রাসোনোগ্রাফি—গর্ভের ১৬ থেকে ২০ সপ্তাহের মধ্যে এটা করা উচিৎ, যাতে গর্ভস্থ শিশুর কোনো বড় ধরণের ক্রটি ধরা পড়লে সহজেই গর্ভপাত করানো যায়।
এছাড়াও *Fetoscopy *Chorionvillius biopsy * Cordocentesis প্রভৃতি পরীক্ষা করে জন্মগত ক্রটি ধরা যায়।
গর্ভাবস্থার শেষ দিকে
এক্স-রে করে শিশুর হাড় ও স্নায়ুতন্ত্রের বড় ধরণের ক্রটি, যেমন Anencephaly, Hydrocephalus, Spinabifida, Meningcele ইত্যাদি রোগ নির্ণয় করা যায়।
Amniography করে Gastrointestinal, Tracheoesophagial fistula ধরা যায়। Fetograpy, Sonography করে বিকলাঙ্গ শিশুর অবস্থিতি বোঝা যায়।
লেখকঃ ডাঃ অবিনাশ চন্দ্র রায়
বইয়ের নামঃ গর্ভবতী মা ও সন্তান
স্বাস্থ্য সচেতনতায় আপনিও ভূমিকা রাখুন। এই আর্টিকেলটি আপনার বন্ধুদেরকে পড়াতে ফেসবুক সহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে অন্যদেরকে পড়তে সাহায্য করুণ।
The post বিকলাঙ্গ শিশু জন্ম হওয়ার কারণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা appeared first on Amar Bangla Post.