চীনদেশে ছিল এক গরীব দরজি। তাঁর ছেলের নাম আলাদিন। আলাদিন একদিন বড় হবে। লেখাপড়া শিখে পন্ডিত হবে। বাবা-মায়ের আর কোনো দুঃখই থাকবে না—এই ছিল দরজির আশা।
কিন্তু আলাদিন অন্য রকম ছেলে লেখাপড়ায় তাঁর মন নেই। সারাদিন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে হইচই করে ঘুরে বেড়ায় আড্ডা মারে, কাজ করে না। আলাদিনের বয়স তখন পনের বছর। এই সময় তাঁর বাবার হল এক কঠিন অসুখ। ছেলের জন্য এক বুক দুঃখ নিয়ে গরীব দরজি বেচারা মারা গেল। সংসার চালায় তখন আলাদিনের মা।
একদিন আলাদিন ঘুরতে ঘুরতে দেখা পেল এক বুড়ো দরবেশের।
‘এই ছেলে, তোমার নামই তো আলাদিন । তোমার বাবা ছিল এক দরজি।’
আলাদিন শুনে অবাক!
‘আমি তোমার বাবার ভাই। সে প্রায় অনেক আগের কথা। ত্রিশ বছর আগে রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম আমি। চল, তোমাদের বাড়ি যাব এখন।’
পথে যেতে যেতে বুড়ো শুনল আলাদিনের বাবা বেঁচে নেই। শুনেই হাউ মাউ করে সে কী কান্না বুড়োর! বুড়ো বাড়িতে এসে আলাদিনের দশটা সোনার মোহর দিল। আলাদিনের মা তো ভারী খুশি। যাক, তিনি এখন আর একা নন।
বুড়ো দরবেশ দুদিন থাকল আলাদিনের বাড়িতে। দেখল, আলাদিনরা খুব কষ্টে থাকে। বুড়ো আলাদিনের মাকে বলল, ছেলেটিকে নিয়ে আর কোন চিন্তার কারণ নেই। ওকে সঙ্গে নিয়ে তিনি শহরে যাবেন। শহরে তাঁর কাপড়ের দোকান আছে। আলাদিন এখন থেকে সেই ব্যবসা দেখাশোনা করবে।
একদিন ভোরে আলাদিনকে সঙ্গে নিয়ে রওনা দিল দরবেশ। হাঁটতে হাঁটতে পথ আর ফুরোয় না ওদের। শহর পেরিয়ে ওরা চলল এক বনের দিকে। ঘন বন। বন পেরিয়ে ওরা এল পাহাড়ের ধারে। আলাদিনের একটু বিশ্রাম করতে বলে বুড়ো পকেট থেকে বের করল একটা কৌটা। চকমকি পাথর বের করে জালালো আগুন। ধোঁয়ার কুন্ডলি ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। জ্বলে উঠল বিশাল পাহাড়টা। তারপরই পাহাড় ফেটে তৈরি হল এক গভীর গর্ত!
বুড়ো বলল, ‘আলাদিন, গর্তের মধ্যে কী আছে দেখ।’
আলাদিন তাকিয়ে বলল, ‘দুটো পেতলের ধামা।’
বুড়ো বলল, ‘গর্তে নেমে ধামা দুটো সরিয়ে ফেল। দেখবে নিচে রয়েছে অনেক ধনরত্ন। যা পাব ভাগ করে নেব আমরা দুজনে।
‘আমার নাম বলা নিষেধ। জাদু গণনা করে দেখেছি—এই ধনরত্ন একমাত্র তুমিই উদ্ধার করতে পার।
আলাদিন গর্তে নেমে গেল এক লাফে। বুড়ো উপর থেকে বলতে লাগল, ‘সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে থাক। পর পর তিনটে ঘর দেখতে পাবে। প্রথম ঘরে আছে তামার পাত্রে গলানো সোনা, দ্বিতীয় ঘরে রুপোর পাত্রে গুঁড়ো সোনা আর শেষ ঘরে সোনার পাত্রে সোনার মোহর। তারপর হাঁটা ধরবে। বাগান পেরিয়ে দেখতে পাবে একটা ঘর। ঘরের মধ্যে মিটিমিটি জ্বলছে একটা প্রদীপ।
প্রদীপটা নিয়ে এসে আমাকে দেবে।
বুড়ো দরবেশ একটা আংটি দিল আলাদিনকে।
নিশ্চিন্ত মনে আলাদিন নেমে গেল গভীর গর্তে। যে-ভাবে যাওয়ার কথা ছিল সে-ভাবেই ফিরে এল সে। বুড়ো ব্যস্ত হয়ে উঠল, ‘দাও, প্রদীপটা আমাকে দাও।’ আলাদিন বলল, ‘আগে উঠে নিই: তাঁরপর দিচ্ছি।’ ‘না—’ বলে চিৎকার করে উঠল বুড়ো। ‘শিগরি দে—’ বলতে বলতে চেহারা পাল্টে গেল বুড়োর। ‘আমি তোর কেউ নই। তুই-ই প্রদীপটা আনতে পারবি বলে এই ছলনা। তোকে আমি নিয়ে এসেছি। জলদি দে।’ বলতে বলতে বুড়ো আলাদিনের হাতে থাবা মারল। ধাক্কা সামলাতে না পেরে আলাদিন হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল গর্তের মধ্যে। বুড়ো হায় হায় করে উঠল। ‘আমাকে ফাঁকি দেয়া অত সহজ নয় হারামজাদা—’বলে বুড়ো পাথরের চাইটা দিয় গর্তের মুখ বন্ধ করে দিল। আবার সে মন্ত্র পড়ে পাহাড়ের ফাটল দিল বন্ধ করে। আলাদিনের সন্ধিৎ ফিরল কিছুক্ষণ পর। ধাক্কাধাক্কি, চিৎকার, চেঁচামেচি করল অনেকক্ষণ। তারপর সে মাথায় হাত দিয়ে বসে রইল চুপচাপ। আনমনে হাতের আংটিটা প্রদীপের সঙ্গে দু-একবার ঘষা লাগতেই একটা দৈত্য এসে হাজির হল সামনে।
‘আমি আংটির দাস। হুকুম করুণ।’
আলাদিন ভয়ে ভয়ে বলল,
‘আমি খোলা আকাশের নিচে যেতে চাই।’ মুহূর্তে আলাদিন টের পেল, সে গুহার বাইরে। মনের দুঃখে ক্লান্ত শ্রান্ত আলাদিন বাড়ি ফিরে এল। মাকে খুলে বলল সব। শুনে মা ভারি অবাক। প্রদীপটা নেড়েচেড়ে দেখল মা। আলাদিনকে বলল, ‘ঘরে এখন একটিও পয়সা নেই। যা প্রদীপটা বেঁচে কিছু নেয়ে আয়।’ ময়লা প্রদীপটা সাফ-সুতরো করতে বসল আলাদিন। অনমি এসে হাজির হল এক বিশাল দৈত্য।
‘আমি প্রদীপের দৈত্য। হুকুম করুণ।’
আলাদিন সাহস নিয়ে বলল, ‘কিছু খাবার চাই।’
অমনি সোনার থালায় রকমারি খাবার এসে হাজির। মা অবাক! সাতদিনেও সে খাবার খেয়ে শেষ করা যায় না। সোনার থালা বিক্রি করেও পয়সা আসতে লাগল। কিছুদিন পর পর আংটি ঘষলেই দৈত্য এসে হাজির হয়। সোনার থালায় নিয়ে আসে সোনার খাবার। অবস্থা ফিরে গেল আলাদিনের। সুখেই দিন কাটছে মা-ছেলের।
একদিন বন্ধুর দোকানে বসে #গল্প করছে আলাদিন। সুলতানের মেয়ে বুদুর। সে যাচ্ছিল #গোসল করতে। সঙ্গে রয়েছে পাইক-বরকন্দাজ; তফাৎ যাও, তফাৎ যাও—’
আলাদিন লুকিয়ে দেখে নিল রাজকন্যাকে। মন হরণ হয়ে গেল তাঁর। রাজকন্যার কথা ভেবে ভেবে সে অস্থির! ঘরে সে চুপচাপ বিছানায় শুয়ে থাকে। শেষে মাকে বলল, রাজকন্যেকে বিয়ে করবে সে। দরজির ছেলের সঙ্গে রাজকুমারীর বিয়ে? এ-ও কি সম্ভব? কিন্তু আলাদিন নাছোড়। ধনরত্নের অভাব নেই তাঁর। সুলতানকে সে বিপুল ঐশ্বর্যের ভেট পাঠাল। সুলতান তো মহাখুশি। তিনি রাজি। কিন্তু ধূর্ত উজির বললেন,
‘না, তিনমাস পর এর দশগুণ ভেট পাঠাতে হবে। ইতিমধ্যে ছেলের খোঁজ খবর নেয়া হবে।’
শুনে আলাদিন মহাখুশি। কিন্তু উজিরের মনে অন্য বুদ্ধি। সে রদাজকন্যাকে বিয়ে দেবে তাঁর ছেলের সঙ্গে। ছেলেটি ছিল যেমন হাবাগোবা দেখতে তেমনি কদাকার। একদিন সুযোগ বুঝে উজির সুলতানকে গিয়ে বলল, দুঃসংবাদ জাঁহাপনা। সেই আলাদিন নামের ছেলেটি বাণিজ্য করতে গিয়ে জাহাজ ডুবি জয়ে মারা গেছে।
সুলতান ভারি দুঃখ পেলেন। এই সুযোগে উজিরের ছেলের সঙ্গে বুদুরের বিয়েটা পাকা হুয়ে গেল। আলাদিনের কাছে খবর এল। প্রাণ কেঁপে উঠল আলাদিনের। তাড়াতাড়ি দশগুণ উপহার সামগ্রী পাঠাল সে সুলতানের দরবারে। কিন্তু হায়! উজিরের সেপাইরা দরজা থেকেই ফেরত পাঠাল আলাদিনের মাকে।
সেই রাতেই ঢোল-নাকাড়া বেজে উঠল। খানাপিনার ঢল বইল। ধুমধাম করে উজির পুত্রের সঙ্গে বিয়ে হল রাজকুমারীর।
চিন্তায় মায়ের কপালে ভাঁজ পড়ল। এখন যে কী করে বসবে আলাদিন? আলাদিন মাথা খাবার না করে অন্য কাজ করে বসল। প্রদীপের দৈত্যকে সে পাঠাল রাজপ্রাসাদে। বাসরঘর থেকে বর-কনেকে উঠিয়ে নিয়ে আসা হল। বরকে আটকে রাখল অন্ধকার চরকুঠুরিতে। সারারাত সে আলাপ করল কনের সঙ্গে। ভোর হওয়ার আগেই আবার তাঁকে ফেরত পাঠানো হল প্রাসাদে।
কে বিশ্বাস করবে এই কথা? বর-কনে দুজনেই চেপে গেল বিষয়টা। পরদিন আবার ঘটলা সেই একই ঘটনা। মেয়ে তখন কান্নাকাটি শুরু করল। রাজা-উজির ছেলেকে জিজ্ঞেস করে ঘটনা শুনলেন। তাঁদের তো শুনে মাথা খারাপ। উজিরের পুত্র বলল, ‘আমি এভাবে রাজার জামাই থাকতে চাই না। মুক্তি চাই আমি।
লোকে জেনে গেল, উজিরের পুত্রের সঙ্গে বিয়ে ভেঙ্গে গেছে রাজকন্যার। আলাদিনের তো আগেই জানা আছে সে খবর। তিন মাস পর আবার উপহারসামগ্রী পাঠানো হল রাজপ্রাসাদে। সুলতান মহাখুশী। আলাদিন মরেনি সে বেঁচে আছে। কিন্তু দুষ্টবুদ্ধি উজিরের। উপঢৌকন হিসেবে পাঠানোর জন্য সে বিশাল এক ফিরিস্তি দিল আলাদিনের মাকে। সব শুনে আলাদিনের মুখে মুচকি হাসি খেলে গেল। প্রদীপের দৈত্য হাতে থাকতে কোনও কিছুই অসম্ভব নয় বাহিদা মাফিক উপহার পেয়ে সুলতানের খুশি আর ধরে না।
মহা ধুমধামে বিয়ে হল তাঁদের। পেটপুরে খেল দেশের লোক। বিয়ে হল রাজকন্যার সঙ্গে আলাদিনের। সাত সাত চৌদ্দ দিন ধরে চলল উৎসব। বিয়ের উৎসব শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আলাদিন বলল, ‘আজই আমি কন্যাকে নিয়ে নতুন বাড়িতে উঠব।’
‘নতুন বাড়ি মানে? সুলতান শুধালেন।
‘আপনার প্রাসাদের সামনে খোলা মাঠে আমি বাড়ি বানাতে চাই।’
‘ঠিক আছে।’ সুলতান সায় দিলেন। সেই রাতেই আলাদিন প্রদীপ ঘষে দৈত্যকে বলল, ‘রাজপ্রাসাদের খোলা মাঠে চমৎকার একটা বাড়ি বানিয়ে দাও। যে-রকম বাড়ি সারা দেশেও নেই। কেউ চোখেও দেখেনি।’
যেই হুকুম সেই কাজ। সুলতান অবাক হলেন। আলাদিনের নামে জয়-জয়কার পড়ে গেল।
তারপর আর কী? সুখে-শান্তিতে দিন কাটতে লাগল আলাদিনের। জীবনে কত কষ্ট, কত দুঃখ সহ্য করেছে সে। গরিবের জ্বালা আর কে বুঝতে পারে। দুঃখীদের জন্য তাই আলাদিনের অন্য রকম মমতা গরিব-দুঃখীদের জন্য ছিল সে মুক্তহস্ত। তাঁর কাছে কেউ এসে খালি হাতে ফেরত যেত না দেশের লোকও সকালে-বিকালে আলাদিনের নাম মুখে নেয়।
মানুষের জীবনে সুখ কি নিরবিচ্ছন্নভাবে থাকে? থাকে না বলেই দিনের পরে আসে রাত। আলোর পরে আসে অন্ধকার। সুখের পর আসে দুঃখ।
সেই যে দরবেশ, তারও কম ছিল না জাদুকরি শক্তি!
একদিন সে গণনা করতে করতে আলাদিনের খবর বের করল। প্রদীপটা কোথায় আছে সেটাও জেনে গেল। আর দেরি নয়। ছুটল দরবেশ সুলতানের প্রাসাদে। এসে সে শুনল, আলাদিন গেছে শিকারে। আর প্রদীপটা আছে আলাদের শিয়রের তলায়। এই তো সুযোগ, চালাক দরবেশ ঝুলি হাতে ঘুরে বেড়াতে লাগল। আর বলতে লাগল, ‘প্রদীপ নেবেন গো প্রদীপ। পুরনো প্রদীপ বদলে নতুন প্রদীপ নেবেন গো কেউ!
রাজকন্যার কানে গেল সেই কথা। কেউ জানত না এই প্রদীপের কী গুণ! রাজকন্যা ভাবল, পুরনো প্রদীপ রেখে লাভ কি! পাল্টে নতুন প্রদীপ নিয়ে নিই একটা।
বুড়ো দরবেশ মহাখুশি। প্রদীপ ঘষতেই দৈত্য এসে হাজির—‘আমি প্রদীপের দাস। হুকুম করুণ।’
বুড়োর মুখে রসহ্যময় হাসি খেলে গেল।
‘আলাদিনের রাজপ্রাসাদটা নিয়ে চল গহীন বনে।’ সঙ্গে সঙ্গে হুকুম তামিল। সকালে সুলতান দেখলেন রাজপ্রাসাদ নেই। সামনে ধু ধু মাঠ। এ কী ব্যাপার! ‘শিগরি বন্দি করে নিয়ে এস আলাদিনকে।’ সুযোগ বুঝে উজির বলল, আলাদিন নিশ্চয়ই একটা ভন্ড জাদুকর, সবই ছিল তাঁর প্রতারণা। শিকারের তাবু থেকে বন্দি করে নিয়ে আসা হল আলাদিনকে। আলাদিন বুঝে ফেলল ব্যাপারটা কি! বুক তাঁর শুকিয়ে কাঠ। ভয়ে আতঙ্কে প্রায় মরো মরো অবস্থা তাঁর। সুলতান গম্ভীরভাবে বললেন, ‘জল্লাদ—ওর গর্দান কেটে নাও।’
কিন্তু এরকম অন্যায় হুকুমের প্রতিবাদ উঠল জনতার মধ্যে থেকে। কারণ দেশের মানুষ আলাদিনকে খুব ভালোবাসত। জ্বলে উঠল বিদ্রোহের আগুন। প্রাসাদ ঘেরাও করে রাখল জনতা। আলাদিনকে হত্যা করা চলবে না।
সুলরান উপায় খুঁজে না পেয়ে মুক্তি দিলেন আলাদিনকে। কিন্তু এক শর্তে। চল্লিশ দিনের মদ্যে খবর নিয়ে আসতে হবে রাজকন্যার। আলাদিন কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, ‘জাঁহাপনা রাজকন্যা কি শুধুই আপনার মেয়ে? সে কি আমাদের কেউ নয়?
রাজপ্রাসাদ থেকে বেরিয়ে পথে নেমে এল আলাদিন। মনের দুঃখে হতাশায় ক্ষোভে সে বিপর্যস্ত। দিন যায়। রাত যায়। পথে যাকে পায় তাকেই আলাদিন জিজ্ঞাসা করে, তোমরা কি এক বুড়ো দরবেশকে দেখেছ?
কোনও উত্তর পাওয়া যায় না কারও কাছ থেকে। তবুও ভেঙ্গে পরে না সে। ধৈর্য ধরে বুদ্ধি খোঁজে।
একদিন খিদেয় কাতর হয়ে এক নদীর ধারে বসে আলাদিন। দুঃখে গড়া তাঁর জীবনের কথা সে ভাবছে। রাজকন্যাকে ছেড়ে বেঁচে থেকে কি লাভ তাঁর? পরম হতাশায় দুহাত দিয়ে দুই গাল ঘষতে লাগল সে।
এমন সময় আচমকা হাজির হলো সেই আংটির দৈত্য।
‘হুকুম করুণ আমায়। আলাদিন চমকে উঠল। আংটির কথা সে ভুলেই গিয়েছিল এতদিন। আলাদিন সব দুঃখের কথা শোনাল তাঁকে। আলাদিনের কথায় যেন প্রাণও গলে যায়। কিন্তু দৈত্য জানাল,
‘প্রদীপের দৈত্য আমার ওস্তাদ, তাঁর বিরুদ্ধে আমার কিছুই করার নেই। তবে আমি তোমাকে তোমার প্রাসাদে পৌঁছে দিতে পারি।
মুহূর্তে আলাদিন পৌঁছে গেল সেই গহীন বনে। গাছপালার নির্জনে তাঁর নিজের প্রাসাদের সামনে হাজির হল সে। চারিদিক সুনসান নীরবতা; নিরিবিলি, নিস্তব্ধতা। আলাদিন রাজকন্যার ঘরের জানালার দিকে তাকিয়ে রইল উদাস মনে সারাদিন।
এক সময় ঘর অন্ধাকার হয়ে রাত হল। তবু কোনও সাড়া মেলে না। কেউ কি নেই এই পেয়াসাদে? আংটির দৈত্যকে আবার ডেকে আনল আলাদিন। বলল, রাজকন্যার সঙ্গে তাঁর একটু দেখা করিয়ে দেয়া দরকার।
জানালার সামনে এসে দাঁড়াল রাজকন্যা। বলল, ‘আমার মন ভালো নেই। তবু সৌভাগ্য! তুমি এসেক্সহ শেষমেষ।’ বুড়ো দরবেশ তাঁকে কোনো কষ্ট দেয়নি।
দুর্ব্যবহার করেনি তাঁর সঙ্গে। প্রদীপটা দরবেশ রেখেছে তাঁর জোব্বার মধ্যে। গোপন পকেটে।
বুদ্ধি বার করতে হবে এখন। আলাদিন ইশারায় কন্যাকে বুঝিয়ে দিল বুড়োর অজ্ঞান করতে হবে জহর মেশানো শরবত খাইয়ে। এই শরবত খেয়ে বুড়োর ঘুম ভাঙবে না কোনওদিন। ঠিক ঠিক হলও তাই। রাজকন্যা বুড়োকে জহরের শরবত খাওয়াল। চিরকালের ঘুমে তলিয়ে গেল বুড়ো দরবেশ। বুড়োর পকেট থেকে প্রদীপটা বের করে আনন্দে উল্লসিত হয়ে উঠল আলাদিন। প্রদীপটা ঘষতেই হাজির হল সেই দৈত্য।
‘আমি প্রদীপের দাস। হুকুম করুণ আমাকে, প্রদীপ যার আমি তাঁর।’
আলাদিন বলল,
‘প্রাসাদ যেখানে ছিল আমি আবার সেখানেই যেতে চাই। পৌঁছে দাও আমাকে। প্রাসাদটা একটু টলে উঠল মাত্র। পর মুহূর্তের বোঝা গেল সুলতানের প্রাসাদের সামনে এসে তাঁরা হাজির। রাত তখন গভীর।
সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই সবাই দেখল, রাজকন্যার প্রাসাদটি আবার আগের জায়গাতেই ফিরে এসেছে। সবাই এসে ভিড় জমাল প্রাসাদের সামনে। আলাদিন আর রাজকন্যা বেরিয়ে এল প্রাসাদ থেকে। সুলতানের খুশি আর ধরে না। মাপ চাইল সুলতান। ‘আলাদিন না বুঝে আমি অনেক কিছু বলে ফেলছি তোমাকে।’
আলাদিন মাথা নামিয়ে রইল বিনয়ে।
আবার শান্তি নেমে এল তাঁর জীবনে।
রাজ্য জুড়ে আনন্দের উৎসব শুরু হল। সবাই খেল পেট ভরে। আলাদিনকে আর্শীবাদ করতে লাগল দুহাত তুলে। সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে-আহ্লাদে দিন কাটতে লাগল তাঁদের। একদিন বুড়ো সুলতান অসুস্থ হয়ে গেলেন। বুড়ো বয়সে নানা অসুখ বিসুখে তিনি কাতর।
দেশের লোক আলাদিনকেই নতুন সুলতানের সিংহাসনে বসাল। দিকে দিকে তাঁর নামে জয়ধ্বনি। রাজ্যে নেমে এল অপার শান্তি। কারণ আলাদিন গরিবের দুঃখ বোঝে। সে হল গরিবের বন্ধু।
সুত্রঃ ছোটদের আরব রজনীর গল্প বই থেকে।
The post আলাদিনের আশ্চার্য্য প্রদীপ। আলাদিনের গল্প appeared first on Amar Bangla Post.