রাজধানীতে পারিবারিক জীবনে সংসার ভাঙার ঘটনা অস্বাভাবিকহারে বাড়ছে। এর বেশির ভাগই হচ্ছে মেয়েদের পক্ষ থেকে। স্ত্রীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বামীকে #তালাক দিচ্ছেন। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের হিসেব অনুযায়ী মোট তালাকের ৭৫ ভাগই দিচ্ছেন নারীরা। বছরে নগরীতে পাঁচ হাজারেরও বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। দিন দিন এর মাত্রা বাড়ছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক মেহতাব খানম বলেন, দুটি কারণে বিবাহবিচ্ছেদ বাড়ছে। প্রথমত, মেয়েরা আগের চেয়ে বেশি শিক্ষিত হচ্ছে। তারা এখন অনেক সচেতন। মুখ বুজে নির্যাতন সহ্য না করে বিচ্ছেদের পথ বেছে নিচ্ছে। দ্বিতীয়ত, মোবাইল কোম্পানিগুলোর নানা অফার, ইন্টারনেট, ওয়েবসাইট, পর্নোগ্রাফি, ফেসবুক ইত্যাদি সহজলভ্য উপাদান থেকে আকৃষ্ট হয়ে মূল্যবোধ ও নৈতিকতার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলে বিয়ের মতো সুদৃঢ় সম্পর্ক এবং নৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে একটু সংকোচ করছে না তারা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিয়ে বিচ্ছেদের বেশির ভাগ ঘটনা ঘটছে উচ্চবিত্তদের ক্ষেত্রে। পরকীয়া, পরনারী আসক্তি, যৌতুক, শারীরিক নির্যাতন এবং মাদকসেবনসহ নানা কারণে এধরনের ঘটনা ঘটছে।
বিচিত্র আমাদের দেশ। আমরা আন্দোলন করে রক্ত দিয়ে দেশ থেকে যাদেরকে বিতাড়িত করি, ঝেটিয়ে তাড়িয়ে দেই পরবর্তীতে পরম সম্মান করে সেই তাদের আইনই মাথায় তুলে রাখি, চোখে মাখি এবং শ্রদ্ধায় আইনের সামনে মাথা নত করি। আমরা বৃটিশ বেনিয়াদের বিতাড়িত করেছি কথাটা বলি। কিন্তু বৃটিশরা নিশ্চয় কথাটা শুনে হাসবে। কোথা থেকে বিতাড়ন করেছো! আইন, আদালত বিচার-আচারে, কৃষ্টি-কালচার সব জায়াগায় তো আছি আমরা বাপ!
পাকিস্তানীদের পরাজিত করেছি বলে আমরা তৃপ্তির ঢেকুর তুলি। তাদেরকে দেশ থেকে বিতাড়ন করার সেকি আমাদের গৌরব! কিন্তু কই তারা তো এখনও আমাদের মাঝে রয়ে গেছে! পাকিস্তান আমলে পাকিস্তানীদের হাতে রচিত ইসলাম ও আলেম-উলামার নিকট ধিকৃত ‘আইন মুসলিম পারিবারিক আইন’ তো এখনও ‘সপদে’ বহাল আছে এদেশে। সেই ধিকৃত ও ইসলাম প্রত্যাখ্যাত আইন দিয়েই তো বিবাহ, তালাকের মতো শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ বিধানগুলো পরিচালিত হচ্ছে! শরীয়ত যেখানে তালাক দেয়ার পর তৎক্ষণাৎ কার্যকর করার কথা বলেছে পাকিস্তানী এই আইনে শরীয়তের ওপর হাত ঘুরিয়ে তালাক দেয়ার পর তিন মাস পর্যন্ত বিলম্ব করে সালিসের মাধ্যমে উভয় পক্ষকে উপস্থিত করে সেই তালাক কার্যকর করা না করার স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে! আল্লাহর আইনের সাথে কতবড় ধৃষ্টতা!
যাহোক, ডিসিসির ১০টি অঞ্চলের হিসেব মতে, ২০০৫ সালে বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা ছিল ৫ হাজার ৫২৫টি, ২০০৬ সালে ছিল ৬ হাজার ১২০ টি, ২০০৭ সালে এসংখ্যা আরো বেড়ে দাঁড়ায় ৭ হাজার ২০০তে। ২০০৮ সালে অবশ্য এর পরিমাণ কিছুটা কমে আসে। এবছর বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে ৭ হাজার ৭৮টি। ২০০৯ সালে সেই সংখ্যা আবার বেড়ে যায়। এবছর এর সংখ্যা দাঁড়ায় ৭ হাজার ৭০৪ টিতে। ২০১০ সালে এর সংখ্যা আরো বেড়ে যায়। তখন এর সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৯০৫টি।
বিয়ে বিচ্ছেদের এই প্রবণতা সম্পর্কে মনস্তত্ত্ববিদ, সমাজ বিশ্লেষক, গবেষক, নারী নেত্রী ও মানবাধিকার কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের রয়েছে বিচিত্র রকমের অনুভূতি। তবে সবাই একবাক্যে এই তথ্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। আরও বেশি বিস্মিত হয়েছেন মেয়েদের পক্ষ থেকে এই প্রবণতার আধিক্য দেখে। দেখা যাচ্ছে যে, মেয়েরাই বিয়ে বিচ্ছেদের দিকে বেশি পরিমাণে ঝুঁকছে। মেয়েদের পক্ষ থেকে ৭৫ ভাগ বিয়ে বিচ্ছেদের আবেদন জমা পড়ে বলে জানা গেছে।
কেস স্টাডি-১ : তানজিমা শবনম (৪৫)। বাসা গুলশান মডেল টাউনে। মিডিয়া কর্মী। স্বামী ব্যবসায়ী। ১ ছেলে ও ১ মেয়ের মা। দেবর ডা. মনজুর হোসেনের সাথে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। ২০০৯ইং সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন দিবসে স্বামীকে তালাক দিয়ে মনজুরকে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন পর মনজুরের স্ত্রী ঘটনা জানতে পেরে তীব্র প্রতিবাদ করেন। এ কারণে মনজুর আগের স্ত্রীকে তালাক দেন। একমাত্র মেয়ে পুতুল লন্ডনে এমবিবিএস পড়ছিলেন। বাবার এ কাজে হতাশাগ্রস্ত হয়ে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে ঢাকায় চলে আসেন তিনি। মায়ের সঙ্গে এখন গুলশানে বসবাস করছেন তিনি। ডিসিসির ৯ নং অঞ্চলে এই তালাক কার্যকর করেছেন তিনি।
কেস স্টাডি২-: তাজুল ইসলাম। উত্তরা মডেল টাউনের বাসিন্দা। বনিবনা না হওয়ার অজুহাতে স্ত্রী তাহেরা বানুকে তালাক দেন তিনি। জানা যায়, আরেকটি বিয়ে করার জন্য তিনি এই স্ত্রীকে তালাক দেন। [সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন ০১/১০/১১ইং]
নানা কারণে মানুষের ঘর ভাঙে। সামাজিক অস্থিরতা, মাদকাসাক্তের প্রভাব, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, পরস্পরকে ছাড় না দেয়া ও শ্বশুর-শ্বাশুড়ির কারণে ঘর ভাঙে। এগুলো হলো অতি সাধারণ ও পরিচিত কারণ, যা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। বিশেষ করে আমাদের এই দরিদ্র অঞ্চলে। কিন্তু বর্তমান সময়ে ঘর ভাঙার মাত্রা যেমন বেড়েছে তেমনি এর নয়া নয়া কারণও আবিস্কৃত হয়েছে।
আলোচ্য লেখার শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে এবং ইসলামবিমুখ হলেও সমাজের সচেতন মানুষেরা একথা স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছেন যে, ইসলামী বিধিবিধান পালনে শিথিলতা এসব ভয়ানক পরিণতির অন্যতম প্রধান কারণ। বিশেষ করে একটা কথা খুবই ভয়ানক মনে হয়েছে একথা শুনে যে, শিক্ষার হার বাড়ার কারণে বিয়ে বিচ্ছেদের মতো সামাজিক অবক্ষয়ের আলামত ও অশান্তির অন্যতম নিদর্শনগুলো প্রকাশ পাচ্ছে! তাহলে কী আমরা একথা বলব যে, প্রচলিত এই শিক্ষা আমাদের ভবিষ্যতকে ধ্বংসের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে? যে শিক্ষা মূল্যবোধ ও পারিবারিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করতে ব্যর্থ সেই শিক্ষায় আমরা এত পুলকবোধ করছি? হাজার হাজার কোটি টাকা এর পেছনেই ব্যয় করছি? মাখামাখি আর ঢলাঢলির এই শিক্ষা আমাদের জাতিকে ভবিষ্যতে পুরো অন্ধ করে দেবে নাতো? বড্ড ভয় হচ্ছে যে আমার!
প্রথম ঘটনাই দেখুন। শবনম একজন মিডিয়াকর্মী। যেই মিডিয়াই হোক না কেন মিডিয়ার কাজ হচ্ছে নাগরিকদের সাথে আত্মার যোগসূত্র স্থাপন করা, দেশের মানুষের আবেগ-অনুভূতি ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে সম্মান করা। মিডিয়ার তো আলাদা কোনে অস্তিত্ব নেই। কর্মীরাই মিডিয়ার প্রাণ, তারাই মিডিয়া। সুতরাং একজন মিডিয়াকর্মীর কাছে দেশ ও মানবতার অনেক কিছু চাওয়ার থাকে। সেই চাওয়ার প্রধান বিষয় অবশ্যই নৈতিকতা, সামাজিক মর্যাদা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ। কিন্তু কী করলেন শবনম? একজন মিডিয়াকর্মী হয়ে তিনি দেশবাসীকে কীসের পয়গাম দিলেন? নিজের ঘর ভাঙলেন, অন্যের ঘর ভাঙালেন এবং অসংখ্য মানুষকে চরম অশান্তির মধ্যে ফেলে সাময়িক আনন্দ লাভ করতে গেলেন। সামান্য এই আনন্দ লাভের জন্য একজন মানুষকে এত নিচে নামতে হলে তার সাথে অন্যান্য জন্তুর পার্থক্য কোথায়? একটি শিক্ষা যদি দেবর-ভাবির মধ্যকার মাখামাখির করুণ পরিণতি সম্পর্কে সচেতন করতে না পারে তবে সেই শিক্ষাকে সাধুবাদ জানাতে কষ্ট হয় বৈকি!
আমার কাছে বারবার তাজ্জবের কারণ বনছে এই তথ্যটি যে, মানুষ এখন বেশি শিক্ষিত হচ্ছে বলে বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে! তাহলে আমরা কি আগের অবস্থাতেই ফিরে যাবো, যেখানে শিক্ষাও ছিল না, ঘর ভাঙারও প্রশ্ন ছিল না? যেই শিক্ষায় ঘর ভাঙায়, সামাজিক অশান্তি ঢেকে আনে সে শিক্ষা না কিছু দিন আমরা বন্ধ রাখলাম! আসলে শিক্ষার তো দোষ নেই। দোষ হচ্ছে যথাযথ শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হওয়া। বাংলাদেশের মতো মুসলিম প্রধান দেশের সাধারণ শিক্ষালয়গুলোতে ইসলামী শিক্ষা যদি চরমভাবে নিগৃহিত হয় তবে সেদেশে এ ধরনের করুণ পরিণতি তো হবেই। তাই এখন সময় হয়েছে জাগবার, জাগাবার এবং দেশের কল্যাণ নিয়ে ভাবার। কর্তৃপক্ষের উচিত এমন শালীন পরিবেশে এমন ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ শিক্ষার ব্যবস্থা করা যাতে ধর্ম ও নৈতিকতার পূর্ণ দখল থাকে।
সামাজিক এই ব্যধি দূর করতে ইসলামী বিধিবিধান যেমন মেনে চলা আবশ্যক, ঠিক তদ্রুপ সামাজিক কিছু বিষয় মেনে চললে তাদের পরস্পরে মিলঝুল কিছুটা বেশি থাকবে। ফলে তুলনামূলক ঝগড়া-ঝাটির পরিবেশ কমে শান্তির পরিবেশ বিরাজ করতে পারে। নিম্নে স্বামী-স্ত্রীর করণীয় ও সামাজিক এবং সাংসারিক জীবনে দায়িত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
স্বামী স্ত্রীর বিশ্বস্ততা : যে মানুষটির সাথে সারাজীবন ঘর করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে সংসার রচনা করেছেন সেই মানুষটির প্রতি আস্থাশীল হন। নিজেদের মধ্যে পরস্পরে বোঝাপড়া সৃষ্টি করুন। যে কোনো সমস্যা দুজন মিলে সমাধান করার চেষ্টা করুন। কোনো অপ্রীতিকর অবস্থা দেখা দিলে কিংবা কোনো রকম সংশয় দেখা দিলে একাকী সিদ্ধান্ত না নিয়ে সম্মিলিত ভাবে সমাধানে যাওয়ার চেষ্টা করুন। আর একটা কথা মনে রাখবেন, বিয়ের আগের আবেগ-অনুভূতি আর বিয়ের পরের বাস্তবতার মধ্যে আকাশপাতাল ব্যবধান থাকে। এই শাশ্বত বাস্তবতা কখনও ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। সংসারের অনেক অশান্তির কারণ এই অনুভূতির অক্ষমতা। মানুষ মনে করে বিয়ের আগে কিংবা বিয়ের পরের প্রথম সময়টা যে অবস্থায় কেটেছে তা সর্বদা থেকে যাবে এবং এই থেকে না গেলেই অনেকে চটে যান। ব্যাপারটিকে সন্দেহের চোখে দেখতে থাকেন অনেকে। ফলে অনিবার্য রকমের সংঘাতের পথ খুলে যায়।
‘দেখতে সুন্দর, ভালো কথা বলে, না বলতেই সবকিছু বুঝে যায়, কোনো ইচ্ছাতেই বাধা দেয় না। এমন সব গুণসম্পন্ন মানুষই তো ভালো মানুষ। কিন্তু স্বপ্নের এ ছবির সাথে বাস্তবের ফারাক দেখে অনেকটাই হতাশ হয়েছি- এমনটা বললেন ইডেন কলেজের মাস্টার্সের শেষবর্ষের ছাত্রী সুমা। সুমার মতো অনেকেরই স্বপ্ন ভাঙে বিয়ের পর। আর এই স্বপ্নভঙ্গের কারণে সংসারে বিচ্যুতি দেখা দেয়। তাই আগ থেকেই প্রখর অনুভূতিসম্পন্ন হতে হবে। কোন ধরনের আবেগ প্রশ্রয় দিতে হবে এবং কোন ধরনের আবেগকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না তারও একটা মানদণ্ড কায়েম করতে হবে। সেই মানদণ্ডে ফেলে বিষয়টি পরিমাপ করলে সংসারের অশান্তি বহুলাংশে হ্রাস পাবে।
আর একথাও মনে রাখতে হবে যে, স্বামী এবং স্ত্রী দুইজনই সম্পূর্ণ ভিন্ন দুইজন মানুষ। তাদের বেড়ে ওঠা, পরিবার, পড়াশোনা, অভ্যাস একজন থেকে আরেকজনের আলাদা হবে এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং কেউ কাউকে বশে আনার চিন্তা না করে প্রত্যেককে নিজের অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করে যাওয়া উচিত। স্বামী শাসক হয়ে ওঠা এবং স্ত্রী নিজেকে স্বামীর দাসী ভাবা কোনোটাই কাম্য নয়। শরীয়ত কাউকে এমন ভাবার অধিকার দেয়নি। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-
﴿ وَلَهُنَّ مِثۡلُ ٱلَّذِي عَلَيۡهِنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ ٢٢٨ ﴾ [البقرة: ٢٢٨]
‘তাদের জন্য রয়েছে তেমন হক যেমন রয়েছে নারীদের প্রতি পুরুষদের হক।’ {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ২২৮}
সংসারে, দাম্পত্যজীবনে সমস্যা আসতেই পারে। মতানৈক্য কিংবা মৃদ ঝগড়াঝাটিও হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে এটাকে দীর্ঘস্থায়ী রূপ দেয়া কিংবা পরে এটাকে কেন্দ্র করে কটুক্তি করা বা নিন্দার পথে হাঁটা মোটেই কাম্য নয়। আর এতে তৃতীয় কাউকে টেনে তো চরম অরুচিকর ব্যাপার। স্বামী স্ত্রী উভয়কেই মাথা গরম না করে যে কোনো বিষয় ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। সংসারী ব্যাপারকে পাড়া-প্রতিবেশী পর্যন্ত নিয়ে যাওয়াও কাম্য নয়।
সাংসারিক টানাপোড়নের অন্যতম হলো স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে শ্বশুরবাড়ি থেকে আলাদা করে ফেলার তড়িৎ উদ্যোগ। বিষয়টা একেবারেই অযৌক্তিক। স্বামী যে পরিবেশে জন্মেছেন, বড় হয়েছেন, যে সব মানুষের মধ্যে বেড়ে উঠেছেন রাতারাতি সেসব বস্তু দূরে ঠেলা দেয়া একেবারেই অসম্ভব। তাই এক্ষেত্রে নারীকে স্বামীর পরিবার ও অন্যান্য সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। এরূপ করতে পারলে অনেক ঝামেলাই নিজ থেকে দূরে সরে যাবে।
আর বিয়ের পর মনের কথা ব্যক্ত করার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ ব্যক্তি হচ্ছে স্বামী। তবে সেক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী। স্বামীর কাছে শ্বশুরবাড়ির কারো সমালোচনা করা বা কোনো বিষয়কে একেবারে ঘৃণা করা উচিত নয়। এতে স্ত্রীর প্রতি স্বামী মারাত্মক বিরক্ত হয়ে উঠতে পারেন। আবার অনেক পরিবারে পুত্রবধুকে একেবারে দাসি বা কাজের মেয়ের অসম্মান করা হয়। তাদেরকে সারাজীবন একান্নে বেঁধে রাখার চেষ্টা করা হয়। এদুটির কোনোটাই উচিত নয়।
সাংসারিক ও দাম্পত্য জীবনে এসব বিষয় মাথা রেখে চলতে পারলে আশা করা যায় আমাদের এই মুসলিম পারিবারিক পবিত্র বন্ধন এতো ঢিলে ও হালছাড়া অবস্থা হবে না। আর দিন দিন বাড়তে থাকবে না বিয়ে বিচ্ছেদের প্রবণতা। মনে রাখবেন যে সমাজে বিয়ে বিচ্ছেদের প্রবণতা বেড়ে যায় সেই সমাজে যিনা-ব্যভিচারের ছড়াছড়ি দেখা দেয়। পশ্চিমা বিশ্বের ঘরোয়া জীবন আমাদেরকে সেই অশুভ পরিণতির কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।
আপনি পড়ছেনঃ মুক্তবাসিনী-২
The post ভাঙছে ঘর-সংসার! পেছনের কারণ কি? appeared first on Amar Bangla Post.