Quantcast
Channel: Amar Bangla Post
Viewing all articles
Browse latest Browse all 2081

প্যাকেট না প্রোডাক্ট? (বিবাহ করার আগে বিবাহের পরামর্শ)

$
0
0

আপনি কি প্যাকেট দেখে জিনিস কেনেন না প্রোডাক্ট দেখে?

মানে? ধরুন, আপনি নারকেল তেল  কিনবেন। আপনি কি তেলের গুণগত মান দেখে-অর্থাৎ এই তেলে আপনার মাথা ঠান্ডা এবং চুল লম্বা ও ঝরঝরে হবে কিনা সেটা বিবেচনা করে  তেল কিনবেন, নাকি তেলের বোতলটি কতখানি সুন্দর ও আকর্ষণীয় তা দেখে তেল নির্বাচন করবেন? হাস্যকর মনে হচ্ছে? অথচ এই  হাস্যকর কাজটিই আমরা করে থাকি  অহরহ।

আমাদের যুগের একটি গুরুতর সমস্যা হল বাহ্যিক সৌন্দর্যপ্রীতি। সুন্দর জিনিস সবার ভালো লাগে, লাগাটাই স্বাভাবিক, এতে দোষের কিছু নেই। এটি সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় তখনই যখন কোন বস্তুর মূল্যায়নে এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্রাইটেরিয়া হয়ে দাঁড়ায়।  যখন এর তুলনায়  আর সব বিচার বিবেচনা সচেতনতা ব্যাকসিটে স্থান পায়।

এই অতিরিক্ত সৌন্দর্যপ্রীতির কারণে আমরা অনেক দাম দিয়ে ভেজাল পটেটো চিপস কিনে বাচ্ছাদের কচি মুখে তুলে দেই। অথচ বাসায় ক’টা তাজা আলু কেটে তেলে বেজে দেই না। অনেক দাম দিয়ে লাল টুকটুকে আপেল কিনে আনি যদিও তাঁর ভেতরটা হয় পঁচা,  পোকায় খাওয়া অথচ  এর চেয়ে তিনগুণ পুষ্টিমান সম্পন্ন তাজা #পেয়ারা অনাদরে  পড়ে থাকে বাজারের ঝাঁকায়।

খাঁটি জিনিসের মূল্যায়নের এই যোগ্যতা এবং মানসিকতার বিলোপ এখন আর  কেবল বস্তুগত নির্বাচনের ক্ষেত্রেই সীমিত নেই বরং আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর ক্ষেত্রেও আমরা শুধু বাহ্যিক দিক দেখে বিবেচনার ফলে  ভুল সিদ্ধান্তে উপনিত হই। যেমন ধরুন, যখনই কোনো ছেলে বা মেয়ের বিয়ের জন্য পাত্র বা পাত্রী দেখা হয়—কোনো কিছু জানার আগেই প্রশ্ন আসে—মেয়েট দেখতে কেমন এবং ছেলে কি করে?

একটু ভেবে দেখুন তো—জীবনের বন্ধুর পথে পরস্পরের হাত ধরে চড়াই উৎড়াই পেরুবার জন্য এর কোনটি কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ? বৈজ্ঞানিক অবৈজ্ঞানিক জরিপসমূহের ফলাফলে দেখা যায় বৈবাহিক  জীবনে সুখের সৌন্দর্য্যের ভূমিকার আয়ু বড়জোর ছয় মাস  থেকে এক বছর। তারপরে সম্পর্ক টিকে থাকে স্ত্রীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট এবং গুণাবলিকে কেন্দ্র করে। নতুবা স্বামীর সহনশীলতা এবং মানবিক গুণাবলিকে অবলম্বন করে। আপনারা কি কখনো দেখননি পরীর মতো সুন্দরী বউটাকে দু’একবছরের মাথায় মুটিয়ে, মেদবহুল চামড়া ঝুলে পড়ে  অন্যরকম হয়ে যেতে? অথবা কালো বউটাকে ফর্সা সুন্দরী হয়ে যেতে?  চাকরি, ব্যবসা,  পয়সা? হতেও দেরি  নেই, যেতেও দেরী নেই। অনেক ধনী মানুষ মুহূর্তে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন—এমন ঘটনা নিজ চোখে না দেখলেও শোনেননি বা জানেন না এমন মানুষ কমই আছে। জীবনে চলার জন্য অর্থের প্রয়োজন  অনস্বীকার্য। কিন্তু পয়সা দিয়ে যদি ভালোবাসা কেনা যেত তাহলে পৃথিবীর সব বড়লোকরাই সুখী বিবাহিত জীবন যাপন করতেন। এটি যে বস্তুত ঘটে না তাঁর ভুরি ভুরি উদাহরণ তো  আপনারা সবাই জানেন। তাহলে ভাবুন আমরা কত ঠুনকো কতগুলো বিবেচনার ওপর আমাদের  সুখ, শান্তি, স্বস্তি,  সাফল্য, ব্যর্থতা, বাবা-মা,  আত্মীয়-স্বজন বন্ধুবান্ধব সন্তানদের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখি!

আল্লাহ বলেছেন, ‘And among his singns is this, that he created for you mates from ainong yourselves, that you may dwell in tranquility with them,  and he has put love and inercy between your (hearts):  verily in that are signs for those who refieet.’ (সূরা রূমঃ আয়াত ২১) । তিনি আমাদের জন্য এমন সঙ্গী সৃষ্টি করেছেন  যার  মাধ্যমে আমরা শান্তি স্বস্তি ভালোবাসা পেতে পারি যা আমাদের পার্থিব জীবনকে অর্থবহ করবে এবং পারলৌকিক জীবনকে করে তুলবে সম্ভাবনাময়। এখানে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং সহমর্মিতার মাধ্যমে  দু’টি হৃদয়ের মাঝে সৃষ্টি বন্ধনের সাহায্যে শান্তি পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তাঁর পক্ষ থেকে কিছু পেতে হলে তাঁর নির্দেশিত পথ অনুসরণ করতে হবে তা বলাই বাহুল্য।

ইসলামের একটি মূখ্য নীতি হল পর্দাঃ 'মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।' 'ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।' (সূরা নূরঃ আয়াত ৩০-৩১)। এখানে আগে পুরুষদের পর্দার কথা বলা হয়েছে,  অতঃপর মহিলাদের। ইসলাম চায় যেন একটি মেয়ে কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্যের ওপর ভিত্তি করে বিবেচিত না হয়ে তাঁর স্বীয় গুণাবলিতে উদ্ভাসিত হবার সুযোগ পায়। স্বাভাবিক অবস্থাতেই যদি একটি মেয়েকে তাঁর গুণ দেখে বিচার করার ওপর গুরত্ব দেওয়া হয় তাহলে ভেবে দেখুন বিয়ের ক্ষেত্রে এটি আরো কত বেশি গুরুত্বপূর্ণ! পুরুষদের দৃষ্টি সংযত করার ব্যাপারে যে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁর মনোবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হলঃ পুরুষরা রঙ্গ দেখে আকৃষ্ট হয় আর মেয়েরা আকৃতি দেখে। যেসব মেয়েদের গুণ আছে তাঁরা নিজেদের সৌন্দর্য  অ্যাডভার্টাইজ করে বেড়ায় না।  সুতরাং পুরুষরা দৃষ্টি সংযত না করলে যেসব মেয়েদের দেখেই মুগ্ধ হবার সম্ভাবনা বেশি যাদের বাইরের সৌন্দর্যটাই সার। আর মহিলাদের নিজেদের সৌন্দর্য লুকিয়ে রাখতে বলার  মূল উদ্দেশ্য তাঁদের এই  সমস্ত  চিন্তা এবং বিবেকবর্জিত পুরুষদের থেকে রক্ষা করা।

আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে জানা যায়, রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ  ‘A women is married for four things, i.e., her wealth, her family status,  her beauty and  her religion. So you should marry the religious women (otherwise) you will be a losers.  (volume 007, book 062, hadith number’ 027). কেননা একটি মেয়ে তখনই তাঁর স্বামীকে সুখী করতে পারে যখন সে তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত হয়, তাঁর সম্পদ এবং সন্তানদের রক্ষণাবেক্ষণ করে। বছরের পর বছর এই কাজটি কেবল তখনই করা সম্ভব যখন মানুষ আল্লাহকে ভয়  করে। ভালোবাসা ওঠানামা করে। তুচ্ছ বিষয়ে ঝগড়া হলেও পরস্পরকে অসহ্য মনে হয়। কিন্তু আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের কারণে ঐ সময়েও একজন মহিলা তাঁর সংসারের ক্ষতির কথা ভাবতে পারেন না। একজন ধার্মিক মহিলা নিজগুণে না হলেও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য স্বামী, শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়স্বজন, স্বামীর যাদের পছন্দ—সবার সাথে সদ্ভাব বজায় রাখার জন্য সচেষ্ট থাকেন।  আল্লাহর  ভয়েই তিনি কেবল নিজেই যে ভালো থাকেন তাই নয় বরং স্বামীকেও অন্যায় হতে বিরত থাকার পরামর্শ এবং সহযোগিতা দেন। আমার এক ভাই বলেছিল, ‘আপা,  আমি এমন মেয়ে চাই যে কেবল নিজে নামাজ পড়বে না বরং আমাকে নামাজ পুরণ করার জন্য তাগাদা দেবে’। আপনার এমন সুন্দরী বউ কি দেখেননি যার চাহিদা পূরণ করার জন্য স্বামী ঘুষ খান আর  তিনি স্বামীর কাঁধের ওপর পা রেখে বেহেশ্ত যাবার স্বপ্ন দেখেন? এমন পুরুষও বিরল নন যারা নিজেরা দাঁড়ি রেখে টুপি পরে সুন্দরী স্ত্রীকে প্রদর্শনীর সামগ্রীতে পরিণত করে রাখেন।  এটিকে কি ভালোবাসা বা ন্যূনপক্ষে পারিবারিক সম্প্রীতি বলা যায়? সেই সুন্দর দিয়ে কি লাভ যা অন্তর পর্যন্ত বিস্তৃত নয়?

পাত্র নির্বাচনের ব্যাপারে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘দরিদ্র পাত্রে ধনী পাত্র অপেক্ষা উত্তম যদি সে সৎ এবং নামাজী হয়’। কেননা যে আল্লাহকে ভয় করবে সে আপনাকে ভালোবাসে না হোক আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হলেও আপনাকে ঠকাতে পারবেনা। ভেবে দেখুন যদি আপনার স্বামী আপনাকে বাড়ি গাড়ি সম্পদে ভাসিয়ে রেখে অন্যত্র প্রেম করে বেড়ায়, আপনি কি সুখী হবেন? অথচ অনেক দরিদ্র পরিবারেও দেখবেন বাজার থেকে বড় মাছ এনে স্বামী স্ত্রী মিলে যখন গল্প করতে করতে কাটেন সেখানে প্রেমের উৎসব বয়ে যায়।

টাকা পয়সা দিয়ে সুখ কেনা যায় না। কারণ চাকরি পরিবর্তন করা যায় কিন্তু চরিত্র পরিবর্তন করা যায় না।  একজন ভালো স্বামী আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য স্ত্রীকে সেসব সু্যোগ সুবিধা দেবে যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে—শ্বশুরবাড়ির সাথে, স্ত্রীর বন্ধুবান্ধবের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখবে যাতে স্ত্রী খুশী থাকে। সে কখনোই স্ত্রীর সাথে দুর্ব্যবহার করবে না যেহেতু সে জানে এর জন্য তাঁকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।

আজকাল দেখা যায় পাত্র পেঁচার মতো হলেও পাত্রী চাই ফর্সা, সুন্দরী, লম্বা,  স্বাস্থ্যবতী, শিক্ষিতা, নব্যরুচিশীলা, বড় লোকের কন্যা। কোথাও চরিত্রের বা স্বভাবের ব্যাপারটি গুরুত্ব পায় না। অসংখ্যবার দেখেছি রীতিমতো চারিত্রিক সমস্যাগ্রস্ত মেয়েদের হটকেকের মতো  বিকিয়ে যেতে অথচ বুদ্ধিমতী, সচ্চরিত্র, সুন্দর স্বভাবসম্পন্না মেয়েদের বিয়ে হয় না। অনেক শিক্ষিত এবং বুদ্ধিমান ভাইকে জিজ্ঞেস করেছি, ‘আচ্ছা, আপনারা শুধু চেহারা দেখে এমন মেয়ে কি করে বিয়ে করেন যাদের এতটুকু বুদ্ধি বা ম্যাচুরিটি  নেই যে আপনি দু’ছত্র কবিতা বললে সে তা উপলব্ধি করতে পারে?’ অনেকে এড়িয়ে গিয়েছেন, আবার অনেকে সততার সাথে উত্তর দিয়েছেন, ‘এদের সজে ডমিনেট করা যায় যা বুদ্ধিমান মেয়েদের করা যায় না’। একটি বিয়ের উদ্দেশ্য কি বন্ধুত্ব হওয়া উচিৎ না স্বৈরাচার, তা আপনাকে বিবেচনাউ ছেড়ে দিলাম। তবে যার সাথে মনের কথা শেয়ার করা যায় না, যে আপনার সুবিধা অসুবিধা বোঝার মতো বিবেকবুদ্ধি রাখে না তাঁর চেহারা দেখে সব কষ্ট ভুলে থাকা যার কিনা এটা গবেষণা করার মতো বিষয়!

একইভাবে অনেক মেয়েকে দেখেছি শুধু ভালো চাকরি করে দেকে এমন পাত্রকে বিয়ে করতে যার সাথে কখনো তাঁর মানসিক কোনো বন্ধন সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এমনই এক মহিলা বলেছিলেন, ‘জানো, আমি আমার ডাক্তার স্বামীর সাথে পঞ্চাশ বছর সংসার করেছি কিন্তু একটি দিনের জন্যও সুখী হইনি’। এভাবে একমাত্র জীবনটি কাটিয়ে দেওয়া কতটা যুক্তিসঙ্গত তা বিবেচনার বিষয় বটে!

যারা বিয়ে করে ফেলেছেন তাঁরা সঙ্গীদের আভ্যন্তরীণ বিকাশে সহযোগিতা করে  সুন্দর সম্পর্কের ভিত্তি গড়ে তুলুন আর যারা এখনো বিয়ে করেননি তাঁরা বিয়ে করার সময় শুধু দৃষ্টি দিয়ে নয়, অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিন। এই জীবনকে স্বর্গ বা নরকে পরিণত করার সিদ্ধান্ত আপনার হাতে, ভুল করবেন না।    

আপনি পড়ছেনঃ বিয়ে বই থেকে। 

লেখিকাঃ রেহনুমা বিনতে আনিস। 

The post প্যাকেট না প্রোডাক্ট? (বিবাহ করার আগে বিবাহের পরামর্শ) appeared first on Amar Bangla Post.


Viewing all articles
Browse latest Browse all 2081

Trending Articles