Quantcast
Channel: Amar Bangla Post
Viewing all articles
Browse latest Browse all 2081

হানযালা (রাঃ) ভয়। (ইসলামিক গল্প)

$
0
0

তাঁর নাম হানযালা (রাঃ)। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একজন বিশিষ্ট সাহাবী। আল্লাহ, আল্লাহর রাসূলের প্রতি তাঁর অগাধ বিশ্বাস, অগাধ শ্রদ্ধা, অগাধ ভালোবাসা।

ভালোবাসার টানে যখন তখন  হানযালা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর দরবারে ছুটে আসেন।  ঈমান ও দ্বীনের আলোচনা শুনেন। রাসূলের পবিত্র মুখ থেকে বের হওয়া প্রতিটি কথার একজন আগ্রহী শ্রোতা হানযালা (রাঃ)। রাসূলের দরবারে বসে কখনো অমনোযোগী থাকেননি তিনি।

গভীর মনোযোগে একদিন হানযালা (রাঃ) কথা শুনছেন। কথা বলছেন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সাঃ)। মনোযোগ দিয়ে তো হানযালা (রাঃ) কে শুনতেই হবে। ইহকালের অস্থায়ী জীবনের কথা, পরকালের স্থায়ী জিন্দেগীর কথা, বেহেশত-দো্যখের কথা শুনে শুনে হানযালা (রাঃ)-এর  মন কোমল হয়ে গেলো। ভিজে গেলো তাঁর হৃদয়। দু’চোখ দিয়ে বেয়ে দরদর করে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। জীবনের শেষ কথা কি হবে, মানুষের জীবনের কি মূল্য, পরকালের সামনে ইহকালের গুরুত্ব কতটুকু—এসব ভেবে হানযালা (রাঃ০ নিঃশব্দে কাঁদতেই লাগলেন।  কাঁদতে কাঁদতে হানযালা (রাঃ) সারাটা মুখ ভিজিয়ে ফেললেন।

মজলিস ভেঙ্গে গেলে সবাই একে একে উঠে যায়। হানযালা (রাঃ)-ও এক সময় উঠে পড়লেন। তাঁর মন ভার হয়ে রইলো। গভীর চিন্তায় তিনি ডুবে রইলেন।

ঘরে এসে হানযালা (রাঃ) দেখলেন, বাচ্চারা খেলাধূলা করছে। তিনি এগিয়ে গেলেন। বাচ্চারা তাঁর সাথে এসে হাসি খুশী, আনন্দের গল্প জুড়ে দিলো। হানযালা (রাঃ) বাচ্চাদেরকে ফিরিয়ে দিলেন না। হেসে হসে তিনিও তাঁদের সাথে আনন্দ করলেন।

স্ত্রী এসে সংসারের প্রয়োজনীয় কথা বললেন। হানযালা (রাঃ) স্ত্রীর কথা শুনলেন। নিজেও কথা বললেন। বিভিন্ন বিষয়ে দু;জনের মাঝে গল্প হতে হতে দু’জনই হাসতে লাগলেন। মন উজাড় করে দু’জনের উচ্ছুল হয়ে উঠলেন।

স্ত্রী আর বাচ্চাদের মাঝে এসে হানযালা (রাঃ) প্রাণ খুলে আনন্দ করলেন।  আনন্দ পেলেন।  সুখী জীবনের স্বাদ লাভ করলেন।

হঠাৎ করেই আনন্দে ছেদ পড়লো। কি হলো, কি হলো?  হানযালা (রাঃ) গম্ভীর হয়ে গেলেন। তাঁর চেহারায় গভীর পেরেশানী আর ভয়ের ছাপ ফুটে উঠলো।

ভয়ে ভয়ে যেন হানযালা (রাঃ) একেবারে কুঁকড়ে যাচ্ছেন। তাঁর হৃদয়ের ভিতরে একটি ভয় এসে ঢুকে পড়েছে। তিনি সত্যি সত্যি ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে গেলেন।

স্ত্রী, সন্তানরা কেউ কিছু বুঝতে পারলো না। কৈ কিছুই তো দেখা যাচ্ছে না, কেউ এসেও তো  ভয় দেখালো না! হানযালা (রাঃ) তাহলে কাকে ভয় পাচ্ছেন?  কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়েই হানযালা (রাঃ) ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়লেন।

হানযালা (রাঃ) পথে হাঁটতে হাঁটতে ভাবতে লাগলেন যে, তাঁর সর্বনাশ হয়ে গেছে। তিনি ভয়ংকর খারাপ হয়ে গেছেন। কেউ একজনকে বলতেই হবে তাঁর মনের কথা। তা নাহলে নিস্তার নেই। ভিতরে ভিতরে মনের কামড়ে তিনি শেষ হয়ে যাবেন যে!

এই সময়েই পথ ধরে এগিয়ে এলেন হযরত আবু বকর (রাঃ)। আল্লাহর রাসূলের সবচেয়ে বিশ্বস্ত মানুষ। আবু বকর (রাঃ) এসে একদম হানযালা (রাঃ)-এর মুখোমুখি দাঁড়ালেন।

হযরত আবু বকর (রাঃ)-কে পেয়ে যেন হানযালা (রাঃ) একটা উপায় অন্ততঃ পেয়ে গেলেন। মনের সব জ্বালা আর অস্থিরতা এই মহান ব্যক্তিটির কাছে খুলে বললে অবশ্যই লাভ হবে—হানযালা (রাঃ) ভাবলেন।

হানযালা (রাঃ) দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন—ভাই আবু বকর! হানযালা তো মোনাফেক হয়ে গেছে। হানযালা (রাঃ)-এর এই কথা শুনে আবু বকর (রাঃ) যেন আকাশ থেকে পড়লেন।  হানযালা (রাঃ) তো আল্লাহর রাসূলের একজন প্রিয় সাহাবী। সে আবার মোনাফেক হয় কি করে! হযরত আবু বকর (রাঃ) বললেন—সুবহানাল্লাহ! তুমি এসব কি বলছো হানযালা?  তুমি মোনাফেক হতে যাবে কেন? এতো কিছুতেই হতে পারে না।

হানযালা (রাঃ) তখন তাঁর মনের ভিতরের ভয়টা খুলে বললেন। বললেন, ‘হ্যাঁ ভাই আমি মোনাফেক হয়ে গেছি। যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর খেদমতে উপস্থিত থাকি এবং তাঁর মুখ থেকে বেহেশত-দো্যখের কথা শুনি, তখন আমার মনের অবস্থা এমন হয়, যেন আমার দু’চোখের সামনে বেহেশত ও দোযখ  ভাসতে থাকে। আর যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সান্নিধ্য ছেড়ে ঘরে এসে স্ত্রী ও ছেলে-,মেয়েদের মোহে আটকা পড়ি, তখন সেই সব কথা ভুলে যাই। মনের সেই অবস্থাটা আর থাকে না। আমার মনের অবস্থা যে দুই সময়ে দুই রকম হয়ে গেলো। আমি কি তাহলে মুনাফেক হয়ে গেলাম না।”

মোনাফেক বলে—ঈমানের ব্যাপারে সামনে এক রকম থাকলে আর আড়ালে আরেক রকম হয়ে গেলে। হানযালা (রাঃ)-এর জবাব শুনে আবু বকর (রাঃ)-ও ভয় পেলেন। দ্বিধায় পড়ে গেলেন। তিনি বললেন, “আমারও তো একই অবস্থা।  ঘরে এলে তো আমারও মনের অবস্থা পরিবর্তন হয়ে যায়।

মানুষ ভয় পায় হিংস্র জীব-জন্তুকে। চোর-ডাকাত, খুনীকে। মানুষ ভয় পায় জীবন নাশ হওয়ার মট বিপদ-আপদকে। মনের ভিতরের অবস্থার পরিবর্তনে দুর্বল ঈমানদার মানুষ সামান্যতম ভয় পায় না। কিন্তু আল্লাহর রাসূলের প্রিয় দু’জন সাহাবী ভয় পেয়ে গেলেন মনের অবস্থার পরিবর্তনে। তাঁদের এই ভয় হয়ে গেলো যে, তাঁরা মোনাফেক হয়ে গেল কিনা। এই ভয়টা তাঁদের মাঝে আসতে পেরেছে এজন্যই যে, তাঁরা আল্লাহকে  ভয় পেতেন।

অবশেষে দু’জনই রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর দরবারে এসে হাজির। দু’জনই ভয়ে কম্পমান। দুজনই প্রচন্ড অস্থির। হানযালা (রাঃ)-ই প্রথমে মুখ খুললেন। তাঁর ভয়ের কথা খুলে বললেন। নবীজির দরবারে থাকলে তাঁর মনের যে অবস্থা হয়  ঘরে গেলে সেই অবস্থাটা আর থাকে না, তিনিও এটাও বললেন।

হানযালা (রাঃ০ আরো বললেন যে, ‘দু’মনের এই পরিবর্তনের কারণেই তিনি ভয় পাচ্ছেন যে,  তিনি মোনাফেক হয়ে গেছেন।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সব শুনলেন। স্মিত হাসলেন। যানযালা (রাঃ) এবং আবু বকর (রাঃ)-কে আশ্বস্ত করলেন। তারপর বললেন—যারা হাতে আমার জীবন সেই মহান আল্লাহর নামে কসম করে বলছি—আমার সামনে থাকলে তোমাদের মনে যে অবস্থা হয়, সব সময় সেই অবস্থা টিকে থাকলো ফেরেশতাগণ পথ-ঘাটে, ঘর বাড়ীতে তোমাদের সাথে মুসাফাহা করতো, হাত মিলাতো।

কিন্তু হানযালা! জেনে রেখো! আসল কথা হলো, মানুষের মন সব সময় এক রকম থাকে না। মন সব সময় একই রকম থাকবে এরকম আশাও করবে না। এরকম তো হয় ফেরেশতাদের মাঝে। তাঁদের মন বদলায় না। কারণ তাঁদের তো স্ত্রী, পুত্র, ঘর-সংসার নিয়ে চিন্তা করতে হয় না।

ঈমান ঠিক থাকলে, ঈমান মজবুত থাকলে মনেই এই সামান্য হেরফের হওয়ায় কেউ মোনাফেক হয়ে যায় না। ভয়ের কিছু নেই।

সাহাবী দু’জনের মনে আনন্দের ঢেউ বয়ে গেলো।  কেটে গেলো দুশ্চিন্তার অন্ধকার। তাঁরা খুশীতে আপ্লুত হয়ে গেলেন। যাক বাঁচা গেলো!  

আপনি পড়ছেনঃ সাহাবায়ে কেরামের গল্প বই থেকে।

বই থেকে এরপরের গল্পঃ ভয়

The post হানযালা (রাঃ) ভয়। (ইসলামিক গল্প) appeared first on Amar Bangla Post.


Viewing all articles
Browse latest Browse all 2081

Trending Articles