আর কাউকে বিয়ে করা যাবে না, কোনো নারীর এ জাতীয় শর্ত পূরণ করা কি জরুরি?
প্রশ্ন : আমার প্রশ্নগুলো হচ্ছে :
১– রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে বিয়ের সময় নারীরা কি স্বামীদের শর্ত দিত যে, অন্য কাউকে বিয়ে করা যাবে না? এটা কি হালাল বস্তুকে হারাম সাব্যস্ত করার মধ্যে শামিল হবে ?
২– স্বামী যদি তার স্ত্রীকে শর্ত দেয় যে, তার সাথে কাউকে বিবাহ করবে না, তবে তার এ ওয়াদা পুরো করা কি জরুরি? না তার জন্য দ্বিতীয় বিবাহ করার অধিকার রয়েছে ? সে তার এ ওয়াদা বিবাহের বেশ কয়েক বছর পর করেছে। অর্থাৎ বিবাহের আকদের সময় এ জাতীয় ওয়াদা করে নি।
৩– দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তবে এ ওয়াদা পুরো করা কি ওয়াজিব? এমনকী যদি তাকে এ-ক্ষেত্রে বল প্রয়োগ করা হয় তবু?
৪– প্রথম স্ত্রীর ওয়াদা যদি পুরো না করে এবং দ্বিতীয় বিবাহ করে ফেলে, তবে এ জন্য স্বামী কি গুনাগার হবে ?
উত্তর :
আল–হামদুলিল্লাহ
প্রথমত :
নারী যদি স্বামীকে শর্ত দেয়, তার সাথে কাউকে বিবাহ করা যাবেনা, তবে এ শর্ত শুদ্ধ। এবং তা পূর্ণ করা জরুরি। স্বামী যদি তার বর্তমানে দ্বিতীয় বিবাহ করে, তবে স্ত্রীর জন্য বিবাহ ভঙ্গ করার অধিকার থাকবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
(أَحَقُّ الشُّرُوطِ أَنْ تُوفُوا بِهِ مَا اسْتَحْلَلْتُمْ بِهِ الْفُرُوجَ)
তোমাদের সেসব শর্তগুলো পুরো করা অগ্রাধিকাপ্রাপ্ত, যার মাধ্যমে তোমরা যৌনাঙ্গসমূহ হালাল করেছ। (বুখারি:২৭২১(, মুসলিম:১৪১৮)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যত্র বলেছেন,
(الْمُسْلِمُونَ عَلَى شُرُوطِهِمْ ، إِلَّا شَرْطًا حَرَّمَ حَلَالًا ، أَوْ أَحَلَّ حَرَامًا)
মুসলমানগণ তাদের শর্তের কাছে বাঁধা। তবে যে সব শর্ত হালালকে হারাম করে, অথবা হারামকে হালাল করে, তা ব্যতীত। (তিরমিযি : ১৩৫২), আবু দাউদ :৩৫৯৪), সহিহ তিরমিযিতে আল–বানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন।
উল্লেখ্য, এ শর্তটি হালালকে হারাম করে না, বরং পুরুষের কর্তৃত্বকে সীমা বদ্ধ করে ও নারীর জন্য বিবাহ ভঙ্গের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে।
সাহাবাদের যুগে এ ধরনের শর্ত সংঘটিত হয়েছে।
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া –রাহিমাহুল্লাহ– বলেন, এক ব্যক্তি এ শর্তে বিবাহ করেছে যে, এই স্ত্রীর সাথে অন্য কাউকে বিবাহ করবে না। ওমর – রাদিআল্লাহু আনহু–র নিকট এ ব্যাপারটি দায়ের করা হল, তিনি বললেন : "مقاطع الحقوق عند الشروط" অর্থাৎ শর্তের সময় অধিকার ভাগ হয়ে যায়। (ফতোয়াল কুবরা : ৩/১২৪ )
ইবনে কুদামা – রাহিমাহুল্লাহ – বলেছেন, এর সারাংশ হচ্ছে, বিবাহের শর্তগুলো তিনভাবে ভাগ হয় :
এক. কিছু শর্ত রয়েছে যার উপকারিতা শুধু নারীর উপর বর্তায়। যেমন সে শর্ত করল: তাকে তার বাড়ি থেকে বের করা যাবে না, অথবা তার শহর থেকে বের করা যাবে না, অথবা তাকে নিয়ে সফর করা যাবে না, অথবা তার সাথে কাউকে বিবাহ করা যাবে না, অথবা তার সাথে কোন বাদী গ্রহণ করা যাবে না। নারীর স্বার্থে এসব শর্ত পুরো করা জরুরি। স্বামী যদি এসব শর্ত পুরো না করে, তবে তার জন্য বিবাহ ভঙ্গ করার অধিকার রয়েছে। ওমর ইবনুল খাত্তাব, সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস, মায়াবিয়া ও আমর ইবনুল আস –রাদিআল্লাহু আনহুম– প্রমুখ সাহাবাদের থেকে এ মত বর্ণনা করা হয়েছে। (মুগনি : ৯/৪৮৩)
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া –রাহিমাহুল্লাহ–কে জনৈক ব্যক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল। ওই ব্যক্তি তার স্ত্রীকে ওয়াদা দিয়েছে, তার সাথে কাউকে বিবাহ করবে না, তার বাড়ি থেকে তাকে বের করবে না এবং সে তার মার কাছেই থাকবে। এ শর্তে সে তার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এসব শর্ত পুরো করা কি জরুরি? এর বিপরীত হলে স্ত্রী কি বিবাহ ভঙ্গ করার অধিকার হাসিল করবে ?
তিনি উত্তর দেন, হ্যাঁ, ইমাম আহমদ, অনেক সাহাবি ও তাদের অনুসারীদের মতে এ শর্ত ও এ ধরনের অন্যান্য শর্ত করা দুরস্ত আছে। যেমন ওমর ইবনুল খাত্তাব, আমর ইবনুল আস, কাজী শুরাই, আওযায়ী ও ইসহাক।
ইমাম মালেকের মাযহাব হচ্ছে, নারী যদি শর্ত করে, যদি তার সাথে বিবাহ করা হয়, অথবা তার সাথে বাদী গ্রহণ করা হয়, তবে তার ব্যাপারটি তার উপরই ন্যস্ত হবে, তার ব্যাপারে সিদ্ধান্তের ভার তার উপরই বর্তাবে। অর্থাৎ এ জাতীয় শর্ত বৈধ। এর ব্যত্যয় ঘটলে নারী বিবাহ ভঙ্গ করার অধিকার হাসিল করবে। এ মতটি ইমাম আহমদের মতের ন্যায়। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
( إن أحق الشروط أن توفوا به ما استحللتم به الفروج )
ওমর –রাদিআল্লাহ আনহু – বলেছেন, (مقاطع الحقوق عند الشروط)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিবাহের শর্তের ব্যাপারে বলেছেন, অন্য যে কোন শর্তের চেয়ে এ শর্তগুলো অগ্রাধিকার রাখে। (ফতোয়াল কুবরা: ৩/৯০)
দ্বিতীয়ত :
বিবাহের মুহূর্তে যদি এসব শর্ত করা হয়, তবে এ শর্তগুলো পুরো করা জরুরি। আর যদি বিবাহের পর এসব সংঘটিত হয়, তবে তা শুধু ওয়াদার মর্যাদা পাবে, স্ত্রীকে বিবাহ ভঙ্গের অধিকার দেয়া হবে না। কিন্তু স্বামীর জন্য এসব ওয়াদা পুরো করা ওয়াজিব। কারণ, আল্লাহ তাআলা ওয়াদা পূরণ করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। তিনি বলেন :
(وَأَوْفُوا بِالْعَهْدِ إِنَّ الْعَهْدَ كَانَ مَسْؤُولاً) الإسراء/34
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
(اضمنوا لي ستا من أنفسكم أضمن لكم الجنة : اصدقوا إذا حدثتم ، وأوفوا إذا وعدتم ، وأدوا إذا ائتمنتم ، واحفظوا فروجكم ، وغضوا أبصاركم ، وكفوا أيديكم)
তোমরা নিজেরা নিজেদের জন্য ছয়টি জিনিসের জিম্মাদার হয়ে যাও, আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হব : যখন কথা বলবে সত্য বলবে; ওয়াদা করলে পুরো করবে; আমানত রাখা হলে যথাযথ আদায় করবে ; তোমরা নিজদের যৌনাঙ্গকে হিফাজত করবে ; তোমরা দৃষ্টি অবনত রাখবে; এবং নিজদের হাত বিরত রাখবে। (আহমদ : ২২২৫১) (সহিহ আল–জামে গ্রন্থে : ১০১৮) আল–বানি হাদিসটি হাসান বলেছেন।
ওয়াদা ভঙ্গ করা মুনাফিকদের আলামত, এ হিসেবেও তা পুরো করা জরুরি।
The post আর কাউকে বিয়ে করা যাবে না, কোনো নারীর এ জাতীয় শর্ত পূরণ করা কি জরুরি? appeared first on Amar Bangla Post.