যৌন কেশ মুণ্ডন সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমেই জানা দরকার যৌনকেশ কোনগুলো। প্রকাশ থাকে যে, নারী ও পুরুষের নাভীর নিম্ন দেশে গুপ্তাঙ্গের আশে-পাশে গজানো কেশগুচ্ছকে যৌনকেশ বলা হয়।
ইসলামে যৌন কেশ মুণ্ডনের গুরুত্ব
যৌন কেশ মুণ্ডনের মত একান্ত ব্যক্তিগত ও সামান্য বিষয়ও ইসলামের জীবন বিধানের আওতাভুক্ত। নিঃসন্দেহে এটা ইসলামের পরিপূর্ণতার এক জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ। ইসলাম এভাবে ছোট খাট ব্যক্তিগত ব্যাপার থেকে নিয়ে আন্তর্জাতিক সকল সমস্যার সমাধান প্রদান করেছে। হতভাগা আমরা বুঝতে পারি না, ইসলাম সৃষ্টির তরে মহান স্রষ্টা আল্লাহর কত বড় নিয়ামত।
ইসলামী জীবন বিধানে যৌনকেশ মুণ্ডনের প্রতি জোর তাগিদ আরোপ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এটা মানব স্বভাব প্রকৃতগত গুণ। সকল নবীর সুন্নাত। আমরা জানি মানুষের শরীরের যে সমস্ত জায়গায় অধিক পরিমাণে ও দ্রুত ময়লা জমে থাকে নাভীর নিম্নদেশ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থান। আমরা এ স্থান প্রতিদিন পরিস্কার করে থাকলেও যৌনকেশ গুচ্ছের গোড়ায় ধীরে ধীরে ময়লার যে সূক্ষ্ম আস্তরণ জমে তা কিন্তু পরিস্কার করা সম্ভব হয়না। এজন্যই ইসলাম অনূর্ধ চল্লিশ দিনের মধ্যে একবার মুণ্ডন করার বা যেকোন উপায়ে বিনাশ করার নির্দেশ দিয়েছে।
মহানবী (সাঃ) আমাদের এ কর্মের প্রতি উৎসাহ দিতে যেয়ে বলেনঃ. আরবী……. “পাঁচটি বিষয় নবীদের সুন্নাত সমূহের অন্তর্ভুক্তঃ যৌনকেশ মুণ্ডন করা, খৎনা করা, গোঁফ খাট করা, নখ কাটা।
মুসলিম শরীফের হাদীসেও এরূপ কথা আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেনঃ
আরবী…..
অর্থঃ দশটি বিষয় সকল নবীদের সুন্নাত। তিনি সে দশটির মধ্যে যৌনকেশ মুণ্ডনের কথাও উল্লেখ করেছেন।
যৌনকেশ মুণ্ডনের বিধানঃ
আমাদের মাঝে অনেকে মনে করেন-যৌনকেশ মুণ্ডোন করা ফরয। চল্লিশ দিন পার হয়ে গেলে নামায রোযা কিছুই কবুল হবে না। আসলে অতি সতর্কবোধ থেকে এ ধারণা জন্ম হয়েছে। সতর্কতা অবশ্যই বাঞ্ছনীয় এ প্রশংসনীয়। কিন্তু আমাদের প্রচলিত ধারণাটি ভুল।
সকল সাহাবা, তাবেয়ীন ও অধিকাংশ উলামাদের মতে যৌনকেশ মুণ্ডন করা সুন্নাত। যৌনকেশ মুণ্ডন না করে চল্লিশ দিন অতিবাহিত করা মাকরূহ (ঘৃণিত ব্যাপার)। নাইলুল আওতার প্রণেতা আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেনঃ.
“যৌনকেশ মুণ্ডন করা সুন্নাত হওয়ার ব্যাপারে সবাই একমত”।
এখানে সবাই একমত বলতে সকল সাহাবী ও তাবেয়ীনদের বুঝানো হয়েছে। অন্যথায় দেখা যায় পরবর্তীদের কেহ কেহ এটাকে সুন্নাতও ভাবেননি।
যেমন ইবনু কুদামাহ বিখ্যাত ফিকাহ গ্রন্থ আল মুগনীতে লিখেনঃ. “যৌনকেশ মুণ্ডন করতা মুস্তাহাব। কেননা এটা স্বভাব প্রকৃতিগত এক গুণ। যেহেতু যৌনকেশ মুন্ডন না করলে এটা কদর্য রূপ ধারণ করে এজন্য মুন্ডন করে নেয়াই ভাল। (আল-মুগনী প্রথম খন্ড ৮৬ পৃঃ).
মুন্ডন করার মেয়াদঃ
মুণ্ডন করার নির্দিষ্ট সর্বোচ্চ মেয়াদ হল চল্লিশ দিন। যেমন সহীহ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয়ঃ. “আনাস (রাঃ) বলেনঃ আমাদের জন্য গোঁফ কাটা, নখ কাটা, বগলের লোম উপড়িয়ে ফেলা ও যৌনকেশ মুণ্ডন করার ব্যাপারে সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, তা হচ্ছে চল্লিশ দিন। (মুসলিম, ইবনু মাযাহ)”
এ হাদীসটি আরও বর্ণিত হয়েছে আহমদ, তিরমিযি, নাসায়ী ও আবু দাউদে। তাদের বর্ণনায় ‘নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে’ এর স্থলে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) নির্ধারণ করে দিয়েছেন। নিম্ন মেয়াদের কোন ধরা বাধা নিয়ম নেই। বরং ইচ্ছ’র উপর । তবে কতিপয় উলামার মতে, প্রতি বৃহস্পতিবার নাভীর তলদেশ মুণ্ডন করা সুন্নাত। আবার অনেকে বলেনঃ গোঁফ, নখ কাটার সময় নাভীর তলদেশ মুণ্ডন করে নেয়াও সুন্নাত।
কেননা হাদীসে এসেছেঃ আব্দুল্লাহ বিন আমর সাহাবী (রাঃ) বলেনঃ. “নবী করীম (সাঃ) প্রতি জুমুআয় গোফ, নখ কেটে নিতেন। বাগভী তদীয় সনদে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।
মুণ্ডন শর্ত নয়। যে কোন উপায়ে নাভীর তলদেশে পরিস্কার করলে বিধান পালন হয়ে যাবে। যেমন আল্লামা ইবনু কুদামাহ বলেনঃ. যৌনকেশ পরিস্কার করার ব্যাপারে যে কোন পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে। এতে কোন অসুবিধা নেই। কেননা উদ্দেশ্যে তো একটাই আর তা হল বিনাশ করা। (আল মুগনী ১ম খন্ড ৮৬ পৃঃ).
সুতরাং কেহ যদি কেচি দিয়ে গোড়া থেকে উত্তমরূপে কেটে ফেলেন তবুও চলবে। অনুরূপভাবে চুনা বা লোশন জাতীয় মেডিসিন ব্যবহার করেও পরিস্কার করা যেতে পারে।. মুহাদ্দিস খাল্লাল তদীয় সনদে নাফে’ থেকে একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন। হাদীসটি এরূপ-নাফে’ (রহঃ) বলেনঃ আমি আব্দুল্লাহ বিন উমারের বগলের লোম পরিস্কার করার জন্য চুনা লাগিয়ে দিতাম। কিন্তু যখন তিনি নাভীর নিম্নদেশ পরিস্কার করার ইচ্ছা করতেন তখন তিনি নিজ হাতেই তা করতেন।
আপনি পড়ছেনঃ পরিপূর্ণ স্বামী স্ত্রীর মধুর মিলন বই থেকে।
আরো পড়ুনঃ যৌনকেশ পরিস্কার করতে কি ব্যবহার করবেন? ব্লেড নাকি লোমনাশক ক্রীম?
The post ইসলামে যৌন কেশ পরিস্কার করার বিধান appeared first on Amar Bangla Post.