Quantcast
Channel: Amar Bangla Post
Viewing all articles
Browse latest Browse all 2081

অপুর বাসর রাত [ বাসর রাতের গল্প ১]

$
0
0
-রাত প্রায় ১২টা ছুঁই ছুঁই!
–আজ অপুর বাসর রাত।
–বন্ধুদেরকে বিদায় দিয়ে মাথার টোপরটা খুলে বিমালার পাশে বসল ও। বিমালার মাথার উপর থেকে ঘোমটা টা সরাতেই বিমালা একহাত পিছিয়ে বলতে লাগলো–
একদম হাত দিবেননা আমার গায়ে! আমার কোনো ইচ্ছে ছিলনা এই বিয়েতে! একটুও স্পর্শ করবেননা বলে দিচ্ছি। নয়তো খুব খারাপ হয়ে যাবে।
— অপু কোনো কথা না শুনেই ওর শাড়ীতে হাত দেয়। বিমালা প্রায় চিৎকার করতে যাচ্ছিলো। কিন্তু নাহ্! অপু কিছু করেনা ওকে। শুধু মাথার ঘোমটাটা টেনে আবার আগের মতো লম্বা করে টেনে দেয় ও!
— রাত দুটো বেজে গেছে। অথচ এখনো ঘুম আসছেনা অপুর চোখে! কেমন যেন ছটপট করছে ও। হঠাৎ ই বিমালার দিকে নজর পড়লো ওর! গভীর ঘুমের রাজ্য হারিয়ে গেছে বিমালা! কালার লাইটের নিয়ন আলোতে সত্যি ই অপ্সরীর মতো লাগছে মেয়েটাকে! ইচ্ছে হচ্ছে এখনি ওকে একটু ছুঁয়ে দিতে! তবুও কিছু করার নেই! কারন বিমালার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ওকে টাচ করা ভাল ঠেকছেনা অপুর কাছে।
— ঊষার আলো ফুটতেই ঘুম ভাঙ্গে অপুর! বিমালার তখনও বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। বিমালার ঘুমের ডির্স্টাব হবে দেখে প্রায় নিঃশব্দে রুম থেকে বেরিয়ে যায় অপুর। মা অনেক আগেই মারা গেছে। অসুস্থ বাবাকে নিয়ে এতোদিন একাই ছিলো ও! কাজের বুয়া তার গ্রামের বাড়ী গেছে,আসতে সময় লাগবে। হোটেল থেকে নাস্তা এনে দেখে বিমালা ফ্রেশ হয়ে বসে আছে।
বাবার রুমে নাস্তা দিয়ে এসে বিমালার পাশে নাস্তা নিয়ে বসলো ও। কিন্তু কিছুতেই এক টুকরো রুটিও অপু খাওয়াতে পারলোনা ওকে। অপু কিছু না বলে চুপচাপ উঠে গিয়ে,ওর জীবনের উপর লেখা ডায়েরীটা বের করলো। ঘরে রঙ্গিন কাগজের অভাব ছিলনা। সেখান থেকে নীল রঙ্গের একটা কাগজ দিয়ে ডায়েরীর উপর একটা কভার দিয়ে দেয় ও! কার কাছ থেকে যেনো ও শুনেছিল একদিন,কষ্টের রং নাকি নীল! তারপর ডায়েরীর প্রথম পৃষ্ঠায় লিখলো,
“কষ্টের প্রতীক হিসেবে ডায়েরীর কভারে নীল রঙ্গের কাগজ লাগালাম”
আর ভিতরের পৃষ্ঠায় লেখে,
“অন্যসব বিবাহিত পুরুষের মতো,আমার লাইফেও বাসর রাত এসেছিলো। কিন্তু তা অন্যভাবে। তবুও আমার কোনো দুঃখ নেই। কারন বিমালা সত্যি ই খুব মায়াবীনি!”
— দুপুরে লান্স করলেও রাতে আবার ডিনার না করেই শুয়ে পড়ে বিমালা। অপু বেশী জোর করেনা। কারন ও এর মাঝেই বুঝে গেছে,বিমালা খুব জেদী মেয়ে। যা বলে তাই করে ও! ডায়রীটা আবার খুলে বসল অপু। আর তাতে ছোট করে লিখে রাখে,
“সকালের মতো এখন রাতেও না খেয়ে রয়েছে বিমালা। খুব কষ্ট হচ্ছে ওর জন্য!”
— আরও কিছু লিখতে যাচ্ছিলো….! এমন সময় দেখে হঠাৎ ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে শুরু করছে বিমালা। খুব অপরাধী মনে হচ্ছে নিজেকে আজ অপু। ডায়েরীটা বন্ধ করে ধীর পায়ে বিমালার সামনে দাঁড়ায় ও। তারপর দুহাত জোড় করে,বিমালাকে বলে—
জানি আপনাকে আমি কষ্ট দিচ্ছি। আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস না করেই এভাবে আপনাকে আমার বিয়ে করা উচিৎ হয়নি। কিন্তু কি করবো বলেন? কিছুদিন আগেই বাবার ক্যান্সার ধরা পড়লো। ডক্টর বলছেন,বড়জোর আর একমাস বাঁচবেন বাবা। তাই বাবাকে তাঁর পুত্রবধূ দেখাতে তাড়াহুড়ো করে মাত্র এক সপ্তাহে বিয়েটা হয়ে গেলো। আমার মা সেই ছোটবেলায় মারা গেছেন। আমার ক্ষতি হতে পারে ভেবে বাবা আর বিয়েও করেননি! প্লিজ আপনার কাছে হাতজোড় করে অনুরোধ করছি,শুধু এই মুমূর্ষু মানুষটির জন্য একয়টা দিন উনার পুত্রবধূ হিসেবে অভিনয় করে যান। কথা দিচ্ছি,এরপর আমি আপনাকে আপনার ভালোবাসার মানুষটির কাছে নিজ হাতে তুলে দিবো। প্লিজ ফিরিয়ে দিবেননা!
— অপুর কথাগুলো শুনে আরও জোরে কাঁদতে আরম্ভ করে বিমালা। তারপর অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে আনমনে বলতে থাকে,
আমার ভালোবাসার মানুষটি আজ আমাকে ছেড়ে অনেক দূরে। অন্যর সাথে সুখেই আছে। খুব স্বার্থপর ও!
— এসব কিছুই ডায়েরীর পাতায় বন্ধি করে রাখে অপু!
–এভাবেই প্রায় ১৫দিন কেটে যায়। আর ডায়রীর একটার পর একটা পাতা পূর্ণ হতে থাকে! ছুটি শেষে নিয়মিত অফিস যাওয়া ও এখন শুরু করেছে ও।
— আজ শুক্রবার!
— অফিস যাওয়ার তাড়া নেই! ফজরের নামায পড়ে তাই আবার ঘুমিয়েছে ও। কিছুক্ষন পর চোখে সূর্যের উজ্জ্বল আলো পড়তেই জেগে ওঠে অপু। ঘুম ঘুম চোখে বিমালা দেখে অবাক হয়ে যায় ও! বিমালা আজ নিজেই নাস্তা বানিয়ে ওর জন্য নিয়ে এসেছে। তারপর যাওয়ার সময় ওর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে মুচকী হেসে বলে যায়,বাবার নাস্তাটাও দিয়ে এসেছি। নিজের অজান্তেই কয়েক ফোঁটা আনন্দ অশ্রু ঝরে পড়ে অপুর চোখ থেকে। নাস্তা শেষ করেই হঠাৎ মনে হয়,আজতো বাবাকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাওয়ার তারিখ। তাই তাড়াতাড়ি রেডী হয়ে বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে চলে যায় ও।
— সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে ফেরে অপুর! রুমে ঢুকে সে অবাক হয়ে যায়। বিমালা খুব সেজেছে। সত্যি ওকে দেখলে পৃথীবির কোনো চোখ দৃষ্টি ফেরাবেনা আজকে। তবুও বিমালা খারাপ কিছু ভাববে ভেবে চোখ ফিরিয়ে নেয় অপু। হোটেল থেকে নয় রাতে বিমালার রান্না করা খাবার ই খায় ও।
— বিমালা এতো পরিবর্তনেরর কথা ডায়েরীতে লিখতে গিয়ে ডায়েরীটা হাতে নিয়েই অবাক হয়ে যায় অপু। ডায়েরীটে নীল কভারের পরিবর্তে সেখানে একটা সাদা-কালো রঙ্গের কভার দেখতে পায় ও। আর প্রথম পৃষ্ঠার লাইনটা কেটে তার একটু নিচে লিখা,
“আর কষ্টের নীল রং নয়,এবার প্রিয় মানুষটির প্রিয় রঙ্গ দিয়েই ডায়েরীর কভারটা দিয়ে দিলাম। আশা করি তা সুখের প্রতীক হবে!”
মুহূর্তের জন্য কোথায় যেনো হারিয়ে যায় অপু। শক্ত করে বুকের মাঝে চেপে ধরে ডায়েরীটা ও। আড়াল থেকে সব দেখতে পায় বিমালা!
— মাঝরাত!
— আদনান বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। কিছুতেই ঘুম আসছেনা। বার বার শুধু উর্মির মুখটা ভেসে উঠছে ওর সামনে!
— এমন সময় কাঁধে একটা কোমল স্পর্শ অনুভব করে ও। পিছনে ফিরে ভূত দেখার মতোই চমকে উঠে। একি! বিমালা এতো রাতে এখানে!
কিছু বলার আগেই আদনানের হাত ধরে টান দেয় বিমালা।
আর এ কি করছেন আপনি?
— বিমালা হাত দিয়ে অপুর মুখ চেপে ধরে। আর বলে,এখন থেকে আর আপনি নয়,তুমি! কি করছো এখানে?
চাঁদ দেখছি!
তাই? হুম! অনেক চাঁদ দেখা হয়েছে। এবার ভিতরে চলো আমাকে দেখবে!
— বিমালা টেনে নিয়ে খাটে বসায় অপু। আজকে আর কালার লাইটটাও জ্বলেনা ওদের রুমে! বিমালা দুহাতে অপুর গলা জড়িয়ে ধরে বলে-
এই আর দেরী করছো কেনো? রাত তো প্রায় শেষ হয়ে এলো!
— অপ্রস্তুত হলেও আদনান ও আর পারেনা,বিমালা এরকম উষ্ণ আহবানে সাড়া না দিয়ে থাকতে!
— এরপর কি হয়েছিলো তা না হয় সবার অজানাই থাক। কারন সে গল্পটা যে একান্তই ওদের নিজের। সে গল্পটা যে ওদের দুজন দুজনকে আপন করে নেওয়ার একটি পবিত্র ভালোবাসার গল্প!!!

লেখক :- মাটির মানুষ মিজান

The post অপুর বাসর রাত [ বাসর রাতের গল্প ১] appeared first on Amar Bangla Post.


Viewing all articles
Browse latest Browse all 2081

Trending Articles