প্রিয় ভাই আমার! তুমি কি জান না যে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার কাছে তোমার জীবনের চেয়েও অধিক প্রিয় হওয়া উচিৎ? আল্লাহর কসম! প্রিয় ভাই আমার! অবশ্যই নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার কাছে তোমার জীবনের চেয়েও অধিক প্রিয় হতে হবে। আর এটা সম্ভব হবে তাঁকে অনুসরণ ও অনুকরণ করার দ্বারা এবং তাঁর বশ্যতা স্বীকার করার মাধ্যমে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ٱلنَّبِيُّ أَوۡلَىٰ بِٱلۡمُؤۡمِنِينَ مِنۡ أَنفُسِهِمۡۖ﴾ [الاحزاب: ٦]
“নবী মুমিনদের কাছে তাদের নিজেদের চেয়েও ঘনিষ্টতর।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৬]
ইবনুল কায়্যেম রহ. বলেন: “আর এ আয়াতটি এ কথার ওপর দলীল যে, যার কাছে তার নিজের চেয়েও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘনিষ্টতর না হবেন, সে মুমিনগণের অন্তর্ভুক্ত নয়, আর এ ঘনিষ্টতা ও শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়টি কতগুলো বিষয়কে শামিল করে:
তন্মধ্যে একটি হলো: বান্দার কাছে তার নিজের জীবনের চেয়েও তিনি অধিক প্রিয় হবেন। কারণ, ঘনিষ্টতার মূল কথা হলো মহব্বত করা, আর বান্দার জীবনটি তার কাছে অন্যের চেয়ে অনেক বেশি প্রিয়, এটা সত্ত্বেও ওয়াজিব হলো তার কাছে তার জীবনের চেয়েও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘনিষ্টতর ও অধিক প্রিয় হওয়া। কারণ, এর মাধ্যমেই তার পক্ষে ঈমান নামক বস্তুটি অর্জন করা সম্ভব হবে।
* আর এ ঘনিষ্টতা ও মহব্বতের কারণে আবশ্যক হয়ে পড়ে তাঁর বশ্যতা স্বীকার করা, আনুগত্য করা, তাঁকে মেনে নেওয়া এবং তাঁর সিদ্ধান্তের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা; আর তাঁর নির্দেশের প্রতি নিজেকে সঁপে দেওয়া এবং সকল কিছুর উপর তাঁকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
তন্মধ্যে আরেকটি হলো: মৌলিকভাবে বান্দার জন্য তার নিজের উপর সিদ্ধান্ত দেওয়ার অধিকার থাকবে না; বরং তার নিজের ওপর হুকুম চলবে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের, তিনি তার ওপর হুকুম বা সিদ্ধান্ত দিবেন এমন জোরালোভাবে, যা মনিব কর্তৃক গোলামের ওপর দেওয়া সিদ্ধান্ত এবং পিতা কর্তৃক সন্তানের ওপর দেওয়া সিদ্ধান্তের চেয়ে অনেক বেশি শ্রেষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ হবে। সুতরাং তার জন্য কোনো বিষয়ে কখনও তার নিজের মধ্যে হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই, যে বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হস্তক্ষেপ করেছেন, যিনি তার (বান্দার) কাছে তার নিজের চেয়েও ঘনিষ্টতর।
সুতরাং আশ্চর্যের বিষয়! বান্দার জন্য কিভাবে এ ঘনিষ্টতা অর্জিত হবে, অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিচারকের পদমর্যাদা ও অবস্থান প্রসঙ্গে যা নিয়ে এসেছেন, সে তা থেকে দূরে সরে যায় এবং অন্যের বিচার-ফয়সালায় সে সন্তুষ্ট হয়। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে প্রশান্তি পাওয়ার চেয়ে সে তার (অন্য বিচারকের) কাছে অনেক বেশি প্রশান্তি অনুভব করে, আর সে ধারণা করে যে, তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের) আলোর মশাল থেকে সঠিক পথ পাওয়া যাবে না, বরং তা পাওয়া যাবে যুক্তি-বুদ্ধির নির্দেশনা থেকে। আর তিনি যা নিয়ে এসেছেন, তা নিশ্চিত জ্ঞানের ফায়দা দেয় না …ইত্যাদি ইত্যাদি নানা কথা, যা তাঁর প্রতি এবং তিনি যা নিয়ে এসেছেন তার প্রতি অবজ্ঞা ও অবহেলাই বুঝায়, আর এটাই হচ্ছেবড় পথভ্রষ্টতা। বান্দার কাছে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘনিষ্টতর হওয়ার এ বিষয়টি প্রমাণের ক্ষেত্রে তিনি ভিন্ন বাকি সব বর্জন করা এবং সকল বিষয়ে তাঁকে গ্রহণ করা ছাড়া আর কোনো পথ নেই। আর তার বিপরীতে বলা প্রত্যেকের কথাকে তার কথার কাছে পেশ করা, ফলে যদিতাঁর কথা সেটারবিশুদ্ধতার পক্ষেসাক্ষ্যদেয়, তাহলেসেটা গ্রহণ করবে। আর যদি তাঁর কথা সেটাবাতিলবাঅচলবলেসাক্ষ্যদেয়, তাহলেতা প্রত্যাখ্যানকরবে। আর যদি নবীর কথার মাধ্যমে সেটার বিশুদ্ধতা কিংবা বাতিল হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট না হয় তখন অন্যের এসব কথাকে কিতাবধারী (ইয়াহূদী-নাসারা)দের কথার মত মনে করতে হবে; যতক্ষণ না তার কাছে কোনো কিছু স্পষ্ট হবে ততক্ষণ সে ব্যাপারে আমল করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
সুতরাং যে ব্যক্তি এ পদ্ধতি অনুসরণ করবে, সে ব্যক্তির জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে হিজরতের যাত্রাপথটি সঠিক বলে বিবেচিত হবে এবং তার ইলম (জ্ঞান) ও আমল সঠিক হবে, আর চতুর্দিক থেকে সঠিক বিষয়গুলো তার দিকে ছুটে আসবে[4]।-আরো পড়ুন
The post নবী তোমার কাছে তোমার নিজের জীবনের চেয়ে অধিক ঘনিষ্টতর!! appeared first on Amar Bangla Post.