বর্ণনা: সুন্নাতে নববী হলো ইসলামী শরী‘আতের দ্বিতীয় উৎস, যা আল-কুরআনে বর্ণিত বিষয় গুলোকে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করে এবং হালালকে হালাল করার ব্যাপারে এবং হারামকে হারাম করণের ব্যাপারে বক্তব্য প্রদান করে, যে ব্যাপারে মূলতঃ আল-কুরআনের কোনো ‘নস’ বা বক্তব্য বর্ণিত হয় নি।
এ আধুনিক যুগে এসে বিভিন্ন দল বা গোষ্ঠীর আত্মপ্রকাশ ঘটেছে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ সুন্নাহকে বিলকুল অস্বীকার বা প্রত্যাখ্যান করে এবং আল-কুরআনকেই যথেষ্ট বলে মনে কর, আরেক দল নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের ব্যাপারে তার প্রবৃত্তি ও চিন্তা-ভাবনাকে বিচারক বা সালিস মানে। অতঃপর সে তা (সুন্নাত) থেকে তার ইচ্ছা মত তাই গ্রহণ করে, যা তার বিবেক-বুদ্ধির কাছে সুবিধাজনক হয়। আরেক দল সুন্নাতকে খুব অবজ্ঞা ও অবহেলা করে। ফলে যখনই তাকে সুন্নাত সংশ্লিষ্ট কোনো কিছুর দিকে আহ্বান করা হয়, তখন সে বলে: এটা তো সুন্নাত, ফরয নয়।
এ ছোট্ট পুস্তিকাটিতে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন তা আঁকড়ে ধরার গুরুত্ব আলোচনা করা হয়েছে।
লেখকবৃন্দ : আদেল ইবন আলী আশ-শিদ্দী – আহমাদ ইবন উসমান আল-মাযইয়াদ
অনুবাদ: মো: আমিনুল ইসলাম
সম্পাদনা: আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
উৎস: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ
শিরোনাম |
ভূমিকা |
আল-কুরআনের ভাষায় সুন্নাহর অবস্থান |
সুন্নাহর ভাষায় বা সুন্নাহর মধ্যে সুন্নাহর অবস্থান |
নবী তোমার কাছে তোমার নিজের জীবনের চেয়ে অধিক ঘনিষ্টতর!! |
সুন্নাতের অনুসরণ করার প্রশ্নে পূর্ববর্তী ভালো মানুষজনের অবস্থান |
প্রথমত: সাহাবীগণ (উপরের লিঙ্কটি পাবেন) |
দ্বিতীয়ত: তাবে‘ঈগণ ও তাদের পরবর্তী প্রজন্ম (উপরের লিঙ্কটি পাবেন) |
সুন্নাহ সম্পর্কে জাহেল বা অজ্ঞ ব্যক্তির সাথে কথপোকথন |
সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্যের কারণসমূহ (উপরের লিঙ্কটিতেই এ লেখাটি পাবেন) |
ভূমিকা
بسماللهالرحمنالرحيم
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যনিবেদিত, যিনি সকল ভাষায় প্রশংসিত, আর সালাত ও সালাম আদনান বংশীয় নবী আমাদের নবী মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি, যত দিন পাখি গান গায় এবং আযান উচ্চতায় ছড়িয়ে পড়ে।অনুরূপ তাঁর পরিবার-পরিজন ও সঙ্গী-সাথীদের প্রতিও।
অতঃপর…….
সুন্নাতে নববী হলো ইসলামী শরী‘আতের উৎসসমূহের মধ্যে দ্বিতীয় উৎস, আল-কুরআনুল কারীমের পরে যার অবস্থান, আর তা ইসলামের আকীদা-বিশ্বাস, ইবাদত, আদব-কায়দা ও বিধিবিধানগুলো সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দেয়।আর তা আল-কুরআনে বর্ণিত বিষয়গুলোকে সুসাব্যস্ত করে ও তাকীদ দেওয়ার মাধ্যমে সুদৃঢ় করেঅথবা তার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করে; যেমনিভাবে তা স্বতন্ত্রভাবে শরী‘আতের বিধিবিধান বর্ণনা করে। আর তা হালালকে হালাল করার ব্যাপারে এবং হারামকে হারাম করণের ব্যাপারে সুস্পষ্ট বক্তব্য প্রদান করে, যে ব্যাপারে আল-কুরআনের কোনো ‘নস’ বা বক্তব্য বর্ণিত হয়নি[1]।
এই কথাগুলোর প্রেক্ষাপট হচ্ছে, এ আধুনিক বা শেষ যুগে এসে বিভিন্ন দল বা গোষ্ঠীর আত্মপ্রকাশ ঘটেছে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ সুন্নাহকে বিলকুল অস্বীকার বা প্রত্যাখ্যান করে বসেছে এবং আল-কুরআনকেই যথেষ্ট বলে মনে করছে, এ দলটি মূলত কুরআন ও সুন্নাহ উভয়কেই অস্বীকার করেছে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ﴾ [الحشر:٧]
“রাসূল তোমাদেরকে যা দেয়, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করে, তা থেকে বিরত থাক।” [সূরাআল-হাশর,আয়াত: ৭]
আরেক দল নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের ব্যাপারে তার প্রবৃত্তি ও চিন্তাভাবনাকেই বিচারক বা সালিস বানিয়ে নিয়েছে। ফলে তারা সুন্নাত থেকে তাদের ইচ্ছা তাই গ্রহণ করে, যা তাদের বিবেক-বুদ্ধির কাছে সুবিধাজনক হয়, পক্ষান্তরে যা তাদের বিবেক-বুদ্ধির কাছে সুবিধাজনক না হয় তারাতা তাদের ইচ্ছামত প্রত্যাখ্যান করে।এভাবে তারা মুসলিমগণের মধ্যে ফিতনার সৃষ্টি করছে ফলে সাধারণ জনগণ সুন্নাতকে বর্জন ও তার নিন্দা বা সমালোচনা করার সাহস পায়।
আর অপর আরেক শ্রেণি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসসমূহের ওপর অদ্ভুত ব্যাখ্যাসমূহ ও পাশ্চাত্যের অপব্যাখ্যাসমূহ আরোপ করে নিয়েছে, এর দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য হলো ইসলাম এবং আধুনিক পাশ্চাত্য সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে কাছাকাছি নিয়ে আসা, অথচ ঐসব লোক ভুলে গেছেআল্লাহ তা‘আলার সে বাণী, যেখানে তিনি বলেছেন:
﴿وَلَن تَرۡضَىٰ عَنكَ ٱلۡيَهُودُ وَلَا ٱلنَّصَٰرَىٰ حَتَّىٰ تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمۡۗ قُلۡ إِنَّ هُدَى ٱللَّهِ هُوَ ٱلۡهُدَىٰۗ وَلَئِنِ ٱتَّبَعۡتَ أَهۡوَآءَهُم بَعۡدَ ٱلَّذِي جَآءَكَ مِنَ ٱلۡعِلۡمِ مَا لَكَ مِنَ ٱللَّهِ مِن وَلِيّٖ وَلَا نَصِيرٍ ١٢٠﴾ [البقرة: ١٢٠]
“আর ইয়াহূদী ও নাসারারা আপনার প্রতি কখনো সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না আপনি তাদের মিল্লাতের অনুসরণ করেন। বলুন, ‘নিশ্চয় আল্লাহর হিদায়াতই প্রকৃত হিদায়াত’। আর যদি আপনি তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করেন আপনার কাছে জ্ঞান আসার পরও, তবে আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার কোনো অভিভাবক থাকবে না এবং থাকবে না কোনো সাহায্যকারীও।” [সূরাআল-বাকারা,আয়াত: ১২০]
আর চতুর্থ দল সুন্নাতকে খুব অবজ্ঞা ও অবহেলা করে।ফলে যখনই তাকে সুন্নাত সংশ্লিষ্ট কোনো কিছুর দিকে আহ্বান করা হয়, তখন তারা বলে: এটা তো সুন্নাত, ফরয নয়। সুতরাং তুমি আমাকে তা পালনে বাধ্য করার চেষ্টা করো না!! আবার ঐসব লোকের অনেকে নিজেদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করে এবং মুমিনগণের পথ থেকে দূরে সরে গিয়ে বহু ওয়াজিব বিষয়কে সুন্নাত মনে করে এবং অনেক হারাম জিনিসকে মাকরূহ মনে করে। ফলে তাদের কাছে জামা‘আতে সালাত আদায় করার বিষয়টি সুন্নাত, ওয়াজিব নয়, আর তাদের মতে সালামের জবাব দেওয়ার বিষয়টি সুন্নাত, ওয়াজিব নয়। আর তাদের মতে দাড়ি মুণ্ডন করাটা মাকরূহ, হারাম নয়। আর অনুরূপভাবে টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা, ধুমপান করা ইত্যাদি বিষয়েওএ ধরনের মতামত পেশ করে থাকে।
আমরা যদি ধরেও নিই যে, এসব বিষয় সুন্নাতের সীমা ছাড়িয়ে যায় না এবং মাকরূহের সীমাও অতিক্রম করে না, তাহলেও আমরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের প্রতি আমল করব না কেন? আর কেনইবা আমরা মাকরূহের অন্ধকার সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়ব? সাহাবায়ে কিরামগণ যখন কোনো বিষয়ের বিধান জানতে পারতেন, তখন তা সুন্নাত হলে কি তা বর্জন করতেন? আর মাকরূহ হলে তা আমল করতেন? কেন আমরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের সাথে যথাযথ আদব রক্ষা করে অবস্থান করব না? আর কেন আমরা সুন্নাতকে সম্মান করব না, গ্রহণ করব না এবং আমাদের প্রত্যেকটি বিষয় ও কাজের সাথে তার সমন্বয় সাধন করব না? কেন আমরা অধিকাংশ সুন্নাতকে তুচ্ছ ও অবহেলা করব?কেন আমরা মনে করব যে, আমাদের কাছে সুন্নাত মানতে চাওয়া হয়নি?-আরো পড়ুন
* * *
[1]দেখুন: ‘দা‘ওয়াতুল ইসলাম’ পৃ. ২৫৯।
The post রাসূলুল্লাহ সা. তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা গ্রহণ কর appeared first on Amar Bangla Post.