Quantcast
Channel: Amar Bangla Post
Viewing all articles
Browse latest Browse all 2081

পিরিয়ড ও পোশাক সম্পর্কে আপনার অসুস্থ মানসিকতা বদল করুন

$
0
0

আমার ঘরে যে ছোট বোনটা আছে সে মাঝেমাঝে পেট ব্যথার বাহানা করে ক্লাসে যাওয়া থেকে বিরত থাকতো, মাস শেষে সেও পিরিয়ডের ব্যথায় জর্জরিত হয়।

তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো আমি তাকে কোনোদিনও জিজ্ঞাস করিনি পিরিয়ড বলতে কি বুঝায়। পিরিয়ড হলে ব্যথার পরিমাণটা কতটুকু হয়। এও জিজ্ঞাসা করিনি যে পিরিয়ড হলে জরায়ু থেকে কি বের হয়।

অথচ সেম অবস্থা যখন পরিচিত অন্য মেয়ে ফ্রেন্ডের সাথে হয়, মাস শেষে যখন তার জরায়ূ থেকে কয়েক’শ ফোটা রক্ত বের হয়, তখন কিন্তু তাকে আমি এক চিলতে হাসি দিয়ে ঠিকই জিজ্ঞাসা করি তার পিরিয়ড চলছে কিনা!

বারবার প্রশ্ন করাতে যখন মেয়েটি অসহ্য হয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায় তখন আমি অট্টহাসিতে মেতে উঠি।

আর তার পিরিয়ডের ব্যাপারটাকে হাসাহাসির বস্তু ভেবে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করে আনলিমিটেড মজা করি।

অথচ বাস্তব কথা তো এই যে- কোনো এক মহিলার পিরিয়ড হওয়ার মাধ্যমে বিধির অনুমতিতে আমি পৃথিবীর আলো দেখেছি।

মস্তিষ্ক বিকৃত হওয়ার ফলে আমি ভুলে গেছি যে আমার গর্ভধারিণী মায়েরও পিরিয়ড হয়।

আমার ছোট বোনের ব্রার কালারটা আমাকে আকৃষ্ট করেনা। তবে রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলা অন্যসব মেয়ের ব্রার কালার আমাকে বারবার আকৃষ্ট করে।

আমার চোখের সামনে যখন আমার ছোট বোন ব্রা শুকাতে দেয় অথবা গেঞ্জি খুঁজতে গিয়ে যখন আমার ড্রয়ারেই আমার ছোট বোনের ব্রা দেখতে পাই, তখন দেখেও এমনভাবে না দেখার ভান করি যেন আমি কিছুই দেখিনি।

কারণ আমি চাইনা আমার বোন আমার সামনে লজ্জায় মাথা নিচু করুক।

অথচ, বাইরে যখন ওড়নার ফাঁকে কোনো একটা মেয়ের ব্রার ফিতা দেখতে পাই তখন আরো দশ বারোটা বন্ধুকে জড়ো করে একসাথে সবাই মিলে মজা নিতে থাকি।

শুধু তাই নয়, যখন কোন মেয়েকে নির্জন জায়গায় পাই, তখনি মেয়েটাকে আশপাশে থেকে জিজ্ঞাসা করি ব্রার সাইজ কত!

মেয়েটা এসব শুনে একটাও টু শব্দ না করে মুখ লুকিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়, আর আমরা তখন তার পালানো দেখে অট্ট হাসিতে মেতে উঠি।

আহা! কি সাংঘাতিক আমি! কি সাংঘাতিক আমার কার্যাদি!

আমার কাছে আমার বোন নিরাপদ, কিন্তু আমার হাতে অন্যের বোন লাঞ্চিত, প্রতারিত, অপমানিত!

আমার চোখের সামনে আমার বোনকে মেকাপ করতে দেখলে বিন্দু পরিমাণ ও হিংসা লাগেনা। কিন্তু রাস্তায় বের হয়ে কোনো মেয়ের মুখে মেকাপ দেখলে আমার ঠিকই হিংসা লাগে।

আমার বোনের মেকাপের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমি নিযে সাথে থেকেই কিনি। তখন বিন্দু মাত্রও আমার মুখ কালো হয়না।

অথচ অন্য মেয়েকে মেকাপসমগ্রী কিনতে দেখলে অথবা অন্য কোনো ফ্রেন্ড তার বোনের জন্য মেকাপের সরঞ্জাম নিতে দেখলে আমার ঠিকই হিংসা লাগে!

মাঝেমাঝে তো আবার আটা ময়দার বস্তা বলেও তাকে অভিহিত করে ফেলি।

শুধু কি তাই!

আমার পরিচিত কোন মেয়ে খারাপ কাজ করলে তাকে সাবধান করি, বুঝাই, অথচ অন্য কোন মেয়ে না বুঝে সেসব কাজ করলে আমি ঠাট্টা করি, ছবি তুলে কিংবা ভিডিও করে ভাইরাল করে মজা নেই!

আমি যাদের তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মজা করি, হাসাহাসি করি, আমি জানি তারা আমার বোন নয়। আমার মা নয়।

যার ফলে তাদের কার্যাদিতে হাসাহাসি করতে আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। অথচ আমার মাথায় এটা ঢুকেনা যে, মেয়েটি আমার বোন না হলেও অন্য একটা ছেলের বোন।

আমার বোনের সাথে কেউ এরকম করলে আমার যতটুকু খারাপ লাগবে, ঠিক আমি এই মেয়েটির সাথে এমন করলে তার ভাইয়ের কাছেও ততটুকুই খারাপ লাগবে।

আমার বোন আমার কাছে যেমন সম্মানি এবং মূল্যবান। অন্যের বোনও তার কাছে তেমন সম্মানি ও মূল্যবান।

আমি সত্যিই বুঝিনা আমি একটা বোনের ভাই হয়ে কিভাবে আরেকটা ভাইয়ের বোনের সাথে এমন আচরণ করি।

আসলেই আমার মগজ পঁচে গেছে। আর তাইতো ঘরের বাইরে অন্য মেয়েদের সম্মান করতে আমি দ্বিধাবোধ করি।

আমি বুঝতে পারছি আমার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানো দরকার।

কিন্তু এতদিন আমার অসুস্থ মানসিকতায় যে কাজ গুলো করেছি তার প্রায়শ্চিত্ত কিভাবে হবে!

প্রভু কি আদৌ আমায় ক্ষমা করবে?

লেখক : নীল সালু

লেখকের মতামত আপনার কাছে ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করুন। আপনার একটি শেয়ার হয়তো অন্যদের মন্দস্বভাব দূর করতে সাহায্য করবে।

The post পিরিয়ড ও পোশাক সম্পর্কে আপনার অসুস্থ মানসিকতা বদল করুন appeared first on Amar Bangla Post.


Viewing all articles
Browse latest Browse all 2081

Trending Articles