বাসর রাত সম্মন্ধে আমি ধারনা পাই বাংলা সিনেমায়।
প্রায় সবগুলো বাংলা সিনেমার বাসর রাতের কাহিনী একই ছিল। এখন অবশ্য কী দেখায় তা জানি না।
বাংলা সিনেমায় দেখিয়ে আসছে রাজ্জাক শাবানা কীভাবে বাসর রাত শুরু করে। অবশ্য সেখানে বাসর রাতের শেষটা দেখায় না। নায়ক রাজ রাজ্জাক বাসর রাতে প্রবেশ করে। প্রবেশ করার আগে রাজ্জাকের বন্ধুরা তাকে জোর করে বাসর ঘরে ঠেলে ঢোকায়। এরপর রাজ্জাক ঢকঢক করে এক গ্লাস দুধ খায়। এরপরে ধীরে ধীরে খাটে অবস্থান রত শাবানার দিকে এগিয়ে যায়।
খাটের কাছে আসতেই শাবানা খাট থেকে নেমে পড়ে। এরপরে রাজ্জাকের পা ছুঁয়ে সালাম করে। রাজ্জাক তখন শাবানাকে বুকে টেনে নিয়ে বলে “তোমার স্থান আমার পায়ে নয়, তোমার স্থান এই বুকে” (অনেকটা বুকে আয় বাবা টাইপের। বাবা বলতে কেউ ইয়াবা বুঝবেন না)
আমিও ভেবেছিলাম আমার বাসর রাত সেই রকমই হবে। দিনের বেলায় বৌকে উত্তরা থেকে উঠিয়ে নিয়ে আসলাম। আপনারা জানেন বিয়ের আগের রাতে ছেলেরা ঘুমাতে পারে না। এর কারণ হল বাড়ি ভর্তি মেহামান। আমার স্থান হয়েছে খাটের বাইরে। খাটের উপরে ছিল মামাতো ভাইয়েরা। এছাড়া ‘কাল কী হবে বলোনা’ টাইপের চরম রোমাঞ্চকর উত্তেজনা। ঘুম আসল ভোর চারটায়।
তাই পরদিন রাতে যখন ‘বাসর রাত’ এর সময় হল তখন চোখে মারাত্মক ঘুম।
জীবনের প্রথমবার বৌয়ের কাছে যাব, সে এক টান টান উত্তেজনা। এদিকে বাসায় একের পর এক মেহামান আসছে। সবাই বৌ দেখতে এসেছে। বৌ ও রোবটের মত সবার সাথে কথা বলে যাচ্ছে। একদল মেহামান বিদেয় হয় আরেকদল মেহামান আসে। শালার কপালটাই খারাপ! কাল পরশু আসলে কী হতো? বৌ তো একদিনের জন্য আসে নাই। এরপরে কি কেউ বৌ দেখতে পারবে না? এলাকার যে আন্টিটা আমাদের বাসার পথ জীবনেও মাড়ায়নি, সেই আন্টিও দেখি তার মেয়েকে নিয়ে বাসায় হাজির। এতদিন আন্টি এই মেয়েকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছিলেন?
শেষবার যখন মেহামান বিদায় নিল তখন রাত সাড়ে এগারোটা। আমি ভাবলাম “আমি পাইলাম, আমি উহাকে পাইলাম” এইবার বাসায় কোন অতিরিক্ত মেহামান নাই। এবার খেলা জমবে!
কিন্তু নতুন খেলা তখন সবেমাত্র শুরু। ঘরে অবস্থান রত মামাতো খালাতো বোনেরা তাদের নতুন ভাবীকে ঘিরে ধরল। তারা ভাবীর সাথে কথা বলেই যাচ্ছে। আমি বুঝলাম এরা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। একজন আমাকে বলল “ভাইয়া আপনি ঘুমাতে যান। আমাদের গল্প শেষ হলে ভাবীকে ছেড়ে দিব। আমাদের খাট খালি আছে। দরকার হলে ভাবী আজ আমাদের সাথে ঘুমাবে। এরপর থেকে তো তাকে পাচ্ছেনই!”
আমি তখন ডারউইনের তত্ব বিশ্বাস করতে শুরু করলাম। এই মেয়েগুলোর ডিএনএ তে মনে হয় এখনো বান্দরের জ্বিণ রয়েছে। আমি কিছুই বলতে পারলাম না। আমি অসহায়ের মত আমার রুমে ঢুকলাম। এদিকে একটানা চুশ পায়জামা পরে পায়ের অবস্থাও বারোটা বেজে গেছে। লুঙ্গি পরব সেই অবস্থাও নেই। বাসর রাতে কি কেউ লুঙ্গি পরে? কিন্তু লুঙ্গি ছাড়া যে আমি ঘুমাতে পারব না? বৌ ছাড়তে পারব কিন্তু লুঙ্গি ছাড়তে পারব না। যাক লুঙ্গির বিষয়টা পরে ভাবা যাবে, আগে বৌকে কেমনে রুমে আনা যায় সেটা নিয়ে ভাবছি।
সারা জীবন দেখলাম শাবানা আগে রুমে ঢুকে বসে থাকে আর আমার ক্ষেত্রে উলটা! অর্থাৎ রাজ্জাকই রুমে ঢুকে খাটে বসে আছে!
আচ্ছা এরপরের ঘটনা কী উলটো ঘটবে? মানে আমার খালাতো বোনেরা আমার বৌকে জোর করে রুমে ঢুকাবে। এরপরে আমি গিয়ে সালাম ………
না! এ হতে পারে না।
অবশেষে রাত সাড়ে বারোটার দিকে আমার মা আমাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে এলেন। খালাতো মামাতো বোনদের কড়া ভাষায় যার যার যায়গায় গিয়ে ঘুমাতে বললেন। মেয়েগুলি মায়ের বকুনি খেয়ে সবাই উঠে দাঁড়াল। আমি ভেবেছিলাম এবার বুঝি আমার ‘বাসর রাত’ শুরু হবে। আমি প্ল্যান করছি এখন কীভাবে কী শুরু করব? হঠাত মশার কয়েলের বিজ্ঞাপনের কথা মনে পড়ল “তুমি আর আমি ছাড়া এই ঘরে কেউ নাই”! একটু পরে আমিও এই কথা বলতে পারব। কিন্তু বিধি বাম!…………..
যারা বাসর রাত সম্মন্ধে অভিজ্ঞ তারা ভাল করেই জানেন এই রাত সব সময় সুখের নাও হতে পারে। আমার যেহেতু ঐবারই প্রথম বাসর রাত তাই রাত বারোটায় প্যাঁচালে পড়ে গেলাম।
আমার মায়ের বকুনি খেয়ে মেয়েগুলি মায়ের রুম ছেড়ে দিয়েছে। ভাবলাম এইবার কোন দিকে যাইবা চান্দু? আমার রুম ছাড়া আর কোন রুম খালি নাই। ওরা দল বেঁধে সবাই আমার রুমে চলে এলো! এ যে আরেক প্যাঁচাল! আমি এতক্ষণ আরামে শুয়ে ছিলাম। এখন সেই আরামও শেষ। রুমে এসেই চিল্লাচিল্লিতে আমার শান্তি শেষ। একজন আমাকে জোর করে শোয়া অবস্থা থেকে বসিয়ে দিল। মেয়েরা আমার বৌ এর সাথে হাসাহাসি করে গল্প করতে লাগল। বিশেষ করে আমার ছোটবেলার কাহিণী বলা শুরু করল। টেনশনে ছিলাম, উলটাপালটা কিছু ফাঁস করে দেয় কিনা। আমি কিছুক্ষণ পর ‘নকল’ হাই তুলতে লাগলাম। এমন ভাব দেখাচ্ছি যেন বাসর রাতে বৌ না হলে কোন সমস্যা নাই, আমার সমস্যা শুধু ঘুমে!
এখানেও লম্বা আলোচনা শুরু হল। আলোচনার ভাব দেখে মনে হলো সারা রাতেও এই আলোচনা সভা শেষ হবে না। তিন দিন ব্যাপী আলোচনা সভার এটা প্রথম দিন। একে একে আলোচকরা বক্তব্য রাখছেন। এদিকে আমার বৌ ও হাই তুলছে। ওর হাইটা নকল না, আসল হাই। তারও ঘুম পাচ্ছে। কিন্তু ঘুম পেলে কী হবে? সে মুখ ফুটে কাউকে বলতে পারছে না “আপুরা, তোমরা রুম থেকে ভাগো, আমি ঘুমাবো” কিন্তু অবলা নারীর মুখ ফোটে তো বুক থুক্কু বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না। সে যেমন কিছুই বলতে পারছিল না তেমনি আম অবলা পুরুষের মত কিছুই বলতে পারছি না। সবাই ভাববে ‘পোলার শরম নাই’!
এবারেও মা উদ্ধারকারী জাহাজ হামযার মত এগিয়ে এলেন। তিনি জানেন ছেলে এই বিয়ের জন্য ৩০ বছর ধরে অপেক্ষা করছে। এই ৩০ বছর ধরে যে জিনিসের জন্য অপেক্ষা করছে সেই জিনিস যদি নাইবা পায় তাইলে কেমনে কী? ওনার ছেলে বিয়ের জন্য বিদ্রোহী কোবতে লিখেছিল
“কারার ঐ লৌহ কপাট
ভেঙ্গে ফেল চৌকী ও খাট
ডাবল খাট রেখে আমি করবটা কী?
ওরে ও………”
আজ বিদ্রোহের ৩০ বছরের অবসান হলো। কিন্তু এখনো শান্তি চুক্তি হয় নাই।
মা এবার আগের চেয়ে কড়া ভাষায় বলল “তোরা এখনো কেউ ঘুমাসনি? মেয়েটার উপর (আমার বৌ) সারাদিন অনেক ঝড় গেছে, তাকে একটু শান্তিতে ঘুমাতে দিবি না।” মা আমার বৌয়ের কষ্ট দেখল অথচ ওনার ছেলের কষ্টটা দেখল না। একেই বলে জেন্ডার ডিস্ক্রিপেন্সি! নারী পুরুষ সমান অধিকার থাকলে মা এই কথা বলতে পারত না!
মা ড্রইং রুম থেকে এক বোতল পানি আর একটা গ্লাস এনে আমার রুমে রাখলেন। মা জীবনেও এই কাজটি করেন নি। এটা কি বাসর রাতের নিয়ম?
হঠাত করে মনে পড়ল, নায়ক রাজ্জাক তো এক গ্লাস দুধ খেয়ে বাসর রাতের ‘অনুষ্ঠান’ শুরু করে। আজ গরিব বলে দুধের বদলে পানি দিয়ে শুরু করতে হবে?
মা যাবার আগে মেয়েদেরকে আরেকবার বকা দিলেন “দ্রুত রুম ছাড়”
মায়ের সাহস পেয়ে আমিও বললাম “তোরা কি আমাকে ঘুমাতে দিবি না? দ্রুত রুম ছাড়।”
খালাতো বোন এবার আমাকে ধরল “আমাদেরকে ৫ হাজার টাকা না দিলে আমরা এই রুম থেকে যাব না!”
তার সাথে সাড়া দিয়ে বাকি মামাতো খালাতো বোনেরাও একই সূরে কথা বলল। আমি পড়লাম আরেক প্যারায়! এইডা আবার কুন বিচার?………
শুনেছি টাকার শোক সবচেয়ে বড় শোক। এখন দেখি কথা সইত্য। আমি বাসর রাতে বৌ ছাড়তে রাজী মাগার ৫ হাজার টাকা ছাড়তে রাজী না। পুলাপাইন আগে থিকাই আমারে কিপটা হিসাবে জানে। তাই ওরাও নাছোড়বান্দা। এরা কেউ রুম থেকে নড়বে না বলে পণ করল। কোথা থেকে মামাতো ভাইয়েরাও এসে হাজির হয়ে গেল। এখন ডিমান্ড বেড়ে গিয়ে ১০ হাজারে পরিণত হয়েছে। আমিও পণ করলাম ‘তুই আমার ইজ্জত পাবি কিন্তু টাকা পাবি না!”
এদিকে মায়ের অপেক্ষায় রইলাম, কোন সময় উনি এসে আমাকে উদ্ধার করবেন? কিন্তু মা ততক্ষণ ঘুমে! আমার আশা ভরসার মা জেগে থাকলে না হয় একটা কথা ছিল। এখন আমাকে উদ্ধার করবে কে? কবির ভাষায় “বিপদে মোরে উদ্ধার কর এ নহে মোর প্রার্থনা………… ” হঠাত মনে হল, বৌ ই আমাকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে। সে যদি বলে তার ঘুম আসছে তাইলে পুলাপাইন এক সময় চলে যাবে, সেক্ষেত্রে টাকাও বাঁচল, বৌ ও পেলাম।
কিন্তু বৌ ওদের পক্ষ নিল। বলল “দিয়ে দাও না ওদের কিছু টাকা!” উল্লেখ্য, বিয়ের আগে মাস খানেক বৌয়ের সাথে প্রেম করেছিলাম। তখন থেকে আমাদের মাঝে ‘তুমি-তুমি’ সম্পর্ক ছিল।
বৌয়ের কথা শুনে আমি আকাশ থেকে পড়লাম। বলে কী এই মেয়ে? ঘরের শত্রু বিভীষণ! কোথায় আমাকে রক্ষা করবে তা না করে উলটো আমাকে বিপদে ফেলছে!
বৌয়ের কথা শুনে পুলাপাইনের উৎসাহ আরো বেড়ে গেল। ওদের টাকা দিতেই হবে। রাত তখন দেড়টা! রাত পোহাবার আর কতে দেরী পাঞ্জেরী?
আমি ওদেরকে একশ টাকা অফার করলাম। তারা কোনমতেই ৪ হাজারের নিচে নামবে না। যাক তবুও লক্ষণ ভালো, ওরা ওদের দাবী থেকে ১ হাজার টাকা কমিয়েছে। যেহেতু গার্মেন্টস বায়ারদের ডিল করতে হয়, যেহেতু শ্রমিকদের সাথেও ডীল করতে হয় তাই মোটামোটি একটা ধারনা হয়েছে কীভাবে দামাদামি করতে হয়।
এরপরে আমি ২ শ টাকা প্রস্তাব করলাম। ওরা দাবী করল ৩৫০০, যাক আরো ৫০০ টাকা কমেছে।
আমার বৌ হঠাত করে বলল “ওদেরকে ২ হাজার টাকা দিয়ে দাও। টাকা কোথায় রেখেছ দেখি” বলে এদিকে সেদিক হাতড়াতে লাগল। এ কেমং বিচার? বৌ বাসায় আইতে না আইতে আমার টেকা খোঁজে। ভাগ্য ভাল বৌ এই ঘরে আসছে মাত্র কয়েক ঘন্টা। রুমে কোন চিপা চাপায় টাকা রাখি তা জানে না। জানলে বিপদ ছিল।
আমি বললাম, ক্যাশ টাকা হাতে নাই। সব মিলিয়ে মনে হয় ৫০০ টাকা আছে। বাকী টাকা আব্বুর কাছে আছে। তোরা চাইলে আব্বুকে ডেকে ঘুম থেকে জাগিয়ে বাকী টাকা চাই!
সবাই এর মুখ তার মুখ চাওয়াচাওয়ি করল। বুঝেছে, কাজ হবে না। শেষমেষ তারা ৫০০ টাকায় রাজী হলো।
৫০০ টাকা হাতে পেয়ে রুম থেকে বের হবার আগেও তারা ১০ মিনিট ছিল। যাওয়ার আগে এক বোন বলল “আমরা কিন্তু রুমে বাইরে থাকব। সুতরাং সাবধান!”
ওরা রুম থেকে বের হতেই আমি উঠে গিয়ে দরজা বন্ধ করলাম!…….
দরজা বন্ধের পরে মনে হল জীবনে একটা কামের কাম করতে পারছি। আমি আর আমার নয়া বৌ একই সাথে, আশেপাশে ডিস্টার্ব করার মত কেউ নেই। আমি রাজ্জাকের মত ধীর পায়ে খাটের দিকে আগাইলাম। খেয়াল করলাম গলা শুকিয়ে গেছে! এতক্ষণে বুঝলাম মা কেন পানির বোতল ও একটা গ্লাস রুমে দিয়ে গেছেন। কারন এক গ্লাস পানি খাওয়ার জন্য রুমে গেলে পুলাপাইন আবারো রুম দখল করবে। তখন মিনিমাম ১ হাজার টাকা ছিনতাই হয়ে যাবে।
আমি এক গ্লাস পানি খেলাম।
পানি খেয়ে বৌয়ের দিকে এগোলাম। মনে মনে রাজ্জাক শাবানার সিনেমার দৃশ্যের কথা মনে পড়ছিল। হঠাত বৌ উঠে দাঁড়াল। এইতো ঘটা মিলে যাচ্ছে। বৌ এখন কাছে আসবে, এরপরে পা ছুঁয়ে সালাম করবে, এরপরে আমি…………..
বৌ কাছে এসে বলল “সারাদিন এক কাপড়ে এই গরমের মধ্যে ছিলাম। এখন গোসল করে আরাম করে ঘুমাব। তোয়ালে কোথায় রেখেছ? আর বাথরুমে কি শ্যাম্পু আছে?”
আমি ভাবলাম কী আর বৌ এইডা করল কী?
আমি তোয়ালে এনে দিলাম। বাথরুমে ছেলেদের শ্যাম্পু আছে, ক্লিয়ার শ্যাম্পু। মেয়েদেরটা নাই। বৌকে বললাম “আপাতত এটা দিয়েই শ্যাম্পু করো।”
বৌ একটা সূতী শাড়ী হাতে নিয়ে বাথরুমে গোসল করতে গেল।
আমি রুমের বাইরে অপেক্ষায় রৈলাম।
আমি জানতাম মেয়েদের গোসল অনেক লম্বা সময়ের জন্য হয়। কিন্তু এত লম্বা সময়ের জন্য হয় সেটা জানতাম না। এদিকে বাইরে আমার মামাতো ভাই বোনদের ফিসফাস ও হাসি ঠাট্টার শব্দ শুনতে পাচ্ছি। মনে হয় ওরা ভাবছে আমরা কী না কী করে ফেলেছি! কিন্তু মানবতা এখন বাথরুমে আটকে গেছে! খাটে বসে থাকা অসহায় ভাইটির জন্য কয়টা লাইক হবে ফ্রান্স?
বৌ গোসল করতেছে তো করতেছে। আর এদিকে আমি চাতক পক্ষীর মত অপেক্ষা করতেছি তো করতেছি।
অবশেষে বৌয়ের দয়া হৈল। বৌ বাথরুম থেকে গোসল শেষ করে বের হলো। বোয়ের শরীর থেকে পুরুষে গন্ধ বেরোচ্ছে! কারণ সে ছেলেদের শ্যাম্পু ইউজ করেছে!! এটা কোন ব্যাপার না, আমিও সানসিল্ক নামের লেডিস শ্যাম্পু ইউজ করি। তাতে কী হয়েছে? নারী পুরুষ সমান অধিকার!
এবার বুঝি আমাদের বাসর রাত শুরু হবে? বৌ দেখি মাথা মুছতেছে তো মুছতেছেই। মানুষ এতক্ষণ ধরে মাথা মোছে? রাত ততক্ষণ ২ঃ৩০ টা বাজে। আমরা কখন বাসর রাত করব?
কোনো সিনেমায় দেখায়নি তো, বোউ বাসর রাতে গোসল করতেছে আর নয়া জামাই তা দেখতেছে! আমি পা টিপে টিপে বৌয়ের কাছে গেলাম। যেহেতু বেশ কিছু দিন প্রেম করেছি তাই আগে থেকে অনেকটা ফ্রী ছিলাম। দেখলাম কৃত্তিম মেকাপ ধোয়ার পরে বৌকে অনেক সুন্দর লাগছে। আমি বৌয়ের চুলে হাত দিতে চাইলাম। বৌ বলল “তুমি গোসল করেছ?”
আমি আমতা করে বললাম “সন্ধ্যায় একবার করেছি”
তখন মে আসের ঠাডা পড়া গরম চলছিল। দিনের ৪/৫ বার গোসল করলে শান্তি পেতাম। বৌ বলল “আরেকবার গোসল করে আসো। তাইলে শান্তিতে ঘুমাতে পারবা।”
এতদিন কবিতা গল্পে পড়তাম, মানুষ নাকি বাসর রাতে গল্প করেই কাটায়। আর বৌ বলছে “শান্তিতে ঘুমাতে”! এ কেমং শান্তি?
আমি ঝড়ের গতিতে গোসল করলাম। বাথরুম থেকে বের হবার পরে বৌ বলল “তুমি কখন গোসল করবে? দ্রুত গোসল করো”
আসলে বৌয়ের ধারনা ছিল না যে মানুষ এত দ্রুত গোসল করতে পারে! আমি ভেজা চুল দেখিয়ে বললাম এই দেখ আমার চুল ভেজা। বৌ আমার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাল।
এবার খাটে বসলাম। এতক্ষনে বোঝা শেষ যে আমার জীবনে রাজ্জাক শাবানার মত বাসর রাত হবে না। আমাকে চেঙ্গিস খানের মত যুদ্ধ করেই আজকের রাত টা কাটাতে হবে। এজন্যই কবি বলেছেন “পরের মাইয়া পরের জমি বাসর রাইতে বৌটা কৈ……?”
“তুমি দিওনাকো বাসর রাতের বাত্তি নিভাইয়া”
ভাবছিলাম এই পর্বে বউ এই গান গেয়ে বাসর রাতের শুভ উদ্ভোধন করবে। সেই উদ্দেশ্যে আমি খাটের দিকে গেলাম। এবার বৌ উঠে দাঁড়াল। ভাবলাম, এবার বুঝি শাবানার মত পায়ে সালাম করার জন্য নিচু হবে। আর আমি তার কাঁধ ধরে উপরে উঠাব। কিন্তু সে আবার গেল বাথরুমে দিকে? ঘটনা কী? আবার গোসল করবে নাকি?
বাথরুমে ঢুকে বলল “দাঁত ব্রাশ করব। টুথ পেস্ট আছে কিন্তু আমার ব্রাশ কই?”
“তুমি এই বাসায় নতুন, তোমার ব্রাশ তো এখানে থাকার কথা না। তোমার লাগেজে আছে।”
বৌ এবার লাগেজ খুলতে গেল। ইয়া বড় লাগেজ টুথ ব্রাশ খোঁজা আর খড়ের গাদায় টুথ পিক খোঁজা একই কথা। এটা সেটা উল্টিয়ে টুথ ব্রাশ খুজল। এবার তার নজর পড়ল লাগেজের একটা শাড়ির দিকে। শাড়ীটা খুলে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে লাগল। আমি বললাম “টুথ ব্রাশ খোজা কি শেষ?”
বৌ বলল “রাখো তোমার টুথ ব্রাশ। এই শাড়ীটা অনেক সুন্দর। এটা দেখি। আমি এখন এই শাড়ীটা পড়ব।”
জিগাইলাম এত রাইতে শাড়ী পরবা?
“ক্যান? রাইতে বেলায় শাড়ী পরা কি নিষেধ?”
আমি কিছুই কইলাম না। বৌ শাড়ী নিয়া বিজি হয়ে পড়ল।
কাহিনী এখানেই শেষ
লেখকঃ ফখরুল ইসলাম (লালসালু)
আরও গল্প….
০১ বাসর রাতের রোমান্টিক গল্প
০২ স্বামী স্ত্রীর মজার গল্প ১
গল্পটি পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করুন।
The post লাল সালুর বাসর রাত (বাসর রাতের মজার গল্প ২০১৮) appeared first on Amar Bangla Post.