৫৮ বছর বয়সী রফিক সাহেব সন্তানদের অফিসের নাম করে বাসা থেকে বেরিয়ে ‘পাঠাও সার্ভিস’ এ বাইক চালান অথচ, উনার কলেজ পড়ুয়া ২ সন্তান জানে তাদের বাবা কোন এক গার্মেন্টস কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
সন্তানদের দামী ফ্ল্যাটে রেখে মাঝেমাঝেই তিনি অফিস ট্যুরের নাম করে মেসে গিয়ে থাকেন, যাতে বাড়তি আয় করা যায়।
হঠাৎ করেই হয়তো একদিন বাবার বাইকে চড়বেন তারই ছেলে, টাকা দিতে গিয়ে মুখোমুখি হয়ে যেতে পারে বাবা ছেলের!
কিন্তু, রফিক সাহেব সন্তানদের শান্তির জন্য সেটার পরোয়াই করছেন না!
এটা সিনেমা নয়, বাস্তব।
কোন এক নামী কোম্পানিতে সৎ ভাবে থাকতে চেয়েও যখন পারলেন না, তখন স্বেচ্ছায় চাকুরী-ই ছেড়ে দিলেন।
উনার ভাষ্যমতে, সন্তানদের ডালভাত খাওয়াবেন, তবুও কালো টাকায় মাছ-মাংস নয়।
রফিক সাহেব হয়তো পারতেন অবৈধ উপায়ে মাসে লক্ষাধিক টাকা আয় করে রাতারাতি লাখপতি হতে। কিন্তু সেটা না করে বৈধ অল্প টাকার মাঝেই আত্মতুষ্টি খুঁজে পেয়েছেন।
এদিকে উদয় সাহেব নিজের নতুন সংসার গুছাতে এখনই উঠেপড়ে লেগেছেন!
পড়াশুনা শেষ হবার আগেই প্রিয় মানুষটিকে বউ করে তুলেছেন নিজের ঘরে, কয়েক মাস পরেই দুনিয়ার আলো দেখবে তাদের সন্তান।
জীবনটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে এখনই সন্তানের জন্য স্বপ্ন দেখা শুরু এই বাবার!
স্ত্রী জানে স্বামী ক্লাস করতে যায়, স্ত্রীর গর্ভের বাচ্চাও হয়তো বুঝতে পারে বাবার উপস্থিতি।
কিন্তু, উদয় সাহেব ক্লাসের শেষে ‘পাঠাও’ তে বাইক চালান, সেই টাকা জমান নিজের ভবিতব্য সন্তানের জন্য।
জামিউল সাহেব, পুরান ঢাকায় কাঁচামালের ব্যাবসার সাথে জড়িত। স্ত্রী-সন্তান থাকে ধানমন্ডিতে।
মালিকের কথায় কিছুদিন কাঁচামালে ভেজাল মিশিয়েছেন তিনি, সেই থেকেই নিজেকে মনে করেন অপরাধী।
চাকুরি ছেড়ে এসে এখন গুলশানে এক বাড়ির ড্রাইভার। রফিক সাহেবের মত জামিউল সাহেবও সন্তানদের কাজের কথা বলেই বের হন, কিন্তু করেন ড্রাইভারি।
রফিক সাহেব কিছুদিন আগেও নারায়ণগঞ্জ একটি গার্মেন্টসে চাকুরির প্রস্তাব পেয়েছিলেন। ফিরিয়েও দিয়েছেন।
কেন জানেন??
বড় মেয়ে এবার পরিক্ষা দিচ্ছে আর ছেলে স্কুলে। উনি এখন সন্তানদের সাথেই থাকতে চান।
তার জন্য ডালভাত খেয়েও দিন কাটাতেও রাজি এই বাবা।
‘বাবা’ নামক এই ৩ সুপার হিরোকেই আমি কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে…..
বাবা গুলো কেন যেন সন্তানদের কাছে অলওয়েজ-ই সুপার হিরো সেজে থাকে।
মাঠে কাজ করা বাবাটা সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে সন্তানকে বুঝতেই দেয়না সারাদিন রোদে পুড়েছে কিংবা বৃষ্টিতে ভিজেছে……
এসি রুমে বসে কাগজ চালাচালি করা কিংবা অফিস করে লোকাল বাসে দাঁড়িয়ে ফেরা বাবাটাও সন্তানকে বুঝতে দেয়না সারাদিন কত যুদ্ধ করে এসেছে……
প্রবাসে থাকা বাবাটাও কঠোর পরিশ্রম করে রাতে বাসায় ফিরে ভিডিও কলে সন্তানকে হাসি দিয়ে বুঝিয়ে দেয় ‘বাবা ভালো আছি’….যেন কোন ক্লান্তিই নেই….!
অথচ, বাবার হাত দেখলেই বুঝা যেত কতটা কষ্ট আর ত্যাগ সয়ে যাচ্ছে হাতের তালুটা!
বিশ্বাস করুন, এই বাবা জাতটাই মিথ্যাবাদী, এরা একেকটা মস্তবড় অস্কার পাবার যোগ্য অভিনেতা।
জন্মের পর থেকেই এরা আমাদের সাথে মিথ্যা বলে আর অভিনয় করে যায় দিনের পর দিন।
…এদের জুতা কখনোই ক্ষয় হয়না!
…এদের ফোন কখনোই পুরাতন হয়না!
…এদের চশমার ফ্রেম কখনোই ভাঙেনা!
…এদের শার্ট কখনোই ইস্ত্রি করা লাগে না!
…এদের একটা পাঞ্জাবী বছরের পর বছরও নতুন থাকে!
…এদের লাইফে পরাজয় বলে কিছুই নাই!
কারন প্রতিটি বাবা জানেন,
সন্তানের কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে দুঃসহ দৃশ্যর নাম- পিতার পরাজিত মুখ…..
প্রতিটা বাবা জানেন তিনি যদি ভেঙে পড়েন তার সন্তান আর সামনে চলতে উৎসাহ পাবেনা।
নিজের জীবনকে যুদ্ধের মধ্যে দিয়েও সন্তানের জন্য গড়ে তুলেন স্বর্গীয় উদ্যান।
বাবারা সন্তানের জন্য লড়ে হয়তো মরে, কিন্তু হারেনা…
কারন ‘হার’ শব্দটা তাদের ডিকশনারি থেকে অনেক আগেই ঝেটিয়ে বিদায় করে দিয়েছে।
“বাবা”
কতদিন বাবাকে ছুঁয়ে দেখতে পারি না
বাবার গায়ের গন্ধ শুকতে পারি না
আপনারা যারা ডেইলি বাবাকে কাছে পান তারা কি গন্ধ শুকতে পারেন?
অনেক সুন্দর না ‘বাবা বাবা’ গন্ধটা?
আমি প্রযুক্তির কল্যাণে বাবাকে প্রতিদিনই দেখতে পারি, প্রতিদিনই দেখি বাবার অসাধারণ অভিনয় প্রতিভা….
তখন আমার বাবাকে খুব বলতে ইচ্ছে করে-
‘বাবা তুমি ধরা পড়ে গেছো’
‘তুমি একটা মিথ্যাবাদী’
‘I Love You’
লেখক : নীল সালু
আরও শুনুন >> পিতা মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য By আমির হামজা
আরও শুনুন >> মা বাবার সম্পর্কে আলোচনা | হাফিজুর রহমান সিদ্দিকী ২০১৭
বাবাকে নিয়ে লেখা নীল সালু লেখিত আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কাছে ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।
The post মিথ্যাবাদী বাবা-নীল সালু appeared first on Amar Bangla Post.