বাদশা সবুক্তগীন তাঁর এক স্ত্রীকে খুব বেশী ভালবাসতেন। একবার অন্যান্য স্ত্রীরা একজোট হয়ে বাদশাকে বলল, আপনি অমুক স্ত্রীকে বেশি ভালবাসেন। অথচ তাঁর তুলনায় আমার বেশী সুন্দরী-রুপসী। জ্ঞানে-গুণেও আমরা তাঁর চেয়ে অগ্রগামী। তাহলে আমাদের ছেড়ে আপনি তাকে বেশী ভালবাসেন কেন? কী এমন গুণ-বৈশিষ্ট্য তাঁর মাঝে আছে, যা আমাদের মধ্যে নেই? বাদশা বললেন, ঠিক আছে; আমি একদিন তোমাদেরকে এর জবাব দেব। এরপর কিছুদিন চলে গেলে স্ত্রীরা তাদের কথা ভুলে যায়। কিন্তু বাদশা ভুলেন না।
একদিন বাদশা সবুক্তগীন তাঁর বাসভবনের বারান্দায় বসে বললেন, আজ আমার মেজাজটা বেশ ভালো। তাই মনে করছি, আজ তোমাদেরকে দামি-দামি পুরস্কারে পুরস্কৃত করব। স্ত্রীরা বাদশার কথায় খুশি হয়ে গেল যে, আজ তাঁরা শাহী ভান্ডারের দামি-দামি উপহার পাবে। বাদশার চারপাশে স্বর্ণ-রৌপ্য, হীরা-জওহর ইত্যাদি স্তুপ করে রাখা হলো। বাদশা সব স্ত্রীকে ডেকে বললেন, এই বারান্দায় যত ধন-সম্পদ রয়েছে এর মধ্যে হতে যে যেটার উপর হাত রাখবে, তাকে সেটা পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হবে। অতএব আমি যখন ইশারা করব, তখন তোমরা দৌড়ে গিয়ে পছন্দনীয় বস্তুর উপর হাত রাখবে। স্ত্রীরা প্রস্তুত হয়ে গেল এবং যে যেটা নিবে তাঁর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখে। কেউ মনে-মনে ইয়াকুত নির্বাচন করল, কেউ হীরা টার্গেট করল, কেউ রৌপ্য।
বাদশাহ একসময় ইশারা করলে স্ত্রীরা দৌড়ে গিয়ে যার-যার পছন্দনীয় বস্তুর উপর হাত রাখে। কিন্তু যে স্ত্রীকে তিনি বেশি ভালবাসতেন, সে তাঁর নিজ স্থানেই পূর্ববৎ দাঁড়িয়ে ছিল। যখন অন্যান্য স্ত্রীরা দেখল, আমরা মূল্যবান সামগ্রীর উপর হাত রেখেছি; কিন্তু ঐ স্ত্রী কোন কিছুর উপর হাত রাখেনি, তখন তাঁরা হাসতে থাকল এবং বাদশাকে বলল, মহামান্য বাদশা! আমরা বলে আসছি, এই মেয়েটি বড়ই বেওকুফ এবং তাঁর মাথায় কোনো বুদ্ধি নেই। আজ হাতে-নাতে তাঁর প্রমাণ পেলেন। কেননা, সে কোনো কিছুর উপর হাত না রেখে হাবার মতো দাঁড়িয়ে আছে। আজ আমরা যখন অনেক কিছু পেতে যাচ্ছি, তখন সে কিছুই পাবে না।
বাদশা ঐ স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর বান্দী! তুমি কোনো বস্তুর উপর হাত রাখলে না কেন? স্ত্রী বলল, মহামান্য বাদশা! আমি জানতে চাই, আপনি কি একথা বলেননি, আজ যে স্ত্রী যে জিনিসের উপর হাত রাখবে তা তাঁর হয়ে যাবে? বাদশা জবাবে বললেন, হ্যাঁ! আমি তো তা-ই বলছি। একথা শুনে স্ত্রী এগিয়ে এল এবং বাদশার কাঁধের উপর হাত রাখল। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, তুমি হীরা-জহরত না ধরে আমাকে ধরলে কেন? আমাকে ধরলে তো হীরা-জহরত পাবে না। তখন স্ত্রী বলল, মহামান্য বাদশা! হীরা-জহরত আপনার। আর আমি যখন আপনার উপর হাত রেখেছি, তখন আপনি আমার হয়ে গেছেন। আর আপনি আমার হয়ে যাওয়ার সাথে-সাথে এমনিতেই সব ধন-সম্পদ আমার হয়ে গেছে।
বাদশা স্ত্রীর একথা শুনে অন্যান্য স্ত্রীদের বললেন, দেখো; তাঁর এই বুদ্ধি ও মহব্বতের কারণেই আমি তাকে বেশি ভালবাসি।
এমনিভাবে যখন মানুষ সব কিছু বাদ দিয়ে একমাত্র আল্লাহকে আঁকড়ে ধরে, তখন বিশ্বের সব কিছু তাঁর অধীন হয়ে যায়। (খুতুবাত ৭/১৫০)
আপনি পড়ছেনঃ আল্লাহ ওয়ালাদের হৃদয় ছোঁয়া ঘটনাবলী-১ বই থেকে।
The post প্রেমাস্পদ আমার হলে সব কিছুই আমার appeared first on Amar Bangla Post.