
আইউব ইবনে আবাবা বর্ণনা করেন, বনী নাওফাল ইবনে আবদে মানাফের হাতে অপ্রত্যাশিতভাবে কিছু পয়সা কুড়ি এসে গেল। এতেই আরেকটি বিয়ের ভূত তার মাথায় চেপে বসল।
ঘরে যে স্ত্রী ছিল তার নাম উম্মে মাহজান। দেখতে কালো, অসুন্দর মোটা ও বেঁটে। সেই সাথে মুখের ভাষা ছিল বেজায় কর্কশ।
এখন তার মনে সাধ জাগল পাতলা, ছিপছিপে, দীর্ঘাঙ্গী, ফর্সা সুন্দরী এমটি মেয়ে বিয়ে করতে হবে। যাকে দেখলেই মন উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। বর্তমান বউয়ের মত খিটখিটে ও কর্কষভাষী হবে না। মিষ্টি ভাষী, নম্র স্বভাবের হবে। ভালবাসায় কানায় কানায় পূর্ণ একটি হৃদয় থাকবে।
চাহিদা মতো পেয়েও গেল এবং যথারীতি বিয়েও হয়ে গেল।
উম্মে মাহযান এ খবর শুনে স্বামীকে আচ্ছামতো তুলোধূনা করলেন। বুড়ো বয়সে ভীমরতি। ছুঁকড়ি বিয়ে করার সাধ জেগেছে তাই না? ঐ ছুঁকড়িকে আমি গলা টিপে মারব।
অনেকক্ষণ রাগারাগি করে মাথা সামান্য ঠান্ডা হলে স্ত্রীর আক্রমণে বিধ্বস্ত স্বামী ভয়ে ভয়ে বললো এতো রাগ করছো কেন? আমার তো তিন কাল গিয়ে এককাল বাকী আ ছে। তুমিও তো আগের মত পূর্ণযুবতী নেই। যথেষ্ট বয়স হয়েছে। সত্য কথা হলো, আমার হৃদয়ে তোমার যে স্থান রয়েছে তা কেউ কেড়ে নিতে পারবে না তুমিই যে আমার হৃদয় সিংহাসনের রানী। এ সব আজেবাজে চিন্তা মাথা থেকে বের করে দাও। কোণ দুশ্চিন্তা করো না। আমি তোমারই ছিলাম তোমারই আছি এবং তোমারই থাকব। সেদিনের ছুঁকড়ির মর্যাদা আমার নিকট একটা দাসীর চেয়ে বেশী কিছু না। সে তোমার সমপর্যায়ের কোন দিনই হতে পারবে না।
স্বামীর এসব মনভুলানো কথায় মহিলা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। কদিন পর স্বামী উম্মে মাহযানকে বললো, তোমার তো বয়স কম হলো না। এই বয়সে শরীর একটু বিশ্রাম চায়। আর কতকাল সংসারের ঘানি একা টানবে। সংসারে তোমার কাজে একজন সহযোগী হলো। তোমার সেবা যত্নের একজন মানুষ পাওয়া গেল। পাড়াপড়শীর কানাঘুষা হাত থেকেও নিস্কৃতি মিলল। তারপর পকেট থেকে একটি দিনার বের করে বলল, এটা রাখো, এটার কথা নতুন বৌকে জানানোর দরকার নেই।
উম্মে মাহযান প্রথমে অমত করলেও চিন্তাভাবনা করে দেখল স্বামী ঠিকই বলছে। সেও নতুন বউকে এখানে নিয়ে আসতে আর বাধা দিল না। এরপর স্বামী বললো, আমি চাই, সে এখানে আসার পরও তুমিই সংসারের কর্তী থাকবে। তার উপর কর্তৃত্ব চালাবে। কিন্তু তার মনে যেন এ ভাবনা উদয় না হয় যে, ত উমি তাকে প্রতিদ্বন্দ্বী ও শত্রু মনে করছ। বরং সে যেন উপলব্ধি করে, তুমি তাকে অনেক ভালোবাস। তাকে স্নেহ করো। এজন্য এই এক দিনার দিয়ে তার জন্য কিছু উপহার কিনে দিও। কাল তাকে নিয়ে আসবো।
স্ত্রী তাতে সম্মতি দিল।
স্বামী নতুন স্ত্রীর নিকট গিয়ে বললো, আমি চাই তুমি উম্মে মাহযানের নিকট গিয়ে থাকো। তার মনটা অনেক উদার। তোমাকে অনেক আদর করবে।
-আমার ভয় করে।
-আরে ভয়ের কিছু নেই। কোন অসুবিধা হবে না। আমি চাই না সে তোমার উপর কতৃত্ব চালাক। এজন্য এই এক দিনার নাও। উম্মে মাহজানের জন্য এটা দিয়ে কোন উপহার কিনে নিয়ে যেও।
সে যেন মনে করে তুমি তাকে ভালোবাসো। তাকে হিংসা করো না। আর শোন, আমি যে তোমাকে দিনার দিয়েছি এটা যেন উম্মে মাহযান জানতে না পারে।
এরপর স্বামী তার এক বন্ধুর কাছে গেল। তাকে সবকিছু খুলে বলল। দুই স্ত্রীকে একই বাসায় রাখতে চাই। তুমি কাল সকালে আমার বাসায় যেও। নাস্তা সেখানেই করবে। এরপর কী করতে হবে বিস্তারিত ভাবে বুঝিয়ে সে বিদায় নিল।
পরদিন দ্বিতীয় স্ত্রী উম্মে মাহজানের নিকট চলে আসলো। বন্ধুও সকাল সকাল এসে হাজির হলো। খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হলে দুই বন্ধু খোশ গল্পে মেতে উঠল।
এক পর্যায়ে বন্ধু জিজ্ঞেস করলো, দোস্ত; তোমার তো দুই বউ। তুমি কাকে বেশি ভালবাসো?
এ প্রশ্ন শুনেই আড়ালে থাকা দুই স্ত্রীর কান খরগোশের মতো খাড়া হয়ে গেল। স্বামী কি জবাব দেয়, তা শুনার জন্য অধীরভাবে অপেক্ষা করতে লাগল।
স্বামী বিরক্তি হয়ে বলল, কি যা তা প্রশ্ন করো? এটা কি বলার মতো বিষয়? আমি দুজনইকেই সমান ভালোবাসি।
-না দোস্ত, এটাতো আমার প্রশ্নের উত্তর হলো না। সত্যি করে বলো, কাকে বেশী ভালোবাসো? বলোনা প্লিজ।
-আহ, তুমি তো বড় বিরক্ত করতে পারো। ঠিক আছে, সত্যিই শুনতে চাও কাকে বেশী ভালোবাসি?
-অবশ্যই, অবশ্যই।
আড়ালে দুই নারী উত্তেজনায় অস্থির। এখনই জানা যাবে স্বামী কাকে বেশী ভালোবাসে?
-তা হলে শোনো, যাকে আমি দিনার দিয়েছিলাম তাকে আমি বেশী ভালোবাসি। এবার শুনলে তো।
আড়ালে দুই স্ত্রীই খুশীতে আত্মহারা হয়ে গেল। কারণ স্বামী দুজনইকেই দিনার দিয়েছিল। এভাবে স্বামী বুদ্ধি খাটিয়ে দুজনইকেই খুশী করে দিল। উভয়ের মনে করল স্বামী তাকেই বেশী ভালোবাসে।
#প্রতিভার গল্প ২ বই থেকে
The post দুই বউকে সন্তুষ্ট করা appeared first on Amar Bangla Post.