পশ্চিম ভারতে নবাব সাহেবের জমিদারী। সেখানে চাকরি করে কয়েকজন বাঙ্গালী হিন্দু। তাহারা বহুদিন বাংলাদেশ ছাড়া কোথাও দুর্গাপূজা হয় না।
তাহারা বাংলাদেশ হইতে কুমার ডাকিয়া আনিয়া দূর্গা-প্রতিমা গড়াইল।
পূজার কয়েকদিন আগে তাহারা বলাবলি করিল, “দেখ রে, নবাব সাহেবের অধীনে আমরা চাকরি করি। তিনি এমন ভালোমানুষ। তাকে আমাদের পূজায় নিমন্ত্রণ করিব।” ছাড়িয়া আসিয়াছে।
সেবার আশ্বিন মাসে তাহারা ঠিক করিল, “এবার আমরা দুর্গাপূজা করিব।” বাংলাদেশ ছাড়া কোথাও দুর্গাপূজা হয় না। তাহারা বাংলাদেশ হইতে কুমার ডাকিয়া আনিয়া দূর্গা-প্রতিমা গড়াইল।
পূজার কয়েকদিন আগে তাহারা বলাবলি করিল, “দেখ রে, নবাব সাহেবের অধীনে আমরা চাকরি করি। তিনি এমন ভালোমানুষ। তাকে আমাদের পূজায় নিমন্ত্রণ করিব।”
যেই বলা, সেই কাজ। তাহারা তিন চারজনে যাইয়া নবাব সাহেবের সঙ্গে দেখা করিল। নবাব সাহেব জিজ্ঞাসা করিলেন, “এই যে বাঙ্গালী বাবুরা যে, তা কি মনে করিয়া?”
তাহাদের মধ্যে একজন বলিল, “সামনের রবিবারে আমরা মায়ের পূজা করিব। তাই আপনাকে নিমন্ত্রণ দিতে আসিয়াছি।”
নবাব সাহেব খুশী হইয়া বলিলেন, “তোমরা বাঙ্গালী বাবুরা খুব ভালো আদমী আছ? তোমরা মায়ের পূজা কর। মার চাইতে বড় দুনিয়ায় আর কে আছে ? আমি জরুর তোমাদের দাওয়াতে যাইব ।”
শুভদিনে শুভক্ষণে নবাব সাহেব একখানা লাঠি হাতে করিয়া বাঙ্গালী বাবুদের মায়ের পূজা দেখিতে আসিলেন। তাহারা অতি তাজিমের সঙ্গে নবাব সাহেবকে দুর্গা-প্রতিমার সামনে লইয়া গিয়া এটা-ওটা ভালোমতো বুঝাইয়া দিতে লাগিল।
“এই যে আমাদের মা, তিনি দশহাতে দশদিক রক্ষা করিতেছেন। মায়ের দুই পাশে তার দুই মেয়ে— লক্ষ্মী আর সরস্বতী।” দেখিয়া নবাব সাহেব খুব খুশী । “তোমাদের মায়ের দুই বেটী ভারি খুবসুরৎ আছে। জেতা রহ বেটী, জেতা রহ।”
উৎসাহ পাইয়া তাহারা নবাব সাহেবকে আরও দেখাইল, লক্ষ্মী সরস্বতীর দুইপাশে কার্তিক আর গণেশ, মায়ের দুই ছেলে। নবাব সাহেব বলিলেন, “এরা তো খুব বীর আছে। জেতা রহ, বেটা জেতা রহ।” এই বলিয়া নবাব সাহেব কার্তিক গণেশকে আশীর্বাদ করিতেছেন, এমন সময় তাহার নজর পড়িল দুর্গার সঙ্গে যুদ্ধ করিতেছে কালো একটা অসুর,বেটা কে আছে ?”
বাঙ্গালীদের মধ্যে একজন বলিল, “এটি অসুর! অনেক অনেক বছর আগে এই অসুর দুনিয়ার উপরে বহু অত্যাচার করিত। তাহার অত্যাচারে মানুষ একেবারে অস্থির হইয়া পড়ে। আমাদের মা এই অসুরের সাথে যুদ্ধ করিয়া তাহাকে মারিয়া ফেলেন।”
নবাব সাহেবের রাগ এখন চরমে উঠিয়াছে, চক্ষু দুইটি লাল হইয়াছে। “এ বদমাস অসুর জানানা লোকের সাথ এখনও লড়াই করতে আছে। আরে বদমাশ তোমার জান কবচ করে দেই।” বলিতে অসুরের মূর্তিটা ভাঙিয়া ফেলিলেন। দুর্গা প্রতিমার সঙ্গে অসুরের মূর্তিও একটি অংশ। এটি না থাকিলে পূজা ঠিকমতো হয় না। শুভ কাজের এই বাঁধায় সমস্ত বাঙ্গালীর মুখ কালো হইয়া উঠিল।
নবাব সাহেব ভাবিয়াছিলেন, বদমাশ অসুরের মূর্তি ভাঙ্গিয়া তিনি বাঙ্গালীদিগকে খুব খুশী করিয়াছেন, কিন্তু তাহাদের কালো মুখ দেখিয়া তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, “ক্যায়া, তোমরা বেজার হইয়াছ কেন?”
বাঙ্গালীদের মধ্যে একজন হাত জোড় করিয়া বলিল, “নবাব সাহেব! আপনি মূর্তির একটি অংশ ভাঙিয়াছেন বলিয়া এটি দিয়া আর আমাদের পূজা হইবে না।”
নবাব সাহেব তখন পকেট হইতে হাজার টাকার একখানা নোট ফেলিয়া দিয়া বলিলেন, “এই টাকা দিয়া ফির মূর্তি বানাও কিন্তু ওই বদমাশ অসুরকে না বানাও, ও পুরুষ হয়ে জানানার সাথ লড়াই করতে আসে।”
হাজার টাকা পাইয়া বাঙ্গালী বাবুরা খুব খুশী। বাঙ্গলা দেশ হইতে আনানো কুমার তখনও দেশে ফিরে নাই। তাড়াতাড়ি তাকে ডাকিয়া ভাঙা প্রতিমাটি আবার নূতন করিয়া জোড়া দেওয়াইল। অসুর না হইলে তো পূজা হয় না। কুমারকে বলিয়া তাহারা দুর্গার পাশে এতটুকু একটা অসুর গড়াইয়া লইল । সেটি এত ছোট যে নবাব সহেবের নজরে আসিবে না। ভাঙা প্রতিমা জোড়া দিতে তাহাদিগকে কুমারকে আরও চার পাঁচ টাকা বেশী দিতে হইল। নবাব সাহেবের দেওয়া সেই হাজার টাকার কতক দিয়া তাহারা দুই দিন যাত্রাগান শুনিল, আর বাকী টাকা দিয়া সন্দেশ-রসগোল্লা কিনিয়া ছেলে-মেয়ে-বউ-ঝি লইয়া মহা আনন্দে ভুরি ভোজন করিল।
The post নবাব সাহেবের দুর্গাপূজা দর্শন (হাসির গল্প) appeared first on Amar Bangla Post.