[শির্কের প্রথম প্রকাশ]
বলা হয়ে থাকে যে, মক্কার যমীনে সর্বপ্রথম ইবরাহীম আলাইহিস সালামের পরে আমর ইবন লুহাই আল খুযা‘ঈর মাধ্যমে শির্কের প্রচলন হয়। যাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাহান্নামে নাড়ীভুড়ি টানা হেচড়া করছে দেখেছেন। সে সর্বপ্রথম সায়েবা (মূর্তির উদ্দেশ্যে প্রাণী) ছেড়েছিল এবং সর্বপ্রথম ইবরাহীমের দীনে পরিবর্তন সাধন করেছিল। ঐতিহাসিকগণ বলেন, সে শামে প্রবেশ করে সেখানকার‘বলকা’ নামক স্থানে কতিপয় মূর্তি পেল, সেখানকার অধিবাসীরা ধারণা করছিলো যে, এগুলো তাদের উপকার করতে সমর্থ এবং অনিষ্ট দুর করতেও সক্ষম। তখন আমর ইবন লুহাইসে মূর্তিগুলোকে মক্কায় নিয়ে আসে এবং আরবদের জন্য শির্ক ও মূর্তিপূজার প্রচলন করে।
আর ঐ সব কাজ যা আল্লাহ ও তার রাসূল হারাম করেছেন, যেমন শির্ক, জাদু, হত্যা, যিনা, মিথ্যা সাক্ষ্যওমদপানপ্রভৃতিনিষিদ্ধকর্মসমূহ, কখনোকখনোএগুলোর মাধ্যমে কোনো কোনো ব্যক্তি বিশেষ কিছু সুবিধাপ্রাপ্ত হয় যাকেসে উপকারলাভ কিংবা অপকার রোধের উপায় হিসাবেগণ্যকরে থাকে। যদি এমনটি না হতো তবে কোনো অবস্থাতেই যেসব কাজে কোনো কল্যাণ নেই সেসব নিষিদ্ধ কাজেমানুষ প্রবৃত্তহতো না। আর অজ্ঞতা অথবা প্রয়োজনই মানুষদেরকে কেবল নিষিদ্ধ কর্মে পতিত করে। পক্ষান্তরে খারাপ ও নিষিদ্ধ কর্ম সম্পর্কে অবহিত ব্যক্তি কিরূপে এটি করে? আর যারা এসব কাজে প্রবৃত্ত হয়, তারা কখনো কখনো এসবের মধ্যে যে বিপর্যয় রয়েছে তা সম্পর্কে অজ্ঞ হওয়ার কারণে তা করে থাকেকিংবা তাদের প্রয়োজন থাকায় তারা তাতে পতিত হয়। যেমন, সেগুলোর প্রতি প্রবৃত্তির আকর্ষণ। অথচ কখনো কখনো তাতে যে লাভ রয়েছে তা থেকেক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি, কিন্তু তরা তা সম্পর্কে অবগত নয়। অজ্ঞতার কারণে অথবা প্রবৃত্তি তাদের ওপর এমনভাবেবিস্তার করে যে শেষ পর্যন্ত তারা সে অন্যায় কাজটি করে বসে। আর অধিকাংশ সময় প্রবৃত্তি চাহিদা ব্যক্তিকে এমন বানিয়ে ফেলে যে, সে সত্য সম্পর্কে কোনো কিছু জানতে সক্ষম হয় না। কেননা কোনো বিষয়ে তোমার ভালোবাসা সেটার ব্যাপারে তোমাকে অন্ধ ও বধির বানিয়ে ফেলে।
আর একারণে আলেম বা দীনের জ্ঞানী ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে। আবুল ‘আলিয়া বলেন, আমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথীদেরকে মহান আল্লাহর নিন্মোক্ত বাণী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম,
﴿إِنَّمَاٱلتَّوۡبَةُعَلَىٱللَّهِلِلَّذِينَيَعۡمَلُونَٱلسُّوٓءَبِجَهَٰلَةٖثُمَّيَتُوبُونَمِنقَرِيبٖ﴾ [النساء: ١٧]
“আল্লাহ অবশ্যই সেসব লোকের তাওবাহ কবুল করবেন যারা অজ্ঞতাবশতঃ মন্দ কাজ করে এবং তাড়াতাড়ি তাওবাহ করে” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৭]তারা বলল: যে কেউই আল্লাহর অবাধ্য হয় সে অজ্ঞ বলে বিবেচিত। আর যে কেউ মৃত্যুর পূর্বে তাওবা করবে, সে তাড়াতাড়ি তাওবা করেছে বলে বিবেচিত হবে। বস্তুত এটা নিষিদ্ধ বিষয়ে যে সব অগ্রাধিকারসম্পন্ন অপকারিতা এবং নির্দেশিত বিষয়ে যে সব অগ্রাধিকারসম্পন্ন উপকারিতা রয়েছে তা বিস্তারিত বর্ণনার স্থান নয়; বরং মুমিনের জন্য এটা জানাই যথেষ্ট যে, আল্লাহ তা‘আলা যা আদেশ করেছেন তাতে রয়েছে নিশ্চিত গ্রহণযোগ্য স্বার্থ প্রাধান্যপ্রাপ্ত স্বার্থ। আর যা থেকে আল্লাহ তা‘আলা নিষেধ করেছেন তাতেরয়েছে নিশ্চিত বিপর্যয় অথবা প্রাধান্যপ্রাপ্ত বিপর্যয়। আর আল্লাহ তা‘আলা বান্দাকে যখনকোনো আদেশ করেন তখন তা আল্লাহর কোনো প্রয়োজন পূরণের জন্য করেন না, অনুরূপভাবে যখন কোনো নিষেধ করেন তখন সে বিষয়ে তার কৃপণতার জন্য করেন না, বরং তাদেরকে সেটার আদেশই করেন, যাতে তাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে এবং সেটা থেকেই নিষেধ করেন, যাতে তাদের জন্য বিপর্যয় রয়েছে। আর এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গুণান্বিত বলেছেন যে,
﴿يَأۡمُرُهُمبِٱلۡمَعۡرُوفِوَيَنۡهَىٰهُمۡعَنِٱلۡمُنكَرِوَيُحِلُّلَهُمُٱلطَّيِّبَٰتِوَيُحَرِّمُعَلَيۡهِمُٱلۡخَبَٰٓئِثَ﴾ [الاعراف: ١٥٧]
“যিনি তাদেরকে সৎকাজের আদেশ দেন, অসৎকাজ থেকে নিষেধ করেন, তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করেন এবং অপবিত্র বস্তু হারাম করেন।”[সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৫৭] আরো পড়ুন
আপনি পড়ছেন ইসলামী বাংলা বইঃ কবর যিয়ারত ও কবরবাসীর কাছে সাহায্যের আবেদন
The post শির্কের প্রথম প্রকাশ appeared first on Amar Bangla Post.