হযরত হাসান বসরী (রহঃ)-এর ঘটনা
হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ ছাকাফী যখন ইরাকের ক্ষমতাভার গ্রহণ করলেন এবং সীমালঙ্গন ও স্বৈরাচারী কাজ শুরু করলেন, তখন হাসান বসরী (রহঃ) সেই অল্পসংখ্যক লোকদের একজন ছিলেন, যারা তার সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে বিরোধিতা করেছিলেন; বলিষ্ঠভাবে মানুষের মাঝে তাঁর অপর্কমের ঘোষণা করেছিলেন এবং সত্যের বাণীকে তাঁর মুখের উপর বলে দিয়েছিলেন।
একটি ঘটনা।
হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ একটি প্রাসাদ নির্মাণের পর লোকদের মাঝে এই মর্মে ঘোষণা করলেন, তাঁরা যেন তাঁর প্রাসাদের দীর্ঘস্থায়িত্বের এবং বরকতের দু’আ করে।
হযরত হাসান বসরী (রহঃ) লোকদের এই সমবেত হওয়ার সূবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইলেন না। তিনি তাঁদের উদ্দেশ্য বের হয়ে গেলেন, তাঁদের #উপদেশ দেয়ার জন্য তাঁদেরকে বোঝানোর জন্য এবং পার্থিব সম্পদের ব্যাপারে তাঁদের উদাসীন করার জন্য ও পরলৌকিক সম্পদের ব্যাপারে তাঁদের আগ্রহ জন্মানোর জন্য।
লোকজন হাজ্জাজের আকাশচুম্বী প্রাসাদ প্রদক্ষিণ করছে। প্রাসাদের সৌন্দর্য উপভোগ করছে। প্রাসাদের চাকচিক্যের পূর্ণতা দেখে থমকে যাচ্ছে।
তখন তিনি তাঁদের মাঝে বক্তব্য রাখার উদ্দেশ্যে দাঁড়ালেন, যার সারাংশ হল—
‘যদি আমরা সর্বাদিক নিকৃষ্ট ব্যক্তির তৈরি করা প্রাসাদের দিকে তাকাই, তবে দেখতে পাই, ফেরাউন এর চেয়ে কঠিন মজবুত এবং আকাশচুম্বী উঁচু প্রাসাদ তৈরি করেছিল।’
তারপর আল্লাহ তা’আলা ফেরাউনকে ধ্বংস করে দিয়েছেন এবং তাঁর আকাশছোঁয়া প্রাসাদকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছেন।
হাজ্জাজ যদি বুঝতে পারত যে, আকাশের অধিবাসীরা তাঁকে অপছন্দ করছে এবং পৃথিবীর অধিবাসীরা তাঁর থেকে উপদেশ গ্রহণ করছে।
পরদিন হাজ্জাজ যখন তাঁর সভাকক্ষে প্রবেশ করলেন, তখন তিনি রাগে ফেটে পড়ছিলেন। তিনি তাঁর সভাসদদের বললেন—
‘তোমাদের ধ্বংস হোক, তোমরা দূর হও। বসরার এক কৃতদাস উঠে দাঁড়িয়ে তোমাদের সামনে যা ইচ্ছে তা-ই বলল আর তোমাদের মাঝে এমন কেউ ছিল না, যে তাঁকে প্রতিহত করবে অথবা তাঁর কথায় অস্বীকৃতি জানাবে। আল্লাহর কসম করে বলছি, হে কাপুরুষের দল! অবশ্যই আমি তোমাদের তাঁর রক্ত পান করাব।’
তারপর তিনি তরবারী ও নাতা (যে প্রশস্ত চামড়ার বিছানার উপর মানুষের শিরোচ্ছেদ করা হয়) আনার আদেশ করলেন।
হাজ্জাজের আদেশমতো তা উপস্থিত করা হলো।
তারপর জল্লাদকে ডেকে হাজ্জাজের সামনে উপস্থিত করা হলো। তারপর হাজ্জাজ হাসানকে ধরে আনার জন্য কয়েকজন সৈন্যকে পাঠালেন। অল্পক্ষণ পরেই হযরত হাসান বসরী (রহঃ) হাজ্জাজের দরবার কক্ষে এসে উপস্থিত হলেন। তিনি এলে সকলের হৃদয়ে কম্পন বেড়ে গেল। হযরত হাসান বসরী (রহঃ) যখন তরবারী, নাতা ও জল্লাদকে উপস্থিত দেখলেন, তখন তিনি তাঁর ঠোঁটদ্বয় ঈর্ষৎ নাড়ালেন। তারপর হাজ্জাজের দিকে এগিয়ে গেলেন। অথচ তখনও তাঁর সাথে মুমিনের মহিমা, মুসলমানের আত্মসম্মানবোধ এবং আল্লাহর প্রতি আহ্বানকারীর স্থিরতা।
হাজ্জাজ হযরত বসরীর এ অবস্থান দেখে প্রচন্ড ভয়ে বলতে লাগলন, আবু সাঈদ! এদিকে এসো, এখানে বসো। এ কথা বলে তিনি হাসান বসরী (রহঃ) কে বসার জায়গা করে দিচ্ছিলেন।
হাজ্জাজের এ অবস্থা দেখে লোকজন বিস্ময় ও হতবাক হয়ে তাঁর দিকে তাকাচ্ছিলেন। তারপর হাজ্জাজ ও হযরত হাসান বসরী (রহঃ) উভয়ে নিজ-নিজ আসন গ্রহণ করলেন।
হাসান বসরী (রহঃ) আসন গ্রহণ করলেন এবং তাঁর দিকে তাকালেন এবং ধর্মীয় কিছু বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন আর হযরত হাসান বসরী (রহঃ) তাঁর প্রতিটি প্রশ্নের স্থিরচিত্তে, জাদুকরী ভাষায় এবং প্রগাঢ় জ্ঞানের আলোকে দিতে লাগলেন। হযরত হাসান বসরীর উত্তর শুনে হাজ্জাজ বললেন, হে আবু সাঈদ! আপনি জ্ঞানীদের সম্রাট!!
তারপর তিনি সুগন্ধি আনতে বললেন এবং তা হাসান বসরী (রহঃ)-এর দাঁড়িতে মেখে তাঁকে বিদায় জানালেন।
হযরত হাসান বসরী (রহঃ) বেরিয়ে এলে হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের দ্বাররক্ষী তাঁর পিছু-পিছু ছুটে এল এবং বলল, হে আবু সাঈদ! হাজ্জাজ আপনার সাথে যে আচরণ করেছেন, তাঁর বিপরীত আচরণ করার জন্য তিনি আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছিল। আমি লক্ষ্য করেছি, যখন আপনি অগ্রসর হচ্ছিলেন তখন আপনি উভয় ঠোঁট নেড়ে বিড়বিড় করে কী যেন পড়েছিলেন। বলুন তো আপনি কি পড়ছিলেন? হযরত হাসান বসরী (রহঃ) বললেন, আমি পড়ছিলাম:
আরবী…
‘হে আমার নিয়ামতের অভিভাবক! হে আমার বিপদের আশ্রয়দাতা! আপনি তাঁর ক্রোধকে আমার জন্য শীতল ও শান্তিময় বানিয়ে দিন, যেমনিভাবে আপনি আপনার প্রিয়বন্ধু হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর জন্য আগুন শীতল ও শান্তিময় বানিয়েছিলেন।’’
আপনি পড়ছেনঃ আল্লাহর মহব্বত ১ বই থেকে।
প্রথম খন্ড এখানেই সমাপ্ত।
The post আল্লাহর রাহে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর appeared first on Amar Bangla Post.