Quantcast
Channel: Amar Bangla Post
Viewing all 2084 articles
Browse latest View live

চলতি বাসে যুবতি নারীকে যৌন হেনস্তা! অতঃপর…(ভিডিও)

$
0
0

বাসস্টেপ থেকে বাসে উঠলেন একজন যুবতি নারী।

তাঁর পেছনে পেছনে উঠলেন এক তরুন যুবকও।

উঠেই যুবতির সঙ্গে শুরু করে দিলেন গা-ঘেঁষা-ঘেঁষি।

কথায় আছে, ঢিল ছুড়লে পাটকেল খেতে হয়। এই ঘটনাও হয়েছে তাই… 

চলতি পথে কেউ যৌন হেনস্তা করলে কেমন লাগে এই নরপুশু উচিৎ শিক্ষা পেয়েছে। 

ভিডিওটি দেখতে ভুল করবেন না। ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করুণ…

The post চলতি বাসে যুবতি নারীকে যৌন হেনস্তা! অতঃপর…(ভিডিও) appeared first on Amar Bangla Post.


নরকচিতায় সত্যের ঝাণ্ডাবাহী একজন সাহসী কুলকার্নি (হিন্দু থেকে মুসলিম হওয়ার গল্প)

$
0
0

বলিউডের এক সময়কার জনপ্রিয় অভিনেত্রী মমতা কুলকার্নি দীর্ঘদিন ধরে অভিনয় থেকে দূরে অবস্থান করে দর্শকদের রীতিমতো হতাশ করছিলেন। দর্শকরা সময়ের এই হিট নায়িকার শুভ প্রত্যাগমনের দিন গুণছিল। কবে তিনি মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে ‘ফিরে আসার সময় হলো’ বলে একটা সাক্ষাৎকার দিবেন ভেবে দর্শকরা রুদ্ধশ্বাসে প্রতীক্ষা করছিল। তিনি সেই সাক্ষাতকার দিলেন বটে কিন্তু তাতে শুধু ভারতবাসীই নয়; বিশ্ববাসীও সমান চমকে উঠেছেন। নব্বইয়ের দশকের এই জনপ্রিয় নায়িকা জানালেন, তিনি মুসলিম হয়েছেন! এমনকি দুইবছর আগে তার স্বামীও মুসলিম হয়েছেন!

বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি জানার চেষ্টা করছি আসলে মানুষের মূল গন্তব্য কোথায়? আমরা আসলে কী? আমাদের কী করা উচিত? সেই চেষ্টা থেকেই আমি হিন্দু ধর্ম থেকে মুসলিম হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

আবার চলচ্চিত্রে ফেরা সম্পর্কে বলেন, ঘি আবার দুধে পরিণত হতে পারে। ঋষি বাল্মিকি ফিরে আগের ভিল্লা হতে পারে। নায়ক শাহরুখ, আমির, সালমানও বদলে যেতে পারে। কিন্তু মমতাকে আর মিডিয়ার পর্দার সামনে পাওয়া যাবে না। এটা একেবারেই অসম্ভব।’ [তথ্যসূত্র : পার্বত্য নিউজ, খবরনামা]

এমন একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রীর আলোর পথে ফিরে আসা সত্যিই মুগ্ধকর, আশাজাগানিয়া। আরো অবাক বিষয় হচ্ছে তাঁর সাহসিকতা ও মনোবলের দৃঢ়তা। তিনি বলছেন, ‘মমতাকে আর মিডিয়ার পর্দার সামনে পাওয়া যাবে না। এটা একেবারেই অসম্ভব।’

মমতা যেন হাদীসের বাক্যেরই প্রতিধ্বনি করছেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

« ثَلاَثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ حَلاَوَةَ الإِيمَانِ أَنْ يَكُونَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا ، وَأَنْ يُحِبَّ الْمَرْءَ لاَ يُحِبُّهُ إِلاَّ لِلَّهِ ، وَأَنْ يَكْرَهَ أَنْ يَعُودَ فِى الْكُفْرِ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ فِى النَّارِ » .

‘তিনটি বস্তু যার মধ্যে পাওয়া যাবে সে ঈমানের স্বাদ গ্রহণ করতে সক্ষম হবে। এক. আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তার কাছে অন্য সবকিছুর চেয়ে প্রিয় হওয়া। দুই. মানুষকে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যই ভালোবাসা এবং তিন. কুফর থেকে ফিরে আসার পর পুনরায় কুফরে ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতোই অপছন্দ করা।’ [বুখারী : ১৬; মুসলিম : ৬০]

বস্তুত আল্লাহ তা‘আলা যখন কারো অন্তর খুলে দেন তখন তার জন্য পৃথিবীর যাবতীয় চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা সহজ ও সম্ভব হয়ে ওঠে। পৃথিবীর সকল তাগুতী শক্তির কাছে তিনি থাকেন অদম্য, অপ্রতিরোধ্য। সচেতন নাগরিকমাত্রই জানেন হিন্দুস্তান একটি অতি উগ্র হিন্দুত্ববাদী দেশ, যেদেশের বাসিন্দারা মুসলিমদেরকে সহ্য করতে পারে না, এমনকি কোনো মুসলিম তাদের গাড়ি-বিমানে উঠে আল্লাহ তা‘আলার নাম নেয়াও বরদাশত করে না। পাঠকদের মনে আছে কিনা জানি না, কিছুদিন আগে বাংলাদেশের এক উড়োজাহাজ কোম্পানির হিন্দুস্তানী মালিক তাদের এয়ারবাসে ‘ইনশাআল্লাহ’, ভ্রমণের দু‘আ ‘বিসমিল্লাহ ওয়া মাজরিহা’ তথা ইসলামী আচরণ ও যাবতীয় দু‘আ-দরূদ নিষিদ্ধ করেছিল। ভারতের শাসনক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে এবং নাগরিকরাও পছন্দ করে এমন লোকদেরকে, যারা মুসলিম শিশু বাচ্চাকে তার মায়ের পেট থেকে কেটে বের করে মায়ের সামনে টুকরো টুকরো করতে পারে। এমন উগ্র হিন্দুদেরকে ভারতবাসী শ্রদ্ধা করে, যারা মুসলিম নারী-পুরুষকে জোর করে পেট্রোল খাইয়ে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং পেট্টোলবাহী জীবন্ত মানুষটার তাজা দেহ ভস্মিভূত হওয়ার তীব্র ও ভয়ানক করুণ দৃশ্য দেখে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। ভারতে প্রায় পঞ্চাশটির মতো এমন উগ্র ও হিংস্র সংগঠন, সংস্থা ও রাজনৈতিক দল আছে যারা সর্বদা মুসলিমের রক্ত, লাশ ও অগ্নিদগ্ধ পোড়া দেহের গন্ধে নিজেদেরকে আপ্লুত দেখতে চায়। গুজরাটের দাঙ্গা, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের চিত্র এবং বিশ্ব ইতিহাসের বড় বড় সব দাঙ্গার জন্ম দেওয়া হিন্দুস্তান সেগুলোর রাজসাক্ষী।

সুতরাং এমন একটি উগ্রবাদী ও কট্টর হিন্দুরাষ্ট্রে খোদ হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে একজন জনপ্রিয় ও দর্শকনন্দিত অভিনেত্রীর আলোর পথে আসা এবং প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষণা দেওয়া নিতান্ত সাধারণ ব্যাপার নয়। আজকের মমতা, আমার বোন, মুসলিমের এক নতুন সদস্য যেন ফিরআউনের জাদুকরদের মতোই সাহসী হয়ে উঠেছেন। জাদুকররা বিশাল-বিস্তৃতি মাঠে আল্লাহ হওয়ার দাবিদার ফিরআউন ও তার বিশাল বাহিনীর সামনে হকের দাবি নিয়ে দণ্ডায়মান এক মুসা ‘‘আলাইহিস সালামের অবিচলতা দেখে বিস্মিত, বিমোহিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। নিঃসন্দেহে এটা ছিল এক বিরাট চ্যালেঞ্জের বিষয়, অসম লড়াই। কারণ ফিরআউন তৎক্ষণাত তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ডান হাত ও বাম পা কর্তন করে তাদেরকে চিরতরে পঙ্গু করার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু কী অদ্ভুত ব্যাপার যে, যারা এক মুহূর্ত আগে স্রষ্টার বিরুদ্ধে লড়াই করতে এসেছিল তারাই এখন মুসা ‘আলাইহিস সালামের ঈমানী শক্তির বদৌলতে নকল স্রষ্টার বিরুদ্ধে, কাট্টা কাফেরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন!  

মমতা এপর্যন্ত বাংলা, হিন্দি, তামিল, তেলেগু, মালায়লাম ও কানাড়ি শিল্পে প্রায় অর্ধশতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। সর্বশেষ অভিনীত ছবি ছিল ২০০২ সালে। বলিউডে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং আবেদনময়ী নায়িকা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। সেই মমতার পক্ষে এমন একটা প্লাটফর্ম ছেড়ে ইসলাম গ্রহণ করার মতো দুঃসাহস দেখানো নিঃসন্দেহে নারীজাতির দীপ্তপদচারণার নজির হয়ে থাকবে।

অনেক সময় পথভ্রষ্ট করার চক্রান্ত পথহারা পথিকের সুপথ পাওয়ার মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়। এর নজির আমরা জানতে পারি ইসলামের ইতিহাসে, মক্কার কুরায়শদের কুচক্রান্তের ঘটনায়। রাসূসুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় হজ করতে আসা লোকদেরকে দীনের দাওয়াত প্রদান করবেন এই আশঙ্কায় মক্কার অলিতে গলিতে আগে থেকেই লোক বসিয়ে দেওয়া হয় তাঁর নামে কুৎসা রটনা করতে। নেতাদের আদেশ মোতাবেক এই চেলা-চামুন্ডারা রাস্তার মোড়ে মোড়ে নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর আনীত দীনের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করতে থাকে। এতে হিতে বিপরীত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তর থেকে আগত লোকেরা এই নতুন ধর্মের প্রবর্তক নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং এভাবেই অসংখ্য মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেন। মক্কার কুরাইশরা কুৎসা রটনা না করলে তারা নবী সম্পর্কে জানতেনই না এবং ইসলাম গ্রহণেরও সুযোগ মিলত না।

ঠিক কুরাইশদের দেখানো পথেই হাঁটছে আজকের ইসলামবিদ্বেষীচক্র। ওরা বিভিন্নভাবে নারী সমাজকে ইসলামের বিরুদ্ধে ক্ষীপ্ত করতে গিয়ে অনেক বিধর্মী নারীকে ইসলাম সম্পর্কে জানতে, ইসলামকে মানতে অনুপ্রাণিত করছে। এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০০০ সালের তুলনায় ২০১১ সালে নারীদের মধ্যে ইসলাম গ্রহণের প্রবণতা ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রবণতা এমন সব রাষ্ট্রে বেশিমাত্রায় পরিলক্ষিত হচ্ছে, যেখানে ইসলামের বিরুদ্ধে, পর্দার বিরুদ্ধে অলঙ্ঘনীয় সংবিধান চালু করে রেখেছে! ইনশাআল্লাহ, শত্রুরা না চাইলেও এভাবেই অব্যাহত থাকবে ইসলামের অগ্রযাত্রা, বিজয় নিশান। ভারতের মতো ইসলামবিদ্বেষী রাষ্ট্রগুলোতেও ফিরআউনের জাদুকরদের মতো গোটা রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে গিয়ে মমতা কুলকার্নির মতো নারীরা ইসলামের পতাকাতলে আশ্রিত হবেন। তাই নারীরা শুধু অবলার দুর্বলতায় অভিযুক্তই নয়; সাহসের উপমা হিসেবেও সমান দক্ষ। সালাম, মমতা তোমাকে!

আপনি পড়ছেনঃ ফেরারী নারী বই থেকে।

The post নরকচিতায় সত্যের ঝাণ্ডাবাহী একজন সাহসী কুলকার্নি (হিন্দু থেকে মুসলিম হওয়ার গল্প) appeared first on Amar Bangla Post.

বাচ্ছারা এতো দুষ্ট কেনো? চরম হাসির ভিডিও। মিস্টার বিন ফেইল

$
0
0

হাসতে চাইলে এই ভিডিওটি দেখুন…

এদের কাছে মিস্টার বিন ফেইল করবে… 

অনেক হাসির একটি ভিডিও আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম দেখতে কিপ্টামী করবেন না। 

আর হ্যাঁ, ভিডিওটি দেখে আপনার কাছে কেমন লেগেছে তা জানাতে ভুল করবেন না। 

বাচ্ছাদের এই হাসির ভিডিওটি দেখে মজা পেলে অবশ্যই শেয়ার করবেন। 

আরো দেখুন…

* মহাকাশের লাইভ ভিডিও

* বাসর রাতের স্বামী  স্ত্রীর গল্প

পাজী মেয়ে (রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প)

The post বাচ্ছারা এতো দুষ্ট কেনো? চরম হাসির ভিডিও। মিস্টার বিন ফেইল appeared first on Amar Bangla Post.

সুস্থ নবজাত শিশু ও তার যত্ন

$
0
0

সুস্থ নবজাত শিশু পূর্ণ  মাসে (৩৮—৪২ সপ্তাহ) জন্মগ্রহণ করে, জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই কাঁদে এবং সন্তোষজনকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়।

  • ওজন ও পরিমাপঃ ভারতবর্ষে সচরাচর ২.৫ কেজির বেশি ওজন হয়। গড় ওজন  হল ২.৭ কেজি। মাথা থেকে পা পর্যন্ত গড় দৈর্ঘ্য ৫০ সেমি, মাথার পরিধি ৩৫ সেমি ও বাইপ্যায়েটাল ডায়ামিটার (Biparaetal diameter) ৯.৫ সেমি।
  • দেহভঙ্গিঃ নবজাতকের হাত-পা কিছুটা ভাঁজ করে থাকে, যদিও হাতের মুঠি শক্ত করে বোজানো থাকে—যেমনটি মায়ের জরায়ুর ভেতর থাকে।
  • মাথাঃ স্বাভাবিক প্রসবের সময় মাথার আকৃতির কিছুটা পরিবর্তন (Moulding and Caput succedaneum) হয়, তা এক-দুদিনের মধ্যে আপনা থেকেই ঠিক হয়ে যায়। চোখের পাতা দিয়ে শিশুর চোখ বেশিরভাগ সময়ে ঢাকা থাকে। শিশুর মাথা বাকি শরীরের তুলনায় বড় থাকে। মাথার তুলনায় ছাতির পরিধি কিছুটা কম থাকে।
  • গলাঃ নবজাতকের সাধারণত ছোট থাকে।
  • মুখঃ মাথার তুলনায় মুখ ছোট থাকে।
  • শ্বাসপ্রশ্বাসঃ নবজাতক নাক ও মুখ উভয় দিক দিয়ে শ্বাস নিতে পারে। শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়মিত থাকে। শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি সাধারণত ৩০—৬০ এর মধ্যে থাকে। হার্টের গতি প্রতি মিনিটে ১২০—১৪০।
  • রক্তচাপঃ সাধারণত ৮০/৫০ মিঃমিঃ পারদ।
  • পেটঃ সচরাচর ভেতরে ঢুকে থাকে। লিভার ও  স্প্লিন হাত দিয়ে অনুভব করা যায়।
  • লিঙ্গঃ পুরুষ-শিশুর শুক্রাশয় অণ্ডকোষের মধ্যে থাকে।
  • চুলঃ সরু সরু মুখের চুল ও শরীরের চুলকে লানুগো (Lanugo) বলে। মাথার চুল সাধারণত এক মাসের মধ্যে পড়ে  যায়।
  • তাপমাত্রাঃ শরীর তাপমান জন্মের অল্প সময় পরেই এক থেকে ২ ডিগ্রি ফারেনহাইট কমে যায় এবং তা ৯৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে।
  • ত্বকঃ কিঞ্চিৎ নীলাভ শরীর সচরাচর জন্মের পরপরই দেখা যায়। পরবর্তীকালে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার পরেই তা গোলাপি রঙের হয়। একরকম সাদা পদার্থ দিয়ে শিশুর চামড়া ঢাকা থাকে, তাঁকে ভার্নিক্স বলে।
  • প্রস্রাবঃ নবজাত শিশু জন্মের পরপরই সাধারণত প্রস্রাব করে। জন্মের প্রথম সপ্তাহে প্রস্রাবের পরিমাণ কম থাকে এবং চব্বিশ ঘন্টায় প্রায় দু’আউশ পরিমাণ হয়।  কদাচিৎ প্রথম বা দ্বিতীয় দিনে কোনো প্রস্রাবই হয় না।
  • মলঃ শিশু জন্মের পরপরই কালো রঙের মলত্যাগ করে। একে মেকোনিয়াম বলে।

জন্মের সময় পরীক্ষা করে রক্তে যা যা পাওয়া যায়

জন্মের পর রক্তের পরিমাণ ৮০ মিলিলিটার প্রতি কেজি ওজনে থাকে। লোহিত রক্তকণিকা ৬—৮ মিলিয়ন প্রতি কিউবিক মি.মি.-তে। হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ১৮ গ্রাম % শ্বেত রক্তকণিকা ১৭০০০ প্রতি কিউবিক মি.মি.-এ, অনুচক্রিকা ৩,৫০,০০০ প্রতি কিউবিক মি.মি. এ, রেটিকিউলোসাইট ৩.৭ শতাংশ।

প্রথম সপ্তাহে শিশুর কী কী পরিবর্তন হয়

প্রথম সপ্তাহে শিশু পারিশ্বার্শিক আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া চেষ্টা করে।

  • ওজনঃ প্রায় ১০ শতাংশ ওজন কম যায় জন্মের চার-পাঁচ দিনের মধ্যেই। সাত দিন বাদে ওজন বাড়তে শুরু করে। প্রথম দিকে ওজন কমার কারণ হল—শরীর থেকে, ফুসফুস থেকে, প্রস্রাব ও পায়খানার সঙ্গে জল বের হয়ে যাওয়া। এই সময়ে শিশুর আহারও খুব কম থাকে। যত বড় শিশু জন্ম নেয়, ওজনও তত বেশি কমে। পরবর্তীকালে শিশুর ওজন প্রতিদিন ২৫ গ্রাম করে বৃদ্ধি হয়।
  • ত্বকঃ গোলাপী রঙ থেকে ফ্যাকাশে বাদামী রঙের হয়। চামড়াতে কিছুটা শুজনো ভাব থাকে এবং তা আঁশযুক্ত। জন্মের দু-তিন বাদে ১০ শতাংশ শিশুর চামড়ায় হলদে ভাব দেখা যায়, যাকে ফিজিওলজিক্যাল জনডিস বলে। চামড়ায় সরু-সরু চুল, জা শিশু জন্মের সময় দেখা যায়, তা আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়।   
  • তাপমাত্রাঃ শরীরের তাপমাত্রা ৯৭—৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইটে ওঠানামা করে।
  • স্তনঃ উভয় লিঙ্গের শিশুরই স্তন ফুলে ওঠে। সাদাটে রস বের হয় দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন থেকে। মায়ের এস্ট্রোজেন হরমোন শিশুর শরীরে প্রবেশ করার জন্য এটা হয়।
  • নাড়ি (Cord)ঃ শুকিয়ে পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে ঝরে পড়ে।
  • প্রজনন-অঙ্গঃ স্ত্রী-শিশুর বহিঃপ্রজনন অঙ্গ কিছুটা ফুলে থাকে। শ্বেতপ্রদর হতে পারে, এমনকী যোনি থেকে রক্তক্ষরণ পর্যন্ত হতে পারে প্রথম সপ্তাহে। এটা ১—২ দিন থাকে। এটা শরীরের এস্ট্রোজেন হরমোন কমে যাওয়ার জন্য হয়।
  • মলঃ প্রথম দু-তিনদিন মেকোনিয়াম নির্গত হয়, যা দিনে-তিন-চার বার হয়। বারো ঘন্টার ভেতর শিশু মলত্যাগ না করলে শিশুকে পর্যবেক্ষণে রাখা উচিৎ। তৃতীয়-চতুর্থ দিন থেকে মলের রঙের পরিবর্তন হয়ে তা বাদামী-হলুদ  রঙের হয় ও  টক গন্ধযুক্ত থাকে। বৃহদন্ত্রের ভেতর ব্যাকটিরিয়াল ফ্লোরা (E-Coli) সৃষ্টি হওয়ার জন্য এটা হয়। দিনসাতেক বাদে শিশুর মলের রঙের আবার পরিবর্তন হয়। যে শিশু মায়ের দুধ পান করে, তার সোনালী-বাদামী রঙের নরম মল হয় এবং টক-টক গন্ধযুক্ত থাকে। দিনে একবার থেকে পাঁচ-ছয়বার পর্যন্ত মলত্যাগ করতে পারে। কখনও কখনও মল জলীয় ও  সবুজ রঙের মিউকাসযুক্ত হতে পারে। বোতলের দুধ খাওয়া শিশুর মলের রঙ হয় ফ্যাকাশে,তা শক্ত এবং দুর্গন্ধযুক্ত হয়—এর সঙ্গে দইয়ের মতো পদার্থ যুক্ত থাকে। এটা ক্ষারধর্মীয় (Alkaline in reaction)।
  • মূত্রঃ প্রথমদিকে শিশুর মূত্রের  পরিমাণ কম থাকলেও সপ্তাহখানেক বাদে শিশু দিনে প্রায় ২৫০  মিলিলিটার প্রস্রাব করে।
  • স্নায়বিক প্রতিক্রিয়াঃ স্বাভাবিক শিশুর কতকগুলি প্রতিক্রিয়া পরীক্ষা করলে দেখা যায়।যেমন, গ্রাস্প রিফ্লেক্স (Grasp reflex) এবং মরোস রিফ্লেক্স (Moro’s reflex)।
  • রক্তের পরিবর্তনঃ হিমোগ্লোবিন ১২ গ্রাম %-এ নেমে আসে। দু’তিন্দিনের মাথায় বিলিরুবিন ৫ মি. গ্রাম% থাকলেও সপ্তাহখানেক বাদে তা ২ মি.গ্রাম%-এ নেমে আসে।

এরপর পড়ুনঃ নবজাত শিশুর যত্ন

লেখকঃ ডাঃ অবিনাশ চন্দ্র রায়।  

লেখকেরঃ গর্ভবতী মা ও সন্তান বই থেকে। 

The post সুস্থ নবজাত শিশু ও তার যত্ন appeared first on Amar Bangla Post.

প্রেম মানে কি? (প্রেমের কবিতা) |তানিয়া রহমান

$
0
0

করছ সবে প্রেমের খেলা

জান কি প্রেমের মানে?

প্রেম মানে কি নিত্য চাওয়া

দোহার মুখের পানে?

 

প্রেম মানে কি প্রণয়িনীর

হাতের পরশ পাওয়া?

প্রেম মানে কি সখীর বাড়ি

নিত্য আসা-যাওয়া?

সখার লাগি গভীর  রাতে

লুকিয়ে লিখা চিঠি?

থাম থাকে না সেই চিঠিটার,

থাকে না তার দিঠি।

 

প্রেম মানে কি কাব্য লিখা

সখীর কালো চুল?

ভালবাসা  দিবসের ঐ

একটি গোলাপ ফুল!

 

প্রেম মানে কি কলেজ মাঠে

নিত্য ঘোরা ঘুরি

প্রেম মানে কি কাপুরুষের

মিথ্যা বাহাদুরি?

কানের ভেতর ঝুলিয়ে রাখা

হেড ফোনের ঐ তার?

নিত্য নতুন সখার দেওয়া

দামী উপহার।

 

প্রেম মানে কি মুঠোফোনে

নিত্য আলাপন?

ভীতি মনে, বাড়ির লোকে

দেখে ফেলে কখন!

 

প্রেম মানে কি সেল ফোনেতে

নিত্য ফ্লেক্সিলোড?

মেসেজেতে টাইপ করা

ভালবাসার কোড।

 

প্রেম মানে কি মেক-আপ দিয়ে

রাঙা সখীর মুখ?

শার্টেরই ঐ বোতাম খোলা

সখার নগ্ন বুক।

 

প্রেম মানে কি মায়াবী চোখ

সানগ্লাসেতে ঢাকা?

সখীর কানের ঝুমকো  দুল আর

অক্ষি কাজল আঁকা।

 

প্রেম মানে কি সখার ঠোঁটের

রঙিন সিগারেট?

ব্যাগের ভেতর লুকিয়ে রাখা

সিডির নতুন ক্যাসেট।

 

প্রেম মানে কি বাইপাসেতে

বাইক চেপে বসা?

পার্কে বসে ন্যাকামি আর

মিষ্টি কথা বলা।

 

প্রেম মানে কি দেয়ালেতে

লেখা সখীর নাম?

তাঁদের নিয়ে লোকে গীবত

করেছে অবিরাম।

 

প্রেম মানে কি ক্যান্টিনেতে

বসে ফুচকা খাওয়া?

রাখিতে মান সখীর কাছে-

নিত্য যে ধার চাওয়া।

 

প্রেম মানে কি শিল্প কলায়

এক সাথে গান শেখা?

হলে বসে সখীর সাথে

‘মনপুরা’ ফিল্ম দেখা।

 

প্রেম মানে কি ই-মেইলে

পাঠানো ঐ ছবি?

ছন্দবিহীন কাব্য লিখে

সবাই ওরা কবি!

 

প্রেম মানে কি বলিউডের

জমকালো গান শোনা?

দিনের বেলায় ছাদে বসে

রাতের তাঁরা গোনা।

প্রাইভেটেরইনাম করে হায়-

ঘুরে সখা-সখী,

প্রেম মানে কি বাসায় ফিরে

মায়ের বকাবকি?

প্রেম মানে কি কফি হাউস,

ফুড প্যালেসে বসা?

প্রেম মানে কি পকেট মানির

নিত্য মরণ দশা?

 

প্রেম মানে কি সবার থেকে

ভিন্ন পথে চলা?

প্রাণ সখীর মন গলাতে

মিথ্যা কথা বলা।

প্রেম মানে কি ভালবাসার

মিথ্যা অভিনয়?

নিত্য রাতে স্বপ্নে দেখা

মধুর পরিণয়।

 

প্রেম মানে কি সখীর মনের

গোপন সন্দেহ?

তাঁহার মনের এসব ভীতি

জানেনা তো কেহ।

 

প্রেম মানে কি সখার তরে

নিঃস্ব হবে ধনি?

সখা তাঁহার করবে হরণ

প্রাণ সুধার খনি।

 

প্রেম মানে কি সখার দেয়া

আবিলতার কালি?

প্রেম মানে কি কলঙ্কিনী

কুলের চোখের বালি?

সখার লাগি সখির মনের

চাপা অভিমান?

প্রেমাঘাতে সখার পরাণ

যায় হয়ে খান-খান।

প্রেম মানে কি প্রতারণা,

ছলনার খেলা?

সখার উপর গোপন রাগে

কাটে সখীর বেলা।

সখার মনের গোপন ঘরে

করুণ হাহাকার,

বেড়েই চলে প্রতিটিক্ষণ

বিষ ব্যথার ভার।

 

প্রেম মানে কি হতাশা আর।

বিরহেতে মরা?

ছুরি দিয়ে নিজের বাহু

নিজেই জখম করা।

প্রেম মানে কি কোমল হাতের

বিমল রক্তপাত?

দুঃখেরই ঐ অশ্রুধারায়

কাটছে তাঁদের রাত।

প্রেম  মানে কি সখীর গায়ে

বৈশাখের শাড়ি?

সখার মাথার বাবরি চুল আর

মুখের খোঁচা দাড়ি।

 

প্রেম মানে কি দশের মুখে

দোষের কানাকানি?

নোট বুকেরই পাতায়-পাতায়

লিখা প্রেমের বাণী।

প্রেম মানে কি সখার বুকে

সখীর সবিতা?

পড়ার ঘরের টেবিলেতে

“শেষের কবিতা”।

 

প্রেম মানে কি শরৎ বাবু,

প্রেম মানে কি সুনীল?

তোমাতে র ;শ্রীকান্ত’ তে

খুঁজে বেড়াও মিল।

 

প্রেম মানে কি সখীরা সব

‘দেবদাস’ এরই পারু?

‘নষ্ট নীড়’-এর অমলেরই

বৌদি এরা চারু।

 

প্রেম মানে কি কৃষ্ণ সবাই,

সবাই তোরা রাধা?

কারে ছেড়ে কারে নিবি

চোখে লাগে ধাঁধা!

 

প্রেম মানে কি সিলিং ফ্যানে

সুইসাইডের দড়ি?

সখার সখের হেরোইন আর

ইয়াবার ঐ বড়ি!

 

প্রেমলীলা কি বৃথা তবে?

প্রেম কি মরীচিকা?

প্রেম মানে তো বুকের ভেতর

বিরহেরই শিখা!!

লেখিকাঃ তানিয়া রহমান

The post প্রেম মানে কি? (প্রেমের কবিতা) | তানিয়া রহমান appeared first on Amar Bangla Post.

নবজাত শিশুর যত্ন ও খাবার

$
0
0

শিশুর তাৎক্ষণিক যত্ন কীভাবে নেওয়া হয়?

  • প্রসবের পর একটি ট্রেতে জীবাণুমুক্ত তোয়ালে দিয়ে জড়িয়ে শিশুকে রাখা হয়। শিশুর মাথার দিক নীচু ও পায়ের দিক ৬ ইঞ্চি পরিমাপ উঁচুতে রাখা হয়, যাতে শিশুর নাক, মুখ ও শ্বাসতন্ত্র থেকে লাইকার আপনা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।
  • শিশুর নাক, মুখ জীবাণুমুক্ত মিউকাস সাকার বা রবার বালব সিরিঞ্জ দিয়ে শুষে পরিষ্কার করা হয়।
  • নাড়ি বাঁধাঃ জন্মের দু-তিন মিনিট বাদে নাড়ি সুতো দিয়ে বাঁধতে হবে। যদি RH নেগেটিভ মা হয় অথবা শিশুর সময়ের আগেই জন্ম হয়, তাহলে প্রসবের সঙ্গে সঙ্গে নাড়ি বাঁধতে হবে। দু’-তিন মিনিট দেরি করে নাড়ি বাঁধলে মায়ের শরীর থেকে প্রায় ১০০ মিলি-লিটার রক্ত নাড়ি দিয়ে শিশুর শরীরে প্রবেশ করে।
  • জন্মের সঙ্গে সঙ্গে শিশুকে পরীক্ষা করে দেখতে হবে কোনো জন্মগত ক্রটি আছে কি না।

শিশুকে গোসল করানো কতটা জরুরি?

নিয়মমাফিক গোসল করানো দরকার নেই, বিশেষ করে হাসপাতালে প্রসব হলে। এর পরিবর্তে ভেজা জীবাণুমুক্ত নরম তোয়ালে দিয়ে শিশুর শরীর পরিষ্কার কর‍তে হবে যাতে রক্ত, মেকোনিয়াম, ভার্নিক্স ইত্যাদি পরিষ্কার হয়ে যায়। গোসল করানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, পানি যেন শরীরের স্বাভাবিক  তাপমাত্রায় থাকে।  সাবান দিয়ে গোসলের পর নরম তোয়ালে দিয়ে শিশুর শরীর হালকা করে মুছে দিতে হবে। শিশুর শরীর  বেশি ঘষাঘষি করলে শিশুর নরম চামড়ায় আঘাতজনিত প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, যাকে সচরাচর ‘মাসি-পিসি (Aunty’s disease) বলে। হাসপাতাল থেকে বাড়ি আসার পর শিশুকে রোজ গোসল করাতে হবে।

  • নাড়ির যত্নঃ পরিষ্কার-পরিছন্ন পরিবেশে নাড়ি খোলা রাখাই ভালো।  ট্রিপল-ডাই লাগিয়ে অথবা রেক্টিফায়েড স্পিরিট ও মারকিউরোক্রোম লাগিয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়।
  • পোশাক-পরিচ্ছদঃ আবহাওয়া অনুযায়ী পোশাক দিতে হবে। হাত-পা ছোড়ার জন্য পোশাক নির্বাচন করতে হবে। ন্যাপকিন সময়ে সময়ে পালটাতে হবে।
  • চোখের যত্নঃ চোখের সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য সোফরামাইসিন চোখের ড্রপ দু’চোখে দেওয়া যেতে পারে।

নবজাত শিশুর ছোটখাটো সমস্যা

  • বমি করাঃ জন্মের পর-প্রথম দিনে বহু শিশু বমি করতে পারে। শিশুর পাকস্থলিতে লাইকর (Liquor) থাকার জন্য এটা হয়। প্রসবের সময় বা তার আগে শিশু বেশি পরিমাণ লাইকর খেতে পারে। প্লাস্টিক বা  রবার টিউব দিয়ে শিশুর পাকস্থলি থেকে লাইকর বের করে পাকস্থলি পরিষ্কার (Stomach wash) করা হয়।
  • বেশি কান্নাঃ শিশু খিদে পেলে অথবা কোনোরকম অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করলে কাঁদে। প্রস্রাব বা পায়খানা করে ন্যাপকিন ভিজে গেলেও শিশু কাঁদে। এছাড়াও পেটে যন্ত্রণা (Colic pain) হলে শিশু কান্নাকাটি করে। এর জন্য শিশুকে Colimex drop পাঁচ ফোঁটা করে দেওয়া যেতে পারে।
  • নাক বন্ধ থাকাঃ এর জন্য Nasivion mini drop অথবা Otrivin pediatric nasal drop এক ফোঁটা করে দিনে তিনবার দিতে হবে।
  • চামড়ার সমস্যাঃ এর জন্য শিশুর গোসলের পর Johnson baby Powder শরীরে মাখিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
  • ন্যাপকিন র‍্যাশঃ ন্যাপকিন ভিজে গেলে সঙ্গে সঙ্গে পাল্টাতে হবে। ন্যাপকিন জীবাণুমুক্ত করার জন্য অ্যান্টিসেপটিক সলিউশনে ভিজিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্যঃ কৃত্রিম দুধ খাওয়ানোর শিশুদের ক্ষেত্রে এটা বেশি হয়। এর জন্য জোলাপ (Laxative) না ব্যবহার করাই ভালো। খাদ্যের ক্রটি সংশোধন এবং পানির পরিমাণ বাড়ালেই সমস্যা দূর হয়ে যায়, অন্যথায় Milk of magnesia আধ চামচ মুখ দিয়ে খাওয়াতে হবে।

শিশুর ভোজ/খাবার

শিশুকে দুধ পানন্মের প্রথম ছ’মাস শিশুর বিকাশ ও বৃদ্ধির গতি তার পরিবর্তী জীবনের সময় থেকে অনেক বেশি ও দ্রুত হয়। ছ’মাসে তার ওজন দ্বিগুণ হয় এবং এক  বছরে তিন গুণেরও বেশি হয়। এই কথা মনে রেখে শিশুর আহার উপযুক্তভাবে করতে হবে। এর পরিমাণ ও গুণগত মানও সঠিক রাখা দরকার।

শিশুর আহার দু’ধরনেরঃ ১. স্তনপান। ২. কৃত্রিম আহার।

  • স্তনপানঃ মাতৃদুগ্ধ শিশুর সর্বোকৃষ্ট আহার। শিশুর সঠিক বিকাশ ও বৃদ্ধির জন্য যা যা দরকার, প্রকৃতির দান মায়ের দুধে তার সবই সঠিক মাত্রায় আছে।

বুকের দুধের সুবিধাগুলি কী কী

  • ভারতবর্ষে মতো উন্নয়নশীল দেশে এটা উপকারী ও অর্থসাশ্রয়কারী।
  • সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর।
  • সহজলভ্য ও সঠিক তাপমাত্রায় পাওয়া যায়।
  • জীবাণুমুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় এবং মায়ের স্তন থেকে সরাসরি শিশুর পেটে পৌঁছয়। ফলে সংক্রমণের সম্ভাবনা কম। শিশুর পেটের রোগ (গ্যাস্ট্রোএনটারাইটিস) হওয়ার সম্ভাবনাও কম।
  • শিশুর রোগ প্রতিরোধ করে। যেমন-রিকেট, স্কার্ভি, গ্যাস্ট্রোএনটারইটিস ইত্যাদি। মায়ের  দুধের সন্মগে অ্যান্টিবডি শিশুর শরীরে প্রবেশ করে, যা শিশুর রোগ-প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  • মা ও শিশুর মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলে।
  • বুকের দুধ খাওয়ালে পক্ষান্তরে মায়ের প্রাকৃতিক উপায়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ হয়। উন্নয়নশীল বিশ্বে এর গুরুত্ব অনেকখানি।
  • পরিশেষে বুকের দুধ শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য হতে দেয় না, এতে অ্যালার্জি হয় না, প্রসবের পর জরায়ু সঙ্কুচিত হতে সাহায্য করে।

প্রসবের কতক্ষণ বাদে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে?

স্বাভাবিক প্রসবের পর সুস্থ শিশুকে একঘন্টা বাদেই মায়ের স্তন দিতে হবে। সিজার করে হলে চার ঘণ্টা বাদে দিতে হবে।

দিনে কতবার শিশুকে দুধ খাওয়াতে হবে?

সময় হিসাবে দিতে হলে তিন ঘন্টা বাদে বাদে স্তন পান করাতে হবে। অন্যথায় শিশুর যখন খিদে পাবে, তখনই খাওয়াতে হবে।

কতক্ষণ খাওয়াতে হবে?

প্রথমদিকে পাঁচ মিনিট করে প্রতিটি স্তনে খাওয়াতে হবে। পরবর্তীকালে  দশ মিনিট করে।

রাতে শিশুকে খাওয়ানো উচিত কি না   

শিশুর খিদে পেলে রাতেও খাওয়াতে হবে। শিশুর কাছে দিনও রাত্রির কোনো পার্থক্য নেই।

হাওয়া বের করা (Burping)

প্রতিটি স্তন পান করার পর শিশুকে ঘাড়ে শুইয়ে শিশুর পিঠে আস্তে আস্তে চাপড়াতে হবে। এর ফলে শিশুর মুখ দিয়ে অনেক হাওয়া বেরিয়ে আসে, যা শিশু স্তন খাওয়ার সময় পাকস্থলিতে জমা হয়।

শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় কী কী সমস্যা হতে পারে?

  • কম আহার (Under feeding) : শিশু কান্নাকাটি করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়, শিশুর সথিক ওজন বৃদ্ধি হয় না। এর জন্য কৃত্রিম দুধ খাওয়াতে হবে।
  • বেশি আহারঃ এক্ষেত্রে খাওয়ানোর পরপরই শিশু বমি করে, বারেবারে অজীর্ণ পাতলা পায়খানা করে। মলদ্বারের পাশের  জায়গা ছড়ে যেতে পারে। এর জন্য শিশুকে অল্প সময় স্তন দান করতে হবে। দুধ খাওয়ানোর পূর্বে জীবাণুমুক্ত পানি খাওয়ালেও উপকার পাওয়া যায়।
  • স্তন ফুলে ওঠা (Enjorged breast) : প্রসবের পর তৃতীয় বা চতুর্থ দিনে এটা হতে পারে। এর জন্য ঠান্ডা বা গরম সেঁক, স্তন মালিশ করে  দুধ বের করে দিতে হবে, আঁটোসাটো বক্ষ-আবরণী পরতে হবে। কখনও ব্রেস্ট-পাম্প দিয়ে দুধ নিঙ্কাশিত করে শিশুকে খাওয়াতে হবে। অল্প দিন স্তনদান করা বন্ধ করে ওইভাবে নিঙ্কাশিত দুধ খাওয়ালে উপকার মেলে। তাতেও মায়ের আরাম না হলে ওষুধ প্রয়োগ করে বুকের দুধ কিছুটা কমাতে হবে।
  • বসে-যাওয়া স্তনবৃন্ত (Retracted nipple) : Nipple-shield ব্যবহার করে শিশুকে স্তনপান করাতে হবে। এছাড়া আর উপায় নেই।
  • ছেড়ে-যাওয়া স্তনবৃন্ত (Cracked nipple) : Massic breast cream অথবা Betadine মলম ব্যবহার করলে উপকার মেলে। শিশুকে স্তনপান করানোর সময় স্তনবৃন্ত পরিষ্কার করে নিতে হবে। অন্যথায় নিঙ্কাশিত দুধ শিশুকে পান করাতে হবে।
  • স্তন-সংক্রমণ (Breast abscess) :  এক্ষেত্রে স্তনদান সামুয়িক বন্ধ করে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ, গরম সেঁক এবং পুঁজ অপারেশন করে বের করে দিতে হবে।   

স্তনপান করানো কালীন নিরাপদ-অনিরাপদ ওষুধ

  • নিরাপদ ওষুধঃ স্তনদান করানো কালীন মাকে যে ওষুধগুলো খাওয়ানো যেতে পারে, তা হল—পেনিসিলিন, এরিথ্রোমাইসিন, সেফালোসপরিন, মেট্রোনিডাজোল,  অ্যান্টাসিড, ভিটামিন ওষুধ, লৌহ, প্যারাসিটামল, অ্যাসপিরিন, ক্লোরোকুনইন ইত্যাদি।
  • অনিরাপদ ওষুধঃ টেট্রাসাইক্লিন, ক্লোরামফেনিকল, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, স্টেরয়েড, অ্যালকোহল ইত্যাদি।

কোন কোন ক্ষেত্রে মা তার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন না?

  • মায়ের জতিলতাপূর্ণ হার্টের রোগ,  কিডনির রোগ থাকলে।
  • ফুসফুসের টিবি, যা কি না শিশুকে সংক্রামিত করতে পারে।
  • স্তনের সংক্রমণ।
  • প্রসবের পর মায়ের মানসিক রোগ (Puerperal Psychosis)।
  • মা মৃগী রোগ বা ক্যানসারের ওষুধ খেলে।
  • প্রসবের সময় মায়ের জনডিস থাকলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সন্তানকে স্তন দিতে পারবেন না।

শিশুর কতকগুলি রোগ থাকলে স্তন দেওয়া উচিৎ নয়।

যেমনঃ অতিরিক্ত অসুস্থ শিশু, অতিমাত্রায় অবিকশিত শিশু, শিশুর জন্মগত ক্রটি—ক্লেফটপ্যালেট, এসেফেজিয়াল এট্রেসিয়া, স্নায়ুর রোগ ও জন্মগত কারণে—মলদ্বার বন্ধ থাকা।

লেখকঃ ডাঃ অবিনাশ চন্দ্র রায়।  

লেখকেরঃ গর্ভবতী মা ও সন্তান বই থেকে। 

আরো দেখুনঃ শিশুদের সুন্দর নাম

আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কাছে ভালো লাগলে এটি শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে পড়তে সাহায্য করুণ…

The post নবজাত শিশুর যত্ন ও খাবার appeared first on Amar Bangla Post.

সুপের হাঁড়িতে কন্যাসন্তান : নারীসত্তায় এ কোন কলঙ্ক?

$
0
0

পৃথিবীর দুটি বিষয়ের প্রতি মানুষ সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট। নারী ও প্রকৃতিগত রিপু। এই দুটি বিষয়ের সঙ্গে মানবপ্রকৃতির অন্তরঙ্গতার বিষয়টি কারো অজানা নয়। নারী তো মানবসমাজের অর্ধাংশ, পৃথিবীর মানবসভ্যতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে পুরুষের নিত্যসঙ্গী। আর আল্লাহপ্রদত্ত জৈবিক প্রয়োজনও মানুষের অস্তিত্বের জন্যই অপরিহার্য। তবে জৈবিকশক্তি নিছক ভোগের জন্য নয়। বরং তা এক বিরাট আমানত। একজন পুরুষ ওই কৃষকের মতো, যে ভূমিতে বীজ রোপণ করে ফসল ফলানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং নারী ওই উর্বর ভূমির মতো, যে ফসল ফলায়। আল্লাহর কুদরতে একটি সুন্দর ধারার মাধ্যমে এই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে এবং এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে জীবনের বহু ধারা; বিয়ের মাধ্যমে বৈধ জৈবিক বন্ধন-ব্যবস্থা না থাকলে যে ধারাগুলো ছিন্ন হয়ে যাবে এবং মানবসভ্যতাও অচল হয়ে পড়বে। সেই পবিত্র ও সুশৃঙ্খল ধারা অক্ষুণ্ন রাখতে জৈবিকশক্তির নিয়ন্ত্রণ ও যথাযথ ব্যবহার অপরিহার্য।

ইমাম গাযালী রহিমাহুল্লাহ বলেন, জৈবিকশক্তি কেবল এজন্য নয় যে, সাময়িক কিছু আনন্দ লাভ করল এবং এর ফলশ্রুতিতে বাচ্চার আগমন ঘটল। বরং এর আরেকটি বিরাট হেকমত রয়েছে। সেটা হচ্ছে, মানবজাতির জন্য পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ আকর্ষণীয় বস্তু হচ্ছে নারী-পুরুষের বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ এবং এটার পূর্ণতা পায় যৌনাচার দ্বারা।

আশরাফুল জওয়াব গ্রন্থে উল্লেখ হয়েছে, পৃথিবীতে জৈবিক সুখের চেয়ে আকর্ষণীয় কোনো নেয়ামত নেই। কিন্তু এই নেয়ামত যেমনই আকর্ষণীয় তেমনিই ক্ষণস্থায়ী। মানুষ এই আকর্ষণীয় নেয়ামতটি দীর্ঘস্থায়ী করতে যতই কসরত করুক না কেন সে তাতে সক্ষম নয়। চূড়ান্ত মুহূর্তে তাকে পরাজিত হতেই হয়। সুতরাং মানুষ যেন এ থেকে শিক্ষা নেয় এবং এমন এক স্থান ও সঙ্গীর সন্ধান করে এবং সে অনুযায়ী আমল করে যেখানে এই সুখের ইতি নেই। বলাবাহুল্য, সেই স্থানটি হচ্ছে জান্নাত। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, জৈবিকশক্তি আনন্দ লাভের উপলক্ষ্য নয় মাত্র, বরং তা জান্নাতের দিকে আকর্ষণ করার একটি বিরাট মাধ্যমও বটে। এদিকে মানুষকে যদি জৈবিকশক্তি প্রদান না করা হতো তবে জান্নাতের মর্ম ও সেখানকার অপরিসীম নেয়ামতের কোনো আকর্ষণ সৃষ্টি হত না তাদের। একজন যৌনাক্ষম (ইন্নিন ও শিশু) কি বোঝে এর মর্ম? কিংবা একজন পাগল কি বোঝে রাজক্ষমতার মাহাত্ম্য? তাই মানুষের মধ্যে যদি এই শক্তি সঞ্চারিত না করা হতো তবে দুনিয়া যেমন তার কাছে আকর্ষণহীন হয়ে পড়ত তেমনিভাবে জান্নাতের দিকেও আকর্ষণ করা দুঃসাধ্য হতো।

তাই মানুষকে জান্নাতমুখী করতে এবং জান্নাতে প্রবেশের একমাত্র উপায় ঈমান ও আমলে মজবুত করে তোলার পেছনে যৌনশক্তি নামের এই নেয়ামতের বিরাট ভূমিকা রয়েছে।  

মোটকথা, মানুষের জীবনে দুটি দিক রয়েছে। ইহকালীন ও পরকালীন। পরকালের জীবন এমন এক জীবন, যার সুখ-ঐশ্বর্য অনুধাবন করতে গিয়ে মানবমণ্ডলির জ্ঞান ভোঁতা ও হতভম্ব হয়ে যাবে। কিন্তু সেগুলো সম্বন্ধে একেবারেই প্রাথমিক ধারণা দেয়ার জন্য দুনিয়ায় কিঞ্চিত সুখ ও নেয়ামতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই বিস্ময়-বিমুগ্ধকর নেয়ামতের অধিকারী হওয়ার জন্য যেমন এই শক্তিকে বৈধ পথে ব্যবহার করার গুরুত্ব অপরিসীম ঠিক তদ্রুপ ব্যর্থ হলে এর ক্ষতিও অপূরণীয়। এ কারণেই আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন, যে ব্যক্তি বিবাহ করে জৈবিকশক্তির যথাযথ ব্যবহার করে না তার হজ পূর্ণতা পায় না। বিখ্যাত মুফাসসির ইকরামা ও মুজাহিদ রহিমাহুমাল্লাহ বলেন,

في معنى قوله تعالى وخلق الإنسان ضعيفا أنه لا يصبر عن النساء

‘মানুষকে দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে’ আয়াতের অর্থ হলো, তারা নারী ছাড়া সবর করতে পারে না।’

ফাইয়াজ ইবনে নুজাই রহিমাহুল্লাহ বলেন,

إذا قام ذكر الرجل ذهب ثلثا عقله وبعضهم يقول ذهب ثلث دينه

‘যখন পুরুষের চাহিদা জেগে ওঠে তখন তার জ্ঞানের এক তৃতীয়াংশ লোপ পায়। আর কেউ কেউ বলেন, তার দীনের এক তৃতীয়াংশ লোপ পায়।’

নাওয়াদিরুত তাফসীরে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে-

ومن شر غاسق إذا وقب قال قيام الذكر ومن شر غاسق إذا وقب 

আয়াতের অর্থ হচ্ছে, পুরুষের চাহিদার তীব্রতার অনিষ্ট।’

ইমাম গাযালী রহিমাহুল্লাহ বলেন, বস্তুত এটা হচ্ছে এমন এক শক্তি, যখন তা দুর্বল মানুষের মধ্যে প্রকাশ পায় তখন তার হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে যায়। দীন ও আকল তখন সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারে না। একারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

وَمَا رَأَيْتُ مِنْ نَاقِصَاتِ عَقْلٍ وَدِينٍ أَغْلَبَ لِذِى لُبٍّ مِنْكُنَّ

‘জ্ঞানে দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও জ্ঞানীদেরকে ধরাশায়ী করার ব্যাপারে নারীদের মতো পারঙ্গম আর কাউকে দেখিনি।’

নারীর প্রতি পুরুষের এই তীব্র টান সৃষ্টি হয় কামনার সহজাত প্রবৃত্তি থেকে এবং চোখ এই কামনাকে চরমভাবে উস্কে দেয়। একারণে চোখের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পেতে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বয়ং প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে এ ব্যাপারে শিক্ষা দিয়েছেন। শুতাইর ইবন শাকাল ইবন হুমাইদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، عَلِّمْنِي دُعَاءً أَنْتَفِعُ بِهِ، قَالَ: «قُلِ اللَّهُمَّ عَافِنِي مِنْ شَرِّ سَمْعِي وَبَصَرِي، وَلِسَانِي وَقَلْبِي، وَمِنْ شَرِّ مَنِيِّي»

‘আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে একটি দু‘আ শিক্ষা দিন যাতে আমি উপকৃত হতে পারি। তিনি বললেন, তুমি (নিম্নের দু‘আটি) পড়বে,

‘হে আল্লাহ, আমাকে আপনি হেফাযত করুন নিজের কান ও চোখ এবং জিহ্বা ও মনের অকল্যাণ থেকে আর আমার বীর্যের (লজ্জাস্থানের) অনিষ্ট থেকে।’ [সুনান নাসাঈ : ৫৪৫৬, শায়খ আলবানী সহীহ বলেছেন।]

উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয়, জৈবিক চাহিদা মানবজীবনের অপরিহার্য একটি অংশ এবং বিভিন্ন হেকমত ও প্রজ্ঞার আলোকেই বান্দাকে এ বস্তু দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মানুষ সৃষ্টির সেই সূচনা থেকেই নারীর প্রতি আকর্ষণ ও কামাচারারে  সীমালঙ্ঘন করে আসছে। ইতিহাস খুঁজলে দেখা যায়, এই দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করেই মূলত বড় বড় ঘটনা-দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। নারীর ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করতে গিয়ে সর্বপ্রথম ধরাপৃষ্ঠে রক্তপাতের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। যার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এমন :

আদম ‘আলাইহিস সালাম ও হাওয়া ‘আলাইহাস সালাম পৃথিবীতে আসেন এবং তাঁদের মাধ্যমে সন্তান প্রজনন ও বংশ বিস্তার শুরু হয়। প্রতি গর্ভ থেকে একটি পুত্র ও একটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করত। তখন ভাইবোন ছাড়া পৃথিবীতে অন্য কোনো মানুষ ছিল না। তাই আল্লাহ তা‘আলা আদম ‘আলাইহিস সালামের শরীয়তে বিশেষভাবে এ নির্দেশ জারি করেন, একই গর্ভ থেকে যে জমজ পুত্র ও কন্যা জন্ম গ্রহণ করবে তারা পরস্পরে সহোদর ভাই-বোন হিসাবে গণ্য হবে এবং কেবল তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম হবে। কিন্তু পরবর্তী গর্ভ থেকে জন্ম গ্রহণকারী কন্যা সহোদর বোন হিসাবে গণ্য হবে না। তাদের পরস্পর বিবাহ বন্ধন বৈধ হবে।

কিন্তু কাবিল এই বিধানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করল। ঐতিহাসিকগণ এর একাধিক কারণ উল্লেখ করেছেন। আমরা ঐতিহাসিক সূত্র বিশ্লেষণ না করে শুধু কয়েকটি কারণ তুলে ধরার প্রয়াস পাবো।

ইমাম তাবারী রহিমাহুল্লাহ তারিখে তাবারীতে উল্লেখ করেন, আদম ও হাওয়া ‘আলাইহুমাস সালাম জান্নাতে মিলিত হয়েছিলেন। ওই মিলনে যে জমজ সন্তানের জন্ম হয় তারা হলেন কাবিল ও ইকলিমা। এরপর তারা দুনিয়ায় পদার্পণ করলে হাবিল ও তার জমজ বোন লিওজার জন্ম হয়। আদম ‘আলাইহিস সালাম ছেলেদেরকে বিধান অনুযায়ী বিয়ে করার আদেশ করলে কাবিল তা প্রত্যাখান করে। তাবারী রহিমাহুল্লাহ লিখেন,

وكره تكرما عن أخت هابيل ورغب بأخته عن هابيل وقال نحن ولادة الجنة وهما من ولادة الارض وأنا أحق بأختى ويقول بعض أهل العلم من أهل الكتاب الاول بل كانت أخت قين من أحسن الناس فضن بها عن أخيه وأرادها لنفسه والله أعلم

‘কিন্তু কাবিল তা প্রত্যাখান করে এবং বলে আমরা জান্নাতের সন্তান আর তারা দুনিয়ার সন্তান। সুতরাং আমি ইকলিমার বেশি হকদার। আর পূর্ববর্তী কিতাবধারীদের কতক আহলে ইলম বলেন, বরং মূল ঘটনা হচ্ছে ‘কীন’ (কাবিলের আরেক নাম) এর সহজাত সহোদর বোন ছিল পরমা সুন্দরী। তাই সে তাকে নিজের জন্য চাইল।’ [তাফসীরু তাবারী : ১০/২০৬]

যাহোক, ইতিহাসের সারকথা হচ্ছে, হাবিলের সহজাত সহোদরা বোন লিওজা ছিল কুশ্রী। বিবাহের সময় হলে নিয়মানুসারে হাবিলের সহজাত কুশ্রী বোনটি কাবিলের ভাগে পড়ল। এতে কাবিল অসন্তুষ্ট হলো এবং শরীয়তে আদমের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারল না। কাজেই কাবিল হাবিলের শত্রু হয়ে গেল। সে জিদ ধরল, আমার সহোদরা বোনকেই আমার সঙ্গে বিবাহ দিতে হবে। আদম ‘আলাইহিস সালাম স্বীয় শরীয়তের বিধানের পরিপ্রেক্ষিতে কাবিলের আবদার প্রত্যাখান করলেন। এরপর তিনি হাবিল ও কাবিলের মতভেদ দূর করার উদ্দেশ্যে বললেন, তোমরা উভয়ই আল্লাহর জন্য নিজ নিজ কুরবানী পেশ কর। যার কুরবানী কবুল হবে, তার সঙ্গে লিওজাকে বিয়ে দেওয়া হবে। আদম ‘আলাইহিস সালামের নিশ্চিত বিশ্বাস ছিল, যে সত্যের পথে আছে কেবল তার কুরবানীই গৃহীত হবে। তৎকালীন কুরবানী গৃহীত হওয়ার নিদর্শন অনুযায়ী হাবিলের কুরবানী কবুল হলো এবং কাবিলের কুরবানী হলো প্রত্যাখ্যাত। ফলে কাবিল আত্মসংবরণ করতে পারল না এবং স্বীয় ভ্রাতা হাবিলকে হত্যা করল।

এভাবে পৃথিবীতে নারীকে কেন্দ্র করেই সূচিত হলো মানুষ হত্যাকাণ্ডের মতো ভয়াবহ অপরাধ। যে অপরাধকে আল্লাহ তা‘আলা গোটা পৃথিবী ধ্বংস করার মতো মারাত্মক অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ مِنۡ أَجۡلِ ذَٰلِكَ كَتَبۡنَا عَلَىٰ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ أَنَّهُۥ مَن قَتَلَ نَفۡسَۢا بِغَيۡرِ نَفۡسٍ أَوۡ فَسَادٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ ٱلنَّاسَ جَمِيعٗا وَمَنۡ أَحۡيَاهَا فَكَأَنَّمَآ أَحۡيَا ٱلنَّاسَ جَمِيعٗاۚ وَلَقَدۡ جَآءَتۡهُمۡ رُسُلُنَا بِٱلۡبَيِّنَٰتِ ثُمَّ إِنَّ كَثِيرٗا مِّنۡهُم بَعۡدَ ذَٰلِكَ فِي ٱلۡأَرۡضِ لَمُسۡرِفُونَ ٣٢ ﴾ [المائ‍دة: ٣٢] 

‘এ কারণেই, আমি বনী ইসরাঈলের ওপর এই হুকুম দিলাম যে,  যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করা কিংবা যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করা ছাড়া যে কাউকে হত্যা করল, সে যেন সব মানুষকে হত্যা করল। আর যে তাকে বাঁচাল, সে যেন সব মানুষকে বাঁচাল। আর অবশ্যই তাদের কাছে আমার রাসূলগণ সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে এসেছে। তা সত্ত্বেও এরপর জমিনে তাদের অনেকে অবশ্যই সীমালঙ্ঘনকারী।’ {সূরা মায়েদা, আয়াত : ৩২}

নারীকে কেন্দ্র করে কাবিল যে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছিল সেটার ধারাবাহিকতায় কেয়ামত পর্যন্ত যত খুন-খারাবী সংঘটিত হবে হাদীসের ভাষ্যানুযায়ী তার একটা অংশ তার আমলনামায় যুক্ত হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,   

« لَيْسَ مِنْ نَفْسٍ تُقْتَلُ ظُلْمًا إِلاَّ كَانَ عَلَى ابْنِ آدَمَ الأَوَّلِ كِفْلٌ مِنْهَا »

‘পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে যত হত্যাকাণ্ড ঘটবে তার একটা হিস্যা আদমপুত্র কাবিলের আমলনামায় যুক্ত হবে। কেননা সেই সর্বপ্রথম হত্যাকাণ্ডের প্রচলন ঘটিয়েছে।’ [বুখারী : ৭৩২১]

নারীকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের দাগ আজও বিদ্যমান। রক্তের সেই চিহ্ন আজও প্রবহমান। বিখ্যাত মুফাসসির ইবনুল আরাবী রহিমাহুল্লাহ স্বীয় তাফসীরগ্রন্থে উল্লেখ করেছেন- 

وَعَلَى الْغُرَابِ جَبَلِهَا دَمُ هَابِيلَ فِي الْحَجَرِ جَارٍ لَمْ تُغَيِّرْهُ اللَّيَالِي  وَلَا أَثَّرَتْ فِيهِ الْأَيَّامُ ،وَلَا ابْتَلَعَتْهُ الْأَرْضُ

‘হত্যাকাণ্ডের ওই স্থানে পাথরের ওপর হাবিলের রক্ত এখনও প্রবাহমান। দিনরাতের দীর্ঘপরিক্রমায় তাতে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন আসেনি। মাটিও সেই রক্ত চুষে নেয়ার সক্ষমতা রাখেনি।’ [তাফসীর আহকামুল কুরআন : ৮/৪৯]

সত্যি! নারীর ইতিহাস বর্ণিল, নারীজীবনকেন্দ্রিক ঘটনাপ্রবাহ বিচিত্র! যুগের আবর্তনে নিঃশেষ হয় না এদের স্মৃতি!

আর জৈবিকতার উন্মাদনা আরো বেশি রক্তাভ। কখনও কখনও ঘটেছে এমন অনেক ঘটনা যা একই সঙ্গে চমকপ্রদ ও শিক্ষণীয়। দৃষ্টান্তস্বরূপ একজন পারস্য সম্রাটের ইতিহাস স্মরণ করা যেতে পারে। ওই সম্রাট তার বার্ধক্যে একজন সুন্দরী রমণীকে বধূ করে ঘরে আনলে সৎমার প্রতি নজর পড়ে সম্রাটের ঔরষজাত বড় ছেলের। বিষয়টি সম্রাট পিতা টের পান এবং এ কারণে সন্তানের হাতে প্রাণ হারানোর আশঙ্কাও করেন তিনি। ফলে সম্রাট পিতাও সন্তানের প্রাণবধের পরিকল্পনা আঁটেন এবং সন্তানের হাতে প্রাণ হারালে পাল্টা প্রতিশোধের অগ্রিম ব্যবস্থা করে যান।

শঙ্কা বাস্তবে পরিণত হয়। সুন্দরী সৎমাকে নিজের করে নেওয়ার বাসনায় প্রচণ্ড কামুক শাহজাদা সত্যই সম্রাট পিতার প্রাণবধ করেন। এরপর বিজয়ের হাসিতে সৎমার ঘরে প্রবেশ করেন। ঘরে প্রবেশ করে ঘরের আলমারিতে সারিবদ্ধ একটি বোতলের ওপর দৃষ্টি আটকে যায় তার। বোতলের গায়ে ফার্সিতে স্পষ্ট করে লেখা﴿قوة باه  ‘যৌনশক্তিবর্ধক হালুয়া’। শক্তিবর্ধক বোতলটা যেন শাহজাদার উপরি উপহার হিসেবে হাজির হলো! কামনার ঘৃতে আরেকটু আগুন পড়ল তার। শিহরিত পদবিক্ষেপে সেদিকে এগিয়ে গেলেন এবং পিতার ‘উত্তরাধিকার’ গ্রহণ করার আগে ‘হালুয়া’টা সেবন করা দরকার বলে মনে করলেন। এরপর আগপিছ না ভেবে ‘হালুয়া’টা গলধঃকরণ করলেন। হালুয়া সেবনের অল্প সময়ের মধ্যে তার চেহারা বিকৃত হতে লাগল, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঢিলে হয়ে আসতে লাগল এবং শাহজাদা শেষ পর্যন্ত পিতার যৌনশক্তিবর্ধক হালুয়া নামের বিষ খেয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হলেন।

আসলে পিতাই এই প্রক্রিয়া করে রেখেছিলেন। তিনি জানতেন, শাহজাদা অত্যন্ত যৌনকাতর এবং একারণেই হয়ত সন্তানের হাতে তার প্রাণ হারানো হতে পারে। সুতরাং সেরকম কিছু হলে তাকেও তার সঙ্গে রওয়ানা হতে হবে। তাই তিনি এমন একটা কৌশল গ্রহণ করলেন, যা দেখে শাহজাদার বিবেক-বুদ্ধি লোপ পাবে এবং নিজেই নিজের মৃত্যুর ফাঁদ রচনা করেন।

ইতিহাসের এই উথাল-পাতাল ধারাবাহিকতা অনুযায়ীই চলছে নারী আর জৈবিক শক্তিকে কেন্দ্র করে জীবন দেওয়া-নেওয়ার মহড়া। এই মহড়া দিনে দিনে আরও তীব্র ও অতি ভয়ানক হয়ে উঠছে, যা আধুনিক সভ্যতার গায়ে সাধারণ নয়; মহা তিলকের চিহ্ন হয়ে উঠছে। নারী ও জৈবিকতা নিয়ে মানুষ কত নিষ্ঠুর হতে পারে তার ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত চীন। এরা যৌন শক্তি বাড়াতে শেষ পর্যন্ত খাওয়া শুরু করেছে মানবভ্রুণ ও মৃত বাচ্চা দিয়ে তৈরি স্যুপ! চরম ঘৃণিত এই কাজের খবর পুরো বিশ্বকে হতবিহবল করে দেয়। কিছুদিন আগে ২০১৩ সালের ২৫ জুলাই দক্ষিণ কোরিয়ার ‘সিউল টাইমস’ এর কাছে একটি ইমেইল আসে যাতে ছিল বেশ কিছু ছবি। এ ভয়াবহ, বীভৎস ও আতঙ্ক সৃষ্টিকারী ছবিগুলোতে দেখা যায় মৃতশিশু ও নির্দিষ্ট সময়ের আগেই গর্ভপাত ঘটানো অপূর্ণাঙ্গ ভ্রুণ বা ফিটাসের স্যুপতৈরি করা হচ্ছে মানুষের খাওয়ার জন্য!

আরো প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে থাকে। চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ ক্যানটন বা গুয়াংডন এবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। জানা যায় সেখানকার পুরুষরা তাদের শারীরিক সুস্থতা ও যৌনশক্তি বৃদ্ধির জন্য ভেষজ শিশু স্যুপ (herbal baby soup) খেয়ে থাকে! এরকম অবস্থায় জানা গেল আরেক ঘটনা। চীনের এক দম্পতির ইতোমধ্যেই একটি কন্যাসন্তান ছিল। মহিলাটি সন্তান-সম্ভবা ছিলেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে জানতে পারলেন, তার দ্বিতীয় সন্তানটিও মেয়ে হতে যাচ্ছে। ততদিনে তার গর্ভস্থ সন্তানের বয়স ৫ মাস। তিনি ও তার স্বামী গর্ভপাত করানোর সিদ্ধান্ত নেন। স্বাভাবিকভাবে কোনো শিশু যদি ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই মারা যায় তবে তাতে ২০০০ ইউয়ান খরচ হয়, সেখানে গর্ভপাত করাতে খরচ হয় মাত্র কয়েকশো ইউয়ান। তবে যারা মৃত শিশু বিক্রি করতে চান না, তারা ইচ্ছা করলে প্লাসেন্টা বা জীবিত অবস্থায় বিক্রি করতে পারেন।

একজন স্থানীয় সাংবাদিকের মতে, এই সমস্যার উৎপত্তি মূলত হয়েছে চীনাদের মাত্রাতিরিক্ত স্বাস্থ্যসচেতনতার কারণে। এছাড়া অনেকের মতে, চীন সরকার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ‘এক সন্তান নীতি’ চালু করেছিল। আর এ হতভাগ্য শিশুগুলো এ নীতিরই নির্মম শিকার। এছাড়া চীনের অধিকাংশ পরিবার মেয়ে সন্তান নয়, ছেলে সন্তান আশা করে। গরীব পরিবারগুলো তাদের মেয়ে শিশুদের বিক্রি করে দেয় অর্থের আশায়। চরম ঘৃণিত ‘বেবি স্যুপ’ এর উদ্ভব এই মানসিকতা থেকেই। তাইওয়ানে মৃত শিশুরা ৭০ মার্কিন ডলারে বিক্রি হয় গ্রিল করা ‘রুচিকর’ (?) খাবার হিসেবে!

হং কং থেকে প্রকাশিত NEXT সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনে শিশুদের মৃতদেহ কিংবা ভ্রুণ স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য রক্ষার নতুন উপকরণ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এছাড়া প্লাসেন্টা বা অ-মরাকে সুস্বাদু খাবার হিসেবে খাওয়া হয়। এমনকি গুয়াংডনে হাসপাতালগুলোর মাধ্যমেই অনেক সময় এসব অঙ্গ কেনাবেচা হয় এবং এগুলোর চাহিদাও আকাশচুম্বী। ম্যাগাজিনের অনুসন্ধানী প্রতিনিধিরা এগিয়ে যেতে থাকেন। নরমাংস ভক্ষণের নতুন এই রীতি তাদেরকে নিয়ে যায় চীনের আরেক প্রদেশ লিয়াওনিং-এ।

ম্যাগাজিনটির মতে, লিয়াওনিং এর একজন তাইওয়ানিজ ব্যবসায়ী একটি ভোজসভা আয়োজন করেন। তার একজন গৃহপরিচারিকা ছিল যাকে সবাই মিস লিউ নামেই চিনতো। মিস লিউ ছিলেন লিয়াওনিং এর স্থানীয় অধিবাসী। ভোজের দিন অসাবধানতাবশত তার মানব শিশু ভক্ষণের বিষয়টি প্রকাশ পেয়ে যায়।

ভোজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত তাইওয়ানিজ মহিলারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। মিস লিউ পরে এও বলেন, অনেক মানুষই মানবশিশু খেতে আগ্রহী, তবে চাহিদা অনেক বেশি। যাদের ক্ষমতা অনেক বেশি তারাই কেবল সবচেয়ে ‘ভালো জিনিস’ পায়। সাধারণভাবে ছেলে শিশু ভ্রুণকে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট বলে ধরা হয়। প্রতিবেদকের অনুরোধে মিস লিউ কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে প্রতিবেদককে সেই জায়গায় নিয়ে যান যেখানে মানবভ্রুণ রান্না করা হয়। তিনি দেখলেন, একজন মহিলা একটি ছুরি দিয়ে ছেলে শিশু ভ্রুণ কেটে কুচি কুচি করছেন তারপর তা দিয়ে স্যুপ তৈরি করছেন। আর আশেপাশের মানুষকে এই বলে আশ্বস্ত করছেন যে, ভয় পাওয়ার কিছু নেই, এটি ’প্রাণীর মাংস’। অনেক চীনার কাছে মানবভ্রুণ ভক্ষণ করা নাকি এক ধরনের শিল্প!

২২ মার্চ, ২০০৩। গুয়াংজি প্রদেশের বিংইয়ন পুলিশ একটি ট্রাক থেকে ২৮টি মেয়ে শিশু উদ্ধার করে, যাদেরকে পাচার করা হচ্ছিলো আনহুই প্রদেশে। শিশুগুলোর মাঝে সবচেয়ে বড় বাচ্চাটির বয়স ছিল মাত্র তিন মাস। তিন-চারটি শিশুকে একটি একটি করে ব্যাগে ঢোকানো হয়। উদ্ধারের সময় শিশুগুলো প্রায় মরণাপন্ন অবস্থায় ছিল।

৯ অক্টোবর, ২০০৪ এর সকালবেলা। সুজহৌ এলাকার জিউকুয়ান শহরের এক ব্যক্তি আবর্জনা পরিষ্কারের সময় বেশ কিছু ছিন্নবিচ্ছিন্ন শিশুর দেহ আবিষ্কার করেন। দুটি মাথা, ছয়টি পা, চারটি হাত, দুটি মাথা পাওয়া গেল। তদন্তে জানা গেল, শিশুগুলো মাত্রই ভূমিষ্ঠ হয়েছিল, এদের বয়স হয়েছিল ১ সপ্তাহ। রান্নার পরে খাওয়া শেষে হাত-পাগুলো উচ্ছিষ্ট হিসেবে ফেলে দেওয়া হয় ডাস্টবিনে!

যদিও মানবভ্রুণ খাওয়া নিষিদ্ধ করে চীনে কঠোর আইন চালু আছে, কিন্তু একইসঙ্গে চীনের ‘এক সন্তান’ নীতি অনেক দম্পতিকে অকালে #গর্ভপাত ঘটাতে বাধ্য করে, যেগুলোর সুযোগ নিচ্ছে একদল জঘন্য মানুষ। এছাড়া মাও সেতুং এর ‘সাংস্কৃতিক বিপ্লব’ কিছু ক্ষেত্রে চরমপন্থীরূপ ধারণ করে, যার ফলে চীনের অনেকের মাঝেই নৈতিকতা ও মানুষের জীবনের প্রতি সম্মান দেখানোর প্রবণতা কমে গেছে।

গ্লোবাল রিপোর্টারস ভিয়েনার তাই জরুরি আহ্বান, নরমাংস ভক্ষণকে ‘না’ বলুন এবং নিষ্পাপ শিশুদের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে আসুন। এই তথ্যটি প্রকাশ করে হয়তো সেই সব নিষ্পাপ শিশুদের বাঁচাতে পারবেন যারা হয়তো নির্মম ও জঘন্য হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে যাচ্ছে। [তথ্যসূত্র : হ্যালো টুডে ২৬ নভেম্বর, ১৩ ইং]

পাঠক! এবার আপনার নিজস্ব বিবেক দিয়ে বিচার করুন, আমরা কোন্ সভ্যতার যুগে বাস করছি? এখানে জৈবিক ও পাশবিক শক্তি এত অদম্য হয়ে উঠছে যে, নিজ সন্তান, মৃত বাচ্চা এবং ভ্রুণ খাওয়াও অতি লোভনীয় ব্যাপারে পরিণত হয়েছে! এরচেয়ে পারস্য সম্রাট ও শাহজাদার ঘটনা তুচ্ছ ও স্বাভাবিক নয় কি?

বস্তুতঃ আল্লাহর এক বিধান লঙ্ঘন করায় সৃষ্টি হচ্ছে মানবিক বিপর্যয়। এক আদেশ লঙ্ঘন ডেকে আনছে হাজারও বিশৃঙ্খলা। মানুষের সহজাত প্রকৃতির মূল্যায়ন করে ইসলাম দম্পতিদেরকে অধিক সন্তান নেয়ার প্রতি উৎসাহিত করেছে। কিন্তু চীনারা সেই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করে এক সন্তান রীতি চালু করল। আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টিগত ব্যবস্থায় হাত দিয়ে যা হয় চীনাদের বেলায়ও তাই হতে লাগল। পাইকারিহারে মানব তথা ভ্রুণ হত্যা চালু হলো। কারণ এক সন্তানের বেশি নেয়া যাবে না। আবার দম্পতিরা মেয়ে সন্তান নিতেও রাজি নয়।

তাই পেটে সন্তান আসার পর আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে কন্যাসন্তান সম্পর্কে নিশ্চিত হলে তাদেরকে মেরে ফেলো এবং পারলে ভ্রুণখোরদের কাছে চড়া মূল্যে বিক্রি করে উপরি কিছু মাল কামাও! জাহেলি যুগের পিতারা তো কন্যাসন্তানকে দাফন করত, আধুনিক জাহেলিয়াত দেখি তাদেরকে ভক্ষণ করা শুরু করেছে!

এভাবেই চলছে পাপের পিঠে পাপ। এক পাপের পরিণতি ভোগ করতে না পেরে আরেক পাপের জন্মদান! আজ জৈবিক প্রবৃদ্ধির কারণে মানুষ মানুষ খাচ্ছে, ভ্রুণ খাচ্ছে! কল্পনা করা যায়? জৈবিক তাড়না বৃদ্ধি কেবল মানুষের পরকাল, নৈতিকতাই ধ্বংস ডেকে আনে না, জাগতিক সুখ-শান্তি ও শারীরিক ধ্বংসও ডেকে আনে। কাযী ইয়াজ রহিমাহুল্লাহ বলেন,

وغلبة الشهوة مسبب لمضارالدنيا و الآخرة ، جالب لأدواء الجسد وخثار النفس ، وامتلاء الدماغ ، وقلته دليل على القناعة ، و ملك النفس، وقمع الشهوة مسبب للصحة ، و صفاء الخاطر، و حدة الذهن

‘প্রবৃত্তির প্রাবল্য দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতের ধ্বংস ও ক্ষতির কারণ। শারীরিক নানা রোগ-ব্যাধি সৃষ্টি ও মানসিক বৈকল্যের সূত্র। পক্ষান্তরে এর পরিমিত প্রভাব ও স্বাভাবিকতা মানবিক সুস্থতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের পরিচয়। আর কুপ্রবৃত্তি দমন ও চূর্ণ করা শারীরিক সুস্থতা, অন্তরের পরিচ্ছন্নতা ও মেধার তীক্ষ্নতার লক্ষণ।’ [তথ্যসূত্র : আশ-শিফা বিতা‘রিফী হুকুকিল মুস্তাফা]

দুনিয়া-আখেরাতের কল্যাণ ভাবনার উপেক্ষা, শারীরিক ও মানবিক সুস্থতার প্রতি অবজ্ঞা আর আল্লাহর বিধান পালনের অনীহায় ধ্বংসের আগুনে জ্বলছে নারী। যে ধোঁকাবাজ পুরুষ নারীর আগমন বরদাশত করতে পারে না, যন্ত্রের সাহায্যে তার নারীত্ব চিহ্নিত করে শুধু হত্যাই করে না, স্যুপ বানিয়ে খেয়ে ফেলে, আধুনিক সভ্যতার যে পুরুষরা জাহেলি সভ্যতাকে পেছনে ফেলে নারীত্বের অবমাননার সকল ধাপ অতিক্রম করেছে সেই পুরুষের ‘নারী অধিকারের’ স্লোগানে বিভ্রান্ত হয়! এসব লম্পট, নারী-ইজ্জতহরণকারীরা নারীর সম্মানজনক ও নিয়ন্ত্রিত-নিরাপদ চলাফেরার দাবি জানালে তাদেরকে মৌলবাদী বলে খিস্তিখেউর করে! ওরাই আবার হয় দেশের হর্তাকর্তা। সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার ঝাঁঝালো কণ্ঠস্বর মিনা ফারাহ একটি জাতীয় দৈনিকে ৫ ডিসেম্বর ১৩’ এর উপসম্পাদকীয়তে লিখেছিলেন, মন্ত্রীসভায় এমন কিছু লোক আছে যাদের দেখে বমি করতে ইচ্ছা হয়… জানি না লেখিকার বমোনিচ্ছার কারণ কী। তবে বিবেকবান লোকেরা অবশ্যই ওইসব মন্ত্রীদের দেখলে কিংবা নাম শুনলে বমনেচ্ছা জাগে, যারা নিজেরা নারীদের ইজ্জত হরণ করে উলামায়ে কেরামকে বিদ্রূপ করে, কথায় কথায় তাদেরকে তেঁতুল হুজুর বলে খিস্তিখেউর করে।

আপনি পড়ছেনঃ ফেরারী নারী বই থেকে।

The post সুপের হাঁড়িতে কন্যাসন্তান : নারীসত্তায় এ কোন কলঙ্ক? appeared first on Amar Bangla Post.

উপদেশ গল্প : মোরগ ও বেড়াল

$
0
0

একদা গ্রামে এক বেড়াল ছিল। সে গৃহস্থের বাড়িতে এটা ওটা চুরি করে খেতো। একবার বেড়ালটা এক গৃহস্থের বাড়ি থেকে একটা মোরগ ধরে নিয়ে এল। এখন সে মোরগটাকে মেরে খেতে চাইল। কিন্তু শুধু শুধু তো একজনকে মারা যায় না। একটা অজুহাত থাকা চাই তো!সে তখন মোরগটাকে বললো, তুই মারাত্মক একটা আপদ, রাতে ডেকে মানুষকে স্বস্তিতে ঘুমোতে দিস না। মোরগটি উত্তরে বলল, এ তো আমি ভাল উদ্দেশ্যেই করি। রাত্রি শেষে আমার ডাকে ঘুম ভাঙ্গলে মানুষরা সকাল সকাল তাঁদের দিনের কাজ শুরু করতে পারে।

বেড়াল তখন ভাবল—মোরগ কথাটা ঠিকিই বলেছে। তাই কথাটি উড়িয়ে দিয়ে অন্য একটা দোষ ধরে বলল, তুই তোর মা-বোনেদের সঙ্গে অত্যন্ত খারাও ব্যবহার করিস। অত্যাচার করিস।

মোরগ  তখন শান্ত স্বরে উত্তর দিল—এতেই আমার  মালিক খুশী হয়, বুঝে দেখো কথাটা, মালিকের সম্পদ বাড়ে।

বেড়াল তখন বিরক্তি প্রকাশ করে বলল—নাঃ তোর সঙ্গে মেলা ফ্যাচ ফ্যাচ করার সময় আমার নেই। কিন্তু তাই বলে আমার যে খিদে পুষে রাখতে হবে পেটে, তারও কোনো মানে নেই—তোকে আমি খাবোই। এই বলে বেড়াল মোরগটার  টুঁটি চেপে ধরে মেরে খেয়ে ফেলল।

উপদেশঃ দুর্জনের ছলের অভাব হয় না।

The post উপদেশ গল্প : মোরগ ও বেড়াল appeared first on Amar Bangla Post.


এলেম –আবুদ্দারদা (রাঃ) এর হাদীসের গল্প

$
0
0

দামেস্কের মসজিদে বসে আছেন তিনি।

তার চারপাশে  বহু লোকজন। বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্নজন এসেছেন। তার কাছে থেকে সবাই কিছু এলেম শিখতে চান। কুরআনের আয়াতের মর্ম শুনতে চান। রাসূল (সাঃ)-এর হাদীস শুনতে চান।

তিনি হযরত আবুদ্দারদা (রাঃ)। রাসূল (সাঃ)-এর বিশিষ্ট সাহাবী। ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন এক সময়। হাদীসের এলেম শিখতে গিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ত্যাগ করেছেন। হাদীসের জ্ঞান আহরণ করে বহু মানুষের শিক্ষকে পরিণত হয়েছেন। সবাই এখন তার কাছে আসেন হাদীস শোনার জন্য; দ্বীনের এলেম শিক্ষা লাভ করার জন্য।

সেদিনও দামেস্কের মসজিদে সবাই সমবেত হয়েছেন তার কাছ থেকে এলেম আহরণ করার উদ্দেশ্যে। এজন্য সকলেই খুব মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনছেন।

এমন সময় একলোক এসে  আবুদ্দারদা (রাঃ)-এ সামনে বসলেন। সবাই উৎসুক চোখে তার দিকে তাকালেন। লোকটি হযরত আবুদ্দারদা (রাঃ)-কে বললেন—“আমি শুধু হাদীসের জ্ঞান লাভ করার জন্য মদীনা থেকে আপনার দরবারে এসেছি। আমি শুনেছি, আপনি বহু #হাদীস রাসূলে করীম (সাঃ)-এর কাছ থেকে শুনেছেন। এজন্য আমি আপনার দরবারে এসেছি।”

উপস্থিত সব লোকজন চুপ। আবুদ্দারদা (রাঃ) আগত লোকটির দিকে তাকালেন। তারপর বললেন—“এদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যের কোন গরজ ছিলনা তো? লোকটি বললেন—জী না। আমার অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিলনা।”

হযরত আবুদ্দারদা (রাঃ) আবারো জিজ্ঞাসা করলেন—“দেখুন, অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল কিনা? বৈষয়িক কিংবা সাংসারিক কোন প্রয়োজন এদিকে ছিলনাতো আপনার?

আবুদ্দারদা (রাঃ)-এর পরপর দু’বার প্রশ্ন করায় সবাই সচেতন হয়ে উঠলেন। সতর্ক হয়ে উঠলেন। তিনি কি লোকটির পরীক্ষা করছেন? কিন্তু আগত লোকোটি একদম ঘাবড়ালেন না। তিনি অবিচল কণ্ঠে জবাব দিলেন—“জ্বী-না। আমার অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না। শুধু হাদীস শিক্ষার  জন্যই আমি মদীনা থেকে দামেস্কে আপনার কাছে এসেছি।”

এবার যেন হযরত আবুদ্দারদা (রাঃ)-এর মুখ উজ্জ্বল হয়ে গেল। একটা পবিত্র খুশী খুশী ভাব তার সারা মুখে ছড়িয়ে পড়লো। তিনি দরাজ কণ্ঠে বললেন—“তাহলে শুনুন! আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে শুনেছি, যে ব্যক্তি এলেম লাভ করার উদ্দেশ্যে কোন রাস্তা অতিক্রম করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য বেহেশতের পথ সহজ করে দেন।”

এলেম বলা হয় কুরআন আর হাদীসের জ্ঞানকে। এলেম বলা হয় আল্লাহর রাসূল (সাঃ) যে দ্বীনে ইসলাম দুনিয়াতে নিয়ে এসেছেন, সে দ্বীনে ইসলামের যাবতীয় শিক্ষাকে।

হযরত আবুদ্দারদা (রাঃ) আরো বলে চললেন—“ফেরেশতাগণ এলেম অনুসন্ধানকারীর পথে নিজেদের ডানা বিছিয়ে দেন। আসমান ও যমীনে যারা বাস্ন করেন, তাঁরা এলেম অনুসন্ধান কারীর গুনাহ মাফের দুআ’ করে থাকেন। এমন কি, পানিতে বাস করে যে  মাছ, সেই মাছও এলেম অনুসন্ধানকারীর জন্য মাগফিরাতের দুআ’ করতে থাকে।”

সবাই খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতে লাগলেন, আগত ব্যক্তি যেন যা জানতে এসেছেন, তা অপ্রত্যাশিতভাবে পেয়ে  যাচ্ছেন, এমন ভাবে হযরত আবুদ্দারদা (রাঃ)-এর কথাগুলো শুনতে লাগলেন। আবুদ্দারদা (রাঃ)-এর মুখে বলা হাদীসটি শুনতে শুনতে সবার মনেই খুশীর দোলা লাগছিল।

আবুদ্দারদা (রাঃ) আরো বললেন—রাতের আকাশে তারকাগুলোর তুলনায় চাঁদ যেমন উজ্জ্বল, তেমনি সাধারণ  কোন ইবাদতকারীর তুলনায় আলেম এবং এলেম অনুসন্ধানকারী অনেক বেশী শ্রেষ্ঠ। আলেমগণ নবীগণের উত্তরাধিকারী। নবীগণ কাউকেই দীনার-দেরহামের উত্তরাধিকারী বানিয়ে যাননি। তাঁদের এলেমের উত্তরাধিকারো বানিয়ে গেছেন।যে ব্যক্তি এলেম হাসিল করে, দ্বীনের শিক্ষা লাভ করে, সে যেন তুলনাহীন সম্পদ লাভ করে।

হযরত আবুদ্দারদা (রাঃ) হাদীসটি বলে সম্পূর্ণ মজমাকে শোনালেন। সবাই শুনলেন। কুরআন-হাদীস এবং দ্বীনের শিক্ষা অর্জনের উপকার শুনে গোটা মজমা ধন্য হয়ে গেল।

এরপরের গল্পঃ হাদিস

আপনি পড়ছেনঃ সাহাবায়ে কেরামের গল্প বই থেকে।

আরো গল্প সমূহ…

১ হযরত উমর (রাঃ) এর অনুতাপ। (গল্প)

কিশোরী মেয়ের গল্প

একজন চরম ইসলাম বিদ্বেষী ইসলামে দাখিল হবার গল্প

গল্পটি পড়ে আপনার কাছে ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদেরকে এটি পড়াতে শেয়ার করুণ।

The post এলেম – আবুদ্দারদা (রাঃ) এর হাদীসের গল্প appeared first on Amar Bangla Post.

পৌত্তলিক কুসংস্কৃতি ও তারুণ্যের উদ্ভাবনীশক্তি ধ্বংসে নারী!

$
0
0

ইতিহাস ও জীবচালিতের দিকনির্দেশনামূলক গ্রন্থরাজির খোলাপাতার সবচেয়ে উজ্জ্বল, সর্বাধিক আলোচিত ও সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যৌবন ও তারুণ্যের শক্তি। বস্তুত সময়ের কয়েকটি সমষ্টি নিয়ে মানুষের জীবন। দিন গত হয় আর মানুষের জীবনবৃক্ষ থেকে একেকটি করে পাতা খসে পড়ে। প্রতিটি বস্তুর একটি মোক্ষম সময় থাকে এবং ওই সময়ে ওই বস্তুর সৃষ্টিস্বার্থকতা নিহিত থাকে। বৃক্ষ জন্ম নিয়েই ফল দেওয়া শুরু করে না এবং একেবারে বুড়ো হয়ে যাওয়ার পরও ফল দেয় না। বরং ফল দেয়ার একটা মোক্ষম ও উপযুক্ত সময় থাকে; যেটাকে বলে বৃক্ষের যৌবনকাল। এভাবে খুঁজে খুঁজে প্রতিটি বস্তুর সেরাকাল পাওয়া যায়। তেমনি সৃষ্টির সেরা মানবজাতিরও সময়ের সেরা একটি অংশ আছে। সময়ের ওই অংশটাই তার ইহকালীন ও পরকালীন সুখ-বিলাস ও জন্মের স্বার্থকতার মূল স্তম্ভ। মানুষের জীবনের সেই সেরাকালটা হচ্ছে যৌবনকাল।

এই সময়ের সদ্ব্যবহার মানুষকে দুনিয়া ও পরকালীন সফলতার সর্বোচ্চ চূড়ায় নিয়ে যেতে সক্ষম। পক্ষান্তরে এর অপব্যবহার মানবজীবনকে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন করতে পারে, যে ক্ষতির কোনো কাজা-কাফফারা নেই। তাই সময়ের গুরুত্ব শুধু আখেরাতের বিচারেই নয়; দুনিয়ার বিচারেও। পার্থিব সাফল্য পেতে হলেও অবশ্যই মানুষকে সবচেয়ে বেশি মূল্যায়ন করতে হয় সময়কে। যারা পার্থিব সাফল্য পেয়েছেন তারাও সময়ের মূল্যায়নের কারণেই তা পেয়েছেন। উদাস, কর্মস্পৃহাহীন এবং অপরিকল্পিত জীবনধারণকারী তরুণ ও যুবক স্মরণীয় কোনো সাফল্য পেয়েছে বলে ইতিহাস স্বীকার করে না। আর পারলৌকিক জীবনের সাফল্যের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে যৌবন ও তারুণ্যের উদ্যোমীশক্তির যথার্থ ও সঠিক ব্যবহার। সঙ্গত কারণেই হাদীসের বহু স্থানে তরুণ ও যৌবনকালের কথা বলা হয়েছে এবং এর সদ্ব্যবহারে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

যৌবনকালে নিয়মিত নেক আমল করলে বার্ধক্যের অক্ষমতায় যখন আমল করার সক্ষমতা থাকবে না তখনও আমল লিপিবদ্ধ হওয়ার ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন থাকবে। পার্থিব জীবনেও আমরা এর বাস্তব ও চমকপ্রদ দৃষ্টান্ত লক্ষ্য করে থাকি। সরকারের একজন অবসরপ্রাপ্ত আমলা চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করলেও তার যৌবনকাল ও সক্ষমতার সময় তার সেবার মূল্যায়ন করে নিয়মিত ভাতা প্রদান করা হয়। তাই নিঃসন্দেহে একথা বলা যায়, যৌবন ও তারুণ্যের এই সময়টাই মানবজীবনের উন্নতি-অগ্রগতির সিঁড়ি। এই সিঁড়ি বেয়েই তরুণ ও যুবকদেরকে সাফল্যের সর্বোচ্চ চূড়ায় আরোহণ করতে হবে। আর তা না করলে এবং যৌবন ও তারুণ্যের উদ্যমশক্তির অপব্যবহার করলে সাফল্যের সম্ভাবনা থেকে ছিটকে ব্যর্থতার তিমিরসম আঁধারে হারিয়ে যেতে পারে।

তারুণ্যের এই সময়টা এত গুরুত্বপূর্ণ বলেই এত স্পর্শকাতরও বটে। সাগরের উন্মাতাল ঝড়ের মতোই এর স্পর্ধা ও উন্মত্ততা। নাজুকস্পর্শ ও ব্যবহারের নূন্যতম গাফলতিতে মূল্যবান এই সম্পদ ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে। ঝড়কবলিত মাস্তুল শক্তহাতে ধারণ ও পরিচালনা করতে না পারলে মধ্যসাগরে ডুবে যেতে পারে ‘তারুণ্যবাহী’ যাত্রী। আরবরা বলতেন, ‘যৌবন ও তারুণ্য হচ্ছে পাগলামির একটা শাখা।’

উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন, মানুষের মধ্যে দশটি স্বভাব আছে। যার নয়টি ভালো এবং একটি মন্দ। এই এক মন্দই নয় ভালোকে নষ্ট করে দেয়। এরপর তিনি শ্রোতাদেরকে তারুণ্যের ‘উচ্ছৃঙ্খল উদ্দীপনা’র ভয়াবহতা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন,

واياك وعثرة الشباب

‘অবশ্যই যৌবন ও তারুণ্যের পদস্খলন থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখবে।’

ইতিহাসে আমরা যাদেরকে দিগ্বিজয়ী, কীর্তিমান ও সার্বিক সাফল্যের উপমা বলে জানি, তাঁদের সাফল্যের সিঁড়ি ছিল যৌবনকালের সদ্ব্যবহার। তারিক বিন যিয়াদ একমাত্র তারুণ্যের উদ্যোমীশক্তির বলেই পশ্চাতে অথৈ ও রাশি রাশি পানি আর সামনে অচেনা, দুর্গম-রনাঙ্গনে শত্রুর মুখোমুখি হয়েও বাহনের জাহাজগুলো জ্বালিয়ে দেয়ার ঐতিহাসিক ও অবিশ্বাস্য দুঃসাহস দেখাতে সক্ষম হয়েছিলেন। মুহাম্মাদ ইবনে কাসিম তারুণ্যের টগবগে রক্তবলেই ভারত উপমহাদেশে ইসলামী সালতানাতের মানচিত্র অঙ্কন করতে সক্ষম হয়েছিলেন বলেই এখানকার মাটির সুগভীরে প্রোথিত হয়েছিল ইসলামের বৃক্ষরাজি। তারুণ্যের এই বিজয়গাঁথা ও বিজয় রচনার ইতিহাস বিস্তৃত, ব্যাপক ও সার্বজনীন। বিজয় ও সাফল্যের প্রতিটি রনাঙ্গনে ছড়িয়ে আছে যৌবন ও তারুণ্যের তাজাখুন, উদ্দীপ্ত উপস্থিতি। তাই প্রতিটি জাতির সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হচ্ছে তাদের যুবক ও তরুণ জনগোষ্ঠী। সুতরাং যারা বুদ্ধিমান, যারা ইতিহাসের গতিপথ ও সাফল্যের চাবিকাঠি নিজেদের হাতে রাখতে চায় তারা তারুণ্যের শক্তিকে গুরুত্ব দেয় এবং সযত্নে রক্ষা করে এই সম্পদ।

আরেকটি ঐতিহাসিক বাস্তবতা হচ্ছে, কালে কালে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে নানামাত্রিক যুদ্ধ চলে এসেছে। কখনও সরাসরি কখনও বা পরোক্ষ ও স্নায়ুযুদ্ধ। আর এই যুদ্ধের উৎসও বিভিন্ন রকমের। সম্ভবত পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাচীন যুদ্ধ হলো মতাদর্শে বিজয়ী হওয়ার যুদ্ধ। আজকের বিশ্ব পরম ক্ষুধাকাতর এক দানবে পরিণত হয়েছে। ফলে যে কোনো উপায়ে এই ক্ষুধা নিবারণের উগ্র বাসনায় লিপ্ত। আর এই উগ্রবাসনা পূরণ করতে পরিকল্পিতভাবে টার্গেটে পরিণত করা হয়েছে যৌবন ও তারুণ্যের উচ্ছলতাকে। এই কাজে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে উদ্যম সংস্কৃতি ও অবাধ যৌনাচার। এই অস্ত্র ব্যবহার করে বিশ্বমোড়লরা অত্যন্ত কৌশল ও নিষ্ঠুর উপায়ে যৌবন ও তারুণ্যের পাগলাঘোড়ার লাগাম হাতে নিয়ে স্বার্থ উদ্ধার করে তাদেরকে অন্তসারশূন্য করে ময়লার ভাগাড়ে ফেলে দিচ্ছে। মনে ঢুকিয়ে দিচ্ছে পাশ্চাত্যের ধ্যান-ধারণা, ভাবনায় ভরিয়ে দিয়েছে পরকালবিমুখতা, কানে তুলে দিয়েছে এফএমের ইয়ারফোন, চোখে মাখিয়েছে হলিউড, বলিউড, টালিউড ও ঢালিউডের অশ্লীলতার রঙ। রসনায় লাগিয়েছে নেশার তরল পদার্থ আর চিন্তায় প্রবেশ করিয়েছে অসৎ উপায়ে অর্থোপার্জনের অদম্য লিপ্সা। পশ্চিমা-হিন্দুস্তানীর নগ্ন সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও অশ্লীলতায় আজকের তারুণ্য এক উদ্যমহীন, লাগামছাড়া ভোগসর্বস্ব চিন্তা নিয়ে বেড়ে উঠছে। এসব বস্তু তারুণ্যের মন থেকে শুধু পরকালচিন্তাই বিদায় করে দেয়নি বরং মানবকল্যাণে উৎসর্গিত হওয়ার অনুপ্রেরণাও ধ্বংস করে দিচ্ছে। একটি মুসলিম জাতির পতনের এরচেয়ে বড় কোনো কারণ থাকতে পারে না। আমাদের সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য হচ্ছে, এদেশের ক্ষমতালোভী শাসকদের কাপুরুষোচিত সিদ্ধান্তের কারণে তরুণরা বিশেষ করে হিন্দুস্তানী নোংরা সাংস্কৃতির আগ্রাসনে অতি সহজেই শত্রুর শিকারে পরিণত হচ্ছে। তথাকথিত জাতির কর্ণধাররা তারুণ্যের এই উচ্ছল শক্তিকে তাদের স্বার্থে হীনকাজে প্রয়োগ করছে। তাদের দিকভ্রান্তিতে সোজা পথ না দেখিয়ে বরং আরো অন্ধকার পথে নিয়ে যাচ্ছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর অভাব নেই, কিন্তু প্রকৃত চরিত্রবান ও নিখাঁদ দেশপ্রেমিকের অভাবের শেষ নেই। এই সমস্যার প্রধান কারণ, আমাদের তারুণ্যকে যথাযথ পরিচর্যা না করা এবং ধ্বংসোন্মুখ এই তারুণ্যকে হিন্দুস্তানী অশ্লীলতার থাবায় নিরস্ত্র অবস্থায় ফেলে রাখা। ফলে নিরস্ত্র ও পরকালীন ভাবনাহীন এই তারুণ্যের শৌর্যবীর্য আজ ক্ষয় হচ্ছে অশ্লীল কল্পনায়, পেপার-পত্রিকার হিন্দুস্তানী সিরিয়াল মেলানোর ভাবনায় এবং ভারতীয় নায়ক-নায়িকাদের স্ট্যাটাস পাঠ আর লাইক দেয়ার নোংরামি ধান্ধায়। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে এফএম রেডিও, ইন্টারনেটসহ প্রযুক্তির অহর্নিশ অপব্যবহার। প্রযুক্তির এই যান্ত্রিকতা তারুণ্যের হৃদয় আঙিনাকে ভেঙে তছনছ করে দিচ্ছে। আজ এফএম রেডিওগুলোতে প্রচার করা হচ্ছে কলগার্ল (পতিতাদের) সরাসরি সাক্ষাৎকার। প্রেম-ভালোবাসার গল্প বলার ছলে প্রেমিক-প্রেমিকাদের শারীরিক সম্পর্কের ব্যাপক প্রচার করা হচ্ছে এবং ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতির কবর রচনা করে তারুণ্যের  হৃদয় থেকে লজ্জা-শরম চিরবিদায় করে দিচ্ছে।

তারুণ্যের বড় শত্রু আজ চারটি বস্তু। মোবাইল ভিডিও, এফএম রেডিও, নেশাজাত দ্রব্য এবং তথাকথিত প্রেমভালোবাসা। প্রেম-ভালোবাসার নামে চলছে মূলত ভয়ানক ব্যভিচার এবং #ধর্ষণ ও অপহরণ। বিশ্বের পণ্যের বিপুল চাহিদা সৃষ্টির জন্য এই চারটি বস্তুর ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। ফলে তারা সচতুরভাবে সামাজিক অবক্ষয়ের এই ভয়ানক উপকরণগুলো তরুণ ও যুবকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে। হলফ করেই বলা যায়, হিন্দুস্তানী বণিকরা তাদের উদ্দেশ্যে সফল হয়েছে এবং তরুণরা তাদের দেওয়া অবক্ষয়ের এই দাওয়াইগুলো প্রাণসঞ্জীবিনী মনে করে দেদারছে গিলছে। এর ফলে তারা লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হারিয়ে সাংস্কৃতিকভাবে হিন্দুস্তান ও পাশ্চাত্যের দাসানুদাস জাতিতে পরিণত হচ্ছে। যৌবনের পাগলা ঘোড়া তাদেরকে যেদিকে টানছে তারা দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে সেদিকেই দৌড়াচ্ছে। অবক্ষয় তাদেরকে এমনভাবে আচ্ছন্ন করে রেখেছে যে, এর কারণে তারা স্বাধীন-সংস্কৃতি ও স্বকীয় তাহযীব-তামাদ্দুনের মূল্যায়ন করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হচ্ছে। হতোদ্যম এই তারুণ্য হিন্দুস্তানী গানবাজনায় বিভোর। তাই তারা নিজ দেশের গান ও বিজয়ের নিশান ওড়ানোর সাহস দেখাতে পারছে না।

সুতরাং তারুণ্যের এই উদ্ভাবনীশক্তি ধরে রাখতে হলে অবশ্যই ইহুদি-খ্রিস্টান-পৌত্তলিক সংস্কৃতি ও অশ্লীলতার ছোবল থেকে তাদেরকে দূরে রাখতে হবে। বাঁচাতে হবে দেশের স্বাধীনতা। আমাদের এই মুসলিম দেশটির বিরুদ্ধে বিজাতির দাদাগিরি প্রতিহত করতে সর্বাগ্রে তাদের অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। অন্যথায় আমাদের পরিণতি হতে পারে হায়দারাবাদের মতো, যে দেশটি স্বাধীন হওয়া সত্ত্বেও ভারত বিভিন্ন কলাকৌশলে দখল করে নেয় এবং এভাবে পৌত্তলিকদের ষড়যন্ত্রে বিশ্বমানচিত্র থেকে হারিয়ে যায় একটি স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্রের পতাকা। যে দেশের তারুণ্যের শক্তি উদ্যমহীন হয়ে পড়ে, অপসংস্কৃতির কাদা-পানিতে মিশে যায় সেই দেশের স্বাধীনতা-স্বকীয়তা রক্ষা করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। তাই শুধু পরকালের স্বার্থেই নয়, অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে আমাদেরকে লড়তে হবে নিজেদের ও দেশেরই স্বার্থে।

আপনি পড়ছেনঃ ফেরারী নারী বই থেকে।

The post পৌত্তলিক কুসংস্কৃতি ও তারুণ্যের উদ্ভাবনীশক্তি ধ্বংসে নারী! appeared first on Amar Bangla Post.

নমরুদ-নরকে পুড়ছে হিজাব: ফুঁৎকার দিচ্ছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়!

$
0
0

নমরুদ মরলেও তার প্রজ্জ্বলিত অগ্নি-নরক আজও নেভেনি। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তরে নমরুদের প্রেতাত্মারা কখনও ইসলামের বিরুদ্ধে, কখনও ইসলামের আদর্শের বিরুদ্ধে এবং কখনও ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুনের বিরুদ্ধে নমরুদীয় অগ্নিনরক প্রজ্জ্বলন করেছে এবং এখনও করে চলেছে। নমরুদের আবির্ভাব কেবলই দেহকেন্দ্রিক নয়; কখনও কখনও আদর্শকেন্দ্রিকও।

বিশ্বের আনাচে কানাচে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে হিজাবের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য যুদ্ধ। কেউ আর এখন রাখঢাক করছে না হিজাবের বিরোধিতায়। এ কাজে এগিয়ে আছে তথাকথিত সভ্যতার দাবিদার ইউরোপবিশ্ব। ইউরোপে ফ্রান্সের পর হল্যান্ডেও বোরকা পরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। হল্যান্ডের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়ে বলছে- বোরকা, নেকাব বা হিজাব এবং চেহারা আবৃত রাখে এমন সব পোশাক পরিধানে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। হল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মিক্সিন আমস্টার্ডমে মিডিয়াকে বলেন, এ নিষেধাজ্ঞা কেবল বোরকা বা অন্যান্য ইসলামী পোশাকের ওপরই নয়; বরং চেহারা আবৃত করার সব পোশাকের ওপর বলবৎ করা হবে। উল্লেখ্য, হল্যান্ডের সতের মিলিয়ন নাগরিকের মধ্যে এক মিলিয়ন নাগরিক মুসলিম।

ফ্রান্সের সংসদের নিম্নকক্ষ জুলাই ২০১০ ঈসায়ীতে হিজাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিল অনুমোদন করেছিল। অতপর ২০১১ সালের এপ্রিলে পার্লামেন্টে পাশ হওয়া আইনের অধীনে মুসলিম নারীদের পুরোপুরি হিজাব পরিধানে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। স্মর্তব্য যে, ফ্রান্স নেকাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রথম সদস্য রাষ্ট্র। সুতরাং এখন ফ্রান্সে সাধারণ স্থানসমূহে নেকাব আবৃত যে কোনো মুসলিম নারীকে জরিমানা এবং কারাবাসের সাজার মুখে পড়তে হয়। ফ্রান্সের সংসদীয় কমিটির সুপারিশের আলোকে প্রস্তুত এই আইনের আওতায় রাষ্ট্রের সকল স্কুল, হসপিটাল, সরকারি পরিবহন এবং সরকারি দপ্তরসমূহে মুসলিম নারীদের সম্পূর্ণ হিজাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রয়েছে। এ জায়গাগুলোয় হিজাব পরলে ১৫০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা আদায় করা হয়। উপরন্তু যেসব পুরুষ নিজেদের স্ত্রী, কন্যা বা বোনদের হিজাব পরতে বাধ্য করবেন এবং যে আলেমগণ এর প্রচার করবেন তাদেরকে ত্রিশ হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানা বা এক বছর কারাবাসের শাস্তি প্রদান করা হয়।

উল্লেখ্য, ফ্রান্সে বাস করে ইউরোপের মুসলিমদের সবচেয়ে বড় কমিউনিটি। এখানে স্থানীয় ও অভিবাসী মিলিয়ে মুসলিমের সংখ্যা ষাট লাখের অধিক। ফ্রান্সের মুসলিমদের ভাষ্য মতে, এই আইন কার্যকর হওয়ায় ফ্রান্সের অন্য বড় ধর্মাবলম্বীগণ তীব্র ঝাঁকুনি অনুভব করেছেন। দেশে ইসলামোফোবিয়ার ঝুঁকি আরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। মুসলিম ও তাদের মসজিদগুলো ধারাবাহিক ঘৃণার টার্গেটে পরিণত হচ্ছে। প্রকাশ থাকে, ফ্রান্সের পথ ধরে বেলজিয়াম ও অস্ট্রেলিয়াও মুসলিম নারীদের  নেকাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

ইউরোপে বোরকা ও হিজাবের বিরুদ্ধে যদিও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে; কিন্তু ওখানকার জ্ঞানী-গুণী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এই নিষেধাজ্ঞার তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইউরোপের মানবাধিকার কাউন্সিলের কমিশনার থমাস হামবুর্গ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এ ধরনের পদক্ষেপের কারণে নারীদের স্বাধীনতা দেওয়ার পরিবর্তে তাদেরকে সামাজিক জীবন থেকেই বের করে দেওয়া হচ্ছে। বস্তুত বোরকার ওপর নিষেধাজ্ঞা ইউরোপের মানবাধিকারের মানদণ্ড এবং বিশেষত কারো ঘরোয়া জীবন ও ব্যক্তি পরিচয়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের চেতনা পরিপন্থী। মুসলিম নারীদের পোশাকের ব্যাপারটিকে যেভাবে সমালোচনার লক্ষ্য বানানো হচ্ছে, তা থেকে হাত গুটাতে হলে আলাপ-আলোচনা ও আইন করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।’

বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, যে সমাজে পর্দাকে সামাজিক সম্পর্কের জন্য অন্তরায় আখ্যায়িত করে সমালোচনার লক্ষ্য বানানো হচ্ছে, সেখানকার নারীদের মধ্যে হিজাবের জনপ্রিয়তা কেবল বেড়েই চলেছে। কয়েকজন অমুসলিম নারী ইসলামের পোশাক ধারণ করে নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। তারা নিজেদেরকে এ বাস্তবতা স্বীকারে নৈতিকভাবে বাধ্য মনে করেছেন যে, আদতেই নারীরা হিজাব ও পর্দার ভেতরে সম্মানবোধ করেন। ‘নাউমি ওয়াল্ফ’ আমেরিকার এক খ্রিস্টান নারী। নারী স্বাধীনতা এবং সমাজে নারীদের সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় তিনি কাজ করে থাকেন। এ বিষয়ে তিনি দুটো বইও রচনা করেছেন। নানা ধর্ম ও সংস্কৃতির নারীদের অবস্থান পর্যবেক্ষণ ও অধ্যয়নে তার বিশেষ আগ্রহ। হিজাবকেন্দ্রিক সমালোচনা সূত্রে একটি মুসলিম দেশে মুসলিম পোশাক পরার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন তিনি। উদ্দেশ্য, এ পোশাকে খোদ নারীরা কেমন বোধ করেন তা জানা।

তার ভাষ্য ছিল, ‘আমি মারাকেশে নিজের থাকার জায়গা থেকে যখন বাজারে যাবার জন্য বের হলাম, তখন আমি সেলোয়ার-কামিজ পরেছিলাম। আমার মাথা ছিল স্কার্ফে ঢাকা। মারাকেশের মুসলিম মেয়েদের মধ্যে এর ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। সবখানে একে সম্মান দেখানো হয়। আর আমি যেহেতু তাদের স্বদেশী কেউ নই, তাই তাদের দৃষ্টিতে কিছুটা দ্বিধা ও সংশয় থাকবে বৈ কি। কিন্তু সন্দেহের কিছু দৃষ্টির কথা বাদ দিলে আমাকে উদ্বিগ্ন করার মতো কোনো কিছু নজরে আসে নি। আমি নেহাত আরামে ছিলাম। কোনো চিন্তার বিষয় ছিল না। আমি সবদিক থেকে নিজেকে নিরাপদ এবং স্বাধীন বোধ করেছি।’

‘মুসলিম নারী : পর্দা এবং জেন্ডার ইস্যু’ শীর্ষক নিজের এর্টিকেলে ‘নাউমি ওয়াল্ফ’ পশ্চিমাদের পরামর্শ দিয়েছেন, ‘মুসলিম মূল্যবোধকে নিষ্ঠার সঙ্গে বুঝতে চেষ্টা করুন। পর্দার উদ্দেশ্য কখনোই নারীকে দমিয়ে রাখা নয়। এটি বরং ‘প্রাইভেটের মোকাবেলায় পাবলিকের’ বিষয়। পাশ্চাত্য বিশ্ব নারীকে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দিয়ে এক অর্থে বাজারের পণ্য বানিয়ে ছেড়েছে। পক্ষান্তরে ইসলাম নারীর সৌন্দর্য ও তার সত্তাকে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দিয়ে তাকে এক পুরুষের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। যে পুরুষের সঙ্গে ধর্মীয় রীতি-নীতি অনুসারে তিনি পুরো জীবন কাটিয়ে দেবেন বলে স্থির করেছেন।

কিছুদিন আগে আমেরিকার হিস্প্যানিক বংশোদ্ভুত এক নওমুসলিম নারী লিখেন, ‘আমি যখন পাশ্চাত্যের পোশাকে ছিলাম তখন আমাকে নিজের চেয়ে অন্যের রুচির প্রতিই বেশি লক্ষ্য রাখতে হতো। ঘর থেকে বেরুবার আগে নিজেকে দেখতে কেমন লাগছে তা নিশ্চিত হওয়া এক অপ্রিয় ও বিরক্তিকর ব্যাপার ছিল। তারপর আমি যখন কোনো স্টোর, রেস্টুরেন্ট বা জনসমাগম স্থানে যেতাম তখন নিজেকে অন্যদের দৃষ্টিতে আকর্ষণীয় অনুভব করতাম। দৃশ্যতঃ আমি যদিও নিজে স্বাধীন ও নিজ সিদ্ধান্তের মালিক ছিলাম কিন্তু বাস্তবে আমি ছিলাম অন্যের পছন্দ-অপছন্দের জালে বন্দি। তাছাড়া এ চিন্তাও মাথায় থাকত যে, যতদিন আমার রূপ-লাবণ্য ও বয়স অটুট থাকবে মানুষ আমার পেছনে ঘুরবে; কিন্তু বয়স গড়ানোর পর নিজেকে অন্যের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে হলে আমাকে আরও বেশি পরিশ্রম করতে হবে। পক্ষান্তরে ইসলাম আমাকে এখন ওসব উটকো ঝামেলা থেকে একেবারে নিশ্চিন্ত ও স্বাধীন বানিয়ে দিয়েছে।’

অতিসম্প্রতি হলিউডের প্রখ্যাত চিত্রনির্মাতা লিয়াম নিসন ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন। ঊনষাট বছর বয়েসী এই পরিচালক ক্যাথলিক খ্রিস্টান ছিলেন। বিদেশি পত্রিকা মারফত জানা যায়, লিয়াম নিসন জানান, তুরস্কে সিনেমার চিত্র ধারণ করতে গিয়ে সেখানকার মুসলিমের ইবাদতের ধরনে তিনি প্রভাবিত হন। এর মধ্যে তিনি আত্মিক প্রশান্তি অনুভব করেন। তিনি আরও বলেন, মসজিদগুলো খুবই চিত্তাকর্ষক। এসবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের মাধ্যমে মানুষ ইসলামের আরও কাছে চলে আসে। 

ভাববার বিষয় হলো, পাশ্চাত্য কি এখন নিজের দিগম্বর সভ্যতা ও মাতা-পিতাহীন সংস্কৃতির বদৌলতে ধ্বংস ও পতনের অতি কাছে চলে গিয়েছে? এ প্রশ্নের উত্তরের জন্য একটি খবরের উদ্ধৃতিই যথেষ্ট হতে পারে। এতে বলা হয়েছে, পাঁচ কোটি মার্কিনি নানাধরনের মানসিক রোগে ভুগছে। প্রতি পাঁচজনের একজন আমেরিকান পরিপূর্ণ মানসিক রোগী হয়ে গেছেন। পুরুষদের তুলনায় নারীরা বেশি জটিল মস্তিষ্কের রোগে আক্রান্ত। শতকরা ২৩ ভাগ নারীর মোকাবেলায় শতকরা ১৬.৮ ভাগ পুরুষ এই উপসর্গের শিকার। পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের তুলনায় ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়েসী যুবকদের মধ্যে এই রোগের বিস্তার দ্বিগুণ। রিপোর্টে এ কথাও বলা হয় যে, এক কোটি ১৪ লাখ মার্কিনির মধ্যে জটিল কিসিমের মস্তিষ্কের রোগ পাওয়া যায়। ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী ১৯ লাখ তরুণ আমেরিকান ডিপ্রেশনের শিকার।

প্রকৃতপক্ষে তাগুতী শক্তিগুলোর পক্ষ থেকে গ্রহণ করা ইসলামবিরোধী পদক্ষেপগুলো পাশ্চাত্যে দ্রুত বর্ধিষ্ণু ইসলামের জনপ্রিয়তার পথ রুদ্ধ করবার ব্যর্থ প্রচেষ্টা মাত্র। কারণ, গত এক দশকে যেভাবে পাশ্চাত্যে ইসলাম গ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়েছে তাতে জায়নবাদী কর্মকর্তাদের চোখের ঘুম হারাম হবার যোগাড়। শুধু আমেরিকাতেই প্রতি বছর ২০ হাজার ব্যক্তি ইসলামে দাখিল হচ্ছেন। এ পর্যন্ত যেই সভ্যতা-সংস্কৃতি বস্তুপূজা ও আল্লাহকে রুষ্ট করার পোশাকে উপস্থাপন করা হয়েছে আজ তা ঘুণে ধরা কাঠের মতো দৃশ্য তুলে ধরছে। গতকালও যে কালচার ও সভ্যতাকে উপমা বা আদর্শ বলা হচ্ছিল আজ তা থেকেই ছুটে পালানোর ঘোষণা আসছে। পাশ্চাত্যে দিনদিন ইসলামের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা ইসলামের সত্যতা এবং ইসলামের নবীর বস্তুনিষ্ঠতার সবচে বড় প্রমাণ।

বিশ্বের বিভিন্ন অমুসলিম প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোতে আমাদের মুসলিম যুবতীরা হিজাবের মাহাত্ম্যকে হিমালয় সদৃশ উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার নিরন্তন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। শুক্রবার, ২৩ আগস্ট ২০১৩ ইং বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ বেরুলো- ‘বোরকা খোলার আদেশ প্রত্যাখ্যান’। সংবাদে প্রকাশ : বোরকা খুলে আদালতে প্রবেশ করতে বিচারকের দেওয়া আদেশ প্রত্যাখ্যান করেছেন লন্ডনের এক মুসলিম তরুণী। লন্ডনের একটি আদালতের বিচারক পিটার মারফি উন্মুক্ত বিচারের শর্তের কথা উল্লেখ করে তাকে বোরকা খোলার নির্দেশ দেন। কিন্তু ২১ বছর বয়সী বিবাদী ধর্মীয় বিশ্বাসের কথা উল্লেখ করে পুরুষদের সামনে বোরকা খুলতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, এটা আমার ধর্মীয় বিশ্বাসের পরিপন্থী।’ [সূত্র : মেইল অনলাইন]

এই সাহসী মুসলিম তরুণী বাতিলের সামনে ইসলামের একটি গৌরবময় বিধানের মর্যাদা ও তাতে মুসলিম নারীদের অবিচলতার কথা তুলে ধরার বদৌলতে তিনি আবু জেহেলের সামনে সুমাইয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হকের ওপর অবিচল থাকার মর্যাদার কাছাকাছি মর্যাদায় অভিষিক্ত হবেন বলে আমার দৃঢ়বিশ্বাস। কারণ, এমন এক সংকট মুহূর্তে একজন সাহসী নারীর এগিয়ে আসা নিঃসন্দেহে সারাবিশ্বের অমুসলিম তাগুতি শক্তি হিজাবের প্রতি সমীহ করতে বাধ্য হবে। [আলী হাসান তৈয়ব লিখিত পর্দাবিষয়ক ইসলাম হাউজের একটি লেখা অবলম্বনে]

সুইডেনে হিজাব পরে মুসলিম নারীর প্রতি সংহতি প্রকাশ

ফ্রান্সে এক মুসলিম মহিলার ওপর বর্ণবাদী হামলার প্রতিবাদে অভিনব হিজাব কর্মসূচি শুরু করেছেন সুইডেনের নারীরা। ফেসবুক, টুইটারসহ নানা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নিজেদের হিজাব পরিহিত ছবি আপলোড করতে শুরু করেছেন সুইডেনের নারীরা।

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের উপকণ্ঠে হিজাবধারী এক নারীর ওপর হামলা চালায় কিছু উগ্রবাদী। হামলাকারীরা ওই নারীর হিজাব ছিঁড়ে ফেলে এবং তার মাথা গাড়িতে ঠুকে দেয়। একপর্যায়ে রডকাটার ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার ওপর হামলা চালায় এবং মাটিতে ফেলে দেয়। এরপর ঘটনাস্থলে একটি গাড়ি এসে পৌঁছলে পালিয়ে যায় উগ্রবাদীরা। [সূত্র : আল জাজিরা : ২১ আগস্ট ২০১৩ ইং]

মুসলিম নারীর প্রতি সংহতি প্রকাশ করে অভিনব এই সামাজিক প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন নানা ধর্মের নারীসহ রাজনীতিবিদ এবং টিভি উপস্থাপিকারা। রাজনীতিবিদ আসা রোমসোন, ভেরোনিকা পাম এবং টিভি উপস্থাপিকা গিনা দিরাউই এরইমধ্যে ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোতে হিজাব পরিহিত ছবি আপলোড করেছেন।

হিজাবের অনুমতি পেল কানাডার মুসলিম মহিলা পুলিশ কর্মকর্তারা :

কানাডার অ্যাডামুন্তুন সিটির মুসলিম মহিলা পুলিশ কর্মকর্তাদের ইসলামী শালীন  পোশাক বা হিজাব পরার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে তারা হিজাব পরে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।

Onislam.net ওয়েব সাইটের উদ্ধৃতি দিয়ে কুরআন বিষয়ক আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা ‘ইকনা’ জানিয়েছে, এর আগে কানাডার এই শহরের পুলিশ কর্তৃপক্ষ পুলিশ বিভাগে কাজ করতে মুসলিম মহিলাদের উৎসাহিত করার জন্য মুসলিম পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে হিজাব ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার বিষয়টি উত্থাপন করেছিল।

হিজাব ব্যবহারের বিষয়টা অনুমোদন লাভের পর এখন থেকে যে কোনো মুসলিম নারী কোনো রকম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছাড়াই ইসলামী শালীন পোশাক পরে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করতে পারবেন। অ্যাডামুন্তুন সিটির মুসলিম নারী পরিষদের প্রধান সারিয়া যাকি হাফেজ বলেছেন, পুলিশ বিভাগে মুসলিম নারী সদস্যদের হিজাব ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার পর মুসলিম নারীরা কানাডার সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে।

মুসলিম নারীদের হিজাব ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে কানাডার অ্যাডামুন্তুন সিটির পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অনেক যাচাই বাছাই করে দেখার পর এটা প্রমাণিত হয়েছে, হিজাব ব্যবহারের কারণে মুসলিম নারী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে কোনো সমস্যা হবে না এবং কাজেও ব্যাঘাত ঘটবে না।

কানাডার মোট জনসংখ্যা তিন কোটি ৩০ লাখ এবং এর মধ্যে প্রায় তিন শতাংশ হচ্ছে মুসলিম জনগোষ্ঠী। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের পর মুসলিমরাই সেখানে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়।

পর্দা আলো ছড়াচ্ছে বিশ্বাসের আঙিনায়

পর্দার বিরুদ্ধে অব্যাহত বিদ্বেষ-লড়াই সত্ত্বেও পর্দা ও হিজাব তার স্বচ্ছ-পবিত্র কারিশমার বিচ্ছুরণ ঘটাচ্ছে। পর্দার শুদ্ধতা আলোকিত করছে ভ্রান্তপথিকের বিশ্বাসের আঙিনা। এক মার্কিন অধ্যাপকের ইসলাম গ্রহণের গল্প তুলে ধরতে চাই। জানেন তার ইসলাম গ্রহণের প্রত্যক্ষ কারণ কী ছিল? হ্যাঁ, তার ইসলাম গ্রণের প্রথম ও একমাত্র কারণ ছিল এক মার্কিন তরুণীর হিজাব। যিনি তার হিজাব নিয়ে সম্মানবোধ করেন। নিজ ধর্ম নিয়ে গর্ব করেন। শুধু একজন অধ্যাপকই ইসলাম গ্রহণ করেন নি। তার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপকদের মধ্যে তিন ডক্টর ও চার ছাত্রীও ইসলামধর্মে অন্তর্ভুক্ত হন। এ সাতজন ব্যক্তিই অভিন্ন সেই হিজাবকে কেন্দ্র করেই ইসলামে দীক্ষিত হন। গল্পটি তবে সেই মার্কিন ডক্টরের ভাষ্যেই পড়ুন।

নিজের ইসলামে প্রবেশের #গল্প শোনাতে গিয়ে ড. মুহাম্মদ আকুয়া বলেন, বছর চারেক আগে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সহসা এক বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এখানে পড়তে আসে এক মুসলিম তরুণী। নিয়মিত সে হিজাব পরিধান করে। ওর শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন একজন কট্টর ইসলাম বিদ্বেষী। যে কেউ তার সঙ্গে বিতর্ক এড়াতে চাইলেও তিনি গায়ে পড়ে তাকে চ্যালেঞ্জ করতেন। আর এমন অনুশীলনরত মুসলিম পেলে তো কথাই নেই। স্বভাবতই তিনি মেয়েটিকে যে কোনো সুযোগ পেলেই উত্যক্ত করতে লাগলেন।

একপর্যায়ে মেয়েটির ওপর একের পর এক কল্পনাশ্রয়ী আক্রমণ করতে লাগলেন। মেয়েটি যখন শান্তভাবে এসবের মোকাবেলা করে যেতে লাগল, তার রাগ আরও বৃদ্ধি পেল। এবার তিনি অন্যভাবে মেয়েটিকে আক্রমণ করতে লাগলেন। তার এডুকেশন গ্রেড বৃদ্ধিতে অন্তরায় সৃষ্টি করলেন। তাকে কঠিন ও জটিল সব বিষয়ে গবেষণার দায়িত্ব দিলেন। কড়াকড়ি শুরু করে দিলেন তাকে নাম্বার দেওয়ার ক্ষেত্রে। এরপরও যখন অহিংস পদ্ধতিতে মেয়েটিকে কোনো সমস্যায় ফেলতে পারলেন না, চ্যান্সেলরের কাছে গিয়ে তার বিরুদ্ধে বানোয়াট অভিযোগ দায়ের করলেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিল, ছাত্রী ও অধ্যাপক উভয়কে একটি বৈঠকে ডাকা হবে। উভয়ের বক্তব্য শোনা হবে। সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে মেয়েটির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের।

নির্দিষ্ট দিন এলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিটির সব সদস্য উপস্থিত হলেন। আমরা সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে এ পর্বটির জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের মোকাদ্দমা এই প্রথম। বৈঠক শুরু হল। প্রথমে ছাত্রীটি অভিযোগ করল, অধ্যাপক সাহেব তার ধর্মকে সহ্য করতে পারেন না। এ জন্য তিনি তার শিক্ষার অধিকার হরণ করতে উদ্যোগী হয়েছেন। সে তার অভিযোগের সপক্ষে কয়েকটি দৃষ্টান্তও তুলে ধরল এবং এ ব্যাপারে তার সহপাঠীদের বক্তব্যও শোনার দাবি জানাল। সহপাঠীদের অনেকেই ছিল তার প্রতি অনুরক্ত। তারা তার পক্ষে সাক্ষী দিল। বস্তুনিষ্ঠ সাক্ষ্য দিতে ধর্মের ভিন্নতা তাদের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারল না।

মেয়েটির জোরালো বক্তব্যের পর ডক্টর সাহেব আত্মপক্ষ সমর্থনের ব্যর্থ চেষ্টা করলেন। অব্যাহতভাবে কথাও বলে গেলেন; কিন্তু মেয়েটির ধর্মকে গালি দেওয়ার সাহস সঞ্চয় করতে পারলেন না। অথচ মেয়েটি দিব্যি ইসলামের পক্ষে তার বক্তব্য উপস্থাপন করল। ইসলাম সম্পর্কে অনেক তথ্য ও সত্য তুলে ধরল। তার কথার মধ্যে ছিল আমাদের সম্মোহিত করার মত অলৌকিক শক্তি। আমরা তার সঙ্গে বাক্যবিনিময়ে প্রলুব্ধ না হয়ে পারলাম না। আমরা ইসলাম সম্পর্কে আপন জিজ্ঞাসাগুলো তুলে ধরতে লাগলাম আর সে তার সাবলীল জবাব দিয়ে যেতে লাগল। ডক্টর যখন দেখলেন আমরা অভিনিবেশসহ মেয়েটির যুক্তিতর্ক শুনছি, তার সঙ্গে আলাপচারিতায় মগ্ন হয়েছি, তখন তিনি হল থেকে নিরবে বেরিয়ে গেলেন। মেয়েটিকে আমাদের গুরুত্ব দেওয়া এবং সাগ্রহে তার বক্তব্য শোনা দেখে তিনি কিছুটা মর্মাহত হলেন বৈকি। একপর্যায়ে তিনি এবং তার মতো যাদের কাছে মেয়েটির আলোচনা গুরুত্বহীন মনে হচ্ছিল তারা সবাই বিদায় নিলেন। রয়ে গেলাম আমরা, যারা তার কথার গুরুত্ব অনুধাবন করছিলাম। তার বাক্যমাধুর্যে অভিভূত হচ্ছিলাম। কথা শেষ করে মেয়েটি আমাদের মধ্যে এক টুকরো কাগজ বিতরণ করতে লাগল। ‘ইসলাম আমাকে কী বলে’ শিরোনামে সে তার চিরকুটে ইসলাম গ্রহণের কারণগুলো তুলে ধরেছে। আলোকপাত করেছে হিজাবের মাহাত্ম্য ও উপকারিতার ওপর। যে হিজাব নিয়ে এই সাতকাহন এর ব্যাপারে তার পবিত্র অনুভূতিও ব্যক্ত করেছে সেখানে।

বৈঠকটি অমিমাংসিতভাবেই সমাপ্ত হল। মেয়েটির অবস্থান ছিল অত্যন্ত বলিষ্ঠ। যে কোনো মূল্যে নিজের অধিকার রক্ষা করবে বলে সে প্রত্যয় ব্যক্ত করল। প্রয়োজনে আদালত পর্যন্ত যাবে সে। এমনকি তার পড়ালেখা পিছিয়ে গেলেও সে এ থেকে পিছপা হবে না। আমরা শিক্ষা কমিটির সদস্যরা কল্পনাও করি নি মেয়েটি তার ধর্মীয় অধিকার রক্ষার ব্যাপারে এমন অনমনীয় মনোভাবের পরিচয় দেবে। কতজনকেই তো এতগুলো শিক্ষকের সামনে এসে চুপসে যেতে দেখলাম। যা হোক, ঘটনার পর থেকে এ নিয়ে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিতর্ক চলতে থাকল।

কিন্তু আমি কেন জানি নিজের ভেতর হিজাবের এই ধর্ম নিয়ে প্রবল আলোড়ন অনুভব করলাম। এ ব্যাপারে অনেকের সঙ্গেই কথা বললাম। তারা আমাকে ইসলাম সম্পর্কে জানতে অনুপ্রাণিত করল। কেউ কেউ উৎসাহ যোগাল ইসলামে দীক্ষিত হতে। এর ক’মাস বাদেই আমি ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দিলাম। ক’দিন পর দু’জন অধ্যাপক আমাকে অনুসরণ করলেন। এবং সে বছরই আরও একজন ডক্টর ইসলাম গ্রহণ করলেন। আমাদের পথ ধরে চারজন ছাত্রও ইসলামে দাখিল হলো। এভাবে অল্পকালের মধ্যেই আমরা একটি দল হয়ে গেলাম- আজ যাদের জীবনের মিশনই হলো, ইসলাম সম্পর্কে জানা এবং মানুষকে এর প্রতি আহ্বান জানানো। আলহামদুলিল্লাহ, অনেকেই ইসলাম কবুলের ব্যাপারে সক্রিয় চিন্তা-ভাবনা করছেন। ইনশাআল্লাহ অচিরেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের ইসলাম গ্রহণের সুসংবাদ শুনতে পারবে। সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য। [ইসলাম হাউজে প্রকাশিত আলী হাসান তৈয়ব লিখিত ‘মুসলিম তরুণীকে দেখে তিন মার্কিন অধ্যাপকের ইসলাম গ্রহণ’ শীর্ষক লেখা থেকে]

কিন্তু ওরা এত স্পর্ধা পায় কোথায়?

বিশ্বের বিধর্মী রাষ্ট্রগুলোর হিজাবের বিরুদ্ধে যখন খোদ সেদেশেই তীব্র সমালোচনা হচ্ছে এবং বিধর্মী রমণীগণ হিজাবের মাহাত্ম্য অনুধাবন করে দলে দলে মুসলিম হচ্ছেন ঠিক তখনই বাংলাদেশের মতো একটা হাজার বছরের ইসলামী ঐতিহ্য ও পর্দার বিধান ধারণকারী রমণীদের ঘাড়ে এনজিও সংস্থা ব্র্যাক কর্তৃক পরিচালিত ব্রাক ইউনিভার্সিটিতে পর্দা করার অপরাধে (?) ছাত্রীদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে!

হিজাব পরার কারণে রাজধানীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হতে হয়েছে এক ছাত্রীকে। ১২ সেপ্টেম্বর ’১৩ইং ইউনিভার্সিটির হাফসা ইসলাম নামে ইংরেজি বিভাগের স্নাতকের (সম্মান) ৭ম সেমিস্টারের এক ছাত্রীকে হিজাব পরায় ড্রেসকোড ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়। এর আগে গত ২২শে জানুয়ারি ড্রেস কোড ও নিরাপত্তার অজুহাতে ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এরপরও যেসকল ছাত্রী হিজাব পরিধান করত তাদেরকে শোকজ করা হয়। শোকজ করার পরও হিজাব পরা অব্যাহত রাখায় গত ১২ সেপ্টেম্বর হাফসাকে বহিষ্কার করা হয়। সনাক্তকরণ সমস্যা ও নিরাপত্তা ঝুঁকিকে হিজাব নিষিদ্ধের পক্ষে যুক্তি হিসেবে দেখিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

অথচ এটা কোনো অজুহাতই নয়। কেননা, ইউনিভার্সিটির প্রবেশপথে স্ক্যানার লাগিয়ে নাশকতামূলক তৎপরতা রোধ করা সম্ভব, তাহলে কেউ এগুলো বহন করে ইউনিভার্সিটিতে প্রবেশ করতে পারবে না, এতে করে নিরাপত্তা বজায় থাকবে। সেই সঙ্গে আংগুলের ছাপে খুলে এমন অটোমেটিক লক প্রতিটি ক্লাশ রুমের দরজায় লাগানো হলে সনাক্তকরণ সহজসাধ্য হবে। শরীয়তের বিধান মোতাবেক হিজাব পরিধান করা মুসলিম মহিলাদের জন্য ফরজ। সেই ফরজ বিধান পালনের অপরাধে (?) একটা এনজিও সংস্থার অধীনে পরিচালিত ভার্সিটি মুসলিম নারীদের বহিষ্কারের ধৃষ্টতা দেখানোর সাহস পায় কোথা থেকে?

এই দুঃসাহসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে তৌহিদী জনতা। কিন্তু তৌহিদী জনতার এই আন্দোলনে প্রথম প্রথম অবজ্ঞা করে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়। অনড় থাকার সিদ্ধান্ত নেয় ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়। কর্তৃপক্ষ বলে, আমরা ড্রেসকোড সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছি। ওই শিক্ষার্থী ড্রেসকোড মানলেই কেবল তাকে অনুমোদন দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইসফাক ইলাহী চৌধুরী বলেন, হাফসার পরিবারকে সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। হাফসার ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে শিথিলও করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা বৈঠকে উপস্থিত হননি। তারা এখন বলছে ড্রেসকোড পরিবর্তন করতে হবে। এটা বোর্ড অব ট্রাস্টির সিদ্ধান্ত। আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে অনড়। বিষয়টা এখন আইনীভাবেই মোকাবেলা করা হবে।

হাফসার বড় ভাই আবদুল্লাহ মোহাম্মদ ইসা বলেন, হাফসাকে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে সেখানে বোর্ড অব ট্রাস্টির সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছে। এখন তারা মৌখিকভাবে কিছু শর্ত শিথিলের কথা বলছে। আমাদের কথা হচ্ছে ওই ড্রেসকোডই পরিবর্তন করতে হবে। আর যেহেতু লিখিতভাবে হাফসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তাই লিখিতভাবেই প্রত্যাহার করতে হবে। আর সেটা বোর্ড অব ট্রাস্টির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হতে হবে। কেননা মৌখিকভাবে করা হলে কয়েকদিন পর আবার যে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়?

তিনি বলেন, বিষয়টা সমাধান না হলে আমরা তা আইনীভাবে মোকাবেলা করবো। ইংরেজি বিভাগের স্নাতকের (সম্মান) ৭ম সেমিস্টারের ছাত্রী হাফসা ইসলাম বলেন, বোরকার সঙ্গে নেকাব পরিধান করায় গত দুই সেমিস্টার ধরে আমাকে নানাভাবে হেনস্থা করা হয়েছে। এভাবে আরও বেশ কয়েকজন ছাত্রীকে বোরকা ও নেকাব ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। জানুয়ারিতে নোটিশ জারির পরই এধরনের কড়াকড়ি শুরু হয় বলে জানান হাফসা ইসলাম। ওই ছাত্রীর আইডি নম্বর ১১৩০৩০০১। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ড্রেসকোডের দোহাই দিলেও গত ২২শে জানুয়ারি একটি নোটিশ জারি করে ড্রেসকোড ও নিরাপত্তার অজুহাতে ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের বোরকা, নেকাব ও হিজাব পরা নিষিদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এরপরও যেসব ছাত্রী বোরকা, হিজাব ও নেকাব পরিধান করতেন তাদের ২৮শে মে শোকজ করা হয়। হাফসাকেও একই দিনে শোকজ করা হয়। ৩রা জুনের মধ্যে হাফসার কাছ থেকে জবাব চাওয়া হয়। হাফসা জবাব দিলেও তা বিশ্ববিদ্যালয়ের পছন্দ মতো হয় নি। শেষ পর্যন্ত তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।

এই যে বিশ্বব্যাপী হিজাবের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হয়েছে এবং এই লড়াইয়ে প্রতিবাদী নারীদের ব্যাপক প্রতিরোধ ও নতুন করে বিভিন্নধর্মের নারীদের হিজাবে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করায় তারা মনস্তাত্ত্বিকভাবে পরাজিতও হচ্ছে। হিজাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধবাজদের যখন এই ত্রিশঙ্কু অবস্থা, তখন বাংলাদেশের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী মুসলিমরাষ্ট্র ও পর্দাপ্রিয় মুসলিম নারীদেরকে পর্দার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করার ধৃষ্টতা বড় গভীর কোনো ষড়যন্ত্রের প্রতি দিকনির্দেশ করে নাকি?

বাংলাদেশের উলামায়ে কেরাম ও সচেতন তৌহিদী জনতা সেই এনজিও সংস্থাগুলোর পদযাত্রার প্রথমদিন থেকেই তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার এবং তাদের দূরভিসন্ধির কথা বলে আসছেন। কেউ এটাকে বাড়াবাড়ি কিংবা অহেতুক আশঙ্কা বলেও উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন। বিশেষ করে সুবিধাবাদী চক্র এটাকে উলামায়ে কেরামের প্রতিক্রিয়াশীলতা বলে সমালোচনা করেছে। কিন্তু সময়ের আবর্তনে উলামায়ে কেরামের সেই সন্দেহ-সংশয় বাস্তবে প্রতিফলিত হচ্ছে। নইলে কীভাবে সম্ভব বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিমদেশের মসজিদের নগরী ঢাকায় বসে একজন মুসলিম নারীকে পর্দা পালনের অপরাধে ভার্সিটি থেকে বের করে দেয়া? দেশটাকে আমরা এনজিওদের হাতে ইজারা দিয়েছি? কিংবা ইসলামবিদ্বেষী চক্রকে দেশটাকে পুতুলের মতো নাচানোর অনুমতি প্রদান করেছি? এদের সর্বনাশা চক্রান্ত থেকে মুসলিমদেরকে আজই সোচ্চার হতে হবে, বিশেষ করে নারীসমাজকে। অন্যথায় এই চক্র ভবিষ্যতে নারীসমাজের জন্য আরো ভয়ানক চক্রান্ত নিয়ে হাজির হবে। আজ সতর্ক না হলে সে সময় হয়ত ইচ্ছা থাকলেও হয়ত প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না।

আপনি পড়ছেনঃ ফেরারী নারী বই থেকে।

The post নমরুদ-নরকে পুড়ছে হিজাব: ফুঁৎকার দিচ্ছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়! appeared first on Amar Bangla Post.

প্রশ্নঃ পরনারীর সাথে সহবাস করার উপায় কি?

$
0
0

প্রশ্নঃ আমি একজনের সাথে যৌন সম্পর্ক করতে চাই। কিন্তু তাকে বলতে পারতেছিনা। একটা উপায় দেন please

উত্তরঃ অবৈধ উপায়ে পরনারীর সাথে বা তাঁর আশে-পাশের সম্পর্কিত ভাবীর সাথে কিংবা প্রতিবেশির বোনের সাথে কিভাবে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করবে অনেকেই ম্যাসেজ দিয়ে উপায় জানতে চান। আমরা তাদের  সেসব প্রশ্নের এড়িয়ে যায় কিংবা ম্যাসেজ প্রদান কারী ব্যক্তিকে বলে দেয় এটি অসামাজিক এবং ইসলাম বহিভূর্ত  কাজ। কাজেই আপনি এ থেকে বিরত থাকুন এবং আপনাকে এসব কৌশল শিখিয়ে আপনার পাপের অংশীদার আমরা হতে রাজি নয়।

কিন্তু এখন আমরা বুঝতে পারছি বিপদগামী চিন্তা-ভাবনা পুরুষদের জন্য এ নিয়ে একটি ছোট খাটো উত্তর আমাদেরকে লিখতেই হবে।

এমন এক প্রশ্ন করা হয়েছি  স্বয়ং রাসূলে করীম (সাঃ)-মের কাছেও। সেদিন এক যুবক রাসূল (সাঃ)-এর কাছে যিনা করার অনুমতি প্রার্থণা করেন। যেসব যুবক বিবাহ ব্যতীত পরনারীর সাথে যৌন সম্পর্ক (ব্যভিচার) স্থাপন  করতে চান, আশা করি তারা এই হাদিস থেকে শিক্ষা অর্জন করে আল্লাহর অবাধ্যতার পথ থেকে ফিরে  আসবেন।

হাদিসঃ “  একদা এক মজলিসে এক যুবক এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ,আমাকে যিনা করার অনুমতি দিন।’একথা শুনে উপস্থিত সবাই চমকে উঠলেন এবং তাকে তিরস্কার করতে লাগলেন, কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (আদরের সহিত) আমার কাছে এসো, সে কাছে এল। বললেন, বসো, সে বসলো।

এরপর (তার ঊরুতে হাত রেখে) বললেন, ‘তুমি কি তোমার মায়ের জন্য এটা পছন্দ করবে?’

সে বলল, না ইয়া রাসূলুল্লাহ। আল্লাহ আমাকে আপনার প্রতি উৎসর্গিত করুন।

কোনো মানুষই তার মায়ের জন্য এটা পছন্দ করবে না।’

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তাহলে তোমার মেয়ের জন্য?’

যুবকটি বলল, না, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি আপনার প্রতি উৎসর্গিত।

কোনো মানুষই তার মেয়ের জন্য এটা পছন্দ করবে না।’

নবীজী (সা) জিজ্ঞাসা করলেন, তাহলে তোমার বোনের জন্য?’

যুবক বলল, ‘না ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি আপনার প্রতি উৎসর্গিত। কোনো মানুষই তার বোনের জন্য এটা পছন্দ করবে না।’

নবীজী জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তাহলে তোমার ফুফুর জন্য?’

যুবক বলল,‘না ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি আপনার প্রতি উৎসর্গিত।

কোনো মানুষই তার ফুফুর জন্য এটা পছন্দ করবে না।’

নবীজী জিজ্ঞাসা করলেন, তাহলে তোমার খালার জন্য?’

যুবক বলল, না কক্ষনো না। আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গিত করুন।

কোনো মানুষই তার খালার জন্য এটা পছন্দ করবে না।’

এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার শরীরে হাত রাখলেন এবং দুআ করলেন- ইয়া আল্লাহ তার গুনাহ ক্ষমা করুন, তার অন্তর পবিত্র করুন এবং তার চরিত্র রক্ষা করুন।

বর্ণনাকারী বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শিক্ষার ফলাফল এই হল যে, পরবর্তী জীবনে সে (রাস্তায় চললে) কোন দিকে চোখ তুলেও তাকাত না।

– [মুসনাদে আহমদ ৫/২৫৬-২৫৭ ]

* এই হাদীস থেকে আমরা শিক্ষা পায় যে, একজন পুরুষ যার সাথে যেনা করবে সে নিশ্চই অন্য একজনের মা, মেয়ে, বোন, ফুফু কিংবা খালা… তাই সে যেমন নিজ মা, মেয়ে, বোন, ফুফু, খালাদের কে সম্মানের চোখে দেখে তেমন যদি অপরের মা, মেয়ে, বোন, ফুফু, খালাদেরকেও সম্মানের সাথে দেখে তাহলে সে এই অপরাধ করতে পারবেনা !

এইতো গেল হাদিসের কথা।

অপর দিকে কেউ যদি পাপ কাজরত অবস্থায় মৃত্যু বরণ (তাওবা না করে) তাহলে পরকালে তাঁর বাসস্থান হবে জাহান্নাম। এখন আমাদের কি কারোর এক সেকেন্ড বেঁচে থাকার গ্যারান্টি আছে? না, নেই। আপনি যৌন-সঙ্গম অবস্থারতই হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে মারা যেতে পারেন।

দ্বিতীয়ত্বঃ আপনি যখন বিয়ে করবেন তখন কি আপনি চাইবেন আপনার স্ত্রী কুমারীহীন হোক অথবা বিয়ের পর পরপুরুষের সাথে মেলা-মেশা, যৌনাচার করুক? না, আপনি এটি কখনো চাইবেন না। কোন নারীও চায় না তাঁর স্বামী কুমারীহীন হোক অথবা বিয়ের পরেও অন্য কোন নারীর সাথে যৌন-সম্পর্কে লিপ্ত হোক। কেউ যদি কোন পরনারীর  সাথে অবৈধ উপায়ে যৌন-সম্পর্কে লিপ্ত হয় তখন কি হয়?

১। উভয়েরই যৌবনের পবিত্রতা নষ্ট হয়।

২। পারস্পরিক অধিকার নষ্ট হয়।

৩। আল্লাহর অবাধ্যতা হয়।

৪। নিকৃষ্ট পাপাচারের অধ্যায় শুরু হয়।  

৫। এ থেকে রচনা হতে পারে আরো গুরুতর অপরাধের অধ্যায়।

যখন কেউ ভালো কাজের নিয়ত বা খারাপ কাজের নিয়ত করে তখন কি হয়?

রাসূল (সাঃ) বলেছেন, কেউ যখন ভালো কাজের নিয়ত করে তখনও সওয়াব হয়, খারাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকার নিয়ত করলেও সওয়াব হয়।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তায়ালা সৎকাজ ও পাপকাজের সীমা চিহ্নিত করে দিয়েছেন এবং সেগুলোর বৈশিষ্ট্য স্পষ্টভাবে বিবৃত করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি কোনো সৎকাজের সঙ্কল্প ব্যক্ত করেও তা সম্পাদন করতে পারেনি, আল্লাহ তার আমলনামায় একটি পূর্ণ নেকি লিপিবদ্ধ করার আদেশ দেন। আর সঙ্কল্প পোষণের পর যদি ওই কাজটি সম্পাদন করা হয়, তাহলে আল্লাহ তার আমলনামায় ১০টি নেকি থেকে শুরু করে ৭০০

এমনকি তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি নেকি লিপিবদ্ধ করে দেন। আর যদি সে কোনো পাপ কাজের ইচ্ছা পোষণ করে; কিন্তু তা সম্পাদন না করে, তবে আল্লাহ এর বিনিময়ে তার আমলনামায় একটি পূর্ণ নেকি লিপিবদ্ধ করেন। আর যদি ইচ্ছা পোষণের পর সেই খারাপ কাজটি

সে করেই ফেলে, তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার আমলনামায় শুধু একটি পাপই লিখে রাখেন।’ (বোখারি : ৬০১০)।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘যে সৎকাজ নিয়ে এসেছে, তার জন্য হবে তার ১০ গুণ। আর যে অসৎকাজ নিয়ে এসেছে, তাকে অনুরূপই প্রতিদান দেয়া হবে এবং তাদের জুলুম করা হবে না।’ (সূরা আনআম : ১৬০)।

আমরা ইতিমধ্যে দেখতে পেয়েছি আপনি খারাপ কাজে সংকল্প করার নিয়ত করে ফেলেছে। সম্পাদনার করার  পূর্বে ফিরে আসুন। তাহলে  আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিবেন।

আরো পড়ুনঃ পরনারীর সাথে সহবাস করার ক্ষতি

আরো শুনুনঃ নারী ও জিনা ব্যভিচারের শাস্তি (বাংলা ওয়াজ ২০১৭)

উত্তর দিয়েছেনঃ সৈয়দ রুবেল।  ( প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদকঃ আমার বাংলা পোস্ট.কম) 

এই প্রশ্নের উত্তর টি পড়ে আপনার কাছে ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুল করবেন না। 

The post প্রশ্নঃ পরনারীর সাথে সহবাস করার উপায় কি? appeared first on Amar Bangla Post.

মায়ানমার মানুষের লাশ নিয়ে যে নোংরামি করেছে তা ফেরাউন করেনি-তারিক মুনাওয়ার

$
0
0

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতন নিয়ে ফেসবুক লাইভে এসে কথা বললেন জনপ্রিয় বক্তা মাওলানা তারিক মুনাওয়ার। তিনি ফেসবুক লাইভ ভিডিওর শেষ পর্যায়ে বলেনঃ-

"আমি জানিনা আপনাদের বৌদ্ধ ধর্মের কোন জায়গাতে লেখা  আছে এরকম মানুষকে  কর্তন করার। এ নোংরা ব্যাপার। এবং আর্মির যে জেনারেল রোহিঙ্গার, বার্মার যে জেনারেল এই বেয়াদবি করেছে তাঁর বিরুদ্ধে সারা পৃথিবীর জনমত গঠন করার দরকার।
সারা পৃথিবীর জেনারেলদের তাকে ধিক্কার দেওয়ার দরকার, তাকে সুসাইড স্কোয়ার্ডে নিয়ে আসা দরকার, যে হেতু সে গণহত্যা চালিয়েছে। র‍্যামডাম মানুষকে হত্যা করেছে, মানুষের লাশ নিয়ে এভাবে নোংরামি করেছে, যেটা  ফেরাউন কোন দিন করে নাই। পৃথিবীর ইতিহাসে কেউ কোন দিন করে নাই। আল্লাহ ওদের সঠিক শাস্তি দান করুক।"

 

The post মায়ানমার মানুষের লাশ নিয়ে যে নোংরামি করেছে তা ফেরাউন করেনি-তারিক মুনাওয়ার appeared first on Amar Bangla Post.

কাজের মেয়েদের প্রতি এ কেমন নির্যাতন সৌদি পুরুষদের?

$
0
0

সৌদিতে কাজ করতে যাওয়া নারীরা পাশবিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

আগে নির্যাতনের খবর মাঝে-মধ্যে বের হলেও এখন এসব নির্যাতনের ভিডিও প্রকাশ পাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

সৌদিতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে যাওয়া নারীরা যে ভালো নেই, তারা  যে সেখানে দুর্বিসহ জীবন যাপন করে সেসব তথ্য এখন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে  সবার কাছে।
ইসলামের আবির্ভাব ও শেষ নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-মের জন্মভূমি সৌদি আরব হওয়ায় সৌদি আরব দেশের প্রতি মুসলিমদের সম্মানজনক দৃষ্টিভঙ্গি থাকে। দেশটি ইসলামিক আইন বাস্তবায়ন করা আছে। দেশটি ইসলামের পূণ্যভূমি ও ইসলামি রাষ্ট্র হওয়ায় সংসারে সচ্ছলতা আনতে এবং জীবনের নিরাপত্তা পাবে মনে করে গৃহকর্মী হিসেবে নারীরাও সৌদি আরবে  কাজ করতে যায়। কিন্তু তারা  গিয়ে দেখতে পায় বিপরীত চিত্র।
সৌদিয়ানদের এসব ঘৃণ্যকর্ম চরমভাবে ক্ষতি করছে ইসলামের। তাদের এসব ঘৃণ্য কর্মকান্ড ইসলামকে ঘৃণা করার সমর্থন যোগাচ্ছে। ইসলাম বিদ্বেষীরা এসব ঘটনার ভিডিওকে কাজে লাগাচ্ছে ইসলাকে ঘৃণা করার। তারা এসব সুযোগ হাত ছাড়া করতে চায় না।
যে দেশটি ইসলামের  ধারক-বাহক সেদেশের পুরুষেরা যদি তাঁর  বাসার গৃহকর্মীদের সাথে এমন নির্দয় আচরণ করে , তাহলে তাদের প্রতি কেনো মানুষের মনে ঘৃণা জন্মাবে না? এই ভিডিওটিই দেখুন, দুই-জন পুরুষ মিলে কিভাবে একটি অসহায় নারীকে নির্যাতন করছে। আবার ক্যামেরার পেছন থেকে তাদের নারীরাও মিট-মিটিয়ে হাসছে… এরকমটি  কি হওয়া উচিৎ? তাদের দেশে তো ইসলামের আইন প্রতিষ্ঠিত আছে, তাদের গৃহকর্মী যদি কোন অপরাধ করে থাকলে আদালতের মাধ্যমে অপরাধ প্রমাণিত হলে ইসলামের আইন আনুযায়ী শাস্তি হবে। তাদের বাসায় গৃহকর্মীকে কাজ দিয়েছে বলে কি তারা গৃহকর্মী নারীদের মারধর করারও অধিকার পেয়ে গেলো? আল্লাহ এসব অসহায় বোনদের হেফাজত করুক।

আরো একটি ভিডিও দেখুনঃ সৌদি আরবে এক নির্যাতিত নারীর কান্না ” কোন নারী যেন সৌদি না আসে”

আরো খবরঃ মাজারে চলে নারী ও নেশার রমরমা ব্যবসা

The post কাজের মেয়েদের প্রতি এ কেমন নির্যাতন সৌদি পুরুষদের? appeared first on Amar Bangla Post.

কিয়ামতের আগে কি ঘটবে ও বর্তমানে বাস্তবতা

$
0
0

কিয়ামত বা মহাপ্রলয় কোরআনের ভাষ্যমতে একদিন সংঘটিত হবে।

যা দুনিয়াকে ধ্বংস করে দিবে।

কিয়ামতের আগে কি কি ঘটনা ঘটবে তা আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলে গিয়েছেন।

নবীজির বলে দেওয়া ভবিষ্যৎ বাণী আজ অক্ষরে অক্ষরে মিলিয়ে যাচ্ছে। তাহলে কিয়ামত কি অতি সননিকটে?

নবীজির ভবিষ্যৎ বাণীর সাথে বর্তমানের বাস্তবতা ও ঘটনা মিলিয়ে নিয়ে বুঝে নিন কিয়ামত কতটা  নিকটবর্তী। 

The post কিয়ামতের আগে কি ঘটবে ও বর্তমানে বাস্তবতা appeared first on Amar Bangla Post.


একাধিক বিয়ের আবেদন, চার বোনের আত্মহত্যা ও প্রাসঙ্গিক কথা

$
0
0

বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে অথচ বিয়ে না হওয়ায় ‘আইবুড়ি’র অপমান সহ্য করতে হচ্ছিল প্রতিনিয়ত। এই অপমান সহ্য করতে না পেরে একসঙ্গে পাঁচ বোন আত্মহত্যা করতে নদীতে ঝাঁপ দেন। এর মধ্যে চারজনই মারা যান। সবচেয়ে ছোট বোনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এদের সবার বয়স যথাক্রমে ৪৫, ৪৩, ৩৮, ৩৫ ও ৩১ বছর। ঘটনাটি ঘটেছে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মাইলসি নামের এক শহরে। পাকিস্তানের দ্য নেশন এ খবর জানিয়েছে।

এক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বশির আহমেদ রাজপুত নামে এক গরিব বাবা যৌতুক জোগাড় করতে না পারায় পাঁচ মেয়ের বিয়ে দিতে পারেননি। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার তার সঙ্গে মেয়েদের কথা কাটাকাটি হয়। পরে পাঁচ মেয়ে একসঙ্গে খরস্রোতা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এদের মধ্যে মাত্র একজনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়। [অনলাইন ডেস্ক : ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৩]

ডিম থেকে বাচ্চারা যেমন খাদ্য বাসনা নিয়ে জন্মায় ঠিক ততটাই যেন মায়ের গর্ভ থেকে একজন নারীও মাতৃত্বের তৃষ্ণা নিয়ে জন্মায়। এ কারণে একজন নারীর সার্বক্ষণিক কল্পনা থাকে একটা সুন্দর ও পরিপাটি সংসার, মাতৃত্বের শ্বাশ্বত বাসনা। নারীরা সবচেয়ে বেশি আপ্লুত হয় মাতৃত্বকেন্দ্রিক এই ভাবনা নিয়ে, সবচেয়ে বেশি আহতও হয় ঠিক একই ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটায়। নারীজীবনের সবচেয়ে বড় হতাশা হচ্ছে মাতৃত্বের সুখ থেকে বঞ্চিত হওয়ার দুরূহ বোঝা। এই বোঝা যখন কোনো নারীকে ন্যুব্জ করে তখন তার স্বাভাবিক জ্ঞান লোপ পায় এবং জীবননাশী সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। সম্ভবত একারণেই পাকিস্তানের এই পাঁচবোন কঠিন এই পথে পা বাড়িয়েছেন। সত্যিকার অর্থে একসঙ্গে এই পাঁচবোনের আত্মহত্যার ঘটনা মানবসভ্যতার জন্য এক নিষ্ঠুর ইতিহাস বৈ কি?

একটা সমাজ কতটা সর্বগ্রাসী যৌতুক লোভী হলে একটা পরিবারের পাঁচ পাঁচটা মেয়ে সদস্যকে আইবুড়ির অপবাদ মাথায় এই মর্মান্তিক সিদ্ধান্ত নিতে হয় তা কল্পনা করা যায়? কল্পনাশক্তির স্বল্পতা কিংবা বিবেচনাবোধের ঘাটতির কারণে আমরা অনেক তিক্ত সত্যকে মেনে নিতে পারি না, হজম করতে পারি না আল্লাহর বিধানের যৌক্তিকতাকে। এক্ষেত্রে ইসলামের একাধিক বিয়ের ভাবনা ও বিধান যদি সমাজে সাধারণ চোখে দেখা হতো তবে কি রচিত হতো এমন মর্মান্তিক ইতিহাস। সমাজের হাজার প্রগতিবাদী নারীর মায়াকান্নার চেয়ে এই পাঁচবোনের জীবনকান্না কি ভারি নয়? নারী-আধিক্য ও নারী সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজে যারা একাধিক বিয়েকে সহজভাবে মেনে নিতে পারে না তারা কি পেরেছে এই পাঁচবোনের দুঃখ ঘোচাতে? চোখের পানিতে এরা যখন ওড়না ভিজিয়েছে তখন কি কোনো প্রগতিবাদীরা এদের দুঃখের সান্ত্বনা হয়েছে?

অতিশয় স্বল্পজ্ঞানের অধিকারী মানুষ কোন সাহসে ইসলামের বিধানের যৌক্তিকতা চ্যালেঞ্জ করে? যারা যৌক্তিকতা চ্যালেঞ্জ করে তারা পারে না কেন নারীর দুঃখ ঘোচাতে? ‘কি যাতনা বিষে বুঝিবে সে কী সে, কভু আশুবিষে দংশেনি যারে’ কবির কথাটা বুঝি পরীক্ষার নাম্বার সংগ্রহ আর শ্রবণমাধুর্যের জন্য লিখিত হয়েছে? নারীজন্মের এই বেদনা কেবল ভুক্তভোগী নারীরাই উপলব্ধি করতে পারে এবং বাস্তবে দেখা গেলও তাই। পড়ুন নিচের রিপোর্টটি :

সৌদি কলেজ ছাত্রীদের আহ্বান : ৪ স্ত্রী রাখুন : সৌদি মেয়েদের চিরকুমারী থাকার সমস্যা কমানোর লক্ষ্যে দেশটির দাহরান অঞ্চলের একদল কলেজ ছাত্রী একই সময়ে কয়েকজন স্ত্রী রাখতে পুরুষদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে টুইটারে প্রচার অভিযান শুরু করেছে।

এ আন্দোলনের অংশ হিসেবে চিরকুমারীত্ব রোধে প্রত্যেক পুরুষকে চার স্ত্রী রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। দেশটির দাহরান অঞ্চলের একদল কলেজ ছাত্রী টুইটার প্রচারণায় এ আহ্বান জানান। এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে এরই মধ্যে তারা টুইটাইরে প্রচার অভিযান জোরদার করেছেন।

তারা ইসলাম ধর্মের এ সংক্রান্ত বিধানের আলোকে এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে আর্থিক ও শারীরিক দিক থেকে সক্ষম পুরুষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো এ খবর জানিয়েছে।

গণমাধ্যম জানায়, সৌদি আরবে মেয়েদের চিরকুমারী থাকার সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। দেশটিতে এ ধরণের নারীর সংখ্যা ২০১২ সালেই ১০ লাখে উন্নীত হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে অনেকেই চিরকুমারীত্ব রোধে এ প্রচার অভিযানের প্রশংসা করলেও সৌদি আরবের বিবাহিত মহিলারা এর বিরোধিতা করেছেন।

অন্যদিকে সৌদি পুরুষরা বলছেন, তারা এক স্ত্রীকে রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করতে ভয় পাচ্ছেন। কারণ তাতে সংসারে অশান্তি দেখা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একজন সৌদি পুরুষ বলেছেন, কেউ যখন এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারবেন যে তিনি প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রী উভয়ের সঙ্গেই ন্যায়বিচারপূর্ণ আচরণ করতে পারবেন কেবল তখনই তিনি এ ধরনের বিয়ের কথা ভাবতে পারেন।

সামিয়া আল দানদাশি নামের এক সৌদি নারী এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, প্রত্যেক সৌদি পুরুষ যদি চারজন স্ত্রী রাখেন এবং তার প্রত্যেক স্ত্রী যদি গড়ে আটজন সন্তান জন্ম দেন তাহলে নারীদের চিরকুমারিত্ব সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি এ দেশটির জনসংখ্যাও বেড়ে যাবে।

প্রসঙ্গত অর্থনৈতিক সংকট ও বিয়ের জন্য পুরুষদের অপ্রয়োজনীয় বিপুল অর্থসম্পদ মহর ও স্ত্রীর জন্য শ্বশুরপক্ষকে যৌতুক হিসেবে দেওয়ার ব্যয়বহুল প্রথা সৌদি মেয়েদের অবিবাহিত থাকার সবচেয়ে দুটি বড় কারণ। দেশটির অর্থনীতি ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জরিপে দেখা গেছে, ২০১১ সালে সেখানে ৩০ বছর বয়সী অবিবাহিত নারীর সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ২৯ হাজার ৪১৮জন। [তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট ২৭ অক্টোবর ২০১৩ ইং ও ঢাকা রিপোর্ট টোয়েন্টিফোর]

পাঠক চিন্তা করুন, একটা দেশের লাখ লাখ বিবাহ উপযোগী নারী যদি কুমারী থেকে যায় তবে সেই দেশের নারীকুলের মর্যাদা থাকে কোথায়? মানুষ কি কাঠের পুতুল? নারী কি জৈবিকসত্তা নয়? বৈধ ও স্বাভাবিকপন্থায় তাদের জৈবিক চাহিদা নিবৃত করার অধিকার নেই? পুরুষ স্বল্পতার কারণে একটা দেশের লাখ লাখ নারী তার প্রকৃতিগত ও স্বভাবজাত অধিকার থেকে বঞ্ছিত থাকবে কেন? তাদেরকে বঞ্ছিত রাখার অধিকার কে কাকে দিয়েছে? শুধুই কি জৈবিক চাহিদা? সমাজ-সংসার, স্বামী-সন্তান ও স্বাভাবিক জীবনের অধিকার থেকেই কি তাদেরকে বঞ্চিত করা হচ্ছে না? শুধু অধিকার বঞ্চিতের কথা কেন বলি, এই কারণে কি পৃথিবী জুড়ে মানবিক ও চারিত্রিক অধপতনের ডঙ্কা বেজে উঠবে না?

সৌদি আরবে না হয় এখনো ইসলামী আইন কার্যকর থাকায় অনেক অপ্রীতিকর অবস্থা ও যিনা-ব্যভিচারের রাশ টেনে রাখা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু যেসব দেশে ইসলামী আইন চালু নেই সেসব দেশে এত সংখ্যক নারী যদি ‘আইবুড়ি’র অপবাদ নিয়ে বাঁচতে হয় তবে সেদেশে মানবিক বিপর্যয় নামা এবং যিনা-ব্যভিচারের দরজা খুলে যাওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। আজ আমরা বিশ্বের বিভিন্নপ্রান্তরে সেই ঘৃণ্য বাস্তবতাই পরতে পরতে প্রত্যক্ষ করে চলেছি। হাদীসের ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে দিন যত গড়াবে পৃথিবীতে পুরুষের সংখ্যার চেয়ে তুলনামূলক নারীর সংখ্যা অধিকহারে বৃদ্ধি পেতে থাকবে। পরিবর্তিত সেই বিশ্বে তখন নারীর অধিকার ও সম্মান রক্ষা হবে কীসে? সুতরাং নারীজীবনের এই শ্বাশ্বত অধিকার রক্ষার একমাত্র উপায় হচ্ছে একাধিক বিবাহ সম্পর্কিত ইসলামী মতাদর্শ।

একাধিক বিবাহ সম্পর্কে ইসলামের ভাবনা : একাধিক বিবাহের গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা, এসম্পর্কিত বিতর্ক, ঐতিহাসিক বাস্তবতা, বিশ্বের সকল ধর্মে একাধিক বিবাহের স্বীকৃতি ও প্রচলন, বৈজ্ঞানিক অপরিহার্যতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বহু আলোচনা, পর্যালোচনা হয়েছে এবং চূড়ান্তভাবে আল্লাহ তা‘আলার বিধান ও মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শই অকাট্যভাবে সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে। আমরা সে আলোচনায় যাব না। সংক্ষিপ্তভাবে শুধু সাহাবা, তাবেঈ ও বুজুর্গানে কেরাম এই বিষয়টি কীরূপ গুরুত্ব প্রদান করতেন তা তুলে ধরার প্রয়াস পাবো।

এ ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত একটা কথা না বললেই নয়, জগতের মানুষ বহুবৈচিত্রের অধিকারী। তাদের জীবনযাপন পদ্ধতিও ভিন্ন ভিন্ন। কোনো মানুষের জন্য সামান্য আহারই যথেষ্ট। কিন্তু অন্যজনের জন্য সামান্য আহারে বেঁচে থাকাই কষ্ট। এই বিষয়টি যেমন যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক সত্য, তেমনিভাবে মানুষের শারীরিক সক্ষমতার তারতম্য হওয়ার বিষয়টিও ততোধিক যৌক্তিক ও বিজ্ঞানসম্মত। তাহলে একজন মানুষ তার প্রয়োজনে অন্যের তুলনায় অধিক আহার গ্রহণ করলে নিন্দনীয় না হলে একই কারণে একাধিক বিবাহ করলে সে নিন্দনীয় হবে কেন? জীবন বাঁচানোর জন্য যদি বেশি খাবারের প্রয়োজন হয় তবে কোনো ব্যক্তির এক নারী যথেষ্ট না হলে এবং সে কারণে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার কারণে জাহান্নামে প্রবেশের কারণ হয়ে দাঁড়ালে সেক্ষেত্রে জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য একাধিক বিয়ে করতে পারবে না?

মনে রাখা উচিত, দুনিয়ার জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত, তাই এই সংক্ষিপ্ত জগতের জন্য যতটুকু করা চাই, আখেরাতের চিরকালীন যিন্দেগীর জন্য করা চাই তার চেয়ে কোটি গুণ বেশি। আর ইসলামের এই দর্শন সামনে রেখেই সাহাবা, তাবেঈ ও সম্মানিত পূর্বসুরীগণ একাধিক বিয়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।

সাঈদ ইবন যুবায়েরকে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি বিয়ে করেছো? তিনি বললেন, জী না। আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন,

«فَتَزَوَّجْ فَإِنَّ خَيْرَ هَذِهِ الأُمَّةِ أَكْثَرُهَا نِسَاءً»

‘তুমি বিয়ে করো, কেননা এ উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হচ্ছেন তিনি, যিনি অধিক নারীর স্বামী। [বুখারী : ৫০৬৯]

আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার ওফাতের পর মাত্র সাতদিনের মাথায় বিয়ে করেছিলেন। আর প্রিয়নবীর দৌহিত্রের ফযীলত, মর্যাদা এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামর নিকট তাঁদের আপন হওয়ার বিষয়টি কারো অজানা নয়। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,

لم يكن أحد أشبه برسول الله صلى الله عليه و سلم من الحسن

‘হাসান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর চেয়ে বেশি অন্য কেউ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাদৃশ্য ছিলেন না।’

মুহাদ্দিসগণ বলেন, সাদৃশ্যের একাধিক কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে, একাধিক বিয়ের সুন্নতী আমল। সাহাবায়ে কেরামের অধিকাংশই একাধিক বিয়ের অধিকারী ছিলেন। তাঁদের এক বিয়ের ঘটনা একেবারেই বিরল বললেও ভুল হবে না। সুফিয়ান ইবনে উয়ায়না রহিমাহুল্লাহ বলেন,

كثرة النساء ليست من الدنيا لأن عليا رضي الله عنه كان أزهد أصحاب رسول الله صلى الله عليه و سلم وكان له أربع نسوة وسبع عشرة سرية

‘অধিক স্ত্রী দুনিয়ার অংশ নয়। কেননা আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ছিলেন দুনিয়াবিমুখ সাহাবীগণের অন্যতম। অথচ তাঁর চার স্ত্রী এবং সতেরজন দাসী ছিলেন।’

وكان عمر رضي الله عنه يكثر النكاح ويقول ما أتزوج إلا لأجل الولد

‘আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু অধিকহারে বিয়ে করতেন এবং বলতেন, আমি একমাত্র সন্তান লাভের আশায় অধিক বিয়ে করি।’

অনেক সময় মধ্য বয়সে কিংবা পৌঢ় বয়সে কোনো কোনো পুরুষের স্ত্রী মারা যায়। এমন পরিস্থিতিতে অনেক ক্ষেত্রেই সক্ষমতা ও প্রয়োজনীয়তা থাকা সত্ত্বেও ছেলেমেয়েদের বাধা, পারিবারিক প্রতিবন্ধকতা, লোকলজ্জা ইত্যাদি কারণে সংশ্লিষ্ট পুরুষ বিবাহ করতে পারে না। এটা মারাত্মক একটা সামাজিক ব্যাধি। এক্ষেত্রে বিয়ের বিষয়টিকে স্বাভাবিক নজরে দেখলে অনেক সমস্যারই সমাধান হতো। বহু নারী মানবেতর জীবনযাপন থেকে রক্ষা পেত।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সবদেশের একটা বড় সমস্যা হচ্ছে বিধবা নারীদের মানবেতর জীবন। অসহায় এই নারীদের সমাজে মর্যাদার স্থান হওয়ার জন্য বিপত্নীক পুরুষদের বৈবাহিক বন্ধনের সূত্রে এগিয়ে আসার দ্বারা সমাজের এই বিরাট সমস্যাটা সহজেই দূর হতে পারত। আর এটা শুধু সামাজিক দায়বদ্ধতা ও মানবসেবার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; ইসলামেরও মহান বিধান। সাহাবায়ে কেরাম অবিবাহিত অবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার সঙ্গে সাক্ষাত হওয়াকে নিজেদের দীনদারী ও ধার্মিকতার ত্রুটি বলে মনে করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন-

لو لم يبق من عمري إلا عشرة أيام لأحببت أن أتزوج لكيلا ألقى الله عزبا

‘আমার যদি জীবনের মাত্র দশটি দিন অবশিষ্ট থাকে তখনও  আমি চাইব বিয়ে করতে। যাতে আল্লাহর সঙ্গে বিপত্নীক অবস্থায় আমাকে সাক্ষাৎ করতে না হয়।’

ومات امرأتان لمعاذ بن جبل رضي الله عنه في الطاعون وكان هو أيضا مطعونا فقال زوجوني فإني أكره أن ألقى الله عزبا

‘প্লেগ মহামারীতে মু‘আয ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর দুই স্ত্রী মারা যান। তিনি নিজেও মহামারীতে আক্রান্ত ছিলেন। সেই অবস্থায় তিনি বললেন, আমাকে বিয়ে করিয়ে দাও, আমাকে বিয়ে করিয়ে দাও। কেননা আমি আল্লাহ তা‘আলার সঙ্গে বিপত্নীক অবস্থায় সাক্ষাত করতে অপছন্দ করি।’

إن أحمد تزوج في اليوم الثاني لوفاة أم ولده عبد الله وقال أكره أن أبيت عزبا

‘বর্ণিত আছে, আহমাদ ইবনে হাম্বল রহিমাহুল্লাহর প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর দ্বিতীয় দিনে বিয়ে করেন এবং বলেন, আমি বিপত্নীক অবস্থায় রাতযাপন করা অপছন্দ করি।’

বস্তুত একজন নেককার স্ত্রী স্বামীকে দুনিয়া ও আখেরাতের কাজে নানাভাবে সহযোগিতা করে এবং এতে পুরুষের দুনিয়া ও আখেরাতের জীবন সহজ ও মধুময় হয়।

মোটকথা, একাধিক বিবাহের মধ্যে এমন কতক চিরন্তন সত্য উপকারিতা রয়েছে যা অস্বীকার করার জো নেই এবং এই আমল বাস্তবায়ন ছাড়া তা কখনই অনুধাবন করা সম্ভব নয়। সেই সঙ্গে এটাও বাস্তব যে, এই বিষয়টি বাঁকা চোখে দেখার কারণে সমাজে নানারকমের অশান্তি দেখা যায় এবং পাপের বহু রকম পথ খুলে যায়।

পাকিস্তানের চারবোনের একসঙ্গে আত্মহত্যা, পুরুষদের প্রতি সৌদি নারীদের চার বিয়ের আবেদন এবং কুরআন-হাদীসের আদেশ ও দিকনির্দেশনা জানার পরও কি কেউ একাধিক বিয়ের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করতে পারে? বস্তুত যারা একাধিক বিয়ের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করে তারা মূলত নারীর অধিকার রক্ষার জন্য করে না, পুরুষকে বহুগামী আর নারীকে বহুবিছানার সঙ্গী হওয়ার নিকৃষ্ট চারিত্রিক অধঃপতন দেখতে চায় বলেই এরূপ করে।

অবশ্য সৌদি নারীদের এই আবেদনের অপর দিকে ঐতিহ্যগত একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া আছে এবং অতি যৌক্তিকতার কারণেই সৌদি নারীগণ এধরনের বিবাহবন্ধনের বিষয়টি স্বীকৃত ও গ্রহণীয় বলে মেনে নিয়েছেন। কিছুদিন আগে ‘স্ত্রীর শেষ ইচ্ছায় এক সৌদির ৯০ বছরে বিয়ে’ শিরোনামে পত্রিকায় একটি খবর বের হলো। খবরে প্রকাশ :

ঘটনাটি ঘটেছে সৌদিতে। সৌদি নিবাসী ফাতিস আল থাকাফি’র (৯০) স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তার সন্তানেরা মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণ করার জন্য তার ওপর বিয়ের জন্যে চাপ সৃষ্টি করে। ফাতিসের প্রয়াত স্ত্রীর শেষ ইচ্ছা ছিল তিনি যেন পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

এরপর ৫ মেয়ের জোরাজুরিতে ৯০ বছর বয়সেই দ্বিতীয় বিয়েতে সম্মত হন বৃদ্ধ ফাতিস। তিন মাস খোঁজার পর বাবার জন্য পাত্রীর সন্ধান পান মেয়েরা। ৫৩ বছরের নিঃসন্তান এক বিধবাকে খুঁজে তারা দ্বিতীয় মা হিসেবে বেছে নেন। বিয়েতে ফাতিস তার নতুন স্ত্রীকে ২৫০০ সৌদি রিয়াল দেনমোহর প্রদান করেছেন। [তথ্যসূত্র: ঢাকা রিপোর্ট টোয়েন্টিফোর.কম/এম.]

নারীদের এমন উদারতা থাকাই কাম্য। অনেক মহিলা মৃত্যুর আগে স্বামীর কাছে ওয়াদা নেয় তার মৃত্যুর পর যেন স্বামী অন্য কোনো নারীকে বিয়ে না করে! কী ধরনের মানসিকতা এটা! ভালোবাসার নামে এ কোন দায়বদ্ধতা? তথাকথিত ভালোবাসার এসব দায়বদ্ধতা সৃষ্টি করছে হাজারও অপ্রীতিকর ঘটনা। এসব অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে স্বাভাবিক ও শরীয়তসিদ্ধ এই বিধানটা কি সহজভাবে মেনে নেওয়া যায় না? আলোচনা শেষ করব একটা হাদীস দিয়ে। যে কোনো মুমিনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন নবী-রাসূলগণের সঙ্গে জান্নাতে বসবাস। আর এই সুযোগ লাভের প্রধান উপায় তাঁদের সুন্নাতের অনুসরণ করা। নবী-রাসূলগণের সামগ্রিক ও সাবর্জনীন কিছু সুন্নাত রয়েছে। ইমাম সুয়ূতী রহিমাহুল্লাহ বর্ণনা করেন-

من سنن المرسلين  الحلم  والحياء  والحجامة ، والسواك ، والتعطر  وكثرة الأزواج

‘রাসূলগণের প্রধান সুন্নাতগুলো হচ্ছে, ধৈর্য-সহনশীলতা, লজ্জাশীলতা, শিঙ্গা লাগানো, মেসওয়াক করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা এবং একাধিক বিবাহ।’ [জামেউস সাগীর]

আমরা কি পারি না একাধিক বিবাহের বিষয়টি মনেপ্রাণে গ্রহণ করে নারীদের পুনর্বাসনের সঙ্গে সঙ্গে নবী-রাসূলগণের সঙ্গে বসবাস করার অধিকারী হতে?

The post একাধিক বিয়ের আবেদন, চার বোনের আত্মহত্যা ও প্রাসঙ্গিক কথা appeared first on Amar Bangla Post.

ফেসবুক : মৃত্যুদুয়ারে নতুন অতিথি!

$
0
0

মানুষের মৃত্যু দূতের আগমন সুনিশ্চিত হলেও আগমনের পথ ও অলিগলি অনেক। দিনদিন বাড়ছে মৃত্যুদূতের আগমন গলির সংখ্যা। নিত্যনতুন অবয়বে মানুষের হায়াত-দরজায় হানা দিচ্ছে জান ছিনতাইতারী এই অতিথি। কখনও আসছে জানা ও পরিচিত বেশে, কখনও বা একেবারেই নতুন ও অপরিচিত বেশে। চিন্তা করা যায়, যে নারীকে মানুষ পরম মমতা দিয়ে, জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত অন্তরঙ্গতার বেশে কাটানোর মহৎ উদ্দেশ্যে মমতা-নীড়ে নিয়ে আসে, সেই নারীই কিনা স্বামীর মৃত্যু ও যমদূতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়! হ্যাঁ, বিশ্বাসের সব আঙিনা ছাড়িয়ে বাস্তবতার আঙিনায় এই সত্যই আছড়ে পড়ছে যে, স্ত্রী কেবল প্রাণসঙ্গীই নয়; কখনও কখনও স্বামীর যমদূত ও মৃত্যুদুয়ারের নতুন অতিথিও বটে।

আমাদের এই ভাষ্য বরাবরের মতোই চিরন্তন সত্য হয়ে ধরা পড়ল টঙ্গীর একটি ঘটনায়। ২০১৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রাতে টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় সংঘটিত হয় সেই ভয়াবহ ঘটনাটি। টঙ্গী রেলস্টেশনে অবস্থিত তৃপ্তি হোটেলের মালিক ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামকে স্ত্রী টুম্পা ও তার প্রেমিক রকি ভাড়া করা সন্ত্রাসীদের দিয়ে হত্যার পর লাশ লাগেজে ভরে রাস্তার পাশে ফেলে যায়।

সাইফুল হত্যা মামলায় নিহত সাইফুলের স্ত্রী নূরজাহান আক্তার টুম্পা ও তার প্রেমিক রকিকে জিজ্ঞাসাবাদের পর হত্যাকান্ডের মূল রহস্য বেরিয়ে আসে। ফেসবুকে রকির সঙ্গে সাইফুলের স্ত্রী টুম্পার পরিচয় ও পরকিয়া প্রেমের জের ধরেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে টুম্পা ও তার প্রেমিক রকি স্বীকার করে। পুলিশ সুপার আব্দুল বাতেন বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে অনৈতিক সম্পর্কের কারণেই সাইফুলকে স্ত্রী টুম্পা ও কথিত প্রেমিক রকিসহ (২২) তার সহযোগীদের নিয়ে নিজ বাসায় হত্যা করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার লিখিত বক্তব্যে আরো জানান, হত্যার দুই মাস পূর্বে হোটেল ব্যবসায়ী সাইফুল ৫দিনের জন্য গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী গেলে ওই দিন রাত ১১ টার সময় টুম্পা রকিকে ফোনে তার বাসায় আসতে বলে। পরে রকি সারা রাত বাসায় থেকে সকাল ৭টায় বের হয়ে যায়। ওই রাতেই সাইফুলকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। সে অনুযায়ী গত ৩ সেপ্টম্বর সন্ধায় তার নিজ ফ্ল্যাটের শয়নকক্ষে ঘুমন্ত অবস্থায় স্ত্রী টুম্পা ও কথিত প্রেমিক রকির ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে হত্যা করে সাইফুলকে।

এভাবেই আমরা বরণ করে নিয়েছি বিজ্ঞানের আবিষ্কার ও আধুনিকতার সাজসরঞ্জাম। প্রেমের সম্পর্ক এখন গড়ে উঠছে অনলাইনে, ফেসবুকে। কিছুদিন আগেও প্রেমের প্রথম ধাপ মানেই ছিল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে, চত্বরে, আড্ডার ফাঁকে কিংবা নির্জন কোনো এক পরিসরে দুরু দুরু বুকে পছন্দের প্রিয় মানুষটিকে জানিয়ে দেওয়া মনের কথাটি৷ কখনো লজ্জায় মুখোমুখি আবার কখনো বা ছোট্ট চিরকুট। তারপর হয়তো ক্যাম্পাস ছেড়ে পার্ক বা কফি শপ। প্রেম বলতে তখন ছিল ঈদ এলে প্রিয় মেয়েটির বাড়ির সামনে গিয়ে অকারণ হাঁটাহাঁটি বা বারান্দায় তাকে দেখে আড়চোখে তাকানো। তারপর অভিভাবকদের চোখ এড়িয়ে মন দেওয়া-নেওয়ার পালা। কিন্তু সময় বদলেছে। এখনকার প্রজন্ম প্রেম করছে ফেসবুকে।

এখন সম্পর্ক ভাঙা-গড়া সবই নির্ভর করছে একটি মাউসের ক্লিকের ওপরে। নিমেষে বদলে যাচ্ছে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস। কখনো সিঙ্গেল থেকে ইন অ্যা রিলেশনশিপ আবার কখনো এনগেইজড থেকে সিঙ্গেল। মার্কিন মনোবিদেরা সম্প্রতি জানিয়েছেন, রোমান্সের দুনিয়ায় এখন ফেসবুক প্রেম বাড়ছে আর বাড়ছে অনলাইন ডেটিং৷ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স। ডেক্সটপ, ল্যাপটপ পেরিয়ে মুঠোফোনের অ্যাপ্লিকেশনের সুযোগ অনলাইন সাইটগুলোতে সক্রিয় রাখছে নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের। কখনও কখনও বিবাহিতরাও জড়িয়ে পড়ছে কম্পিউটার-ল্যাপটপ আশ্রিত ডিজিটাল প্রেমে। ব্যস্ত সময়ের চাপ কাটিয়ে পরস্পরের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগের সময়-সুযোগ কমে গেছে বলেও হয়তো ফেসবুক প্রেমে জড়িয়ে পড়ছে অনেকেই। লাখ লাখ প্রোফাইল থেকে খোঁজ চলছে একটা সুন্দর মুখের।

অনেকে আবার প্রতারণা বা নিছক মজার উদ্দেশ্যেও খুলছেন ভুয়া ফেসবুক প্রোফাইল। অনেকেই আবার সম্পর্কের টানাপোড়েন থেকে বাঁচতে বন্ধুত্বের উষ্ণতা খুঁজছেন ফেসবুকে। এভাবেই অসত্য লুকোচুরির আশ্রয়ে ফেসবুকের পাতায় ঢুকে পড়ে প্রেম ভাইরাস। যার বিকল্প শক্তিশালী এন্টিভাইরাস না থাকায় মৃত্যুর কোলে আশ্রয় নিতে হয় স্বামী সাইফুলকে। যোগাযোগের মাধ্যম যতই অবারিত হয়েছে মৃত্যুফাঁদ ততই গভীর ও প্রাণঘাতী হয়েছে। এক্ষেত্রে ফেসবুকের ভূমিকা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক।

ফেসবুককে কেন্দ্র করে কল্পনার পেলব পাখায় যোগ হয়েছে একেকটি পালক আর তাতে বেড়েছে স্বপ্নের ফানুস। হৃদয়াকাশে জমেছে বাহারি রংধনু তাই মানুষ ওড়ে দিবাস্বপ্নের ডানা মেলে। চিন্তা করেনি গন্তব্যে ফেরার, তাই আছড়ে পড়েছে বাস্তবতার রুক্ষ্মভূমিতে। কম্পিউটার মানুষের মনে আধুনিকতার রংধনু ছড়িয়ে দিয়েছে। এই রংধনুর মায়াবী রং তাদেরকে উদার আহ্বান জানায় হৃদয়ে কল্পনার রং আঁকতে। সেই কল্পিত রঙের ওপর তাই তারা আঁকে স্বপ্ন ও জীবন বাঁধার নতুন নতুন ঘর। সেই ঘরের স্থায়ীত্ব, দৃঢ়তার কথা কল্পনাও করে না কখনও। তাই ফলাফলশূন্য। কখনও বা অপ্রত্যাশিত। বিষণ্ন আর হতাশার মধ্যে ফেসবুক যেন আরও বেশি করে কাছে টানে অনেককেই। আজকের এই অতিব্যস্ত জীবনে অনেকেই ফেসবুকে খোঁজেন দম ফেলার ঠাঁই। অনেকে আবেগে বসিয়ে দেন তাদের স্ট্যাটাস, ব্যক্তিগত ছবি; আবার অনেকেই খুঁজে ফেরেন প্রিয় কোনো মুখ। সামনাসামনি যে কথা বলে উঠতে পারা যায় না, চ্যাটে সেই কথাগুলো কত সহজে বলে ফেলা যায়৷ কারও সঙ্গে সম্পর্ক না রাখতে চাইলে, তাকে বন্ধু তালিকার বাইরে পাঠিয়ে  বা ব্লক করে সম্পর্কে অনাগ্রহের কথাও জানানো সহজ। এখন যেন ফেসবুক হয়ে উঠেছে পরিচিত আর অপরিচিত ১০০ কোটি মানুষের মিলনস্থল।

বন্ধুত্বের বিশালতা, সম্পর্কের উন্মুক্ততায় অনেকেই অভিভূত হয়। ফেসবুক পাতার হাজারও সুন্দর রমণীতে পুরুষ কিংবা সুন্দর সুপুরুষে বিমোহিত হয় নারী। কিন্তু তারা খবর রাখে না যে, এ বিশাল জনসংখ্যার নেটওয়ার্কে সবগুলো প্রোফাইল আসল নয়। অনেকেই ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করে পেতে রেখেছে প্রতারণার ফাঁস। গলায় ঝুলে পড়লেই বিপদ। সাইফুল হত্যাকাণ্ড ছাড়াও ফেসবুকে প্রতারণার খবর আমরা এখন হরহামেশাই শুনতে পাই। তাই সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে অনলাইন যোগাযোগে সব সময়ই ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, ইন্টারনেটে জীবনসঙ্গী খুঁজে দেয়ার সাইটগুলোতে ৮০ শতাংশ মানুষই তথ্য দেয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও বাড়িয়ে বলছে অথবা সত্য গোপন করছে।

তাই অনলাইনের অচেনা লোকের সঙ্গে বন্ধুত্ব জমানোর ব্যাপারে সাবধান হোন৷ অসাবধনতা ও অসচেতনতার কারণে ফেসবুকে প্রেমে পড়ে প্রতারণার পাতা ফাঁদে পা দিয়ে অনেকেই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।

বহুজাতিক মার্কেটিং প্রতিষ্ঠান ইউরো আরএসসিজির সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী ফেসবুক ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠছে। জরিপকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নর্ম ইউস্তিন বলেন, ‘আমাদের বাস্তবজীবন এবং অনলাইন জীবন পরস্পর মিলেমিশে একাকার হয়ে  যাচ্ছে। অনলাইনে যে লোকজনের সঙ্গে আমরা মিশি আর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে (ফেসবুক-টুইটার) আমরা যে আচরণ করি, তা বাস্তবে আমাদের আচরণকেও প্রভাবিত করছে। তা ভালো-মন্দ যা-ই হোক না কেন।’

মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন, আমাদের সামাজিক প্রবাহে ভূমিকা রাখছে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলো, কিন্তু নারী-পুরুষের একান্ত সম্পর্কে অবিশ্বাস, ঈর্ষা আর সন্দেহের গভীর ফাটলও ধরাচ্ছে। ধ্বংস করছে সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন। ভাঙছে বিয়ে এবং কখনও কখনও এই সূত্রে খুন হচ্ছে স্বামী কিংবা স্ত্রী।

শারীরিক ও মানসিক প্রতারণা থেকে শুরু করে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া, সংসার ভেঙে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটার পেছনে ফেসবুকের মারাত্মক ভূমিকা আমরা নিয়মিতই প্রত্যক্ষ করছি। ফেসবুক থেকে সৃষ্টি হচ্ছে ঈর্ষা আর এ ঈর্ষা থেকে জীবনসঙ্গীর সঙ্গে ঘটছে সম্পর্কচ্ছেদ থেকে শুরু করে খুন-খারাবীর ঘটনা। অপরিণত সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরামর্শ হিসেবে গবেষক ক্লেটন জানিয়েছেন, অতিরিক্ত সময় ধরে ফেসবুক নয়। এভাবেই সামাজিক অন্তর্জালের মায়াজালে আটকে প্রতারণার শিকার হওয়ার প্রতিষেধক হিসেবে সচেতনতার পরামর্শ দিচ্ছেন মনোবিদ ও গবেষকেরা।

ফেসবুকে প্রেম? সেতো ফ্লোরিডা শহরের মতো খুবই সুন্দর কিন্তু যখন আগুন লাগে নিমিষেই পুড়ে যায় সব কিছু। আগুন তো পোড়ায় ঘরবাড়ি কিংবা দাবানলে পোড়ে বনজঙ্গল, গাছপালা। কিন্তু ফেসবুক হচ্ছে সংসার ভাঙার কুহক। দ্য সানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ফেসবুকের জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। যোগাযোগ, সঙ্গ কিংবা সঙ্গীর সন্ধানও মিলছে ফেসবুকে। কারও কারও কাছে ফেসবুক তাদের দ্বিতীয় জীবনও বটে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই ফেসবুকই হয়ে  উঠেছে বেদনার কারণ। ভারতের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের হার তুলনামূলকভাবে বেড়ে গেছে। আর এ জন্য সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ফেসবুককেই দায়ী করা হচ্ছে।

বিচ্ছেদ-প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যুক্তরাজ্যের আইনজীবীরা বলছেন, ইদানীং ফেসবুকের কারণেই সে দেশে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা বেড়ে  চলছে। বিবাহিতরা অনলাইনে নতুন কারও সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ছেন কিংবা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। এ ছাড়া সন্দেহপ্রবণ দম্পতিরা তাদের সঙ্গীকে পরীক্ষা করার জন্যও ফেসবুক ব্যবহার করছেন। ব্রিটেনের একজন আইনজীবী বলেছেন, নয় মাসে তিনি যতগুলো বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটিয়েছেন, তার সবগুলোই ফেসবুকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এ কারণে দেশটির আইনজীবীরা বিবাহিত দম্পতিদের ফেসবুক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করছেন।

আধুনিক সভ্যতার এ যুগে আমাদের সামাজিক প্রবাহে ভূমিকা রাখছে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগের ওয়েব সাইটগুলো, কিন্তু নারী-পুরুষের একান্ত সম্পর্কে অবিশ্বাস, ঈর্ষা আর সন্দেহের গভীর ফাটলও ধরাচ্ছে তীব্রবেগে। যা বিশ্বের সব বিবেকবান মানুষকে বিচলিত করছে। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরাও এক গবেষণাতে ফেসবুক-টুইটারকে সংসার ভাঙার কুহক আর ডাহুক বলেই তথ্য পেয়েছেন।

মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা জানিয়েছেন, শারীরিক ও মানসিক প্রতারণা থেকে শুরু করে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া, সংসার ভেঙে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটার পেছনে ফেসবুকের বড় ভূমিকা খুবই মারাত্মক। সব বয়সের বিবাহিত দম্পতির ক্ষেত্রে ‘ফেসবুক সৃষ্ট ঈর্ষা’ বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ খুঁজে পেয়েছেন গবেষকেরা। গবেষকেরা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত সময় ধরে ফেসবুক ব্যবহারে ‘ফেসবুক-সৃষ্ট ঈর্ষা’ তৈরি হতে পারে। সঙ্গীর কার্যক্রম নজরদারি করতে চাওয়া থেকে অতিরিক্ত সময় ফেসবুক ব্যবহার এ ঈর্ষার কারণ হয়ে ওঠে।

সাইবার সাইকোলজি, বিহেভিয়ার অ্যান্ড সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাময়িকীতে প্রকাশিত নিবন্ধে প্রধান গবেষক রাসেল ক্লেটন জানিয়েছেন, রোমান্টিক সম্পর্কের মধ্যে থেকে কোনো ব্যক্তি যখন অতিরিক্ত ফেসবুক ব্যবহার করেন তখন জীবনসঙ্গীর কঠোর নজরদারির মধ্যে পড়েন তিনি। এর ফলে জন্ম নেয় ঈর্ষা। এ ঈর্ষা থেকে সঙ্গীর অতীতের বিভিন্ন কথা তুলে শুরু হয়  বাক-বিতণ্ডা।

একারণে গবেষকরা নতুন দম্পতি ও নতুন সম্পর্কে বাঁধা পড়া সঙ্গীদের ফেসবুক ও টুইটার থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। অপরিণত সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ পরামর্শ মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে গবেষক ক্লেটন জানান, অতিরিক্ত সময় ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটের ব্যবহার সম্পর্ক ভাঙার ফাঁদ হতে পারে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় ফেসবুক ব্যবহার না করলে নতুন দম্পতিদের মধ্যে যেমন মনোমালিন্য কমতে পারে তেমনি পরস্পরকে বাড়তি সময় দেয়াও সম্ভব হয়। যারা পরস্পরকে নতুন করে জানছেন, তারা যেন সামাজিক যোগাযোগের ফাঁদে পড়ে সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি না করেন সে বিষয়ে খেয়াল রাখতেই গবেষকেরা নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। কেবল সাইফুল নন, বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ নারী পুরুষ হচ্ছেন ফেসবুকের এই পাতানো সম্পর্কের বলি। কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে…

এক. ভারতের আনু শর্মাকে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করে আসছিলেন তার স্বামী। একদিন আনু তার স্বামীর কিছু টুইট ঘেঁটে প্রতারণার এ বিষয়টি টের পেলেন। ঘটনা গড়িয়েছে বিবাহ বিচ্ছেদ পর্যন্ত। এক্ষেত্রে আনু শর্মার স্বামী বিষয়টি অস্বীকার করেছিলেন, তবে আনু শর্মার কাছে তথ্যপ্রমাণ হিসেবে ছিল তার স্বামীর করা ‘টুইট’, যা তিনি সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন।

দুই. কোনো এক ঈদের দিন ফেসবুক ঘাঁটাঘাঁটির সময় ‘প্রিয়া’ নামের একটি সুন্দর মেয়ের প্রোফাইল চোখে পড়েছিল বেসরকারি অফিসের তরুণ কর্মকর্তা রাজীবের। চোখের দেখা থেকে ভালো লাগা। তারপর ‘প্রিয়া’ নামের অচেনা সেই ফেসবুকে প্রোফাইলে তিনি পাঠিয়েছিলেন বন্ধুত্বের অনুরোধ। প্রিয়ার প্রোফাইলে দেওয়া তথ্যে কোনো গড়বড় পাননি রাজীব। সেদিনই ফেসবুকে বন্ধুত্বের আহ্বানে সাড়া আসে প্রিয়ার কাছ থেকে। এরপর থেকে সময় পেলেই দুজন চ্যাটিং আর নানা আলোচনা। একসময় প্রেমের নানা কথাও আলোচনা করেন তারা। এক মাসের মধ্যেই যেন দুজনের মধ্যে দানা বাঁধে গাঢ় প্রেম। এরপর আসে সামনা-সামনি দেখা করার অনুরোধ। কিন্তু সেই দেখা আর হয়নি। তিন মাস পর একদিন রাজীব জানতে পারেন, তার খুব কাছের এক ছেলে বন্ধু ‘প্রিয়া’ নাম দিয়ে ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করে তার সঙ্গে প্রেমের এ অভিনয় করেছে। খুব বিষণ্ন হয়ে মুষড়ে পড়েন রাজীব।

তিন. এদিকে প্রায় একই সময় ফেসবুকে তার এক ছেলেবন্ধুর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন তিথি নামের এক তরুণী। সম্পর্কের একপর্যায়ে তিথি যখন জানতে পারলেন, তার ছেলেবন্ধু শুধু তার সঙ্গেই নয়, পরিচিত অনেক মেয়ের সঙ্গেই ফেসবুকে প্রেমের সম্পর্কের পর্যায়ে রয়েছে, তখন তাদের সম্পর্ক আর বেশি দূর গড়ায়নি।

চার. ফেসবুক প্রেমের সম্ভবত সবচেয়ে ভয়ানক উদাহরণ চীনের একটা ঘটনা। সংসারে তিনজন মাত্র সদস্য। ছেলে চাকরিরত। বেশিরভাগ সময়ই বাইরে থাকতে হয় তাকে। স্ত্রী ছোট সংসারের কাজকর্ম একাই সারেন। শ্বশুর বিপত্নীক। কর্মহীন এই পৌঢ় লোকটির বেশির ভাগ সময় কাটে ঘরে, শুয়ে বসে। ছোট সংসার হওয়ায় ঘরের প্রয়োজনীয় কাজ সেরে একেবারেই অবসর হয়ে যান স্ত্রী। অবসর সময় কাটান কম্পিউটার আর ল্যাপটপের বাটন টিপে। এদিকে শ্বশুরেরও সময় কাটানোর একমাত্র অবলম্বন ওই কম্পিউটার এবং যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক। অবসর আর নিঃসঙ্গতা কাটাতে দুইজনই বেছে নেন একজন করে ফেসবুক সঙ্গী। অদৃশ্য সঙ্গীর রসালাপে ভালোই কাটে অর্ধবৃদ্ধ আর অর্ধ-অবসর গৃহিণীর অবশিষ্ট সময়। রসালাপ ও উত্তেজক বচন-বাচনে কেটে যায় বেশ কিছুদিন। বন্ধুত্ব গভীর হলে সৃষ্টি হয় পরস্পরে দেখা-সাক্ষাতের তৃষ্ণা। উভয়ের মধ্যেই এই তৃষ্ণা প্রবল হতে থাকে। অবশেষ দুইজনেই সময় করে বের হন নিজ নিজ বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার জন্য। প্রথমে পুত্রবধূ শ্বশুরের কাছে এসে জানান, তার এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন তিনি। ফিরতে হয়ত দেরিও হতে পারে।

শ্বশুর বুঝতে পারেন, এটা তার কাছ থেকে পুত্রবধূর অনুমতি গ্রহণ নয়; তার অনুপস্থিতিতে ঘর পাহারা দেয়ার বিনয়ী ও কৌশলী আদেশ। তাই তিনি বলেন, বউ মা! ঘরের চাবিটা সঙ্গে করে নিয়ে যাও। আমাকেও একটু বাইরে যেতে হবে। অনেকদিনের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু আসছে আমার সঙ্গে দেখা করতে। তার সঙ্গে সাক্ষাতে যেতে হবে যে!

এভাবে দুইজন দুইজনের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে বের হন নিজ নিজ বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাত করতে। ফেসবুকে পাঠানো ঠিকানা অনুযায়ী যার যার বন্ধুর কাছে হাজির হন তারা। নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে বিস্ময়, লজ্জায়, অপমানে মাথা নুয়ে আসে শ্বশুর-পুত্রবধূর। তাদের পরস্পরের বন্ধু যে আর কেউ নন, নিজেরা নিজেরাই! একই ঘরে বসে তারা দীর্ঘদিন যাবত দূরের, অদৃশ্য বন্ধুর হাতছানির খেলা করেছেন! ফেসবুকের গেরিলা প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছেন একই ছাদের বাসিন্দা শ্বশুর-পুত্রবধূ!

এভাবে অবাঞ্ছিত পন্থায়, দৃষ্টিকটু পঙ্কিলতায় চলছে ফেসবুকের সূত্রে প্রেম প্রেম খেলা। দেখা গেছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফেসবুকের এই প্রেম শেষ পরিণতি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। ফেসবুকে সম্পর্ক যেমন ঝড়ের গতিতে তৈরি হয় তেমনি ঝড়ের গতিতেই ভেঙে যায়। এ ধরনের গেরিলা সম্পর্ক মানুষের জীবনে সুখ ও অনাবিল আনন্দ আনে না, বরং বয়ে আনে লাঞ্ছনা, চরম বিব্রত ও লজ্জাজনক অপূর্ণ পরিণতি। বিজ্ঞানীয় উপহার প্রতিনিয়ত বিব্রতবোধেই যাপিত করতে বাধ্য করছে আমাদের যাপিত জীবন। বিজ্ঞান! আজ তোমাকে হ্যাঁ বা না কোনোটাই বলার ভাষা আমার নেই। তবে ভালো থেকো…

আপনি পড়ছেনঃ ফেরারী নারী বই থেকে। 

The post ফেসবুক : মৃত্যুদুয়ারে নতুন অতিথি! appeared first on Amar Bangla Post.

ব্যবসার নতুন পণ্য ও সুন্দরী প্রতিযোগিতার সাতকাহন

$
0
0

সৌন্দর্য এবং সুন্দর একটি স্পর্শকাতর বিষয়। মানুষ সুন্দরের পূজারী। খুব কম লোকই পাওয়া যাবে, যিনি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন যে, সৌন্দর্য ও সুন্দর তাকে আকৃষ্ট করে না। আর সৌন্দর্য যদি হয় নারী বিষয়ের তবে অবশ্যই সেটি আরও কাঙ্ক্ষিত বস্তু হয়ে দাঁড়ায়। মহান আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীর সকল মানুষকে সমান বা সবাইকে একই সুন্দর অবয়বে সৃষ্টি করেন নি। সাদা-কালো, লম্বা-বেঁটে নানান ধরনের মানুষের সমারোহে মুখরিত আমাদের এই পৃথবী।

পুরুষ কি মহিলা সকল মানুষই বিভিন্ন অবয়বে সৃষ্ট। মানুষের চেহারা বা আকৃতি তার নিজের তৈরি করা নয় বরং এটি সৃষ্টিকর্তা প্রেরিত নির্দিষ্ট একটি বিষয়। সেজন্য কাউকে খারাপ চেহারার বলে ভর্ৎসনা করা, হিংসা করা বা গালি দেওয়া মস্ত বড় অন্যায়। তেমনিভাবে আরও বড় অন্যায় মানুষের মাঝে সুন্দরকে খুঁজে বের করা এবং তাদের নির্দিষ্ট করে পুরস্কৃত করা, কারণ এতে অসুন্দর মানুষেরা মনে গভীর কষ্ট পেতে পারে। সেই সঙ্গে এটি মানবতার চরম লঙ্ঘনও বটে। কারণ, মানবতার দায়িত্ব ও কর্তব্যের একটা নির্দিষ্ট সীমারেখা আছে। সৌন্দর্য খোঁজা, সৌন্দর্যের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়া মানবতার কোনো মাপকাঠিতেই পড়ে না। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, মানবতার চরম লঙ্ঘন হওয়া সত্ত্বেও সুন্দরের পূজা থেমে নেই। তাইতো বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রচলন পেয়েছে সুন্দরী প্রতিযোগিতা। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নামে সুন্দরী প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। সুন্দরী প্রতিযোগিতা যে হঠাৎ-ই শুরু হয়েছে তা কিন্তু নয়, বরং এরও রয়েছে একটি সুদীর্ঘ ও কলঙ্কজনক দীর্ঘ ইতিহাস ও আখ্যান।

সেই সুপ্রাচীনকাল থেকেই ব্যক্তিগত ও রাজপরিবারের প্রয়োজনে সুন্দরী প্রতিযোগিতার কাজটি চলে আসছে। মে’ ডে এর রাজা রাণী বাছাইয়ের বহু আগে থেকেই ইউরোপে সুন্দরী প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। এই প্রতিযোগিতায় একজন নারী নির্বাচন করা হতো, যে মূলত তার দেশের প্রতিনিধিত্ব করত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুন্দরী প্রতিযোগিতা শুরু হয় ১৮৫৪ সালে। কিন্তু তখনকার রক্ষণশীল সমাজ ও সভ্য নেতৃবর্গের কারণে একসময় তা বন্ধ হয় যায়। পরবর্তী সময়ে আবার সুন্দরী প্রতিযোগিতা শুরু হয় তবে সেটি শুরু হয়েছিল ‘ফটো সুন্দরী প্রতিযোগিতা’ নামে। আর আধুনিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার সূচনা হয় ১৯২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। প্রথমে এটি মানুষের মাঝে সাড়া জাগাতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয় সেনাবাহিনীতে সুন্দরী নারীর প্রতিযোগিতা। তারপর এটি থেকেই শুরু হয় ‘মিস ইউনিভার্স’ প্রতিযোগিতার ছোট্ট একটি রূপ। ১৯৫১ সালে অনুষ্ঠিত সুন্দরী প্রতিযোগিতায় যিনি ‘মিস আমেরিকা’ খেতাব জয় করেছিলেন তিনি রক্ষণশীলদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হন। এরপর আয়োজন করা হয়  ‘মিস ইউএসএ’ এবং ‘মিস ইউনিভার্স’ প্রতিযোগিতা। ১৯৫২ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রথম এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়। প্রথম ‘মিস ইউনিভার্স’ নির্বাচিত হন ফিনল্যান্ডের আরসি কুন্সিলা।

প্রথম দিকে সুন্দরী প্রতিযোগিতা টিভিতে প্রচার করা হতো না। টেলিভিশনে মিস ইউনিভার্স অনুষ্ঠানটির প্রথম প্রচার শুরু করা হয় ১৯৫৫ সালে। প্রথমে ‘মিস ইউনিভার্স’ এবং ‘মিস ইউএসএ’ অনুষ্ঠান দুটি টিভিতে যৌথভাবে প্রচার করা হতো। পরবর্তীতে ১৯৬৫ সাল থেকে আলাদাভাবে অনুষ্ঠান দুটির প্রচার শুরু হয়। এভাবেই এক সময় সুন্দরী বাছাইয়ের ব্যাপারটি বিশ্বজুড়ে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। সৌন্দর্যের যোগ্য মূল্যায়ন ও তাদের সম্মান দেওয়ার জন্য প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে বেশ কয়েকটি সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। সুন্দরী প্রতিযোগিতার বিষয়টি প্রবল বিতর্কিত ও ঘৃণিত আচার বলে নিন্দিত হলেও গোটা বিশ্বজুড়ে বর্তমানে এটি আগ্রহ এবং উন্মাদনার প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর শুধু নারীদের নিয়ে সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় তা কিন্তু নয়। প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যুবকদেরও অংশগ্রহণে সুন্দর প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

সুন্দরী বাছাইয়ের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতার নাম ‘মিস ইউনিভার্স’। এটি একটি বার্ষিক সুন্দরী নির্বাচন প্রতিযোগিতা। শুরুর দিকে ১৯৫২ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার ক্লথিং কোম্পানি ‘প্যাসিফিক মিলস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই প্রতিযোগিতা পরিচালনা করত। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তাদের নিয়ন্ত্রণেই ছিল প্রতিযোগিতাটি। এরপর ১৯৯৬ সালে ‘ডোনাল্ড ট্র্যাম্প’ এই প্রতিযোগিতা আয়োজনের দায়িত্ব গ্রহণ করে। বর্তমানে ‘মিস ইউনিভার্স অর্গানাইজেশন’ নামের একটি সংগঠন প্রতিযোগিতাটি পরিচালনা করে থাকে। বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত সংগঠন ‘মিস ইউনিভার্স অর্গানাইজেশন’ ২০০২ সালের ২০ জুন তারিখ থেকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

১৯৭১ সাল পর্যন্ত প্রতিযোগিতাটির আয়োজন কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে ধীরে ধীরে এর ব্যাপকতা বাড়তে থাকলে প্রতিযোগিতাটির ব্যপ্তিও বৃদ্ধি পায়। সুন্দরী প্রতিযোগিতার মধ্যে মিস ইউনিভার্স সবার থেকে আলাদা। কারণ এই প্রতিযোগিতায় শুধুমাত্র নারীর সৌন্দর্যকে বিচার করা হয় না। সেজন্য মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় নারীদের গায়ের রং কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। এখানে শারীরিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি নারীর ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিমত্তা, সাহস, চতুরতা, মানসিকতা, সাধারণ জ্ঞান ইত্যাদি মূল্যায়ন করা হয়। নেপাল ও আর্মেনিয়ার মতো বিশ্বের অনেক দেশ অর্থ সঙ্কটের কারণে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে না। আর প্রতিবার অংশগ্রহণ করার মধ্যে রয়েছে কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র দেশগুলি। ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞার কারণে মুসলিম দেশগুলো এই প্রতিযোগিতায় তাদের প্রতিযোগী পাঠায় না।

প্রতি বছর মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা শুরুর আগে নির্ধারিত সময়ের আগে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণেচ্ছু দেশের জাতীয়ভাবে নির্বাচিত সুন্দরীদের তালিকা আহ্বান করে। কোনো দেশে জাতীয়ভাবে সুন্দরী প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত না হয়ে থাকলে প্রতিষ্ঠানটি নির্ধারিত মডেল এজেন্সির মাধ্যমে সেই দেশ থেকে প্রার্থী নির্বাচন করে থাকে। সুন্দরী প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগীর সর্বনিম্ন বয়স হতে হয় ১৮ বছর। অনেক প্রতিযোগীকে ছাঁটাই করার পর সেমিফাইনালে পাঁচজন সুন্দরীর মধ্যে তিনজন সুন্দরী নির্বাচন করা হয়। এদের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হন যিনি তাকেই বলা হয় ‘মিস ইউনিভার্স’। বাকি দুজন প্রথম রানারআপ এবং দ্বিতীয় রানার আপ নির্বাচিত হন। যিনি ‘মিস ইউনিভার্স’ খেতাব জয় করেন তিনি একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষরের মাধ্যমে চুক্তিবদ্ধ হন এবং ওই কোম্পানির পক্ষ থেকে চুক্তির মেয়াদকাল পর্যন্ত বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক কাজ করেন। এছাড়া তার জন্য পুরস্কারের ছড়াছড়ি তো থাকেই। বিশ্বজুড়ে খেতাব অর্জনের খ্যাতি ছাড়াও নানান রকম আলিশান জীবনযাপনের ব্যবস্থা করা হয় মিস ইউনিভার্সের জন্য।

মিস ইউনিভার্স হওয়া সত্ত্বেও পরে আবার মুকুট কেড়ে নেওয়ার ঘটনাও আছে। ২০০২ সালে রাশিয়ার আক্সানা সানজুয়ান মিস ইউনিভার্স নির্বাচিত হলেও চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করায় তার মুকুটটি পরবর্তীতে পরানো হয় প্রথম রানার আপ পানামার জাস্টিন পাসেককে। বিশ্বজুড়ে সমাদৃত এই আয়োজনটি বর্তমানে প্রতি বছর প্রায় দেড়শ কোটিরও বেশি দর্শক টিভি পর্দায় উপভোগ (!) করে থাকে।

বিশ্বব্যাপী নারীদের সমমর্যাদার বিষয়ে সোচ্চার আলোচনা চললেও তারাই আবার এই সকল ব্যবসার মাধ্যমে নারীদেরকে ব্যবসায়িক পণ্য বানিয়ে ফেলেছেন। বড্ড অবাক লাগে একথা ভেবে যে, এরা বিশ্বব্যাপী নারীদের অধিকার রক্ষার ব্যাপারে খুবই সোচ্চার। কিন্তু সুন্দরীদের খুঁজে খুঁজে তাদেরকে বিলাসী জীবনের আয়োজন করে দেওয়া কোন ধরনের অধিকার রক্ষা? যদি তারা নারী অধিকারের ব্যাপারে সোচ্চারই হতো তবে তো কুশ্রী নারীদের খোঁজ নিয়ে তাদের বিয়ের ব্যবস্থার জন্য অর্থ খরচ করতো? কারণ, সুন্দরী নারীদের পাত্রস্থ করা সহজ। পক্ষান্তরে কুশ্রী নারীদের পাত্রস্থ হওয়াটা অন্তত এই বিশ্বপরিমণ্ডলে বেশ কঠিন এবং একারণেই বিশ্বের প্রায় সবজায়গাতেই কুশ্রী ও কম সুন্দরী নারীরা নিগৃহিত ও অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে। তারা কঠিন ও দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। সুতরাং সুন্দরীদের গলায় মিস ওয়ার্ল্ডের তকমার নামে তেলের মাথায় তেল দেওয়ার কৌতুক না করে বিপদগ্রস্ত, অসুন্দর, কুশ্রী নারীদেরকে বিপদমুক্তির ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেন না কেন?

মিস ইউনিভার্সকে মূলত একটি ব্যবসা বলা যেতে পারে। আর এই ব্যবসার পণ্য হয়ে থাকেন সুন্দরী নারীরা। এ কথা স্বয়ং ওই ঘর থেকেই উচ্চারিত হচ্ছে। বাংলাদেশে আগে কখনও সুন্দরী প্রতিযোগিতা কিংবা সুন্দরী খোঁজার নির্লজ্জ বেহায়াপনার আয়োজন ছিল না। কিন্তু বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য নেটওয়ার্ক বিস্তারকারী মাল্টিলেভেল ব্যবসায়ী কোম্পানিগুলোর ব্যবসার সংজ্ঞায় যোগ হয়েছে নতুন আরেকটি উপাদান। অর্থনীতির সংজ্ঞায় ব্যবসা ও কোম্পানির জন্য চারটি উপাদান জরুরি। শ্রম, পুঁজি, মালিক ও ভূমি। সংজ্ঞাবিদদের অলক্ষ্যে ঢুকে পড়েছে আরেকটি বস্তু- নারী। নতুন সংযোজিত এই বস্তুটাই হয়েছে ব্যবসার প্রধান উপাদান। একারণে বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়ী কোম্পানিগুলো কোনো দেশে ব্যবসা বিস্তৃত করার পর পরই হাত দিচ্ছে ওই দেশের নারী সম্পদের ওপর। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।

ইউনিলিভার কোম্পানিটির ব্যবসা সারাবিশ্ব জুড়ে। বাংলাদেশে তারা বেশকিছুদিন ঘাপটি মেরে থাকে। কিন্তু সময় মতো ঠিকই ফণা তোলে তারা এবং অত্যন্ত কূটকৌশলে আয়ত্ব করে নারী সম্পদ। এদেশে সর্বপ্রথম তারাই সুন্দরী প্রতিযোগিতার নামে নারীদেরকে ব্যবহারিক পণ্যে পরিণত করে। সুন্দরী প্রতিযোগিতা যে নিছক ব্যবসা এবং উদ্যোক্তরা তাদের ব্যবসায়ীক স্বার্থ হাসিলের জন্যই এই কাজটি করে থাকে তা স্বয়ং এই জগত থেকে উঠে আসা একজন মডেল ও অভিনেত্রীর মুখেই উচ্চারিত হচ্ছে। তিনি জাকিয়া বারী মম। মিডিয়ায় আগমন ঘটে তার এরকমই একটা সুন্দরী প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। হুমায়ুন আহমেদের ‘দারুচিনি দ্বীপ’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার অভিনয় জগতে প্রবেশ। এরপর নাটক, টেলিফিল্মে অভিনয়ের মাধ্যমে এ জগতেই তার দীর্ঘ বিচরণ। কিছুদিন আগে একটি অনলাইন পত্রিকার সঙ্গে সুন্দরী প্রতিযোগিতার বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি। নিম্নে তার সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।

মম’র কাছে প্রথমে তার কাজকর্ম সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল। মম অনেকটা ক্ষেদ ও ক্ষোভের সঙ্গে জানালেন, ‘আমরা রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করি, অথচ আমাদের কাজের কোনো মূল্য নেই। কলকাতা থেকে আমাদের নাটক অনেক ভালো হওয়া সত্ত্বেও মানুষ তা দেখছে না। দেখছে কলকাতার জিটিভি। এটা হচ্ছে মানুষের ভেতরে দেশপ্রেম না থাকার কারণে। এক শ্রেণীর সার্টিফিকেটধারী গৃহিণী আছে যারা কল্পনার রাজত্বে বসবাস করে। আমি বলতে চাই যে, কল্পনায়  বসবাস করে লাভ নেই। দেশকে ভালবাসুন।’

বর্তমানে বিনোদন জগত সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বিনোদন সেক্টরে আমরা যারা আছি তাদের কোনো পেট্রোনাইজ করা হয় না। আমাকেও কেউ পেট্রোনাইজ করে নাই। আমি যদুমধুদের সঙ্গে কাজ করে মম নামটাকে এস্টাবলিশ করেছি। তারপর বড় ডিরেক্টররা আমার নামটাকে সেল করার জন্য এখন আমাকে অনেক টাকা দিয়ে কাস্ট করে। এটা কিন্তু আমার একটা দুঃখবোধ।’

মম এ পর্যন্ত বহু গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। তার ভাষায় এ পুরস্কারের সংখ্যা প্রায় ২৭টি। বর্তমান পুরস্কারদাতাদের হালচাল সম্পর্কে তিনি তার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘দলীয়করণ আর নোংরামির ভেতরে সবাই ডুবে গেছে। প্রথম আলো পুরস্কার মানেই জয়া আহসান, প্রথম আলো পুরস্কার মানেই ফারুকী, মোশারফ করিম। তারাই কিন্তু শুধু অ্যাক্টর নয়, তারা এতই অবাঞ্ছিত অভিনয় করেন যে সেটা নেওয়ার মতো না। তাহলে তারা কীভাবে বেস্ট অ্যাওয়ার্ড পান? মুখে কালি মেখে অভিনয় করে যদি বেস্ট অ্যাওয়ার্ড পাওয়া যায়, তাহলে তো রাস্তার একটা ছেলেও অভিনয় করবে, হচ্ছেও তাই।’

এটা কি প্রথম আলো পুরস্কার পাননি বলে বলছেন; ‘প্রথম আলো আমাকে পুঁছল কি-না তাতে আমার কোনো খেদ নেই, বরং আমিই প্রথম আলোকে পুঁছি না। প্রথম আলোর চেয়েও বড় পুরস্কার আমার ঘরে আছে। ফিল্মে অভিনয় করার জন্য বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট আমাকে বেস্ট অভিনেত্রী হিসেবে পুরস্কার দিয়েছে। এটা প্রথম আলোর দশটা অ্যাওয়ার্ডের চেয়েও অনেক বেশি সম্মানের।’

অভিনেতাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে মম বলেন, ‘বাংলাদেশের অধিকাংশ আর্টিস্টের প্রপার শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। যেমন ধরেন তিশা কিন্তু লেখাপড়া কমপ্লিট করে নাই। কোথাকার কোন টেলিকমিউনিকেশনে পড়তো, আজীবন পড়েই যাচ্ছে। বিন্দু জাহাঙ্গীরনগর থেকে বহিষ্কৃত হয়েছে। মীম জাহাঙ্গীরনগরে আমার ডিপার্টমেন্টেই পড়তো। পরপর দুইবার ফেল করায় বহিষ্কৃত হয়েছে। শুধু তারা নয় খোঁজ নিলে দেখা যাবে, ম্যাক্সিমাম আর্টিস্টেরই এই অবস্থা।’

প্রচুর সুন্দরী প্রতিযোগিতা হচ্ছে, তিনিও একটা সুন্দরী প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই এই জগতে এসেছেন। এ ব্যাপারে মমর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, পৃথিবীব্যাপী সুন্দরী প্রতিযোগিতা হচ্ছে একটা ব্যবসা। মেয়েরা হচ্ছে ব্যবসার উপকরণ। ছোট কাপড়ের মেয়েরা ব্যবসার ভালো উপকরণ, আর বড় কাপড়ের মেয়েরা ব্যবসার অপেক্ষাকৃত কম উপকরণ। আমি নিশ্চয় বিষয়টা বুঝাতে পেরেছি। তাই সুন্দরী প্রতিযোগিতা শুধু ব্যবসার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এর চেয়ে বেশি কিছু না। সুন্দরী হতে হলে যে শুধুমাত্র গড গিফটেড চেহারা, সুন্দর চোখ নিয়েই আসতে হবে তা নয়। সুন্দরী হলো মেধা, বুদ্ধি ও শিক্ষার সমন্বয়।

আমাদের দেশের একজন সুন্দরী প্রতিযোগিতার কর্ণধারকে বলতে শুনেছিলাম, ‘সুন্দরী প্রতিযোগিতা নাকি ষোড়শী ছাড়া হয় না। তরুণীদের প্রতিটি বয়সে আলাদা আলাদা সৌন্দর্য আছে বটে, কিন্তু ষোড়শী সুন্দরীর মেধা কোন লেভেলের থাকে যে সে সৌন্দর্যটা ক্যারি করতে পারবে? পারে না। কারণ অল্প বয়সী মেয়েদের পিক করা হয় বিপথগামী করার জন্য। যারা বুদ্ধিমান, যারা বিচক্ষণ তারা হয় তো ঐ ট্র্যাপে পা না দিয়ে নিজের একটা আইডেন্টি তৈরি করতে চেষ্টা করে। কিন্তু প্রধান উদ্দেশ্য থাকে অল্প বয়সী ষোড়শী সুন্দরীদের নিয়ে ব্যবসা করা। এটা আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ থেকে বলছি।’

মম এ পর্যন্ত অসংখ্য ধারাবাহিক ও এক ঘণ্টার নাটকে কাজ করেছেন। নাটকের মানের প্রসঙ্গ টানতেই তিনি বলেন, ‘বর্তমানে চ্যানেল বেশি, কম্পিটিশন বেশি, কিন্তু এই কম্পিটিশন সুস্থ কম্পিটিশন না, অসুস্থ কম্পিটিশন। [সূত্র : ঢাকা রিপোর্ট টোয়েন্টিফোর.কম, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩]

এই সাক্ষাতকারে শোবিজ জগতের অনেক অনুল্লেখিত বিষয় প্রকাশ পেয়েছে। দর্শকরা যারা নিত্যদিন টিভির সামনে বসে জীবনের মূল্যবান সময় ব্যয় করছেন এবং যাদের অভিনয় দেখে বাহবা বাহবা করে ইহকাল-পরকাল নষ্ট করছেন তারা প্রকৃতপক্ষেই সমাজের কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ লোক তাও এই সাক্ষাতকারে ফুটে উঠেছে। তবে সবচেয়ে যে তিক্ত কথাটা বের হয়ে এসেছে তাহলো, সুন্দরী প্রতিযোগিতা নারীর নিজের স্বার্থে করা হচ্ছে না। বণিকরা নিজেদের ব্যবসার স্বার্থে করছে এবং নারীদেরকে ব্যবসার পণ্য ছাড়া অন্য কিছু ভাবা হচ্ছে না।

মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতাসহ বিশ্বব্যাপী সুন্দরী প্রতিযোগিতা যেভাবে নগ্নতায় পরিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে তাতে এটিকে একটি প্রতিযোগিতার বদলে নারীর শরীর প্রদর্শনের উৎসব বললেও ভুল হবে না। নারীদের মর্যাদা ক্রমেই নিঃশেষ করে ফেলছে এই প্রতিযোগিতাগুলো। বেশিদূর যাওয়ার দরকার নেই, কেবল বাংলাদেশের সুন্দরী প্রতিযোগিতার ফলাফলগুলোর দিকে তাকালেই আঁতকে উঠতে হয়। সুন্দরী প্রতিযোগিতার হঠাৎ উত্থিত সিডরে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসা এই তরুণীগুলো যেন জীবনের সংজ্ঞাগুলো হঠাৎ ভুলে গেছে। তাই বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়গুলো যতগুলো কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে তার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জড়িত এই সুন্দরী প্রতিযোগিতার রমণীরা। তাহলে বুঝুন ঠ্যালা!

আপনি পড়ছেনঃ ফেরারি নারী বই থেকে।

The post ব্যবসার নতুন পণ্য ও সুন্দরী প্রতিযোগিতার সাতকাহন appeared first on Amar Bangla Post.

কাজীর বিচার (শিশুদের মজার ইসলামিক গল্প ৬)

$
0
0

হযরত আলী (রা:) তখন মুসলিম বিশ্বের খলিফা। তার সাহস ও বীরত্বের জন্য তিনি সারা আরবে মশহুর। তার ছিল একটি দু’ধারী তলোয়ার—জুলফিকার। এই তলোয়ার নিয়ে জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়তেন তিনি। ছিনিয়ে আনতেন বিজয়। তাঁকে বলা হতো শেরে খাদা বা আল্লাহর বাঘ। বীরত্বের জন্য তিনি উপাধি পেয়েছিলেন ‘আসাদুল্লাহ’, মানে আল্লাহর সিংহ।

তিনি যখন খলিফা তখনকার ঘটনা। তার সেই বিখ্যাত তলোয়ারটি চুরি হয়ে যায়। অধিকাংশ সাহাবীই তার তলোয়ারটি চিনতেন। জীবেন বহুবার জিহাদের ময়দানে তাঁরা দেখেছে  এই তলোয়ার। তলোয়ারটির সন্ধানে বেরিয়ে পড়লো সৈনিকরা। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তলোয়ারটি পাওয়া গেল এক ইহুদীর ঘরে। কিন্তু ইহুদি কিছুতেই স্বীকার করলো না, এটি আলির (রাঃ) তলোয়ার। বলল, ‘বরাবরই এটি আমার তলোয়ার ছিল এবং এখনো আছে।

ইহুদীর কথায় ক্ষেপে গেল মুসলমানরা। একে তো চুরি করেছে, তার ওপর মিথ্যা বলছে। ক্ষিপ্ত মুসলমানরা তাঁকে মারতে গেল। হযরত আলী (রাঃ) বললেন, ‘তোমরা আইন নিজের হাতে তুলে নিও না। আমি খলিফা  হতে হতে পারি, কিন্তু আল্লাহর বিধানে খলিফা ও প্রজাতে কোন তফাৎ নেই। আইনের চোখে সবাই সমান।’

খলিফা আলী (রাঃ) কাজীর দরবারে বিচার দিলেন। নির্দিষ্ট দিনে ডাক পড়ল ইহুদী ও খলিফার। দরবার লোকে লোকারণ্য। বিচারকের আসনে বসলেন কাজী। খলিফা বসলেন  বাদীর আসনে আর ইহুদী আসামিরত কাঠগড়ায়।

বিচার শুরু হল। কাজী সাহেব বললেন, ‘তুমি কি খলিফার তলোয়ার চুরি করেছো?’

ইহুদী বলল, ‘আমি চুরি করতে যাবো কেন? এটা তো আমারই তরবারি।’

কাজী তাকালেন খলিফার দিকে। বললেন, ‘এটা যে আপনার তলোয়ার তার কোন সাক্ষী আছে আপনার কাছে?’

আলী (রাঃ) বললেন, ‘আছে। আমার ছেলে হাসান এবং আমার খাদেম আমার সাক্ষী। তাঁরা চেনে আমার তলোয়ার।’

কাজী বললেন, ‘কিন্তু এ সাক্ষ্য আমি গ্রহণ করতে পারবো না।’

‘কেন, আপনি কি মনে করেন ওরা মিথ্যা কথা বলবে?

‘না, আমি জানি আপনি নবীর আত্মীয়।  আপনি বা আপনার সাক্ষীরা কেউ মিথ্যা বলবে না। কিন্তু ইসলামে পিতার পক্ষে পুত্র এবং মনিবের পক্ষে চাকরের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। তাই আপনার নালিশ খারিজ করে দিলাম।’

এ রায় শুনে সবাই হতবাক হয়ে গেল। কিন্তু খলিফা নীরবে কাজীর বিচার মেনে নিলেন। এ সময় ঘটল সেই অভাবিত দৃশ্য। ইহুদী এগিয়ে গেল হযরত আলীর (রাঃ) সামনে। চিৎকার করে বলল, ‘কী অকল্পনীয় বিচার! কী অনন্য আইন! খলিফার দাবীও গ্রহণযোগ্য হয় না সঠিক সাক্ষ্য প্রমাণ না থাকলে। আইনের প্রতি এতটা শ্রদ্ধাশীল যে ধর্ম তা কখনো মিথ্যা হতে পারে না।’

ইহুদী তলোয়ারটি হযরত আলীর (রাঃ) হাতে তুলে দিতে দিতে বললেন,আমিরুল মোমিনীন, এটি আপনারই তলোয়ার। সত্যি আমি এটি চুরি করেছিলাম। আপনি আপনার জিনিস গ্রহণ করুণ, আরো একটি জিনিস গ্রহণ করুণ, যেটি আপনার নয়।’

আলী (রাঃ), কাজী এবং উপস্থিত সবাই বিস্মিত চোখে তাকালো তার দিকে। কাজী বললেন, ‘কি সেই জিনিস?’

ইহুদী বলল, ‘আমার দেহ,  আমার আত্মা,আমার ঈমান। আজ থেকে আমি নিজেকে মুসলিম  বলে ঘোষণা করছি। এই বলে  ইহুদী জোরে জোরে উচ্চারণ করলো, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’।

এই গল্প আমাদের শেখায়, আইন সবার জন্য সমান। ক্ষমতায় জোরে আইনকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করা অন্যায়। উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণ না থাকলে কাউকে শাস্তি দেয়া যায় না।  

The post কাজীর বিচার (শিশুদের মজার ইসলামিক গল্প ৬) appeared first on Amar Bangla Post.

হাতুড়ে সংজ্ঞাবিদের কাঁচিতে খণ্ডবিখণ্ড ‘বাঙালিয়ানা’ সংজ্ঞা!

$
0
0

‘বাঙালিয়ানার’ নতুন সংজ্ঞা উঠে এসেছে জনৈকা রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীর মুখ থেকে। তার সংজ্ঞায় সে মন্তব্য করেছে, ‘মাথায় কাপড় ও নেকাব বা হিজাব পরা নারীরা কখনোই বাঙালি নয়।’ সেই সঙ্গে সে বাঙালিয়ানা থেকে দাড়ি-টুপিকেও বাদ দিয়েছে। আর তার এমন মন্তব্যে ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুকে। কিছুদিন আগে একাত্তর টিভিতে ‘সংস্কৃতিজনের রাজনীতি ভাবনা’ শীর্ষক এক টকশোতে সে বাঙালিয়ানা নিয়ে এমন মন্তব্য করে। মিথিলা ফারজানার উপস্থাপনায় টকশোতে সে ছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন নাট্যকার মামুনুর রশীদ, অভিনেতা তারিক আনাম খান।

আলোচনার এক পর্যায়ে মিতা হক বলে, ‘আজকে তুমি (সঞ্চালক মিথিলা ফারজানা) আর আমি শাড়ি পড়ে বসেছি। মামুন ভাই (নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশিদ), তারিক ভাই (নাট্যব্যক্তিত্ব তারিক আনাম) পাঞ্জাবি পরে বসেছে। কেউ দাড়ি-টুপি লাগিয়ে নেই। কেউ লম্বা সিঁদুর পরেও নেই। কেউ হিন্দু, শিখ। আমাদের কমন পরিচয় আছে। ছেলেরা একরকম পোশাক পরবে, মেয়েরা একরকম পরবে।’

মিতা হক
ছবিঃ মিতা হক

সে আরো বলে, ‘আমাদের না আইডেন্টি ক্রাইসিসটা এতো বাজে। আজকাল বাংলাদেশে রাস্তায় বেরিয়ে, কোনো ডাক্তারখানায় বা হাসপাতালে গিয়ে, যেখানে একটু লোকজনের সমাগম বেশি, যেখানে ওয়েটিং রুম আছে, লোকজন অপেক্ষা করছে, সেখানে দেখি যে, একমাত্র আমিই বাঙালি। আমি শাড়ি পরে গেছি আর আমার মাথায় ঘোমটা নেই। আজকাল তারা এইটুকু মুখ (নেকাব বা হিজাবের শুধু চোখ ছাড়া সম্পূর্ণ মুখ ঢাকা) বের করে রাখছে। এতে তারা আর যাই হোক বাঙালি নয়।’

সে যে দেশে বাস করে সেই দেশ যে তার বাপের তালুক নয় এবং তার মতো স্বল্পশিক্ষিত নারীর সংজ্ঞায় দেশের নাগরিকদের সংজ্ঞা নিরূপিত হয় না সে তথ্য সম্ভবত সে জানেই না। আসলে দেশটা আজ অদ্ভুত প্রতিযোগিতার মধ্যে অতিবাহিত হচ্ছে। পুচকি-পাচকা লোকেরা টিভি কিংবা সাংবাদিক ক্যামেরার সামনে পড়লেই নিজেকে উঁচুদরের কেউ মনে করে খিস্তিখেউর করে যাচ্ছে এবং বেছে বেছে টার্গেট করছে ইসলামকে। নইলে গায়িকার পেশার মতো একটা পেশায় জড়িত এ নারী কোন সাহসে নির্ণয় করে দেশের নাগরিকদের সংজ্ঞা? বাঙালিয়ানাকে সে ইসলাম ও পর্দা থেকে আলাদা করার দুঃসাহস পায় কোথা থেকে? সে কি জানে বাংলাদেশ হওয়া পর্যন্ত এদেশ রচিত হওয়ার পূর্ণ ইতিহাস? জানবে কি করে? এদের মতো ভোঁতা ও ক্ষুদ্র জ্ঞানের লোকেরা ইতিহাসের মতো কঠিন জ্ঞান হাসিল করতে পারে?

সঙ্গত কারণেই তার এই মূর্খতাসুলভ হইচই সাধারণ মানুষ মেনে নিতে পারেনি। এ বক্তব্য নিয়ে ফেসবুকে অনেকেই বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

আবু সুফিয়ান লিখেছেন, ‘.. (ওই মহিলার) তত্ত্ব অনুযায়ী শেখ হাসিনা বাঙ্গালী না। বঙ্গমাতাও বাঙ্গালী না। কারণ বঙ্গমাতা মাথায় কাপড় দিতেন। শেখ হাসিনাও মাঝে মাঝে মাথায় কাপড় দেন।’

এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক একেএম ওয়াদিদুজ্জামান লিখেছেন, ‘আমি বাঙ্গালী’ কিনা? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে তো জানতে হবে যে আমি নিজেকে ‘বাঙ্গালী’ বলে দাবী করেছি কী না? প্রাচীন ‘বঙ্গ’ রাজ্যের ‘বাঙ্গাল’রা কখনোই বৃটিশ শাসনের বাই প্রোডাক্ট কোলকাতাকেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবী সমাজের সঙ্গায়িত ‘বাঙ্গালী’ পরিচয়ে পরিচিত হতে চায় নাই, এখনো চায় না। বৃটিশ আমলেই প্রখ্যাত কৌতুক অভিনেতা সাম্যময় বন্দ্যোপাধ্যায় (ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়) ‘বাঙ্গাল’কে পুংলিঙ্গ এবং ‘বাঙ্গালী’কে স্ত্রী লিঙ্গ বলে ব্যঙ্গ করেছিলেন।

কোলকাতাকেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবীদের নেতৃত্বে বাহ্মণ্যবাদীরা থাকায় তাদের সৃষ্ট এই ‘বাঙ্গালী’ ভাবধারাটি প্রায় সর্বোতভাবে অন্য ধর্মের সাংস্কৃতিক উপাদানকে অস্বীকার করে এসেছে। যে কারণে শতবর্ষ পুরাতন শরৎচন্দ্রের উপন্যাসে ‘বাঙ্গালী বনাম মুসলিমদের ফুটবল ম্যাচ’ এর বিবরণ পাওয়া যায়। দীর্ঘদিনের সেই প্রকৃত ‘বাঙ্গালী’ সংঙ্গাটি এ মহিলা আবার আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে। সে যথাযথই বলেছে; আমিও উনার সঙ্গে একমত যে, ‘হিজাব, ঘোমটা ও দাড়ি-টুপিওয়ালারা আর যাই হোক বাঙ্গালী না’। ঘোমটা মাথায় গায়ের বধূ, খালেদা জিয়া বা শেখ হাসিনা কখনোই ‘বাঙ্গালী’ নন। মহিলার এই বক্তব্যের পর মাথায় ঘোমটা দিয়ে বা হিজাব পরে কিংবা দাড়ি রেখে, মাথায় টুপি দিয়ে নিজেদের যারা ‘বাঙ্গালী’ দাবী করেন বা ‘বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ’ এর তত্ত্বকথা শোনান, তাদের পরিচয় সংকটের অবসান ঘটবে। হয় তারা এখন থেকে আর নিজেদের ‘বাঙ্গালী’ দাবী করবে না, নয়তো নিজেদের ঘোমটা-হিজাব ও দাড়ি-টুপি বর্জন করবে!

ফাহাম আব্দুস সালাম লিখেছেন, ‘… আইডেন্টিটি ক্রাইসিসটা আপনার, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশীর না- যেটা আপনি অন্যের ওপর চাপিয়ে দিয়ে আপনার অল্প বুদ্ধি ও মেধার প্রায়শ্চিত্ত করেন। রাস্তাঘাটে আপনার মতো শাড়ি না পরা মেয়েদেরই শুধু আপনার চোখে পড়ে। কারণ এর বেশি কিছু দেখার জন্য যে সফিস্টিকেশান, প্রস্তুতি ও পড়াশোনো প্রয়োজন সেটা আপনার নেই। এই ঘাটতিকে আপনি পুষিয়ে নিতে চান শুদ্ধ বাংলায় কথা বলে, বড় টিপ দিয়ে, ভান করে। আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারি, যে বিষয় নিয়ে আপনার অগাধ আস্থা, সেই বাঙালিত্ব নিয়েও আপনার তেমন কোনো পড়াশোনো নেই, জানাশোনো নেই।

দাড়ি-টুপি দেখলেই আপনি অস্বস্তিতে ভোগেন কেননা আপনি প্রগ্রেসিভ না ভীষণ ধরনের ট্রাইবাল মেন্টালিটির মানুষ। সবাইকে আপনার নিজের মতো না দেখলে মনে করেন যে সবকিছু হাতছাড়া হয়ে গেলো। আপনার আগ্রহ আসলে ‘আইল দেয়ায়’, নাহলে আপনি ইনসিকিউরড হয়ে পড়েন, তাই অভিযোগ সবাই কেন আপনার মতো না।

আপনি বাঙালিত্ব ও ইসলামকে এক সঙ্গে ধারণ করতে পারেন না, সাধারণ মানুষ যে এই সাধারণ কাজটা করতে সক্ষম সেটা আপনি বোঝেন না। এই দেশের মানুষ তার স্পিরিচুয়ালিটির ক্ষুধা মেটায় ধর্ম দিয়ে, সংস্কৃতির ক্ষুধা মেটায় বাঙালিত্ব দিয়ে। এ ধরনের কাজের কোনো হ্যান্ডবুক হয় না, তাই তাকে আপোস করতে হয়। কোনো সময় তার বাঙ্গালিত্বে খামতি হয়, কোনো সময় ইসলামে, বাট য়ু নো ওয়াট, ইট রিয়ালি ডাজন ম্যাটার মাচ। তারা আপনার মতো অলস সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণির ঘ্যান ঘ্যান করা মানুষ না। তাদের কাজ আছে।

আপনিই আসলে সেকেলে ধারণার মানুষ, আপনার কাছে আইডেন্টিটির অনুষঙ্গ হলো কেবল শাড়ি পরা, পাঞ্জাবি পরা। এসবের কারণ হচ্ছে, এরচেয়ে গভীরে বুঝতে হলে যে মেধার প্রয়োজন হয় সেটা আপনার নেই। তারচেয়েও বড় কথা আপনি শিখেছেন শুধুই ঘৃণার ব্যবসা করতে। এই কাজ করতে কাউকে না কাউকে আপনার ইনফেরিয়র প্রমাণ করতে হবেই। যেহেতু আপনার জীবিকার জন্য দাড়ি-টুপিকে ছোটো করতে হয় সেহেতু আপনি দাড়ি-টুপিকে ছোটো করছেন। যদি জীবিকার জন্য বাঙালিত্বকে ছোটো করতে হতো- আপনার যে মেধা- আপনি বড় বড় টিপ দেওয়া নিয়েই টিপ্পনি কাটতেন।

(দয়া করে মনে করবেন না আপনি যে বিরক্তি উদ্রেক করেন তার কারণ এই যে আপনি বাঙালিত্ব নিয়ে আপ্লুত এবং এ দেশে ইসলামের প্রসার নিয়ে উদ্বিগ্ন। আপনার অসহনীয় ঠেকে, কারণ প্লেইন এন্ড সিম্পল- আপনি একজন অল্প বুদ্ধি এবং খুবই অল্প পড়াশোনো জানা মানুষ।)’

এদিকে ফেসবুকে একজন (মওলা বাবা) ওই মহিলাকে উদ্দেশ করে লিখেছেন, ‘আপনার কাছে আমার কিছু প্রশ্ন আছে;

প্রশ্ন ১- আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিন্তু মাথায় কাপড় দেন।  তাহলে কি উনি বাঙালি না? তবে এই অবাঙালীকে প্রকাশ্যে এভাবে সমর্থন করছেন কেন?

প্রশ্ন ২- আমাদের বিরোধীদলীয় নেত্রীও কিন্তু মাথায় কাপড় দেন, তবে কি উনিও বাঙালি না?

প্রশ্ন ৩- মুক্তিযুদ্ধের কোনোও বীরাঙ্গনা যদি মাথায় কাপড় দেন তবে কি উনি বাঙালি থাকবেন না?

শেষ প্রশ্ন, কোনো পাকিস্তানি বা ভারতীয় যদি মাথায় কাপড় না দেয় তবে কি তারা বাঙালি হয়ে যাবে? উত্তর দিতে পারবেন?’

পাঠক ও সচেতন মহল অবশ্যই দুর্বৃত্তায়নের বাজারে মোটাবুদ্ধির অচলতা সত্ত্বেও কেবল ইসলামবিদ্বেষের কারণে কোনো মতে রুটি-রোজগারে ব্যস্ত ওই মহিলার আসল পরিচয় উদ্ধার করে ফেলেছেন এবং পর্দা, হিজাব, দাড়ি-টুপিকে বাঙালিয়ানার সংজ্ঞার বাইরে ফেলে দেয়ার মাজেজাও সম্ভবত বুঝতে বাকি নেই। কিন্তু কথা আছে না সব শিয়ালের এক রা? ফেসবুক ও যোগাযোগ মাধ্যমে এই মোটা বুদ্ধির মহিলার তীব্র সমালোচনা হতে শুরু করলে তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসে আরেক ‘মহাজ্ঞানী’ ও ‘বাঙালী বিশেষজ্ঞ’ মডেল ও অভিনয় শিল্পী  সোহানা সাবা। সে তার ফেসবুকে লিখেছে, বোরকা সেই দেশের পোশাক যেসব দেশে ভৌগোলিক কারণে নারী-পুরুষ সবাই জোব্বা পরেন। কিন্তু আর যাই হোক বোরকাধারীরা বাঙালি নন।’

সোহানা সাবা
ছবিঃ সোহানা সাবা

দেশে আজ যে হারে বুদ্ধিজীবী, সংজ্ঞাবিশেষজ্ঞের আবির্ভাব ঘটছে, তাতে আগামী দশবছরের মধ্যে বাংলাদেশকে অভিধানের দেশ নামে আলাদা কোনো সার্টিফিকেট দেওয়া হয় কিনা সেটা দেখার অপেক্ষায় থাকতে হবে বলে মনে হচ্ছে!

আপনি পড়ছেনঃ ফেরারি নারী বই থেকে।

The post হাতুড়ে সংজ্ঞাবিদের কাঁচিতে খণ্ডবিখণ্ড ‘বাঙালিয়ানা’ সংজ্ঞা! appeared first on Amar Bangla Post.

Viewing all 2084 articles
Browse latest View live