যারা ‘বড় ছেলে’ নাটক দেখে টিস্যুবক্স শেষ করে ফেলেছেন তারাও এই বড় ছেলে গল্পটি পড়ে কাঁদবেন।
বাবার প্রথম সন্তান। ছেলে। বাবা শখ করে নাম রাখলেন সুজন। হ্যাঁ, সুজন মাঝির মতই বড় হয়ে একদিন সংসারের হালটাকে শক্ত করে ধরবে বড় ছেলে, এই নির্ভরতায় বারবার ছেলের কপালে চুমু খান বাবা।
মা মৃদু হেসে স্বামীকে বলেন,
“ছেলেটা বেঁচে থাকলেই চলবে গো! আমাদের খাওয়ানোর মালিক তো আল্লাহ!”
বড় ছেলে বড় হতে থাকে প্রথম মাতৃত্ব আর প্রথম পিতৃত্বের সবটুকু সুখ নিয়ে। একদিন দুপুরে কার বাড়ির ছেলেটার দামী রিমোটকন্ট্রোল গাড়ি দেখে চোখে জল আসে বড় ছেলের।
মাটির ব্যাঙ্কটাকে এক আছাড়ে ভেঙ্গে দিয়ে বড় ছেলের চোখের জল মুছে দেন মা।
বড় ছেলে বড় হতেই থাকে। দিন আনা দিন খাওয়া বাবা এলাকার সব থেকে দামি স্কুলটাতে ভর্তি করান বড় ছেলেকে। বড় ছেলের লেটেস্ট ফ্যাশনের টি শার্টের আড়ালে ঢাকা পড়ে যায় বাবার তিনবার তালি দেয়া ছেঁড়া লুঙ্গিটা।
বড় ছেলে আরও বড় হয়। ভার্সিটির ক্যাম্পাসে আড্ডা দেওয়া বড় ছেলের ছোট দুই ভাই তখন সবে প্রাইমারিতে পা রাখা বাচ্চা।
বড় ছেলে টিউশনি করায়।
সে টাকা বাবার কষ্টকে কমিয়ে দেওয়ার জন্য কাজে লাগে না, কাজে লাগে উচ্চবিত্ত বন্ধুদের ট্রিট দিতে।
বড় ছেলে প্রতি মাসে খরচের টাকা পেয়ে যায় যথারীতি। বাবা প্রতি মাসেই অনুরোধ করেন,
“টাকার চিন্তায় পড়াশোনা খারাপ করিস নে বাবা। তোর বাপ এখনও মরে নাই।”
বড় ছেলে ছুটিতে বাড়ি ফেরে। বড় ভাইয়ের দামী জামাকাপড় থেকে আনন্দ হয় ছোট ভাইদের।
আহা! বড় ভাইয়ের চাকরি হলে ওরাও এমন জামা পড়বে!
বড় ছেলে এবার সত্যিই বড় হয়। চাকরি পেয়ে পুরো বাড়িটাকেই মাথায় তোলে বড় ছেলে।
“ছেলেটা সত্যিই বড় হয়ে গেল।”
মা আনন্দে চোখ মোছে। কিন্তু মা জানে না তার বড় ছেলে আরও দু’বছর আগেই বড় হয়ে গেছে।
গোপনে বিয়ে করা বড় ছেলের বউ এখন দু’মাসের অন্তঃসত্ত্বা!
বড় ছেলের ছেলে হয়।
আহা! কি ফুটফুটে!
নাতিকে কাছে রাখার আনন্দ বেশিদিন সয় না বড় ছেলের বাবার।
ভাল শিক্ষা দিতে হলে ছেলেকে যে শহরে মানুষ করা চাই!
মেঘে মেঘে অনেক বেলা কেটে যায়।
শরীরও শত্রুতা করে বড় ছেলের বাবার সাথে।
বউকে বলে বড় ছেলের বাবা,
“সুজনের মা, ছোট ছেলে দু’টোকে যদি মানুষ করে যেতে পারতাম!”
আঁচলে চোখ মোছে বড় ছেলের মা।
এক সন্ধ্যেয় ফোন আসে বড় ছেলের কাছে।
বড় ছেলে তখন ইংলিশে মিডিয়ামে ভর্তি করানোর জন্য বাচ্চাকে পড়াতে ব্যস্ত। টিউটর, বড় ছেলে আর বউ – তিনজনের চেষ্টায় চান্স না পেয়ে যাবে কোথায়?
বিরক্ত হয়ে ফোন ধরে বড় ছেলে। ওপাশ থেকে ভেসে আসে আধবুড়ো বাবার গলা।
“বাবা সুজন, সবাই ভাল আছো তো? দাদুভাই ভাল আছে?”
— হ্যাঁ বাবা, বলো।
___ বাবা, শরীরটা তো আর চলে না। তোমার মায়ের হাঁপানির টানটাও তো জানো!
— তাড়াতাড়ি বলো বাবা, বাবু পড়তে বসেছে। এই রিমা, এসিটা কমিয়ে দাও। বাবুর ঠান্ডা লেগে যাবে।
দমে যায় বড় ছেলের বাবা। চোখের জল সামলে নিয়ে ধরা গলায় বলে,
“বাবা, তোমার ছোট ভাই দু’টো তো আইএ দেবে এবার। ফরম ফিলাপের নাকি মোটে দুইদিন আছে বাবা। বলছিলাম যে…”
কথা শেষ করার সুযোগ পায় না বড় ছেলের বাবা। আবারও নাকি বাড়ি ভাড়া আর গ্যাস বিলের দাম বেড়েছে।
চোখ মোছে বড় ছেলের বাবা। ছেলেটা তার কত কষ্টে আছে আর সে কি না তারই কাছে টাকা চাইছে!
দাওয়ায় শোয়া অসুস্থ্য মায়ের পাশে বসে থাকা ছোট ছেলে দু’টো কেঁদে ফেলে বাবার অসহায়ত্ব দেখে।
আহা! আজ যদি ওরাই হতো বাবার ‘বড় ছেলে’, হয়ত গল্পটাই বদলে যেতো!
লেখিকাঃ অনামিকা খুশবু অবনী
আরও কিছু গল্প…
০২ ছেঁড়া ব্লাউজ- নারী নিগ্রহের গল্প
প্রিয় পাঠক-পাঠিকা, গল্পটি পড়ে আপনার কাছে ভালো লাগলে এটি শেয়ার করুন।
The post বড় ছেলে : গল্পের ওপারে! অনামিকা খুশবু অবনী appeared first on Amar Bangla Post.