কথায় আছে, একটি দেশের সমাজকে যদি তুমি ধ্বংস করে দিতে চাও, তাহলে সে সমাজে অশ্লীলতা ছড়িয়ে দাও। বর্তমানে বাংলাদেশে এটিই ব্যাপক হারে চলতেছে। প্রতিটি রন্দে রন্দে যৌনতা। এযেনো অবাধ যৌনতার উৎসব চলতেছে। যৌনতা ছাড়া কোন কিছু যেন তাদের কল্পনার বাহিরে। আমার জানা মতে আগে যৌনতা ছিল শুধু মাত্র পর্ণ ভিডিওতে। কিন্তু বর্তমানে তা ছড়িয়েছে পড়েছে, চলচিত্র ও ভিডিও গানেও। তার মাঝে আবার আছে যাত্রাগান। বর্তমানে চলচিত্রের অশ্লীল গান গুলোকে পরিচালকরা আইটেম গানের নামে টাইটেল দিয়ে যুব সমাজের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। এসব গান অশ্লীলতা জেনেও আমাদের দেশের মিডিয়াও তা সাদরে গ্রহণ করছে ও প্রচার করছে। কিন্তু তারা একটুও চিন্তা করছে না আমরা এসব ভিডিও’র মাধ্যমে যুব সমাজে কি বার্তা পৌঁছে দিচ্ছি? আপনি যতগুলো আইটেম গান দেখবেন, তাতে দেখবেন নারীকে পুরুষের যৌন উপভোগের বস্তু হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।[1] নারীদেহের যৌনাঙ্গ যেন পুরুষদের সামনে প্রদর্শনের বস্তু। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এইসব নোংরা ভিডিওতে যারা অভিনয় করে, তারা নিজেদের কে খুব সম্মানিত মনে করে।[2] আমাদের দেশের নারীবাদীরাও তাতে নারীর সম্মান মনে করে। কিন্তু এসব ভিডিওতে যে নারীকে চরম ভাবে অসস্মানিত করা হচ্ছে তাতে তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই।তাদের যতো মাথা ব্যাথা দেখা যায় ইসলামের বেলায়। ইসলাম যেন তাদের বাড়া ভাতের উপর ছাঁয় ছিটিয়ে দিয়েছে।[3] আর তারা লুচ্চা-বদমাইশদেরকে প্রমোট করার জন্য দায়িত্ব নিয়েছে। কোন এক মেয়ে ধর্ষনের শিকার হলে তারা ইসলামের উপর দোষারূপ শুরু করে দেয়। আরেক দল নারীর পোশাকের দোষারূপ শুরু করে দেয়। কিন্তু একটি মেয়ে কেনো ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, সেটা নিয়ে কেউ কথা বলে না। তনু অর্ধাংকাশ হিজাবী মেয়েটি ধর্ষিত[4] হবার পর হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে, সার্থবাদীরা সুর তুলেছে হিজাব নারীকে রক্ষা করতে পারে না।[5] তারা আরো যুক্তি দেখায়, পোশাকই যদি নারী ধর্ষণের কারণ হতো তাহলে শিশু মেয়েরা কেনো ধর্ষিত হচ্ছে?[6] কিন্তু আমাদের দেশে হঠাৎ করে কেনো নারী ও শিশু ধর্ষণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সেটা নিয়ে কি কেউ গভীর ভাবে চিন্তা-ভাবনা করছেনা। কিন্তু আমরা করেছি। আমাদের দৃষ্টিতে গান লোডের কম্পিউটার গুলোও এক্ষেত্রে দায়ী। আপনি যদি গান লোডের কম্পিউটারের দোকানগুলোতে অনুসন্ধান করেন তাহলে দেখতে পাবেন গানের চাইতে যৌন ভিডিও বেশি লোড হচ্ছে। সব চেয়ে অবাক করার বিষয় হচ্ছে, এইসব ভিডিও দেখা থেকে বাদ যাচ্ছে না শিশুরাও। আমি অনুসন্ধান করে যা পেয়েছি, তাতে কেঁচো খুঁজতে গিয়ে অজগর বেরিয়ে এসেছে। এই সব যৌন ভিডিও শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও মেমোরিতে লোড করে। এমন কি এসব ভিডিও মেমোরিতে লোড করা থেকে বাদ যাচ্ছে মেয়েরাও। আমি বেশ কিছু তরুণী মেয়ের মোবাইল চেক করে তা পেয়েছি। সমাজটা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে আপনি কল্পনা করতে পারেন? আপনি যদি কারোর হাতে মাল্টি-মিডিয়া সমর্থিত মোবাইল সেট দেখেন তাহলে আপনাকে বুঝতে হবে এখানেও যৌন ভিডিও আছে ৮০% নিশ্চিন্ত থাকেন। এই সব ভিডিও যারা লোড করে আমি তাদের সাথে কথা বলছি। তাদের কে প্রশ্ন করেছি, আপনারা কেন এসব অনৈতিক ভিডিও মেমোরিতে লোড করেন? তারা জবাব দেয়, এসব ভিডিও লোড না করলে আপনি ব্যবসা করবেন কি দিয়ে? মেমোরি লোডকারীরা তো সব কিছুই চায়। দেখা গেছে আমি এসব ভিডিও লোড করে দিলাম না, সে অন্য কম্পিউটার দোকান থেকে ঠিকি লোড করতেছে। এতে করে আমার কাস্টমার নষ্ট হচ্ছে। যারা মেমোরি লোড করে তাদের মধ্যে অধিকাংশই যৌন ভিডিও লোড করে এমন কি অনেকে শুধু যৌন ভিডিও’ই লোড করে। এখন আপনিই চিন্তা করুণ, যে সমাজের সব শ্রেণির লোকজনের যৌন ভিডিও দেখা ডাল-ভাতের মতো সহজ হয়ে যায়, শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও যৌন ভিডিও দেখার সুযোগ পায়, আপনি কি ভাবে সে সমাজের মানুষের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করেন? এই সব যৌন ভিডিও দেখে কি তারা জানতে পারতেছে না নারীর দেহের কোন জায়গায় কোন অঙ্গটি কিরকম আছে? আর এসব ভিডিও দেখে কি তাদের যৌন উত্তেজনা জাগছে না? যাদের ঘরে স্ত্রী আছে, তারা না হয় স্ত্রীর দ্বারা নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করবে? কিন্তু বাকীরা কি করবে? তারা তো ঠিকিই যৌন অপরাধে জড়াবে। আপনি একজনের বাড়িতে বেড়াতে গেলেন, যাওয়ার সময় মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে গেলেন। যে বাড়িতে গেলেন, সে বাড়ির ছেলেটি বখাটে। আপনি তার হাতে মিষ্টির প্যাকেট তুলে দিয়ে বললে, তোমাদের জন্য মিষ্টি এনেছি, রুমের ভিতরে বসে খাও। সে মিষ্টির প্যাকেট খুলে দেখলো ভিতরে লাল ও সাদা রঙের মিষ্টি আছে। সে দুই রঙের মিষ্টি খেয়ে দেখলো দুইটিই দারুণ মজা। এখন এই বখাটে ছেলে যদি আরেক দিন রাস্তায় দিয়ে কোন ভদ্র লোককে মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে যেতে দেখলে তার কি বুঝতে অসুবিধা হবে এর ভিতরে কি আছে? এই বখাটে ছেলে ভদ্র লোকের মিষ্টির প্যাকেটের হাত বাড়ায় তাহলে এখানে কি মিষ্টির প্যাকেটের দোষ নাকি আপনার দোষ? আপনি তো তার মাথায় আগেই প্রবেশ করিয়ে দিয়েছেন প্যাকেটের মিষ্টি কিরকম এবং এর স্বাদ কি রকম। আপনি নারী ধর্ষণের বিরুদ্ধে খুব বড় গলায় কথা বলেন, খুব মায়া কান্না দেখান, কিন্তু যারা ধর্ষক তৈরি করতেছে আপনি তাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন না। যারা নারীর দেহেকে পণ্য বানিয়ে ব্যবসা করতেছে, তাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন না। যারা গান লোডের আড়ালে দীর্ঘ দিন যাবত যৌন ভিডিও’র ব্যবসা করে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্তা নিতে বলেন না। যেসব পরিচালক সামাজিক ছবিতেও অশ্লীলতা ছড়িয়ে দিচ্ছে, আইটেম গানের নাম দিয়ে ডিজিটাল অশ্লীল ভিডিও তৈরি করছে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন না। কেনো বলবেন? হয়তো আপনার কাছেও নারী উপভোগের বস্তু। তাই তো আপনি চাচ্ছে, মুসলিম নারীরা পর্দা করার ব্যতীতই রাস্তায় বের হোক। অবাধ যৌনতার প্রচলন বন্ধ না করে নারী ধর্ষণ রোধ করা, আর তামাক কোম্পানী বন্ধ না করে তামাক জাতক পণ্যের দাম বাড়িয়ে মানুষকে খাওয়ানো রোধ করা, এ দুইটি নতুন বোতলে পুরোনো মাল। চলচিত্র ভর্তি এবং মেমোরি ভর্তি যৌনতা আপনি রোধ না করেন, তাহলে তাতে যদি নবজাতক কোনো মেয়েও ধর্ষিত হয়, তাতে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। কারণ, ধর্ষকরা ছোট মেয়েদেরকে কচি মা* হিসাবে দেখে। আপনার যদি অবিশ্বাস হয় তাহলে একটু গুগল ঘেটে দেখে নিবেন। আগে এসব দোকানে গুলোতে পুলিশের অভিযান হলে বর্তমানে কোন অভিযান হয় এরকম কোন সংবাদ চোখে পড়ে না। এখানেও শেষ নয়, বর্তমানে আগাছার মতো গজিয়ে ওঠা কিছু অনলাইন সংবাদ মাধ্যমেও সংবাদ প্রচারের নামে রগরগা যৌন কাহিনী প্রচার করে যাচ্ছে। এমন কি তারা সরাসরি পর্ণ ভিডিও খবরে যুক্ত করে দিচ্ছে।( বিস্তারিত দেখুন ) একজনের আবেদনের প্রেক্ষিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগের মাননীয় মন্ত্রী তারানা হালিম বলেছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে পর্ণগ্রাফী সাইট গুলো বন্ধ করে দিবেন, কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই সে ঘোষণা প্রত্যাহার করে নেন। আমরা না হয় এটা মেনে নিলাম যে এইসব সাইট পুরোপুরি ভাবে বন্ধ করা যাবে না কিন্তু দেশের ভিতরে মেমোরিতে অবাধে যা লোড করা হচ্ছে তা তো বন্ধ করা যাবে। সরকার সেটাই করুক।…
লেখাটি ভালোভাবে বুঝার জন্য আপনি পড়তে পারেনঃ–
মোবাইলে ছড়িয়ে পড়ছে স্বামী স্ত্রীর ও প্রেমিক প্রেমিকাদের গোপন ভিডিও
[1] পুরুষের দেহের পুরো অংশ জুড়েই পোশাক দিয়ে ঢাকা থাকলেও কিন্তু নারীর দেহের অর্ধাংশেরও কম পোশাক থাকে এবং নারীর দেহের বুক, পেট ও নিতম্ব হাইলাইটস করে তুলে ধরা হয় যাতে পুরুষেরা এসব অঙ্গ দেখে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে পারেন।
[2] বর্তমানের পৃথিবীতে সস্তা মালের কাস্টমার যেমন একটু বেশী, তেমনিভাবে এদেরও লুচ্চা-বদমাইশদের কাছে একটু কদর বেশি।
[3] এখানে সত্যিকার্থেই ইসলাম তাদের বাড়া ভাতে ছাঁয় দিয়েছে। তারা যা করতে চাচ্ছে ইসলাম তা কখনো সমর্থন করে না।
[4] চিকিৎসকরা ধর্ষকদের অপরাধ আড়াল করতে তারা দাবি করেছেন মেয়েটি ধর্ষিত হয়নি। একজন পূর্ণ যৌবনাবতী মেয়ে হত্যাকান্ডের আগে ধর্ষিত হয়নি, অথবা হত্যাকারীর হাত মেয়েটির যৌনাঙ্গ স্পর্শ করেনি একথা টি পাগলের প্রলাপ ব্যতীত আর কিছু নয়।
[5] এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, ধর্ষিত নারীর মধ্যে হিজাবী মেয়ের সংখ্যা কত? যে সব হিজাবী মেয়ে ধর্ষিত হয়েছে তারা কি ইসলামের মানদণ্ড অনুযায়ী হিজাব পালন করতো? আর হিজাব কি শুধু বোরখা পড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ? ইসলামে হিজাব কি শুধু মেয়েদের বেলায় প্রযোজ্য? এখানে আরেকটি প্রশ্ন হচ্ছে, বিদ্যুতের একটি তারের সাহায্যেই লাইটের আলো জ্বলে নাকী পজেটিভের সাথে নেগেটিভের সংযোগ থাকতে হয়? আশা করি স্বার্থবাদীরা এর জবাব দিবেন।
[6] হ্যাঁ, এখানে ধর্ষিত নারীর পোশাক দ্বায়ী নয়, কিন্তু নগ্নবাজ নারীর পোশাক দ্বায়ী।
The post গান লোডের আড়ালে যৌন ভিডিও’র ব্যবসা appeared first on Amar Bangla Post.