কৃত্রিমই হোক আর অকৃত্রিমই হোক, সন্তোষসহকারে সঙ্গীকে গ্রহণ করে তৎপর গৃহকে আনন্দময় করার দিকে মনঃসংযোগ করতে হবে।
নৃত্য, গীত, বাদ্য প্রভৃতি যে সমস্ত আনন্দের উপকরণ এ-যাবৎ মানুষকে ঘরের বাহিরে আকর্ষণ করেছে, সেই সমস্ত উপকরণকে গৃহে প্রতিষ্ঠিত করে পুরুষকে গৃহ-মুখী করতে হবে। রাজার শাসন-ভীতি বা ধর্মের নরকাগ্নি-ভীতি যে পুরুষকে এ পর্যন্ত গৃহে বন্ধ করতে পারে নাই, আনন্দ তা করতে পারবে।
স্ত্রীর দায়িত্ব—স্বামীর সহযোগীতা
গৃহকে আনন্দময় করার দায়িত্ব প্রধানতঃ নারীর গলেও এ-কার্য্যে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের সহযোগিতা নিতান্ত প্রয়োজন। বাস-গৃহ ও শয্যাদি পরিপাটি রাখা, খাদ্য-দ্রব্য রুচিকর করে রান্না করা, শৃঙ্খলা ও মিতব্যয়িতার সহিত সংসার পরিচালনা করা, নিজের দেহ ও পোশাক-পরিচ্ছদকে সুশ্রী ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ইত্যাদি কার্য্য স্ত্রী সামান্য চেষ্টাতে নিজেই সম্পাদন করতে পারে। সাধ্য-মত প্রসাধন ক্রিয়াদি দ্বারা নিজের রূপ-যৌবনকে স্বামীর চক্ষে লোভনীয় রাখতে প্রত্যেক স্ত্রীর চেষ্টা করা উচিত।
নৃত্য-গীতাদি দ্বারা স্বামীকে আনন্দ দান করার যোগ্যতা প্রত্যেক স্ত্রীর থাকা আবশ্যক। এ-সমস্ত উপায়ও স্ত্রী নিজেই অবলম্বন করতে পারে। কিন্তু এমন অনেক বিষয় আছে, যাতে স্বামী-স্ত্রীর সহযোগিতা অবশ্য প্রয়োজনীয়।
পারস্পরিক মনোভাবের বিস্তীর্ণতা
আমরা উপরে ডাঃ মেরী স্টোপসের যে মত উদ্ধৃত করেছি, যেখানে তিনি বলেছেন যে, সংসারের যাবতীয় ব্যাপারে স্বামী-স্ত্রীর ঐক্যমত থাকিলেও যৌন-ব্যাপারে গরমিল হলে তাঁদের দাম্পত্য-জীবন সুখের হতে পারে না; পক্ষান্তরে, পৃথিবীর যাবতীয় ব্যাপারে মত-ভেদ থাকিলেও রতি-ক্রিয়ার পারস্পরিক উপযোগিতা থাকলে উভয়ের জীবন সুখের হতে পারে। যৌন-উপযোগিতার উপর অতিরিক্ত জোর দিতে গিয়েই হয়তো ডাঃ স্টোপস ঐ কথা বলেছেন। অন্যথায় তিনি রতি-ক্রিয়া ব্যতীত অন্যান্য সমস্ত উপযোগিতার আবশ্যকতাকে ঐ ভাবে উড়িয়ে দিতেন না। অন্যান্য সমস্ত বিষয়ে মতের মিল থাকলেও রতি-ক্রিয়ায় পরস্পরকে আনন্দ দান করতে না পারলে যে সে-দাম্পত্য-জীবন সুখের হতে পারে না, এ-কথা আমরা বিনা-প্রতিবাদে মেনে নিচ্ছি। কিন্তু যাবতীয় ব্যাপারের মত-বিরোধ একমাত্র যৌন-উপযোগিতার দ্বারা নিরুদ্ধ হতে পারে, এ-কথা আমরা মেতে নিতে পারছি না। তবে এ-কথা সত্য যে, দম্পতির যৌন-সামঞ্জস্য তাঁদের অন্যবিধ সামঞ্জস্য বিধানের সুদৃঢ় ভিত্তি হতে পারে। দম্পতির যৌন-উপযোগিতাকে আশ্রয় করে তাঁদের অন্য সর্বপ্রকারের বিরোধ ধীরে-ধীরে অপসারিত পারে। গৃহকে সম্যক আনন্দপূর্ণ করতে হলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সকল প্রকার ঐক্যমত না হোক অন্ততঃ সহিষ্ণুতা প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন। সেজন্য স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি নিতান্ত সহানুভুতি-সম্পন্ন হওয়া আবশ্যক। অন্যথায় দম্পতির প্রেম দীর্ঘকাল স্থায়ী হতে পারে না। কারণ আমরা সাধারণতঃ যাহাকে প্রেম বলে থাকি, তা আমাদের যৌন-আসঙ্গ-লিপ্সা ছাড়া আর কিছুই নয়। এই লিপ্সা যেমন তীব্র, তেমনই অল্প-কাল স্থায়ী। রূপ-যৌবনের সঙ্গে-সঙ্গে এই লিপ্সার তীব্রতা হ্রাস-প্রাপ্ত হয়। কিন্তু এই তীব্র লিপ্সাকে ভিত্তি করেই সৌহার্দ্দ্য, সহানুভূতি ও মমতার মিশ্রণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে একত্ববোধের উন্মেষ হয়, তাঁর নাম ভালবাসা। সহৃদয়তা, সহানুভূতি ও প্রীতির কর্ষণে বিবাহিত জীবনে ধীরে-ধীরে এই ভালবাসা দম্পতির প্রাণে দৃঢ়-মূল হয়ে বসে। ফলে রূপ-যৌবনের ভাটার সঙ্গে তাঁদের মধ্যে যে যৌন-লিপ্সার তীব্রতা হ্রাস-প্রাপ্ত হয়, সে-কথা তাঁরা বুঝতে পারে না।
এই স্থায়ী সত্যিকারের ভালবাসার উন্মেষ-লাভ হয় কেবল তখনই, যখন যৌন-লিপ্সার প্রাথমিক তীব্রতা হ্রাস-প্রাপ্ত হয়ে থাকে। কিন্তু যৌন-লিপ্সার তীব্রতা বিদ্যমান থাকতে-থাকতেই যদি সহৃদয়তা, সহানূভূতি ও প্রীতির দ্বারা পারস্পরিক মমত্ব-বোধের ভিত্তি গড়ে তোলা না হয়, তবে স্থায়ী ভালবাসা কখনও জন্মলাভ করতে পারে না। সহৃদয়তা ও সহানুভূতি সাধনার বস্তু। মানুষের মন কলে-তৈরি জিনিষ নয়। সুতরাং যত বাছাই করেই বিবাহ হোক না কেন, মন ও দেহের দিক দিয়ে একেবারে খাপ খেয়ে যাবে, এমন দু’টি নর-নারী পাওয়া নিতান্তই দুস্কর। সুতরাং সম্যকরূপে পারস্পরিক উপযোগিতা লাভের জন্য উভয় পক্ষ হতেই কিছু না কিছু ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে। পরস্পরের প্রতি অকৃত্রিম সহানুভূতি না থাকলে এই ত্যাগ স্বীকারের বাসনা-স্ফুরণ হতে পারে না। উপরন্ত এই ত্যাগ স্বীকারের বাসনা-স্ফুরন না হলে পরস্পরকে সুখী করার কোনও চেষ্টা কোনও দিক হতে হবার সম্ভাবনা নাই।
ফলতঃ যে-গৃহে স্বামী স্ত্রী পরস্পরকে সুখী করিবার জন্য আগ্রহশীল, যে-গৃহে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের মেজাজকে পরস্পরের উপযোগী করতে যত্নবান, সেই গৃহে আনন্দ বিরাজমান, সে গৃহেই দম্পতি সুখী না হয়ে যায় না।
এরপর পড়ুন >> স্ত্রী ও পুরুষের ভাবের পারস্পরিকতা
আপনি পড়ছেন >> যৌন বিজ্ঞান বই থেকে।
লেখাটি পড়ে আপনার কাছে ভালো লাগলে এটি শেয়ার করুন।
The post গৃহ আনন্দ (দাম্পত্য জীবনের লাইফস্টাইল টিপস) appeared first on Amar Bangla Post.