আমি পূর্বেই বলেছি, দাম্পত্য-জীবনকে সম্যক-রূপে সুখী ও আনন্দ-ময় করতে হলে স্বামী-স্ত্রীকে পরস্পরে প্রতি সহানুভূতি সম্পন্ন হতে হবে, পরস্পরের মনোভাবের প্রতি শ্রদ্ধা-সস্পন্ন হতে হবে।
তা হতে গেলে পরস্পরের মনোভাব সম্বন্ধে উভয়ের সম্পূর্ণ সচেতন থাকা প্রয়োজন। মানুষের মনোবৃত্তি অধ্য্যন খুব কঠিন কার্য হলেও যে দম্পতি পরস্পরকে ভালবাসে, তাঁদের পক্ষে পরস্পরের মনোভাব অধ্যয়ন করা খুব কঠিন নয়। রুচি, মেজাজ ও মনোবৃত্তি ব্যক্তি-ভেদে বিভিন্ন হলেও দাম্পত্য-জীবনের অনেকগুলি বিষয়ে স্বামী-স্ত্রীর মনোভাব ও আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রায় সাধারণ।
“In matrimony, as in Religion. In things essential there should be unity, in things indifferent, diversity, in all things charity.”
দাম্পত্য-জীবনকে আনন্দ-প্রদ করতে হলে এই সমস্ত সার্বজনীনভাব সম্বন্ধে স্বামী-স্ত্রীর জ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যক। স্ত্রীর মধ্যে স্বামী কি কি গুণ আশা করে, আমি প্রথমে তাঁর এবং স্বামীর মধ্যে স্ত্রী কি কি গুণ আকাঙ্ক্ষা করে, পরে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে। তৎপূর্বে এ-কথাটি বলে রাখা দরকার যে, আমাদের দেশে সাধারণতঃ স্বামী-স্ত্রী বিবাহ-জাত ধর্মীয় ও আইন-গত বন্ধনকেই যথেষ্ট দৃঢ় বন্ধন মনে করে পরস্পরের প্রতি কর্তব্য ও দায়িত্বে ঔদাসীন্য প্রদর্শন করে থাকে।
“আমাদের মধ্যে যখন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বন্ধন বিবাহ হয়ে গেছে, তখন আর পরস্পরের প্রতি ভদ্রতার কোনও প্রয়োজন নাই” এরূপ মনোভাব ভাল নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, বিবাহ কেবল অধিকার সৃষ্টি করে না, দায়িত্বও সৃষ্টি করে এবং সে দায়িত্ব খোরাক-পোষাকে সীমা-বদ্ধ নয়।
পুরুষ সম্বন্ধে নারীর জ্ঞাতব্য ও কর্তব্য
আমি পূর্বে এক পরিচ্ছেদে বলেছি যে,
স্ত্রীকে আদর্শ-স্ত্রী হতে হলে তাঁকে স্নেহে মাতা, আদরে ভগিনী, বিপদে বন্ধু, সেবায় দাসী ও শয্যায় বেশ্যা হতে হবে।
অন্যান্য সাংসারিক ব্যাপারে স্ত্রীর প্রয়োজনীয় গুণসমূহের কথা আলোচনা না করে আমরা এখানে স্বামীর যৌন-প্রয়ওজনের দিক হতেই স্ত্রীর গুণসমূহ আলোচনা করবো। যৌন-প্রয়োজনের দিক হতে স্ত্রীর নিম্নলিখিত গুণসমূহ থাকা চাইঃ
সৌন্দর্যের সাধনা
(১) সৌন্দর্য্য—যৌন-প্রয়োজনের দিক হতে সৌন্দর্য্যের স্থান এত উচ্চে যে অষ্টাদশ খৃষ্টাব্দের নীতিবাদী লেখক কবেটিও তদীয় ‘যুবকগণের প্রতি উপদেশ” নামক গ্রন্থের ‘প্রেমিকের প্রতি’ শীর্ষক অধ্যায়ে লিখিতে বাধ্য হয়েছেন “শারীরিক সৌন্দর্য্য চর্মের গুণ মাত্র’, ‘গুণই সৌন্দর্য্য’, “শারীরিক সৌন্দর্য্য চক্ষুকেই শীতল করে, কিন্তু অন্তরকে দাহ করে’ ইত্যাদি প্রবাদ-বাক্য শারীরিক সৌন্দর্য্য-বিহীনদের সান্ত্বনা লাভের জন্য আবিস্কৃত হয়েছে মাত্র।
হ্যাভলক এলিস বলেছেন, ‘দৈহিক সৌন্দর্য্য আমাদের যৌন-জীবনের একমাত্র না হলেও প্রধান প্রয়োজনীয় গুণ।’ ডাঃ ফোরেল বলেছেন যে, দৈহিক আকর্ষণই যৌন-আকর্ষণের প্রধান উপাদান। প্রেগ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডাঃ হেনরী কিশতদীয় “নারীর যৌন-জীবন” নামক গ্রন্থে যৌন-জীবনে সৌন্দর্য্যের, বিশেষ করে নারী-সৌন্দর্য্যের, প্রয়োজনীয়তা বিশ্লেষণ করেছেন।
পুরুষের মনোভাব
ডাঃ ফোরেল ও মিঃ এলিস এ বিষয়ে সম্পূর্ণ এক-মত যে সাধারণ সৌন্দর্যজ্ঞান ও যৌন-সৌন্দর্য্য-জ্ঞানের প্রভেদ অনেকখানি। সাধারণ সৌন্দর্য্য-জ্ঞান আমাদের চক্ষু ও সঙ্গে-সঙ্গে মনকে আনন্দ দান করে। কিন্তু যৌন-সৌন্দর্য্য-জ্ঞান আমাদের চক্ষু ও সঙ্গে-সঙ্গে মনকে আনন্দ দান করে। কিন্তু যৌন-সৌন্দর্য্য-জ্ঞান আমাদের চক্ষু ও মনের সঙ্গে দেহকেও চঞ্চল করে তুলে। একটি ফুলের বা একটি স্থানের প্রাকৃতিক দৃশ্যের সৌন্দর্য্য যেভাবে আমাদের সৌন্দর্য্য—জ্ঞানকে আঘাত করিবে, একটি সুন্দর সুঠাম নারীদেহ আমাদেরকে সেভাবে আঘাত করবে না। ডাঃ ফোরেলের মতে প্রথমোক্ত অবস্থায় আমাদের সৌন্দর্য্যানুভূতি ‘নিঃস্বার্থ ও নিস্ফল, তাতে আসঙ্গ-লিপ্সা নাই; আর শেষোক্ত সৌন্দর্য্য—বোধে আমাদের লিপ্সা আছে। হ্যাভলক এলিস আমাদের যৌন-সৌন্দর্য-জ্ঞানের পাণ্ডিত্য-পূর্ণ দীর্ঘ বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে, যৌন-সৌন্দর্য্য-জ্ঞান আমাদের যৌন-প্রয়োজন-বোধের উপর প্রতিষ্ঠিত। অতি প্রাচীনকাল হতে যৌন-সৌন্দর্য্য-বোধের ইতিহাস আলোচনা করলে আমরা দেখতে পাই যে, পুরুষের চক্ষে সেই নারীই সর্ব্বাপেক্ষা সুন্দরী, যে-নারীর যৌন-অঙ্গসমূহ স্বাভাবিক-ভাবে অথবা কৃত্রিম উপায়ে দেহের অন্যান্য অঙ্গের উপর প্রাধান্য লাভ করেছে। নারীর #স্তন উন্নত অথবা তাঁর #নিতম্ব স্থল, তাঁর ঊরুদ্বয় সুডৌল হওয়ার মধ্যে সাধারণ সৌন্দর্য্য-জ্ঞানের বিচারে বিশেষ কোনও সৌন্দর্য্য থাকবার কথা নয়। কিন্তু পুরুষের যৌন-প্রয়োজনীয়তার খাতিরে তা পুরুষের চক্ষে সুন্দরের রূপ প্রাপ্ত হয়েছে। ঠিক সেইরূপে, পুরুষের পেশী-বহুল দেহ নারীর চক্ষে চরম সুন্দর জিনিষ। নারীর পেশী-হীন সুডৌল কোমল দেহ যদি সৌন্দর্য্যের নিদর্শন হয়, তবে পুরুষের অমন দৃঢ়-দেহ সৌন্দর্য্যের নিদর্শন কেন হবে, নিরপক্ষে সৌন্দর্যোপাসকের তা বোধগম্য হবে না। নারীর যৌন-প্রয়োজনের জন্যই পুরুষের পেশী-বহুল দেহ সুন্দর আখ্যা পেয়েছে।
ডাঃ কিশ বলেছেন, নারী-পুরুষের উভয়ের সৌন্দর্য্যের প্রয়োজন থাকলেও সৌন্দর্য্য প্রধানতঃ নারীরই অংগ-ভূষণ। ভবিষ্যতে পৃথিবীতে নারী-প্রাধান্য স্থাপনের সঙ্গে যখন নারীর প্রয়োজনই পৃথিবীর সৌন্দর্য্যের মাপকাঠি হবে, তখনকার কথা পৃথক। কিন্তু বর্তমানে পুরুষের প্রয়োজনের খাতিরেই হোক, আর নিজস্ব গুণের দরুণই হোক, নারী-দেহই সৌন্দর্য্যের আদর্শ। এই নারী-সৌন্দর্য্যের জন্য অনাদিকাল হতেই পুরুষ তাঁর ধন, মান, স্বার্থ্য এমন কি প্রাণকে পর্যন্ত তুচ্ছ করে আসছে।
সুতরাং যে নারী নিজের দৈহিক সৌন্দর্য্যের প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন করিল, সে পুরুষের মনোভাবকেই অশ্রদ্ধা করিল।
এরপর পড়ুন >> ব্যায়াম ও প্রসাধন
আপনি পড়ছেন >> যৌন বিজ্ঞান বই থেকে।
লেখাটি পড়ে আপনার কাছে ভালো লাগলে এটি শেয়ার করুন।
The post স্ত্রী ও পুরুষের ভাবের পারস্পরিকতা appeared first on Amar Bangla Post.