দৈহিক সৌন্দর্য্য প্রধানতঃ প্রকৃতির দান। কিন্তু প্রকৃতির-দেওয়া এই সৌন্দর্য্য রক্ষা করা ব্যক্তিগত ইচ্ছা ও সাধনার উপর নির্ভর করে।
দৈহিক সৌন্দর্য্য রক্ষা করতে হলে দেহের মাংস দৃঢ়, চর্ম মসৃণ ও কোমল রাখতে হবে। তা করতে হলে #ব্যায়াম ও প্রসাধনের প্রয়োজন। চর্মের বর্ণ ও দেহের গঠন প্রকৃতির দান হলেও প্রসাধন ও ব্যায়ামের দ্বারা মানুষ তাঁর অনেক উন্নতি সাধন করতে পারে। একথা আমাদের স্মরণ রাখা উচিত যে, শারীরিক সৌন্দর্য্য স্বাস্থ্যের সহিত ঘনিষ্ট সম্বন্ধ-যুক্ত। স্বাস্থ্য ভাল না থাকলে প্রকৃতির-দেওয়া সুন্দর দেহও উতি সত্বর বিশ্রী হয়ে যায়। পক্ষান্তরে সুন্দর স্বাস্থ্য কান্তি ও লালিত্য দ্বারা দেহের অনেক গঠন-ক্রটি সংশোধন করতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম ও সবল ইচ্ছা-শক্তি দ্বারা অনেককে দেহ সুগঠিত করতে দেখা গেছে।
ইংরেজীতে একটা মূল্যবান কথা আছে যার অর্থ এইঃ “পৃথিবীতে শ্রী-হীন স্ত্রীলোক নাই, শুধু এমন কতিপয় স্ত্রীলোক আছে যাহারা নিজেদের সৌন্দর্য্য ফুটিয়ে তোলার কায়দা জানে না।”
কথাটি নিতান্ত মিথ্যা নয়। পুরুষের প্রশংসা-ও প্রীতি-লাভই যদি স্ত্রী-সৌন্দর্য্যের মাপকাঠি হয়, তবে সত্যই পৃথিবীতে বেশী-সংখ্যক অসুন্দর মেয়েলোক পাওয়া যাবে না। কারণ নিজের দেহ সম্বন্ধে মনোযোগী হলেই সমস্ত স্ত্রীলোকই নিজেকে পুরুষের চক্ষে লোভনীয় করে তুলতে পারে।
পুরুষ অসুন্দর হলেও নারী বা স্বীয় স্ত্রীকে সুন্দর দেখতে চায়।
স্ত্রীলোকের স্মরণ রাখা উচিত, পুরুষের সৌন্দর্য্য-ক্ষুধা অতিশয় প্রবল। সেইজন্য পুরুষ নিজে অতিশয় অসুন্দর হয়েও নিজের স্ত্রীকে সুন্দর দেখতে চায়; এবং এই জন্যই পুরুষ নিজের চেয়ে স্ত্রীর জন্য অধিক অর্থব্যয় করতে কুণ্ঠিত হয় না। নারীর এ কথাও সর্বদা স্মরণ রাখতে হবে যে, সারাদিন জীবিকার্জ্জনের জন্য পুরুষ যে কঠোর পরিশ্রম করতে পারে, তা কেবল স্ত্রীর সুন্দর মুখের হাসিটুকুর জন্য। কাজেই দাম্পত্য-জীবন সুখের করতে হলে নারীকে নিজের দেহের সৌন্দর্য্য রক্ষা করতে হবে।
সামান্য চেষ্টাতেই #নারী তাঁর দেহের সৌন্দর্য্য রক্ষা করতে পারে। কারণ পুরুষের চক্ষে নারী স্বভাবতঃই সুন্দর এই জন্য যে, পুরুষ নারীর সৌন্দর্য্য বিচার করে তাঁর যৌন-বুদ্ধির কষ্টিপাথরে।
কতিপয় উপদেশ
নারীর স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য রক্ষায় নিম্নে নারীদের পালনের জন্য সংক্ষেপে কিছু উপদেশ দেওয়া হলঃ
(১) সর্বদা মানসিক প্রফুল্লতা রক্ষা করতে হবে। মানসিক প্রফুল্লতা শারীরিক শ্রীবর্ধক।
(২) পরিমিত আহার করতে হবে। উদরাময় নারী-দেহের পরম শত্রু।
(৩) যথাসম্ভব উন্মুক্ত বাতাসে ভ্রমণ করতে হবে। ভ্রমণের মত উপকারী ব্যায়াম আর নাই।
(৪) আবশ্যক-মত নিদ্রা যেতে হবে। অনিদ্রা স্বাস্থ্যের পক্ষে বিষম অনিষ্ট-জনক বা ক্ষতিকর।
(৫) শারীরিক পরিশ্রমে পরাঙ্মুখ হবেন না। পরিশ্রম দেহকে সুগঠিত করে ও চর্মকে লালিত্য ও মসৃনতা দান করে।
(৬) রাত্রে নিদ্রা যাবার পূর্বে প্রসাধন করতে ভুল করবেন না; এই অভ্যাস সৌন্দর্য্য-বর্দ্ধক।
(৭) শরীর সোজা ও মস্তক উন্নত করে চলা-ফেরা করতে হবে। এটি আপনার শরীরের দৃঢ়তা রক্ষা করবে।
পোশাক ও অলঙ্কার
দৈহিক সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির আর এক উপায় পোষাক ও অলঙ্কার। সুপ্রযুক্ত পোষাক নারীর দৈহিক সৌন্দর্য্য শতগুণে বৃদ্ধি করে থাকে। পোশাক ও অলঙ্কার পরিধানে নারীর প্রধাণতঃ স্বামীকেই বিচারকের পদে অধিষ্ঠিত করা উচিত। অর্থাৎ যে পোষাক স্বামীর চক্ষে ভাল লাগে, অন্যে যাই বলুক, নারীর সেই পোষাকই পরিধান করা উচিত। কারণ, নারীর সৌন্দর্য্যের প্রধান উদ্দেশ্য স্বামীর মনকে স্ত্রীতে নিবদ্ধ রাখা, বাজারে বা সভা-সমিতিতে নিজের রূপের প্রদর্শনী খোলা নয়।
স্বামীর ভালো লাগা পোশাক পরিধান করে স্বামীকে বিমোহিত করুন।
তাই বলে পোষাকে স্বামীর অবস্থার অতিরিক্ত ব্যয় করা স্ত্রীর উচিত নয়। বিশেষতঃ মূল্যের উচ্চতার সঙ্গে পোষাকের সৌন্দর্য্যের বিশেষ সম্বন্ধ নাই। ভাল করে সাজিয়ে-গুছিয়ে পরতে জানলে অল্প মূল্যের পোষাকও দেখতে সুন্দর লাগে।
মেজাজ
মেজাজ নারী-সৌন্দর্য্যের উপেক্ষনীয় উপাদান নয়। ফলতঃ নারী-দেহের সৌন্দর্য্য অঙ্গের ও মুখের গতি-ভঙ্গির উপর নির্ভর করে এবং অঙ্গের গতি-ভঙ্গি ষোলআনা মেজাজের উপর নির্ভর করে। মেজাজটা ঠাণ্ডা রেখে স্নেহ ও মমতার সহিত ব্যবহার করে নারী পুরুষের শুধু ভালবাসা নয়, তাঁর শ্রদ্ধা লাভ করতে পারে, পুরুষের উপর নির্ব্বিবাদে প্রভূত্ব করতে পারে।
অহংকারী ও বদ-মেজাজী নারীরা দুনিয়ার সবচেয়ে বড় নির্বোধ জীব।
অহংকারী, বদ-মেজাজী ও রাগত স্বভাবের নারীর মত নির্বোধ জীব আর দুনিয়াতে নেই। কারণ রাগের দ্বারা নারী নিজের অবস্থাই শোচনীয় করে তুলে। পুরুষের এইটুকু চরিত্র-বৈশিষ্ট্য অধ্যয়ন করা প্রত্যেক নারীর পক্ষে অবশ্য কর্তব্য যে, চোখ রাঙিয়ে পুরুষকে শাসন করা যাবে না। পুরুষের উপর কর্তৃত্ব করতে হলে নারীকে পুরুষ-চরিত্র অধ্যয়ন করতে হবে। নারী জাতির জ্ঞাতার্থে আমি নিম্নে পুরুষের কতিপয় দুর্ব্বলতার গুলো উল্লেখ করে দিচ্ছিঃ
যে মানসিক সবলতা পুরুষের শক্তি, সেই সবলতাই তাঁর দুর্বলতা। সে নারীকে সরলভাবে বিশ্বাস করতে পারে। সে বিশ্বাসে যেমন সরলতা আছে, তেমনি বিচার-হীন অন্ধতাও বিদ্যমান আছে। নারী ইচ্ছা করলেই বাহ্য সরলতা ও আদর-স্নেহ দিয়ে পুরুষকে অনায়াসে ভুলিয়ে রাখতে পারে। নারী যতই বিনয়-নম্র ও সেবা-পরায়ণ হবে, পরুষ ততই তাঁর উপর নির্ভরশীল গোলামে পরিণত হবে। পুরুষ নারী অপেক্ষা অনেক বেশী ভাব-প্রবণ এবং এই ভাব-প্রবণতার প্রকাশও পৌরুষপূর্ণ। পুরুষ যদিও ক্রোধে কটুক্তি ও শ্লেষপূর্ণ গালাগালি করতে জানে না, শোকে অশ্রুপাত করতে জানে না, তথাপি তাঁর ক্রোধ ও শোক নারী অপেক্ষা কম নয়, শুধু তাঁর প্রকাশ-ভঙ্গি ভিন্ন।
বুদ্ধিমতি নারীরা স্বামীকে নিজেদের ইচ্ছে মতো খাঁটিয়ে নিতে পারে।
বুদ্ধিমতী নারী ইচ্ছা করলেই পুরুষের এই অহমিকতাপূর্ণ ভাব-প্রবণতার সুযোগ গ্রহণ করে শুধু বাহবা দিয়ে তাঁকে যত-ইচ্ছা খাটিয়ে নিতে পারে। পুরুষ নারী অপেক্ষা সরল ও উদার-হৃদয়। সে নারীর মত মনোভাব গোপন করতে জানে না।
নারী যদি বুদ্ধিমতী হয় এবং স্বামীকে সত্যই যদি সে ভালবাসে, তবে স্বামীর এই সমস্ত চরিত্র-গত বৈশিষ্ট্যের সুযোগ গ্রহণ করে সে বাস্তবিকই দাম্পত্য-জীবনকে সুখময় করে তুলতে পারে। আমরা পুরুষের এই সমস্ত দুর্বলতার উল্লেখ করেছি নারীকে পুরুষ ঠকানোর কায়দা শিখানোর জন্য নয়, পরন্ত পুরুষকে সম্যকরূপে বুঝিয়ে দেওয়া জন্য।
নারীর জাতির সতর্কতার জন্য পুরুষের এই চরিত্র-গত বৈশিষ্ট্যটুকুর কথাও বলে রাখা ভাল যে, পুরুষ সাধারণতঃ সরল বিশ্বাসী ও নিঃসন্দিগ্ধ বটে, কিন্তু যদি সে বিশ্বাস-ভঙ্গের প্রমাণ একবার পেয়ে যায়, তবে পুরুষের অহমিকতা এমন ভীষণ আকার ধারণ করে যে, সে চরম প্রতিহিংসা গ্রহণ করতে কুণ্ঠিত হয় না।
এরপর পড়ুন >> যৌন-বোধ
আপনি পড়ছেন >> যৌন বিজ্ঞান বই থেকে।
লেখাটি পড়ে আপনার কাছে ভালো লাগলে এটি শেয়ার করুন।
The post ব্যায়াম ও প্রসাধন (স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য্য রক্ষায় টিপস ও পরামর্শ) appeared first on Amar Bangla Post.