প্রখ্যাত ওলী আল্লাহ মালেক ইবনে দিনার একবার এক বাজারের উপর দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি দেখেন বিক্রির জন্য নিয়ে আসা একটি অসাধারণ সুন্দরী দাসী। তখনকার সময়ে হাটে-বাজারে দাস-দাসী বেচাকেনা হত। বিত্তশালীরা শখ করে এসব দাস-দাসী ক্রয় করত। এসব দাস-দাসীদের কারো কারো মূল্য এক লক্ষ দিরহামও হত। মালেক বিন দিনার দাসীর মালিকের সামনে গিয়ে সরসাসরি দাসীকে বললেন—আমি তোমাকে কিনে নিতে চাই। মালেকের কথা শুনে দাসী হেসে ফেলল। এরপর বলল আপনার মত গরীব লোক আমাকে কি করে কিনবেন?
দাসীর মালিকের কাছে মালেক বিন দিনার এবং দাসীকে নিয়ে যাওয়া হল। মালেক দাসীর মালিককে বললেন-জনাব, আমি আপনার এ দাসী কিনে নিতে চাই। একথা শুনে সেখানে উপস্থিত সবাই হাসাহাসি করতে লাগল। মালিক ঠাট্টাচ্ছলে বলল এ দাসীর মূক্য আপনি কত দিতে পারবেন? মালেক বিন দিনার বললেন—কত দাম দেব? শোন আমি খুব সস্থায় কিনতে চাই। দাসীর মালিক বলল বলুন কত দাম দেবেন। মালেক বিন দিনার বললেন—আমার কাছে এ দাসীর মূল্য হচ্ছে খেজুরের চুষে খাওয়া দুটি দানা। এতে দাসীর মালিক ও উপস্থিত সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠল। দাসীর মালিক বলল কি বলছেন আপনি? এটা কি কোণ দাম হল?
মালেক ইবনে দিনার বললেন—যদি এ দাসী সুগন্ধি না মাখে তাহলে ঘামের গন্ধে তাঁর শরীর দুর্গন্ধ হয়ে যায়। প্রতিদিন যদি দাঁত পরিস্কার না করে তাহলে কাছে বসা যায় না। প্রতিদিন যদি মাথা না আচঁড়ায় তাহলে মাথায় উঁকুন অন্যদের মাথায়ও ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কয়েক বছর কেটে যাওয়ার পর সে বৃদ্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া তাঁর রয়েছে দুঃখ কষ্ট দুশ্চিন্তা। তাঁর মনে রয়েছে হিংসা ঘৃণা ক্রোধ। সে নিজের আকাঙ্খা পূরণ করার জন্যইও তোমাকে মহব্বত করে। তাঁর এ ভালবাসা অকৃত্রিম নয়। বলা যায় যে সে ভালবাসার অভিনয় করে। আমার কাছে এক দাসী আছে তাঁকে খরিদ করবে? দাসীর মালিক বলল কোথায় সে দাসী?
মাল্কে ইবনে দিনার বললেন—সে দাসী মাটির তৈরী নয় বরং মেশক, আম্বর, জাফরান এবং কাফুরের তৈরি। তাঁর চেহারায় যে নুর রয়েছে সে নুর আল্লাহর নূরের অংশ। হাদীসে বলা হয়েছে—তার চেহারা যদি দুনিয়ার অন্ধকারে দেখানো হয় তাহলে গোটা পৃথিবী আলোকিত হয়ে যাবে। তাঁর চেহারার সামনে সূর্যের আলো ম্লান হয়ে যাবে। সে যদি সমুদ্রে থু থু নিক্ষেপ করে তাহলে সমুদ্রের সব পানি মিঠা হয়ে যাবে। সে দাসী যদি মৃত মানুষের সাথে কথা বলে তবে মৃত মানুষ জীবিত হয়ে যাবে। সে দাসী যদি জীবিত মানুষের সাথে কথা বলে তাহলে সে মানুষ কলিজা ফেটে মারা যাবে। সে যদি নিজের আঁচলের দোল দেয় তাহলে গোটা পৃথিবী সুবাসিত হয়ে যাবে। সাতটি সমুদ্রে যদি সে থু থু নিক্ষেপ করে তাহলে সব সমুদ্রের পানি মিঠা হয়ে যাবে। সে জাফরান এবং মেশকের বাগানে প্রতিপালিত হয়েছে। তাসনিম ঝর্ণার পানি সে লান করেছে। তাঁর ভালবাসা খাঁটি সে ভালবাসায় কোন কৃক্রিমতা নেই। সে একান্ত অনুগত তাঁর আনুগত্য কোণ ফাঁকি নেই। তাঁর মনে ক্রোধ নেই হিংসা নেই, ঘৃণা নেই। তাঁর বয়স বাড়বে না সে সব সময় থাকবে সুন্দরী এবং যুবতী। সে সব সময় সাথে সাথে থাকবে। কখনো তাঁর মৃত্যু হবে না। এবার বল আমার দাসী উত্তম না-কি তোমার এ দাসী উত্তম। দাসীর মালিক বলল, আপনি যে দাসীর কথা বলেছেন নিঃসন্দেহে সে অতি উত্তম। কিন্তু তাঁর মূল্য কত? মালেক ইবনে দিনার বললেন-তার মূল্য বেশি নয়। তাঁকে পেতে হলে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে হবে। মানুষকে সন্তুষ্ট করা যাবে না। অর্ধেক রাত অতিবাহিত হওয়ার পর সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়বে তখন উঠে অন্ধকারে দুই রাকাত নামায আদায় করবে। যখন নিজে খাবার খাবে তখন গরীব দুঃখীদেরও কিছুটা খেতে দেবে। যদি এসব কর তাহলে তুমি সে দাসীর মালিক হতে পারবে। এসব কথা শোনার পর দাসীর মালিক দাসীকে বলল শুনলেতো উনি কি বলেছেন। তুমি ছাড়াও আমার যত দাস-দাসী রয়েছে আমি সবাইকে এখনই আযাদ করে দিলাম। আর আমার সমুদয় ধন-সম্পদ গরীব দুঃখীদের মধ্যে বিতরণ করে দেব। এরপর সে দাসীর মালিক ঘরের দরোজা জানালার পর্দা খুলে নিয়ে সে পর্দা দিয়ে নিজের জামা তৈরি করলেন। দরিদ্রতাপূর্ণ জীবন বেছে নিয়ে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার কাজে বেরিয়ে পড়লেন।
মালেক ইবনে দিনার সে দাসীকে দাসীর মালিকের সাথে বিয়ে দিলেন। এরপর তাঁরা দু’জন আল্লাহর বড় ওলীতে পরিণত হল পরবর্তীতে বহুদুর থেকে মানুষ তাদের কাছে দোয়া নিতে আসত।
সূত্রঃ তাজা ঈমানের সত্য কাহিনী।
লেখকঃ মাওলানা তারিক জামীল।
The post মালেক বিন দিনার ও একজন দাসীর গল্প appeared first on Amar Bangla Post.