স্বামী যখন স্ত্রীকে প্রাণ দিয়ে ভালোভাসবে, স্ত্রীর সকল প্রয়োজন পূরণ করবে, তখন স্ত্রীকেও এমন ভূমিকা পালন করতে হবে, যেন স্বামী তার স্ত্রীর ব্যবহারে সন্তুষ্ট হয়। স্বামী তার জন্য কোন জিনিস নিয়ে এলে তার জন্যে সে শোকরিয়া জানাবে। এতে করে স্বামীর অন্তরে প্রেমের এক অনাবিল ভাবের সৃষ্টি হবে। এজন্যে নবী করীম (সাঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা’আলা এমন স্ত্রীলোকের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দান করবেন না, যে তার স্বামীর ভালো ভালো কাজের শোকরিয়া জ্ঞাপন করে না।” এ শোকরিয়া যে সব সময় মুখে ও কথায় জ্ঞাপন করতে হবে, এমন কোন জরুরী শর্ত নেই।
শোকরিয়া জ্ঞাপনের নানা উপায়ে হতে পারে। কাজে-কর্মে, আলাপে, ব্যবহারে স্বামীকে বরণ করে নেয়ার ব্যাপারে স্ত্রীর মনের কৃতজ্ঞতা ও উৎফুল্লতা প্রকাশ পেলেও স্বামী বুঝতে পারে!! অনুভব করতে পারে যে, তার ব্যবহারে তার স্ত্রী তার প্রতি খুবই সন্তুষ্ট ও কৃতজ্ঞ এবং সে তার জন্যে যে ত্যাগ স্বীকার করছে, তা সে অন্তর দিয়ে স্বীকার করে। বুখারী শরীফের একটি হাদীসে এগারো জন স্ত্রীলোকের এক বৈঠকের উল্লেখ রয়েছে।
এতে প্রত্যেক স্ত্রীই নিজ নিজ স্বামী-সম্পর্কে বর্ণনা দানের প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করে এবং তার পরে প্রত্যেকেই তা পরস্পরের নিকট বর্ণনা করে। একজন স্ত্রী তার স্বামীর খুবই প্রশংসা করে এ প্রশংসা করা যে অন্যায় নয় বরং অনেক সময় প্রয়োজনীয় তা এ থেকে সহজেই বোঝা যায়।
স্বামী বাইরে থেকে বাড়িতে এলে স্ত্রী সহাস্য বদনে স্বামীকে অভ্যর্থনা জানাবে। স্বামীর পোশাক পরিবর্তনে সাহায্য করবে, স্বামীর প্রয়োজনীয় জিনিস তাকে এগিয়ে দেবে। এতে করে স্বামীর হৃদয়ের জগতে এমন মধূভরা মলয় হিল্লোল বয়ে যায় যে, তার হৃদয় জগতের সব গ্লানি-শ্রান্তি-ক্লান্তিজনিত সব বিসাদ-ছায়া সহসাই দূরীভূত হয়ে যায়। স্বামী যত ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়েই ঘরে ফিরে আসুক না কেন এবং তার হৃদয়ে যত বড় দুঃখ, কষ্ট ওব্যর্থতায় ভারাক্রান্ত হোক না কেন, স্ত্রীর মুখে অকৃত্রিম ভালবাসাপূর্ণ হাসি দেখতে পেলে সে তার সব কিছুই নিমেষে ভুলে যেতে পারে।
কাজেই যে সব স্ত্রী, স্বামীর সামনে গোমরা মুখ হয়ে থাকে, স্বামীর সাথে প্রাণখোলে কথা বলে না, স্বামীকে উদার হৃদয়ে ও সহাস্যবনে বরণ করে নিতে জানে না বা করে না, তাঁরা নিজেরাই নিজেদের ঘর ও পরিবারকে নিজেদেরই একমাত্র আশ্রয় দাম্পত্য জীবনকে ইচ্ছে করেই জাহান্নামে পরিণত করে, বিষয়িত করে তোলে গোটা পরিবেশকে।
রাসূলে করীম (সাঃ) এ কারণেই ভাল স্ত্রীর অন্যতম একটি গুণ হিসেবে উল্লেখ করেছেনঃ “স্ত্রীর প্প্রতি স্বামীর দৃষ্টি পড়লেই স্ত্রী তাকে সন্তুষ্টি করে দেয় (স্বামী স্ত্রীকে দেখেই উৎফুল্ল হয়ে ওঠে)।” স্বামীর বাড়াবাড়ি ও ক্রুদ্ধ মেজাজ দেখতে পেলে স্ত্রীর খুব সতর্কতার সাথেই কাজ করা এবং কথা বলা উচিত। এ অবস্থায় স্ত্রীরও বাড়াবাড়ি করা কিংবা নিজের সম্ভ্রম—মর্যাদার অভিমানে হঠাৎ করে ফেটে পড়া কোন-মতেই বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে না। স্বামীর কাছে কিছুটা ছোট হয়েও যদি পরিস্থিতি আয়ত্তে রাখা যায়, তবে স্ত্রীর তাই করা কর্তব্য। কেননা তাতেই তার ও গোটা পরিবারের কল্যাণ নিহিত।
কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা’আলা এ পর্যায়েই ইরশাদ করেছেনঃ “কোণ স্ত্রী যদি তার স্বামীর বদমেজাজী ও তার প্রতি প্রত্যাখ্যাত উপেক্ষা-অবহেলা দেখতে পায় আর তার পরিণাম ভাল না হওয়ার আশঙ্কা বোধ করে, তাহলে উভয়ের যে কোন শর্তে সমঝোতা করে নেওয়ায় কোন দোষ নেই। বরং সব অবস্থায়ই সমঝোতা-সন্ধি-মীমাংসাই অত্যন্ত কল্যাণময়।” এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম শাওকানী লিখেছেনঃ “আয়াতে সাধারণ অর্থে কথাগুলো বলে হয়েছে। এভাবে বলার কারণে বোঝা যায় যে, যে সমঝোতার ফলেই উভয়ের মনের মিল হতে পারে, পারস্পরিক বিরোধ দূর হয়ে যায় তাই মোটামুটিভাবে অনেক উত্তম কাজ কিংবা তা অতীব উত্তম—বিচ্ছেদ হওয়া থেকে, বেশি উত্তম ঝগড়া-ফাসাদ থেকে।”
লিখেছেনঃ হযরত মাওলানা আশরাফ থানভী (রহঃ)।
সম্পাদনায়ঃ সৈয়দ রুবেল।
স্বামী স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনের সহায়ক আমাদের অনলাইনে প্রকাশকৃত কিছু বই আছে যা আপনি বিনামূল্যে পড়তে পারেন। ক্লিক করুনঃ → স্বামী স্ত্রীর বই ও বাংলা সেক্স বই এ।
The post সংসার জীবনে স্বামীকে সন্তুষ্ট রাখবে স্ত্রী। appeared first on Amar Bangla Post.