রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন একজন আদর্শ নানা। তিনি তার ছোট নাতি ও নাতনিদের খুব আদর করতেন।
বিশেষ করে হাসান ও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু উভয়কে তিনি খুব আদর করতেন। তিনি তাদের চুমো দিতেন। পিঠে বহন করে তাদের সাথে খেলাধুলা করতেন এবং তাদের ঘুরাতেন।
আবু বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
«كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُنَا، فَجَاءَ الْحَسَنُ، وَالْحُسَيْنُ عَلَيْهِمَا قَمِيصَانِ أَحْمَرَانِ يَمْشِيَانِ وَيَعْثُرَانِ، فَنَزَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الْمِنْبَرِ، فَحَمَلَهُمَا فَوَضَعَهُمَا بَيْنَ يَدَيْهِ، ثُمَّ قَالَ: صَدَقَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ: {إِنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ} [التغابن: 15] نَظَرْتُ إِلَى هَذَيْنِ الصَّبِيَّيْنِ يَمْشِيَانِ وَيَعْثُرَانِ، فَلَمْ أَصْبِرْ حَتَّى قَطَعْتُ حَدِيثِي وَرَفَعْتُهُمَا».
“একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের খুতবা দিতেছিলেন, এ সময় হাসান ও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু দু’টি লাল জামা পরিহিত অবস্থায় পায়ে হেটে খুড়ে খুড়ে সামনের দিকে আসছিল, তাদের দেখে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বার থেকে নেমে পড়লেন এবং তাদের উভয়কে দুই হাতে তুলে নিয়ে বললেন, “আল্লাহ তা‘আলা সত্যিই বলেছেন, إِنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ নিশ্চয় তোমাদের সম্পদ ও তোমাদের সন্তান ফিতনা। আমি বাচ্চা দুটিকে দেখলাম তারা খুড়ে খুড়ে হাঁটছিল। তাদের দেখে আমি স্থির থাকতে পারলাম না, কথার মাঝখান দিয়ে কথা বন্ধ করে তাদের উঠিয়ে নিলাম”।[1]
অপর একটি হাদীসে বর্ণিত, আবু কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«بَيْنَا نَحْنُ فِي الْمَسْجِدِ جُلُوسٌ خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَحْمِلُ أُمَامَةَ بِنْتَ أَبِي الْعَاصِ بْنِ الرَّبِيعِ، وَأُمُّهَا زَيْنَبُ بِنْتُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَهِيَ صَبِيَّةٌ فَحَمَلَهَا عَلَى عَاتِقِهِ، فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهِيَ عَلَى عَاتِقِهِ يَضَعُهَا إِذَا رَكَعَ، وَيُعِيدُهَا عَلَى عَاتِقِهِ إِذَا قَامَ فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهِيَ عَلَى عَاتِقِهِ ثُمَّ قَامَ حَتَّى قَضَى صَلَاتَهُ يَفْعَلُ ذَلِكَ بِهَا»
“একবার আমরা মসজিদে বসা ছিলাম। এমতাবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমামাহ বিনতে আবিল আস ইবনুর রবি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে কোলে নিয়ে আমাদের নিকট উপস্থিত হন। তার মা হলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেয়ে যয়নব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় নাতনী ছোট মেয়েটিকে নিজের কাঁধে নিয়ে সালাতে দাঁড়ালেন, তিনি যখন রুকু করতেন তাকে যমিনে রাখতেন, তারপর যখন দাঁড়াতেন, তখন তাকে আবার কাঁধে তুলে নিতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কাঁদে নিয়েই সালাত আদায় করলেন এবং সালাত শেষ করলেন”।[2]
আব্দুল্লাহ ইব্ন সাদ্দাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
«خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي إِحْدَى صَلَاتَيِ الْعَشِيِّ، الظُّهْرِ – أَوِ الْعَصْرِ – وَهُوَ حَامِلٌ الْحَسَنَ – أَوِ الْحُسَيْنَ – فَتَقَدَّمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوَضَعَهُ، ثُمَّ كَبَّرَ لِلصَّلَاةِ، فَصَلَّى، فَسَجَدَ بَيْنَ ظَهْرَانَيْ صَلَاتِهِ، سَجْدَةً أَطَالَهَا فَقَالَ: إِنِّي رَفَعْتُ رَأْسِي، فَإِذَا الصَّبِيُّ عَلَى ظَهْرِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَهُوَ سَاجِدٌ، فَرَجَعْتُ فِي سُجُودِي، فَلَمَّا قَضَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصَّلَاةَ، قَالَ النَّاسُ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنَّكَ سَجَدْتَ بَيْنَ ظَهْرَانَيْ صَلَاتِكَ، هَذِهِ سَجْدَةً قَدْ أَطَلْتَهَا، فَظَنَنَّا أَنَّهُ قَدْ حَدَثَ أَمْرٌ، أَوْ أَنَّهُ يُوحَى إِلَيْكَ، قَالَ: فَكُلُّ ذَلِكَ لَمْ يَكُنْ وَلَكِنَّ ابْنِي ارْتَحَلَنِي، فَكَرِهْتُ أَنْ أُعَجِّلَهُ حَتَّى يَقْضِيَ حَاجَتَهُ».
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো এক সালাতে আমাদের মধ্যে হাসান হুসাইনকে বহন করে উপস্থিত হলেন। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে সামনে অগ্রসর হলেন এবং সালাতের তাকবীর বলে সালাত আরম্ভ করেন। তিনি তার সালাতে দীর্ঘ লম্বা সাজদাহ করেন। তিনি বলেন, আমি মাথা উঁচু করে দেখি বাচ্চাটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিঠে উঠে বসে আছে আর তিনি সাজদারত অবস্থায় পড়ে আছেন। তারপর আমি আবার সাজদায় ফিরে গেলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত আদায় করা শেষ করলেন, লোকেরা জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদের সামনে স্বীয় সালাতের সাজদাহ আদায় করলেন এবং দীর্ঘ লম্বা সাজদাহ করলেন। আমরা ধারণা করছিলাম সালাতে কোনো অঘটন ঘটেছিল অথবা আপনার নিকট অহী আসছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এর কোনোটিই ঘটে নি। কিন্তু আমার নাতি আমাকে বাহন বানিয়েছিল আমি তার চাহিদা না মেটানো পর্যন্ত সাজদাহ থেকে উঠে তাড়াহুড়া করাকে অপছন্দ করি।[3]
[1] আবু দাউদ, হাদীস নং ১১০৯; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৬০০।
[2] আহমদ, হাদীস নং ২২৫৮৪
[3] আহমদ, হাদীস নং ১৬০৩৪।
আরো পড়ুন : আদর্শ স্বামী হিসেবে আল্লাহর রাসূল
The post আদর্শ নানা হিসেবে আল্লাহর রাসূল appeared first on Amar Bangla Post.