Quantcast
Channel: Amar Bangla Post
Viewing all articles
Browse latest Browse all 2081

একজন খাদেমের সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আচরণ

$
0
0

মুহাম্মদ সাএকজন লোক দশ বছর পর্যন্ত একটি লোকের খেদমত করার পর, তার স্বীকারোক্তি সম্পর্কে আমরা একটি চিন্তা করলে বুঝতে পারি। তিনি কোনো সাধারণ মানুষ ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন আদর্শ মহা মানব। যার আচার আচরণের প্রতি তার সাথী-সঙ্গীরা এতই মুগ্ধ ছিল যে, ইতিহাসে এর দ্বিতীয় কোনো দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যাবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাদেম আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

«خَدَمْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَشْرَ سِنِينَ فَمَا قَالَ لِي أُفٍّ قَطُّ، وَمَا قَالَ لِشَيْءٍ صَنَعْتُهُ لِمَ صَنَعْتَهُ، وَلَا لِشَيْءٍ تَرَكْتُهُ لِمَ تَرَكْتَهُ»

“আমি দশ বছর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমত করি, তিনি কখনো আমাকে বিন্দু পরিমাণও কষ্ট দেন নি। আমি যখনই কোনো কাজ করেছি, তাতে তিনি কখনো এ কথা বলেননি তুমি এ কাজটি কেন করছ? আর যদি এমনটি হত যে, আমি কোনো কাজ করিনি, তাতে তিনি বলেননি তুমি এ কাজটি কেন করনি?”।[1]

আল্লাহর রাসূল কোনো মানুষকে কষ্ট দেওয়া থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতেন। এমনকি নিজের কোনো খাদেম, নিজের কোনো গোলামকেও এমন কথা বলেন নি, যাতে সে কষ্ট পায়। যেমন, হাদীসে এসেছে: আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«الْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ، وَالْمُهَاجِرُ مَنْ هَجَرَ مَا نَهَى الله عَنْهُ».

“প্রকৃত মুসলিম সেই যার হাত ও মুখের আক্রমণ থেকে অপর মুসলিম ভাই নিরাপদে থাকে। আর সত্যিকার মুহাজির হলো, যে আল্লাহর নিষিদ্ধ কর্ম থেকে বিরত থাকে”।[2]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাউকে কোনো দিন প্রহার করেন নি এবং কাউকে কোনো দিন গালি দেন নি। একমাত্র তিনি যখন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতেন তখন কাফের মুশরিকদের ওপর আক্রমণ করতেন। যেমন, হাদীসে এসেছে: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«مَا ضَرَبَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَادِمًا لَهُ قَطُّ، وَلَا امْرَأَةً لَهُ قَطُّ، وَلَا ضَرَبَ بِيَدِهِ، إِلَّا أَنْ يُجَاهِدَ فِي سَبِيلِ اللهِ، وَمَا نِيلَ مِنْهُ شَيْءٌ فَانْتَقَمَهُ مِنْ صَاحِبِهِ، إِلَّا أَنْ تُنْتَهَكَ مَحَارِمُ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ، فَيَنْتَقِمُ لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ، وَمَا عُرِضَ عَلَيْهِ أَمْرَانِ أَحَدُهُمَا أَيْسَرُ مِنَ الْآخَرِ، إِلَّا أَخَذَ بِأَيْسَرِهِمَا، إِلَّا أَنْ يَكُونَ مَأْثَمًا، فَإِنْ كَانَ مَأْثَمًا كَانَ أَبْعَدَ النَّاسِ مِنْهُ».

“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো তার খাদেম ও স্ত্রীকে নিজ হাতে প্রহার করেন নি। আল্লাহর রাস্তার জিহাদের ময়দান ছাড়া তিনি কাউকে আক্রমণ করেন নি। তিনি কখনো তার কোনো সাথী থেকে কখনো প্রতিশোধ নেনটি। তবে যদি কেউ আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয়ে লিপ্ত হয়, তার থেকে আল্লাহর জন্য শাস্তি প্রয়োগ করতেন। যখন তার নিকট দু’টি বিষয়কে প্রস্তাব করা হত, তখন যেটি সহজ তাতে যদি কোনো গুনাহ না থাকে সেটি গ্রহণ করতেন। যদি গুনাহ হয় তা হতে তিনি অনেক দূরে থাকতেন”।[3]

অপর একটি হাদীসে এসেছে: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«وَاللَّهِ مَا خُيِّرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَ أَمْرَيْنِ قَطُّ، إِلَّا أَخَذَ أَيْسَرَهُمَا، مَا لَمْ يَأْثَمْ، فَإِذَا كَانَ الْإِثْمُ كَانَ أَبْعَدَهُمْ مِنْهُ، وَاللَّهِ مَا انْتَقَمَ لِنَفْسِهِ فِي شَيْءٍ يُؤْتَى إِلَيْهِ قَطُّ، حَتَّى تُنْتَهَكَ حُرُمَاتُ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ، فَيَنْتَقِمَ لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ»

“আল্লাহর শপথ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দু’টি বিষয়ের যে কোনো একটি গ্রহণ করার জন্য ক্ষমতা দেওয়া হলে, তিনি সহজটিই গ্রহণ করতেন, যদি তাতে কোনো গুনাহ না হয়। আর যদি তাতে গুনাহ হতো, তিনি তা থেকে দূরে থাকতেন। আল্লাহর শপথ তিনি কখনো কোনো বিষয়ে নিজের জন্য কারও থেকে প্রতিশোধ নেন নি, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয়সমূহের বিরোধিতা না করা হত। যদি আল্লাহর নিষিদ্ধসমূহের অবাধ্য হত, তাহলে আল্লাহর জন্য তার থেকে প্রতিশোধ নেওয়া হত”।[4]

তিনি কারও হতে কোনো দিন প্রতিশোধ নেন নি, এমনকি কেউ প্রতিশোধ নিতে চাইলে তাকেও অনুমতি দেন নি। যেমন, হাদীসে এসেছে: মিকদাদ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ أَرَأَيْتَ رَجُلًا ضَرَبَنِي بِالسَّيْفِ، فَقَطَعَ يَدِي، ثُمَّ لَاذَ مِنِّي بِشَجَرَةٍ، ثُمَّ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، أَقْتُلُهُ؟ قَالَ: لَا فَعُدْتُ مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلَاثًا فَقَالَ: لَا إِلَّا أَنْ تَكُونَ مِثْلَهُ قَبْلَ أَنْ يَقُولَ مَا قَالَ، وَيَكُونَ مِثْلَكَ قَبْلَ أَنْ تَفْعَلَ مَا فَعَلْتَ».

“আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম, “হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমি কারো সাথে লড়ি তারপর সে তরবারি দিয়ে আমার হাত কেটে দেয় এবং আমার পাল্টা আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য সে একটি গাছের নিকট আশ্রয় নিয়ে বলে, আমি আল্লাহর ওয়াস্তে ইসলাম গ্রহণ করলাম। তার এ কথা বলার পর আমি কি তাকে হত্যা করতে পারব? তিনি বললেন, না, তুমি তাকে হত্যা করতে পারবে না। আমি কথাটি একাধিক বার জিজ্ঞাসা করলাম। উত্তরে তিনি বার বার না বললেন। আমি বললাম, সে তো আমার একটি হাত কেটে ফেলছে। কাটার পর সে এ কথা বলছে, তারপরও আমি তাকে হত্যা করতে পারব না? তিনি বললেন, না, তুমি তাকে হত্যা করো না। যদি তুমি তাকে হত্যা কর, তাহলে মনে রাখবে, সে তোমার সেই মর্যাদা পেয়ে যাবে, যাতে তুমি তাকে হত্যা করার পূর্বে ছিলে। আর তুমি তার ঐ কথা বলার পূর্বের অবস্থায় উপনীত হবে”।[5]

কাউকে যদি বাধ্য হয়ে শাস্তি দিতে হয় বা প্রহার করতে হয়, এ ক্ষেত্রেও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ কতই না উত্তম। কাউকে চেহারায় আঘাত করা যাবে না। যেমন, হাদীসে এসেছে: আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لَيْسَ مِنَّا مَنْ ضَرَبَ الْخُدُودَ، وَشَقَّ الْجُيُوبَ، وَدَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ»

“যে চেহারা উপর আঘাত করে, জামা ছিড়ে এবং জাহেলিয়্যাতের যুগের মত চিল্লা-পাল্লা করে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়”।[6]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

إِذَا ضَرَبَ أَحَدُكُمْ، فَلْيَجْتَنِبِ الْوَجْهَ، فَإِنَّ اللهَ خَلَقَ آدَمَ عَلَى صُورَتِهِ».

“যখন কোনো ব্যক্তি কাউকে প্রহার করে, সে যেন চেহারার ওপর আঘাত না করে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা আদম আলাইহিস সালামকে স্বীয় আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন”।[7]

[1] তিরমিযী, হাদীস নং ২০১৫।

[2] আহমদ, হাদীস নং ২৩৯৬৭; নাসাঈ, হাদীস নং ৪৯৯৬; তিরমিযী, হাদীস নং ২৬২৭।

[3] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩২৭; তিরমিযী, হাদীস নং ৩৪১।

[4] আহমদ, হাদীস নং ২৫৮৭১।

[5] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪০১৯, ৬৮৬৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯৫।

[6] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৯৪; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৫৮৪; তিরমিযী, হাদীস নং ৯৯৯।

[7] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১২, ২৬১২।

আরো পড়ুন : আদর্শ নানা হিসেবে আল্লাহর রাসূল

The post একজন খাদেমের সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আচরণ appeared first on Amar Bangla Post.


Viewing all articles
Browse latest Browse all 2081

Trending Articles