০৫. আল্লাহর মহব্বতে হযরত যিন্নীর (রা.) এর অস্থিরতা
সাইয়েদা যিন্নীরা (রা.) ছিলেন একজন মহিলা সাহাবী। আবু জাহেলের দাসী ছিলেন। তিনি কালেমা পড়ে মুসলমান হয়ে যান। আবু জাহেল তার মুসলমান হওয়ার খবর জেন ফেলল। একদিন সে দাসীকে জিজ্ঞাসা করল, শুনলাম, তুমি নাকি কালেমা পড়েছ? জবাবে হযরত যিন্নীরা (রা.) বললেন, হ্যাঁ; আপনি ঠিকই শুনেছেন> তিনি বয়স্কা মহিলা ছিলেন, যার দরুন কষ্ট সহ্য করতে পারতেন না। কিন্তু আবু জাহেল একদিন তার দোসরদের ডেকে তাদের সামনে হযরত যিন্নীরা (রা.) কে মারতে শুরু করল। তিনি বিনা বাক্য ব্যয়ে সকল নির্যাতন সহ্য করেন গেলেন। কেননা, তিনি মুসলমান হওয়ার এর চেয়েও বেশি নির্যাতিত হওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন।
আবু জাহল যখন দেখল, এত নির্যাতন সত্ত্বেও তার মুখে কোনো কথা সরছে না, তখন তার মাথায় ভারী একটা বস্তু দিয়ে আঘাত করল। এতে তার দৃষ্টিশক্তি কমে গেল। তিনি অন্ধ হয়ে গেলেন। এতে আবু জাহল এই বলে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতে থাকল যে, তুমি আমাদের দেবতাদের পূজা ছেড়ে দিয়েছ বলেই তারা তোমাকে অন্ধ করে দিয়েছে।
হযরত যিন্নীর (রা.)-এর জন্য এই তিরস্কার ও ব্যঙ্গোক্তি ছিল সহ্যের অতীত। তিনি আবু জাহলের সকল নির্যাতন অম্লান বদনে সহ্য করে নিয়েছেন – টু শব্দটি করেননি। কিন্তু যখন সে বলল, মাবুদদের পূজা ছেড়ে দেওয়ায় তারা নাখোশ হয়েছে এবং এ কারণে তিনি অন্ধ হয়ে গেছেন, তখন এই মন্তব্য তিনি বরদাশত করতে পারলেন না। তিনি তৎক্ষণাৎ অস্থির হয়ে উঠলেন এবং রুমে গিয়ে সেজদায় লুটিয়ে পড়লেন।
সেজদায় গিয়ে স্বীয় মাওলার কাছে মনের দুঃখ-বেদনার কথা জানাতে থাকলেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! তারা আমাকে যত নির্যাতন করেছে, সবই আমি বরদাশত করেছি। তারা যদি মেরে-মেরে আমার হাড় গুলো গুড়োও করে দিত, আমার দেহটা ঝাঁজরা করে দিত, তবে তাও আমি সহ্য করতাম। কিন্তু আপনার শানে ঔদ্ধত্য ও মানহানিকর কোনো কথা বললে আমি সহ্য করতে পারি না। আবু জাহল দাবি করছে, তাদের দেবতারা আমার দৃষ্টিশক্তি হরণ করে নিয়েছে। তারা আমাকে পৌত্তলিক ধর্ম ত্যাগের শাস্তি দিচ্ছে।
হে আল্লাহ! যখন আমি কিছুই ছিলাম না, তখন তুমিই আমাকে বানিয়েছ। তুমিই আমাকে দৃষ্টিশক্তি দিয়েছ। এখন তা আবার ফেরত নিয়েছ। হে আল্লাহ! তুমি আমার দৃষ্টিশক্তি আবার ফিরিয়ে দাও, যাতে তোমার মহাত্য তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়। তোমার কুদরত জাহির হয়ে যায়। তিনি এই দু’আ করে তখনও দু’হাত মুখে ফেরাননি; ইত্যবসরে আল্লাহ পাক তার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিলেন।
সুবহানআল্লাহ! সে যুগে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদের মধ্যেও আল্লাহর অপার মহব্বত ছিল। তারা ছিলেন ইশকে মাওলার মূর্তপ্রতীক। (খুতুবাত ৩/৩৬)
তোমার প্রেমে মোরা মজেছি যখন
সবদিক দিয়ে তোমাকেই পাই তখন
ভুলে পথ হারিয়ে যেদিকেই গিয়েছি,
তোমার পথেই মোরা ছুটে চলেছি।
আল্লাহর মহব্বত বই থেকে।
The post আল্লাহর মহব্বতে হযরত যিন্নীর (রা.) এর অস্থিরতা appeared first on Amar Bangla Post.