Quantcast
Channel: Amar Bangla Post
Viewing all articles
Browse latest Browse all 2081

আদর্শ শিক্ষক হিসেবে আল্লাহর রাসূল

$
0
0

Muslim Students

“একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) কি করম ছিলেন এবং তিনি কিভাবে মানুষনকে জ্ঞান দান করতেন এই আর্টিকেলে তার তুলে ধরা হয়েছে। আপনি আদর্শ শিক্ষক হতে এ লেখাটিকে অনুসরণ করুন।” -সম্পাদকঃ আমার বাংলা পোস্ট

শিক্ষার ক্ষেত্রে একজন শিক্ষকের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অহীর জ্ঞানের ভিত্তিতে (ইসলামী শরী‘আহ মোতাবেক) শিক্ষকগণ উম্মাহর জন্য যা কল্যাণকর তা গ্রহণ করে জাতিকে তা শিক্ষা দিতে পারেন। মনগড়া শিক্ষা দ্বারা জাতি কখনোই উন্নতি লাভ করতে পারে না। মানুষের মন-মানসিকতা, আচার-স্বভাব, প্রয়োজন, চাহিদা ও পরিবেশ-পরিস্থিতি এসব কিছুতে প্রয়োজনীয় শিক্ষা খুবই জরুরি। আর এ প্রয়োজন মেটানোর জন্য ইসলামী শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষার বিষয় বস্তু হিসেবে ইসলামী জ্ঞান ও পূর্ণাঙ্গ ইসলামী পদ্ধতি সম্পৃক্ত থাকা জরুরি। অন্যথায় জাতি আদর্শ শিক্ষা হতে বঞ্চিত হবে।

আর শিক্ষা যতই ভালো ও গুরুত্বপূর্ণ হোক তার জন্য প্রয়োজন আদর্শ শিক্ষক। শুধু অক্ষর জ্ঞান পাঠদান করা এবং ক্লাসে আলোচ্য বিষয়টিকে খুব ভালোভাবে উপস্থাপন করার নাম শিক্ষা নয়। একজন শিক্ষককে অবশ্যই আদর্শবান হতে হবে। তার মধ্যে নীতি নৈতিকতা থাকতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন প্রশিক্ষণ, তারবীয়ত ও সু-শিক্ষা লাভ করা। আদর্শ শিক্ষা কীভাবে লাভ করা যায় তার জন্য দরকার পর্যালোচনা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা। এতে উম্মাহ জীবন ও সমাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে পরামর্শ ভিত্তিক আলোচনা করে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারে। ইসলাম বিষয়ক আলোচনা পর্যালোচনাসহ প্রত্যেক ধরনের আলোচনায় ভীতি বর্তমানে আমাদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। বিশেষতঃ শিশু সংক্রান্ত আলোচনা ও শিশু শিক্ষা দানের ক্ষেত্রে এ ভীতি কাজ করে। তবে শিক্ষা দানের ক্ষেত্রে শিক্ষকের প্রতি শিক্ষার্থীর পরম বিনয়-ভাব থাকা উত্তম। ইয়েট -এর একটা প্রবাদ বাক্য উল্লেখ করা যেতে পারে- من علمني حرفا صرت عبدا له অর্থাৎ আমাকে যে একটা হরফ বা বর্ণ শিক্ষা দিলেন, আমি তার গোলামে পরিণত হলাম।

বাস্তব জীবন ও সমাজের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে সঠিক চিন্তাধারা প্রয়োগ ও সুপরিচিত শিক্ষাদান পদ্ধতি ব্যবহার করে শিক্ষা দেওয়া খুবই প্রয়োজন। বর্তমানে শিক্ষা দেওয়ার গুণগত মান না থাকা এবং আদর্শ শিক্ষকের অভাবে জাতি আদর্শ শিক্ষা থেকে অনেক দূরে সরে আছে। যখন আকীদা-বিশ্বাস, দীন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে শিক্ষাদান মুসলিম মনোবৃত্তি ও মানসিকতা গঠনের বিশেষ দিক বলে বিবেচিত, তখন দীনি শিক্ষা দানের সময় একে যথাযথভাবে উপস্থাপন করা জরুরি। তাই শিশুকে শিক্ষা দান, শিশুর মনে সুস্থ আবেগ ও অনুভূতি সৃষ্টির চেষ্টা করে এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে হবে। আমরা আমাদের ছেলেদের শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার বিষয়বস্তু নির্ধারণ করতে ভুল করে থাকি। অনেক জটিল বিষয়গুলোকে তাদের সামনে তুলে ধরা হয়ে থাকে। যার ফলে জরুরি বিষয়গুলো না শিখে তারা সঠিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। একজন বাচ্চা যখনই শিক্ষা উপযোগী বয়সে উপনীত হয় তাকে অবশ্যই তার আক্বিদা-বিশ্বাস বিষয়ক বিষয়গুলো সব কিছুর আগে শিক্ষা দিতে হবে। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, আল্লাহর পরিচয়, ইসলামের পরিচয় এবং মৃত্যুর পরের জীবন সম্পর্কে তাদের সঠিক ধারণা দিতে হবে।

সন্তান হচ্ছে পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য ও শোভা সহজাত মায়া মমতার বশবর্তী হয়ে পিতা-মাতা সন্তানদের লালন পালন করে থাকে। শত দুঃখ সহ্য করেও তাদেরকে প্রয়োজনীয় পোশাক পরিচ্ছদ ও সুষম খাদ্য প্রদান করে থাকে এবং সুশিক্ষায় গড়ে তোলার নিমিত্তে জ্ঞান বিজ্ঞান শিক্ষা দিয়ে থাকে।

সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করা:

মাতা-পিতার বড় দায়িত্ব হল সন্তানকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলা। সন্তানকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে না পারলে, তা যে কত যন্ত্রণা দায়ক তার কোনো ইয়ত্তা নেই। এর থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হল, ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করা। ইসলাম সম্মত উপায়ে জীবন যাপন করা সন্তানের সু-শিক্ষার প্রকৃষ্ট পন্থা। রুযী রোজগারের জন্য সন্তান-সন্ততিদেরকে পার্থিব শিক্ষার সাথে সাথে শরীয়তের ইলম শিক্ষা দান করতে হবে যেন, তারা তাদের স্বভাব চরিত্র শরিয়তের বিধি বিধান মোতাবেক গড়ে তুলতে পারে। এটা মাতা-পিতার অবশ্য কর্তব্য।

এ সম্পর্কে লুকমান হাকীম রহ. এর স্বীয় সন্তানের প্রতি উপদেশ আমাদের জন্য আদর্শ। কুরআনে এর বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তিনি প্রথমে তার ছেলেকে তাওহীদ সম্পর্কে শিক্ষা দেন। তারপর তিনি তার ছেলেকে আল্লাহর সাথে কাউকে শিরক করতে না করেন। তার আলোচনা আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে এভাবে বর্ণনা করেন:

প্রথমে তিনি তাওহীদ সম্পর্কে বলেছেন,

﴿وَإِذۡ قَالَ لُقۡمَٰنُ لِٱبۡنِهِۦ وَهُوَ يَعِظُهُۥ يَٰبُنَيَّ لَا تُشۡرِكۡ بِٱللَّهِۖ إِنَّ ٱلشِّرۡكَ لَظُلۡمٌ عَظِيمٞ ١٣﴾ [لقمان: ١٣]

“আর স্মরণ কর, যখন লুকমান তার পুত্রকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিল, ‘প্রিয় বৎস, আল্লাহর সাথে শির্ক করো না। নিশ্চয় শির্ক হলো বড় যুলুম”। [সূরা লুকমান, আয়াত: ১৩]

দ্বিতীয়ত: তিনি পাপ কাজ হতে বিরত থাকা সম্বন্ধে বলেছেন,

﴿يَٰبُنَيَّ إِنَّهَآ إِن تَكُ مِثۡقَالَ حَبَّةٖ مِّنۡ خَرۡدَلٖ فَتَكُن فِي صَخۡرَةٍ أَوۡ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ أَوۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ يَأۡتِ بِهَا ٱللَّهُۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَطِيفٌ خَبِيرٞ ١٦﴾ [لقمان: ١٦]

“হে আমার প্রিয় বৎস, নিশ্চয় তা (পাপ-পুণ্য) যদি সরিষা দানার পরিমাণ হয়, অতঃপর তা থাকে পাথরের মধ্যে কিংবা আসমানসমূহে বা জমিনের মধ্যে, আল্লাহ তাও নিয়ে আসবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সুক্ষ্মদর্শী, সর্বজ্ঞ’। [সূরা লুকমান, আয়াত: ১৩]

তৃতীয়ত: সত্য ধর্মের মূলনীতি ও সার শিক্ষা সম্বন্ধে তিনি বলেছেন,

﴿يَٰبُنَيَّ أَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَ وَأۡمُرۡ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَٱنۡهَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَٱصۡبِرۡ عَلَىٰ مَآ أَصَابَكَۖ إِنَّ ذَٰلِكَ مِنۡ عَزۡمِ ٱلۡأُمُورِ ١٧ وَلَا تُصَعِّرۡ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمۡشِ فِي ٱلۡأَرۡضِ مَرَحًاۖ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخۡتَالٖ فَخُورٖ ١٨﴾ [لقمان: ١٧، ١٨]

“হে আমার প্রিয় বৎস, সালাত কায়েম কর, সৎকাজের আদেশ দাও, অন্যায় থেকে নিষেধ কর এবং তোমার ওপর যে বিপদ আসে তাতে ধৈর্য ধর। নিশ্চয় এগুলো অন্যতম দৃঢ় সংকল্পের কাজ’। ‘আর তুমি মানুষের দিক থেকে তোমার মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। আর যমিনে দম্ভভরে চলাফেরা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোনো দাম্ভিক, অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না”। [সূরা লুকমান, আয়াত: ১৭-১৮]

শিক্ষককে অবশ্যই নম্র হতে হবে:

যিনি শিক্ষা দেবেন তাকে অবশ্যই কোমল ব্যবহারের অধিকারী হতে হবে, তাকে অবশ্যই আদর্শবান হতে হবে। তার আচার ব্যবহার অবশ্যই মনোমুগ্ধকর হতে হবে। অন্যথায় শিক্ষকের প্রতি ছাত্রদের আস্থা দুর্বল হয়ে পড়বে। তখন শিক্ষকের কাছ থেকে সে কোনো কিছুই শিখতে চাইবে না। নম্র ও ভদ্র ব্যবহার দিয়ে যতটুক মন জয় করা যায় কটু ব্যবহার ও শাস্তি দিয়ে তত টুকু পারা যায় না। নম্র ব্যবহারে মানুষের মনের ওপর কর্তৃত্ব করা সহজ হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿فَبِمَا رَحۡمَةٖ مِّنَ ٱللَّهِ لِنتَ لَهُمۡۖ وَلَوۡ كُنتَ فَظًّا غَلِيظَ ٱلۡقَلۡبِ لَٱنفَضُّواْ مِنۡ حَوۡلِكَۖ فَٱعۡفُ عَنۡهُمۡ وَٱسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ وَشَاوِرۡهُمۡ فِي ٱلۡأَمۡرِۖ فَإِذَا عَزَمۡتَ فَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلۡمُتَوَكِّلِينَ ١٥٩﴾ [ال عمران: ١٥٩]

“অতঃপর আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমতের কারণে তুমি তাদের জন্য নম্র হয়েছিলে। আর যদি তুমি কঠোর স্বভাবের, কঠিন হৃদয়সম্পন্ন হতে, তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। সুতরাং তাদেরকে ক্ষমা কর এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। আর কাজে-কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ কর। অতঃপর যখন সংকল্প করবে তখন আল্লাহর ওপর তাওয়াককুল করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তাওয়াক্কুল কারীদেরকে ভালবাসেন”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৫৯]

ফিরআউনের মতো এত বড় যালিমকে দাওয়াত দেওয়ার উদ্দেশ্যে মুসা ও হারুন আলাইহিস সালাম প্রেরণ করার পেক্ষাপটে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তার সাথে তোমরা নরম কথা বল।

﴿فَقُولَا لَهُۥ قَوۡلٗا لَّيِّنٗا لَّعَلَّهُۥ يَتَذَكَّرُ أَوۡ يَخۡشَىٰ ٤٤﴾ [طه: ٤٤]

“তোমরা তার সাথে নরম কথা বলবে। হয়তোবা সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে”। [সূরা ত্ব-হা, আয়াত: ৪৪]

আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সর্বোত্তম শিক্ষক হিসেবে যথেষ্ট। তিনি এমনভাবে শিক্ষা দিতেন, যাতে মানুষের অন্তরে তার প্রতি ক্ষোভ বা আতঙ্ক থাকতো না। শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসা ও মহব্বত বৃদ্ধি পেত। তিনি শুধু মাত্র প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোই শিক্ষা দিতেন। অত্যন্ত নম্রতা ও ভদ্রতার সাথে শিক্ষা দিতেন। ছাত্রের সাথে কোনো প্রকার দুর্ব্যবহার করতেন না। তাদেরকে প্রহার করতেন না, গালি দিতেন না এবং ধমক দিতেন না। যেমন, হাদীসে এসেছে: মুয়াবিয়া ইবন হাকাম আস সুলামি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«بَيْنَا نَحْنُ نُصَلِّي مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ عَطَسَ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ، فَقُلْتُ: يَرْحَمُكَ اللهُ، فَرَمَانِي الْقَوْمُ بِأَبْصَارِهِمْ، فَقُلْتُ: وَاثُكْلَ أُمِّيَاهْ مَا شَأْنُكُمْ تَنْظُرُونَ إِلَيَّ قَالَ: فَجَعَلُوا يَضْرِبُونَ بِأَيْدِيهِمْ عَلَى أَفْخَاذِهِمْ، فَلَمَّا رَأَيْتُهُمْ يُصْمِتُونِي، لَكِنِّي سَكَتُّ، فَلَمَّا صَلَّى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَبِأَبِي هُوَ وَأُمِّي مَا رَأَيْتُ مُعَلِّمًا قَبْلَهُ وَلَا بَعْدَهُ أَحْسَنَ تَعْلِيمًا مِنْهُ، وَاللهِ مَا كَهَرَنِي وَلَا شَتَمَنِي وَلَا ضَرَبَنِي قَالَ: إِنَّ هَذِهِ الصَّلَاةَ لَا يَصْلُحُ فِيهَا شَيْءٌ مِنْ كَلَامِ النَّاسِ هَذَا، إِنَّمَا هِيَ التَّسْبِيحُ وَالتَّكْبِيرُ وَقِرَاءَةُ الْقُرْآنِ أَوْ كَمَا قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّا قَوْمٌ حَدِيثُ عَهْدٍ بِالْجَاهِلِيَّةِ، وَقَدْ جَاءَ اللهُ بِالْإِسْلَامِ، وَإِنَّ مِنَّا قَوْمًا يَأْتُونَ الْكُهَّانَ قَالَ: فَلَا تَأْتُوهُمْ قُلْتُ: إِنَّ مِنَّا قَوْمًا يَتَطَيَّرُونَ قَالَ: ذَاكَ شَيْءٌ يَجِدُونَهُ فِي صُدُورِهِمْ، فَلَا يَصُدَّنَّهُمْ قُلْتُ: إِنَّ مَنَّا قَوْمًا يَخُطُّونَ قَالَ: كَانَ نَبِيٌّ يَخُطُّ، فَمَنْ وَافَقَ خَطَّهُ فَذَلِكَ».

“একদা আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সালাত আদায় করতে ছিলাম, এক ব্যক্তি সালাতে হাঁচি দিয়ে আল হামদু লিল্লাহ বললে, আমি বললাম, আল্লাহ তোমার প্রতি দয়া করুন। আমার কথা শোনে লোকেরা আমার দিক বাঁকা চোখে তাকাচ্ছিল, তাদের অবস্থা দেখে আমি তাদের বললাম, তোমাদের কি হল, তোমরা আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছ? আমার কথা শোনে তারা তাদের হাত দিয়ে রানের ওপর থাপড়াচ্ছিল যাতে আমি চুপ থাকি। আমি যখন বুঝতে পারলাম, তারা আমাকে চুপ করাচ্ছে, তখন আমি চুপ হয়ে গেলাম। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত শেষ করলেন, তার ওপর আমার মাতা-পিতা কুরবান হোক, ইতোপূর্বে ও পরবর্তীতে আমি তার থেকে উত্তম শিক্ষক যিনি তার চেয়ে উত্তম শিক্ষা দিতে পারে আর কখনো দেখিনি। আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, তিনি আমাকে ধমক দেননি, গালি দেননি এবং কোনো ধরনের প্রহার করেন নি। তিনি আমাকে বললেন, সালাতে কথা বলা গ্রহণ যোগ্য নয়। সালাত হল, তাসবীহ, তাকবীর ও কুরআনের তিলাওয়াত। তারপর আমি বললাম, আমরা কিছু আগেও জাহেলিয়্যাতের অন্ধকারে নিমজ্জিত, নতুন ইসলাম গ্রহণ করেছি, আমাদের মধ্যে কিছু লোক এমন আছে যারা যাদুকরের কাছে যাতায়াত করে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তাদের কাছে যাতায়াত করো না। আমাদের মধ্যে কিছু লোক এমন আছে, যারা পাখি উড়িয়ে ভাগ্য পরীক্ষা করে, তিনি বললেন, এটি মানুষের মনের কু-সংস্কার, এ ধরনের কোনো বিষয় যেন তোমাদেরকে তোমাদের কর্ম হতে বিরত না রাখে। তারপর সে বলল, আমাদের মধ্যে কতক লোক এমন আছে যারা রেখা টানে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, পূর্বের একজন নবী ছিল যিনি রেখা টানত, যা তার জন্য বৈধ ছিল, তোমাদের জন্য তা বৈধ নয়।[1]

হাদীসটিতে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে যেভাবে শিক্ষা দিলেন, তা জাতির জন্য কিয়ামত অবধি আদর্শ হয়ে থাকবে। একজন আদর্শ শিক্ষকের কাজ হল, তিনি তার ছাত্রদের এমনভাবে শিক্ষা দেবেন, যাতে ছাত্রের অন্তরে শিক্ষকের মহব্বত, ভালোবাসা ও আস্থা বৃদ্ধি পায়। শিক্ষককে অবশ্যই তার ছাত্রের কল্যাণকামী ও হিতাকাংখী হতে হবে, ছাত্রের সাথে স্বাভাবিক আচরণ করতে হবে, যাতে ছাত্র তার অজানা বিষয়গুলো শিক্ষকের কাছ থেকে জেনে নিতে পারে। হাদীসে বর্ণিত, ঘটনাটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্বাভাবিক আচরণে উদ্বুদ্ধ হয়ে, লোকটির মনে জানার আগ্রহ বেড়ে যায় এবং তিনি তার সম্প্রদায়ের লোকদের বিভিন্ন কু-সংস্কার সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে সমাধান জানতে চান।

অপর একটি হাদীস: আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«دَخَلَ أَعْرَابِيٌّ الْمَسْجِدَ، فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ قَالَ: اللَّهُمَّ ارْحَمْنِي وَمُحَمَّدًا، وَلَا تَرْحَمْ مَعَنَا أَحَدًا. فَالْتَفَتَ إِلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: «لَقَدْ تَحَجَّرْتَ وَاسِعًا، ثُمَّ لَمْ يَلْبَثْ أَنْ بَالَ فِي الْمَسْجِدِ، فَأَسْرَعَ النَّاسُ إِلَيْهِ، فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّمَا [ص:198] بُعِثْتُمْ مُيَسِّرِينَ، وَلَمْ تُبْعَثُوا مُعَسِّرِينَ، أَهْرِيقُوا عَلَيْهِ دَلْوًا مِنْ مَاءٍ، أَوْ سَجْلًا مِنْ مَاءٍ»

“একজন গ্রাম্য লোক মসজিদে এসে দু’ রাকাত সালাত আদায় করার পর বলে, হে আল্লাহ তুমি আমাকে এবং মুহাম্মদকে রহম কর এবং আমাদের সাথে আর কাউকে তুমি দয়া করো না। তার কথা শোনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি আল্লাহর ব্যাপক রহমতকে সংকীর্ণ করে দিলে। তারপর লোকটি একটু পরেই মসজিদে পেশাব করে দিল। পেশাব করতে দেখে লোকেরা তার দিকে ছুটে আসতে আরম্ভ করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের সহজকারী হিসেবে প্রেরণ করেছেন, তিনি তোমাদের কঠোরতাকারী হিসেবে প্রেরণ করেননি। লোকটির পেশাবের উপর এক বালতি বা এক মশক পানি ঢেলে দাও”।

উল্লিখিত হাদীসে দেখা যাচ্ছে যে এক লোক মসজিদে পেশাব করে দিল, অথচ আল্লাহর রাসূল তাকে সুন্দরভাবে তালিম দিলেন। তাকে তিনি কিছুই জিজ্ঞাসা করলেন না। যারা তাকে বাধা দিতে চাইলেন, তাদের তিনি থামিয়ে দিলেন। আর লোকটি বাধাহীন পেশাব করে গেলেন। তারপর অন্যদের নির্দেশ দিলেন, যাতে তারা পেশাবকে ধুয়ে ফেলে। এভাবেই আল্লাহর রাসূল মানব জাতির জন্য আদর্শ ছিলেন। অথচ বর্তমানে আমরা ছোট বাচ্চারা যদি মসজিদে এসে দুষ্টামী করে তাদেরকে মসজিদ থেকে বের করে দেই। মসজিদে কারও মোবাইল বেজে উঠলে তার প্রতি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠি এবং তার উপর চড়াও হই। মনে রাখবে এগুলো কোনোটিই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ হল তিনি যা বলেছেন,

«إِنَّمَا بُعِثْتُمْ مُيَسِّرِينَ، وَلَمْ تُبْعَثُوا مُعَسِّرِينَ»

“আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের সহজকারী হিসেবে প্রেরণ করেন, কঠোরতাকারী হিসেবে প্রেরণ করেননি”।[2]

প্রাথমিক শিক্ষার বিষয়গুলো কী হওয়া উচিৎ:

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীদের প্রথমে ঈমান শিক্ষা দিতেন তারপর অন্যান্য বিষয় গুলো শিক্ষা দিতেন। ঈমানের পর দ্বীনের জরুরি বিষয়গুলো শিক্ষা দেওয়া খুবই জরুরি। একজন মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনে যে সব কর্মগুলো থাকা জরুরি সেগুলো সমাধান করতে চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক। তাই আল্লারহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেগুলোই তার সাহাবীদের বাতলিয়ে দিতেন। যেমন, হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট একজন ব্যক্তি এসে আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি তাকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো শিখিয়ে দেন।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«أَنَّ أَعْرَابِيًّا جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، دُلَّنِي عَلَى عَمَلٍ إِذَا عَمِلْتُهُ دَخَلْتُ الْجَنَّةَ، قَالَ: تَعْبُدُ اللهَ لَا تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا، وَتُقِيمُ الصَّلَاةَ الْمَكْتُوبَةَ، وَتُؤَدِّي الزَّكَاةَ الْمَفْرُوضَةَ، وَتَصُومُ رَمَضَانَ، قَالَ: وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَا أَزِيدُ عَلَى هَذَا شَيْئًا أَبَدًا، وَلَا أَنْقُصُ مِنْهُ، فَلَمَّا وَلَّى، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَنْظُرَ إِلَى رَجُلٍ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ، فَلْيَنْظُرْ إِلَى هَذَا».

“একজন গ্রাম্য লোক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে এমন আমল শিক্ষা দেন, যার ওপর আমল করলে আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না। সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, রমজান মাসের সাওম রাখবে। লোকটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা শুনে বলল, আল্লাহর কসম করে বলছি, আমি কখনোই এর ওপর কোনো কিছুকে বাড়াবো না এবং কোনো কিছু কমাবো না। এ কথা বলে লোকটি যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পেছনে রেখে সামনের দিকে হাঁটতে থাকে, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে বললেন, যার ইচ্ছা হয় জান্নাতী কোনো লোককে দেখতে, সে যেন এ লোকটির দিকে তাকায়”।[3]

অপর একটি বর্ণনায় এসেছে-

সাহাবীদের মধ্যে জানার খুব আগ্রহ ছিল। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা অধিক প্রশ্ন করতে নিষেধ করলে, সাহাবীগণ ভয়ে জরুরি বিষয়গুলো জিজ্ঞাসা করতে সাহস পাচ্ছিলেন না। তবে তারা চাচ্ছিলেন বাহির থেকে একজন লোক এমন আসবেন, যিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দীনের বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করবেন। ঠিক এমন এক মুহুর্তে একজন লোক এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে।

আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كُنَّا قَدْ نُهِينَا أَنْ نَسْأَلَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ شَيْءٍ، فَكَانَ يُعْجِبُنَا أَنْ يَجِيءَ الرَّجُلُ مِنْ أَهْلِ الْبَادِيَةِ الْعَاقِلُ، فَيَسْأَلُهُ وَنَحْنُ نَسْمَعُ، فَجَاءَ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْبَادِيَةِ، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ، أَتَانَا رَسُولُكَ فَزَعَمَ لَنَا أَنَّكَ تَزْعُمُ أَنَّ اللهَ أَرْسَلَكَ. قَالَ: صَدَقَ “، قَالَ: فَمَنْ خَلَقَ السَّمَاءَ؟ قَالَ: اللهُ “، قَالَ: فَمَنْ خَلَقَ الْأَرْضَ؟ قَالَ: اللهُ “، قَالَ: فَمَنْ نَصَبَ هَذِهِ الْجِبَالَ، وَجَعَلَ فِيهَا مَا جَعَلَ؟ قَالَ: اللهُ. قَالَ: فَبِالَّذِي خَلَقَ السَّمَاءَ وَخَلَقَ الْأَرْضَ، وَنَصَبَ هَذِهِ الْجِبَالَ آللَّهُ أَرْسَلَكَ؟ قَالَ: نَعَمْ. قَالَ: فَزَعَمَ رَسُولُكَ أَنَّ عَلَيْنَا خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي يَوْمِنَا وَلَيْلَتِنَا، قَالَ: صَدَقَ. قَالَ: فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ، آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا؟ قَالَ: نَعَمْ قَالَ: وَزَعَمَ رَسُولُكَ أَنَّ عَلَيْنَا زَكَاةً فِي أَمْوَالِنَا، قَالَ: صَدَقَ. قَالَ: فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ، آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا؟ قَالَ: نَعَمْ. قَالَ: وَزَعَمَ رَسُولُكَ أَنَّ عَلَيْنَا صَوْمَ شَهْرِ فِي سَنَتِنَا، قَالَ: صَدَقَ . قَالَ: فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ، آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا؟ قَالَ: نَعَمْ. قَالَ: وَزَعَمَ رَسُولُكَ أَنَّ عَلَيْنَا حَجَّ الْبَيْتِ مَنْ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا، قَالَ: صَدَقَ. قَالَ: ثُمَّ وَلَّى، فَقَالَ: وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ لَا أَزِيدُ عَلَيْهِنَّ شَيْئًا، وَلَا أَنْقُصُ مِنْهُنَّ شَيْئًا، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَئِنْ صَدَقَ لَيَدْخُلَنَّ الْجَنَّةَ».

“এক সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করতে আমাদের নিষেধ করা হয়। ফলে আমরা কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করতামনা। আমরা চাইতাম গ্রাম থেকে কোনো বুদ্ধিমান লোক এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করত আর আমরা শুনতাম। এ সময় গ্রাম থেকে এক লোক এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! আমাদের নিকট আপনার দূত এসে বলল, নিশ্চয় আপনি আল্লাহর রাসূল, আপনাকে আল্লাহ প্রেরণ করেছেন? তিনি বললেন, সত্য বলেছে’ লোকটি বলল, কে আসমান সৃষ্টি করেছে? তিনি বললেন, “আল্লাহ”, সে বলল, কে যমিন সৃষ্টি করেছে? তিনি বললেন, “আল্লাহ”। সে বলল, কে পাহাড়সমূহ স্থাপন করেছেন, তিনি বললেন, “আল্লাহ”। সে বলল, যিনি আসমান সৃষ্টি করেছেন, যমিন সৃষ্টি করেছেন এবং পাহাড় স্থাপন করেছেন তার শপথ করে বলছি, আল্লাহ কি আপনাকে প্রেরণ করেছেন? তিনি বললেন, “হ্যাঁ”। লোকটি বলল, আপনার দূত এ কথার দাওয়াত দেন যে, আমাদের ওপর রাত ও দিনে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা ফরয। তিনি বললেন, ঠিক বলেছেন। লোকটি বলল, যিনি আপনাকে প্রেরণ করেছেন, তার শপথ, আল্লাহ কি এ বিষয়ে আদেশ দিয়েছেন? তিনি বললেন, “হ্যাঁ”। লোকটি বলল, আপনার দূত বলল, আমাদের ওপর আমাদের সম্পদের যাকাত ফরয করা হয়েছে। তিনি বললেন, সত্য বলছে। লোকটি বলল, যিনি আপনাকে প্রেরণ করেছেন, তার শপথ, আল্লাহ কি এ বিষয়ে আদেশ দিয়েছেন? তিনি বললেন, “হ্যাঁ”। সে বলল, আপনার দূত এ কথার দাওয়াত দেন যে, আমাদের ওপর বছরে এক মাস রোজা রাখা ফরয। তিনি বললেন, ঠিক বলেছেন। লোকটি বলল, যিনি আপনাকে প্রেরণ করেছেন, তার শপথ, আল্লাহ কি এ বিষয়ে আদেশ দিয়েছেন? তিনি বললেন, “হ্যাঁ”। সে বলল, আপনার দূত এ কথার দাওয়াত দেন যে, আমাদের মধ্যে যার সামর্থ্য আছে তার ওপর বাইতুল্লাহর হজ করা ফরয, তিনি বললেন, ঠিক বলেছেন। তারপর লোকটি চলে যাওয়ার সময় বলল, যিনি আপনাকে সত্য বাণী দিয়ে প্রেরণ করেছেন, তার শপথ করে বলছি, আমি এর ওপর কোনো কিছু বাড়াবো না এবং কমাবোও না। তার কথা শুনে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি লোকটি সত্য বলে, অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে”।[4]

হাদীসে দ্বারা প্রমাণিত হয়, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে মানুষের মধ্যে জরুরি বিষয়গুলো শেখা এবং শেখানোর গুরুত্বই বেশি ছিল। আল্লাহর রাসূল তার দূতদের বিভিন্ন এলাকায় প্রেরণ করতেন, তারা যাতে মানুষকে ঈমানের বিষয়গুলোর প্রতি আহ্বান করেন এবং ঈমান ও দীনের জরুরি বিষয়গুলো শিক্ষা দেন। আল্লাহ রাসূল কখনো জটিল বিষয়গুলোর পিছনে সময় নষ্ট করতেন না। বর্তমানে আমরা জরুরি বিষয়গুলো শেখার পরিবর্তে মানতিক, ইলমে কালাম ইত্যাদিতে সময় নষ্ট করে থাকি। ফলে দীনের জরুরি বিষয়গুলো আমাদের অজানা থেকে যায়। এ জন্য আমাদের শিক্ষার বিষয়বস্তু এবং সিলেবাসকে সাজিয়ে বাচ্চাদের সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। অন্যথায় আমরা মুসলিম জাতি হিসেবে ইসলামী জ্ঞান থেকে অনেক পিছিয়ে যাব।

আদর্শ পরীক্ষক হিসেবে আল্লাহর রাসূল:

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় সাহাবীদের পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের ঈমানের পরীক্ষা সবার আগে নিতেন। তারা যদি ঈমানদার হত, তাদের ঈমানের কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে কিনা তা দেখতেন। যদি তাদের ঈমানে কোনো প্রকার ত্রুটি বিচ্যুতি থাকতো প্রথমেই তিনি তা দূর করতেন।

মুয়াবিয়া ইবন হাকাম আস-সুলামী বলেন,

«وَكَانَتْ لِي جَارِيَةٌ تَرْعَى غَنَمًا لِي فِي قِبَلِ أُحُدٍ وَالْجَوَّانِيَّةِ، فَاطَّلَعْتُهَا ذَاتَ يَوْمٍ، فَإِذَا الذِّئْبُ قَدْ ذَهَبَ بِشَاةٍ مِنْغَنَمِهَا، وَأَنَا رَجُلٌ مِنْ بَنِي آدَمَ آسَفُ كَمَا يَأْسَفُونَ، لَكِنِّي صَكَكْتُهَا صَكَّةً، فَأَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَعَظَّمَ ذَلِكَ عَلَيَّ، قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، أَفَلَا أُعْتِقُهَا؟ قَالَ: ائْتِنِي بِهَا فَأَتَيْتُهُ بِهَا فَقَالَ لَهَا: أَيْنَ اللهُ؟ فَقَالَتْ: فِي السَّمَاءِ، قَالَ: مَنْ أَنَا؟ قَالَتْ: أَنْتَ رَسُولُ اللهِ، قَالَ: أَعْتِقْهَا، فَإِنَّهَا مُؤْمِنَةٌ وَقَالَ مَرَّةً: هِيَ مُؤْمِنَةٌ، فَأَعْتِقْهَا».

“আমার একটি বাদী ছিল সে ওহুদ ও জাওয়ানিয়ার দিকে ছাগল চরাতও। একদিন তার খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারি যে, তার ছাগল থেকে একটি ছাগল নেকড়ে বাঘ নিয়ে গেছে। আমি যেহেতু আদম সন্তান তারা যেভাবে কষ্ট পায় আমিও সেভাবে কষ্ট পেলাম। ফলে আমি তাকে খুব জোরে প্রহার করলাম, বিষয়টি আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হলে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি তাকে আযাদ করে দেব? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তাকে আমার কাছে নিয়ে আস। লোকটি বলল, আমি তাকে তার কাছে নিয়ে আসলে তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আল্লাহ কোথায়? তিনি বললেন, আল্লাহ আকাশে, তারপর বললেন, আমি কে? তিনি বললেন, তুমি আল্লাহর রাসূল, তখন তিনি বললেন, তুমি তাকে আযাদ করে দাও কারণ সে মুমিন”।[5]

[1] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৩৭; আহমদ, হাদীস নং ২৩৭৬২।

[2] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৩৭; আহমদ, হাদীস নং ২৩৭৬২।

[3] আহমদ, হাদীস নং ৮৫১৫; সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩৯৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪।

[4] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২; নাসাঈ, হাদীস নং ২০৯১; আহমদ, হাদীস নং ১৩০১১।

[5] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৩৭; আবু দাউদ, হাদীস নং ৯৩০।

 

আরো পড়ুন : আদর্শ মুনিব হিসেবে আল্লাহর রাসূল

The post আদর্শ শিক্ষক হিসেবে আল্লাহর রাসূল appeared first on Amar Bangla Post.


Viewing all articles
Browse latest Browse all 2081

Trending Articles