Quantcast
Channel: Amar Bangla Post
Viewing all articles
Browse latest Browse all 2081

আদর্শ সংস্কারক হিসেবে আল্লাহর রাসূল

$
0
0

আদর্শআল্লাহর রাসূল ছিলেন একজন মহান মুরব্বী ও সংস্কারক। তিনি মানুষকে ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করা এবং খারাপ কর্ম থেকে বিরত রাখার ক্ষেত্রে ছিলেন খুবই জ্ঞানী ও বুদ্ধিমত্তার অধিকারী। তিনি একজন মানুষকে সংশোধন করা ও তাকে কু-কর্ম থেকে ফিরিয়ে রাখতে অত্যন্ত হিকমত ও বুদ্ধিমত্তার সাক্ষ্য স্থাপন করেন। আমরা মনে করি, শুধু শাস্তি দিয়ে মানুষকে কু-কর্ম, অন্যায়-অনাচার ও পাপাচার থেকে বিরত রাখতে হয়। কিন্তু বাস্তবতা হল, শুধু শাস্তি দিয়ে অন্যায়, অনাচার ও পাপাচার থেকে মানুষকে বিরত রাখা সম্ভব নয়। এর জন্য মানুষের অন্তরের পাপাচারের অনুভূতি জাগ্রত করা, অন্যায়ের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করা এবং অন্যায়ের স্বরূপ উদঘাটন করা খুবই জরুরি।

হাদীসে এসেছে, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট যিনা করার অনুমতি চেয়েছিল। তিনি জবাবে এ গর্হিত কাজটি তার মা, বোন, ফুফু কিংবা খালার সাথে করা হলে সে রাজি হবে কি-না পর্যায়ক্রমে এ প্রশ্ন করলে জবাবে লোকটি রাজি হবে না বলে জানাল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটির অনুভূতিতে যেন দাগ কাটে এ জন্য বললেন: দেখ তুমি যার সাথে যিনার অনুমতি চাচ্ছ সে কারো না কারো মা, কিংবা বোন, কিংবা ফুফু অথবা খালা। এ কথা বলার পর তার অনুভূতিতে একটি পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেল। তার অন্তরে গুনাহের প্রতি ঘৃণা জন্মিল। এভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপযুক্ত ও সময় উপযোগী শিক্ষাদানের মাধ্যমে লোকটির অনুভূতি পরিবর্তন করে দিলেন এবং তার জন্য দো‘আ করে দিলেন। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল তার মুসনাদ গ্রন্থে হাদীসটি এভাবে বর্ণনা করেছেন। আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

إِنَّ فَتًى شَابًّا أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، ائْذَنْ لِي بِالزِّنَا، فَأَقْبَلَ الْقَوْمُ عَلَيْهِ فَزَجَرُوهُ وَقَالُوا: مَه مَهْ فَقَالَ: ادْنُهْ، فَدَنَا مِنْهُ قَرِيبًا. قَالَ: فَجَلَسَ قَالَ: أَتُحِبُّهُ لِأُمِّكَ؟ قَالَ: لَا وَاللهِ «جَعَلَنِي اللهُ فِدَاءَكَ. قَالَ: وَلَا النَّاسُ يُحِبُّونَهُ لِأُمَّهَاتِهِمْ. قَالَ: أَفَتُحِبُّهُ لِابْنَتِكَ؟ قَالَ: لَا. وَاللهِ يَا رَسُولَ اللهِ جَعَلَنِي اللهُ فِدَاءَكَ قَالَ: وَلَا النَّاسُ يُحِبُّونَهُ لِبَنَاتِهِمْ. قَالَ: أَفَتُحِبُّهُ لِأُخْتِكَ؟ قَالَ: لَا وَاللهِ جَعَلَنِي اللهُ فِدَاءَكَ. قَالَ: وَلَا النَّاسُ يُحِبُّونَهُ لِأَخَوَاتِهِمْ. قَالَ: أَفَتُحِبُّهُ لِعَمَّتِكَ؟ قَالَ: لَا وَاللهِ جَعَلَنِي اللهُ فِدَاءَكَ. قَالَ: وَلَا النَّاسُ يُحِبُّونَهُ لِعَمَّاتِهِمْ. قَالَ: أَفَتُحِبُّهُ لِخَالَتِكَ؟ قَالَ: لَا وَاللهِ جَعَلَنِي اللهُ فِدَاءَكَ. قَالَ: وَلَا النَّاسُ يُحِبُّونَهُ لِخَالَاتِهِمْ. قَالَ: فَوَضَعَ يَدَهُ عَلَيْهِ وَقَالَ: اللهُمَّ اغْفِرْ ذَنْبَهُ وَطَهِّرْ قَلْبَهُ، وَحَصِّنْ فَرْجَهُ قَالَ : فَلَمْ يَكُنْ بَعْدُ ذَلِكَ الْفَتَى يَلْتَفِتُ إِلَى شَيْءٍ».

“একদা এক যুবক আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হাজির হয়ে আরজ করল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে যিনা করার অনুমতি দিন। একথা শুনে উপস্থিত লোকজন অগ্রসর হয়ে তাকে ধমক দিল। তারা বলল: তুমি কি বলছ, থাম, থাম। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমরা তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো। এরপর লোকটি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে গিয়ে বসল। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি এ গর্হিত কাজটি তোমার মার জন্য পছন্দ কর। জবাবে লোকটি বলল: না- হে আল্লাহর রাসূল, আল্লাহর কসম! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন। জবাবে তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: অন্যান্য লোকজনও এ কাজ তাদের মায়েদের জন্য পছন্দ করে না। এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলেন। তুমি কি এ কাজ তোমার মেয়ের জন্য পছন্দ কর? জবাবে বলল- না-হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কসম, আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন। তখন রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: লোকজনও এ কাজ তাদের মেয়েদের জন্য পছন্দ করে না। এরপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি এ কাজ তোমার ফুফুর জন্য পছন্দ কর? জবাবে লোকটি বলল: না, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কসম! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লোকজনও তাদের ফুফুদের জন্য এ কাজ পছন্দ করে না। এরপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি এ কাজ তোমার খালার জন্য পছন্দ কর? জবাবে লোকটি বলল: না, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কসম! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: লোকজনও এ কাজ তাদের খালাদের জন্য পছন্দ করে না। বর্ণনাকারী বলেন: এরপর রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপন হাতকে তার হাতের ওপর রাখলেন এবং দো‘আ করলেন:

«اللهُمَّ اغْفِرْ ذَنْبَهُ وَطَهِّرْ قَلْبَهُ، وَحَصِّنْ فَرْجَهُ».

“হে আল্লাহ! তুমি তার গোনাহ মাফ করে দাও। তার অন্তরকে পবিত্র করে দাও এবং তার লজ্জা স্থানকে হিফাযত কর।” বর্ণনাকারী বলেন: এরপর থেকে সেই যুবকটি কোনো দিন কোনো কিছুর দিকে তাকাত না।[1] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে যেভাবে কথাগুলো বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাতে তাকে শুধু গুনাহ থেকে বারণ করা হয় নি, বরং তার অন্তরে গুনাহের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করা হয়েছে। যার ফলে লোকটি আর কখনোই গুনাহের প্রতি মনোনিবেশ করে নি। লোকটিকে যদি সরাসরি নিষেধ করা হত, তাহলে হয়ত সে এ গর্হিত কর্ম থেকে ফিরে আসতে কষ্ট অনুভব করত। কিন্তু আল্লাহর রাসূল তাকে যেভাবে বুঝিয়ে দিলেন তাতে সে শুধু গুনাহ তে ফিরেই আসেনি বরং তার অন্তরে গুনাহের প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয়।

[1]  মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ২২২১১১।

আরো পড়ুনঃ আদর্শ শিক্ষক হিসেবে আল্লাহর রাসূল

The post আদর্শ সংস্কারক হিসেবে আল্লাহর রাসূল appeared first on Amar Bangla Post.


Viewing all articles
Browse latest Browse all 2081

Trending Articles