অদ্ভুত এক ধরনের শব্দ হচ্ছে।
পরিচিত কোনো শব্দের সঙ্গে এর বিন্দুমাত্র মিল নেই বলে শব্দটাকে ঠিক ব্যাখ্যা করা যাবে না। লক্ষ লক্ষ ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজকে যদি কোন উপায়ে কমিয়ে অতি সূক্ষ কোনো উপায়ে কমিয়ে অতি সূক্ষ পর্দায় নিয়ে আসা যায় এবং সেই আওয়াজটাকে দিয়ে ঘূর্ণির মতো কিছু করা যায়, তাহলে বোধ হয় কিছুটা ব্যাখ্যা হয়। না, তাও হয় না। আওয়াজটাকে মধ্যে ধাতব ঝংকার আছে। ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াযে কোনো ধাতব ঝংকার নেই। শব্দটা অস্বস্তিকর। স্নায়ুর উপর চাপ ফেলে। আমাকে বলা হয়েছে এই শব্দ সহ্য হয়ে যাবে। মানুষের সহ্য করবার শক্তি অসীম। কাজেই সহ্য হলেও হতে পারে। কিন্তু আমার এখনো হচ্ছে না। কোনোদিন হবে বলেও মনে হয় না। আমি খুবই অস্থির বোধ করছি।
মহাশূন্যযান—‘গ্যালাক্সি টু’-তে আজ আমার তৃতীয় দিন। এর আগে আমি কখনো কোনো মহাশূন্যযানে ওঠা দূরে থাক, তার ভেতরের ছবি পর্যন্ত দেখি নি। মহাশূন্যের প্রতি আমার কোনো আগ্রহ নেই। অযুত নিযুত লক্ষ কোটি মাইল দূরের গ্রহগুলি কেমন? সেখানে প্রাণের বিকাশ ঘটেছে কিনা তা নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না।
আমি একজন টিভি প্রোগ্রাম মনিটার কার্যক্রমের অতি সামান্য কর্মচারী। আমার কাজ হচ্ছে বিশেষ বিশেষ কোনো টিভি প্রোগ্রাম দর্শকদের কেম লাগল তা মনিটর করে স্ট্যাটিসটিক্স তৈরি করা। যেমন টিভি চ্যানেল থ্রিতে একটা হাসির সিরিয়াল হচ্ছে, নাম—‘কথা বলা না-বলা।’ আমার কাজ হচ্ছে প্রোগ্রাম চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন বাড়িতে টেলিফোন করে অত্যন্ত ভদ্রভাবে জানতে চাওয়া, ‘ম্যাডাম (বা স্যরা), আপনি কি এই মুহূর্তে টিভি দেখছেন?
যদি উত্তর হয় ‘হ্যাঁ’, তাহলে জিজ্ঞেস করা, ‘কোন চ্যানেল দেখছেন?’
তার উত্তর হ্যাঁ হলে জিজ্ঞেস করা, ‘কথা বলা না-বলা’ অনুষ্টানটি আপনার কেমন লাগছে?’ বেশির ভাগ সময়ই কোনো উত্তর পাওয়া যায় না, আমার প্রশ্ন শুনেই খট করে টেলিফোন নামিয়ে রাখে। কেউ কেউ অত্যন্ত রাগী গলায় বলে, ‘আমাদের-এ-ভাবে বিরক্ত করার কী অধিকার আছে আপনার?’ আবার অনেকে কুৎসিত গালাগালি করে। আমি গায়ে মাখিনা। গায়ে মাখলে চাকরি করা যায় না। আমি হাসিমুখে আমার কাজ করি। যথাসময়ে রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে প্রোগ্রাম রেটিং করা হয়। মাস শেষ হলে একটা চেক পাই।
গত মাসে ব্যতিক্রম হল। চেকের সঙ্গে আলাদা খামে এক চিঠি এসে উপস্থিত। চিঠির ওপর সোনালি রঙের ত্রিভুজের ছাপ। এর মানে হচ্ছে, ‘অত্যন্ত জরুরি। এক্ষুণি খাম খুলে চিঠি পড়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।’ আমি অবশ্যি তা করলাম না। প্রথম চেকটি, টাকার অঙ্ক ঠিক আছে কিনা। একটি বোনাস পাওনা হয়েছিল। সেই বোনাস দেয়া হয়েছে কিনা। দেয়া হয়েছে। সব ঠিকঠাক আছে। তারপর আমি ত্রিভুজ চিহ্নের খাম খুললাম। এ কী অসম্ভব ব্যাপার! মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের ডিরেকটর আমাকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।………
শিরোনামঃ অনন্ত নক্ষত্রবীথি
লেখক ঃ হুমায়ূন আহমেদ স্যার।
ক্যাটাগরি : সায়েন্স ফিকশন
ধরণ : PDF
সাইজ : 3.20 mb
Download here – ডাউনলোড করুন।
The post অনন্ত নক্ষত্র বীথি -হুমায়ূন আহমেদের সায়েন্স ফিকশন বই appeared first on Amar Bangla Post.