বউ আমার আসল তার পরিবারকে ছেড়ে, অথচ উল্টা আমাকেই অনেকে বলা শুরু করল, "বিয়ে তো করলা, এখন ঠ্যালা বুঝবা… পুরুষ মানুষের বিয়ে মানেই মৃত্যু।"
ঠিক মৃত্যুটা কিভাবে হবে, তা মাথায় আসল না… দেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
ঈদ এল… ঈদের আগের দিন সিঙ্গেল বন্ধুরা মজা মাস্তিতে ব্যস্ত… আমি তখন ব্যস্ত বউকে নিয়ে কেনাকাটায় কিংবা বাড়ির জন্য টুকিটাকি জিনিস কেনায়।
ভাবলাম, পুরুষদের বিয়ে মানে তাহলে আনন্দেরই মৃত্যু। লোকে তো ঠিক কথাই বলে!!
পরের দিন ঈদ… আমি যখন নিজের মা, বোনদের সাথে ঈদ উদযাপন করছি, একটু ওদিকে তাকিয়ে দেখি #বউ তার মা বাবার সাথে ফোনে কথা বলছে…
তখন আগের রাতে নিজের আনন্দের মৃত্যুর কথা ভাবলাম… আদৌ কি আমার আনন্দের মৃত্যু ঘটেছে?
ঈদের দিন আমি আমার পরিবারের সাথে উদযাপন করতে পারছি, অথচ সে মেয়েটি তার জীবনসঙ্গীর জন্য নিজের মা বাবাকে ছেড়ে অন্য একটি পরিবারে এসে #ঈদ করছে!!
যদি তুলনা করা হয়, তাহলে তো তারই আনন্দের মৃত্যু হওয়ার কথা, আমার নয়… অথচ কি হাসি মুখে সে আমাদের সাথে রয়েছে!!
দুই.
একজন স্ত্রীর কাছে সবচেয়ে আপন হল তার স্বামী… শ্বশুর বাড়ি নিজের বাড়ি হলেও স্বামী না থাকলে সে বাড়ি মেয়েদের কাছে ফাঁকাফাঁকা লাগে…
কর্মসুত্রে দুজন দুজায়গায় থাকি… বউ বাসায় আসলে তখন বন্ধু বা কলিগদের সাথে আড্ডা বাদ দিয়ে সন্ধ্যায় তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হয়…
ভাবলাম, তাই তো, তারা ঠিকই বলে… পুরুষ মানুষের বিয়ে মানেই মৃত্যু… এই মৃত্যু হল স্বাধীনতার মৃত্যু!!
বউ বাপের বাড়ি যাবে… আমাকে রেখে আসতে হবে। কিন্তু আমার ডিউটি থাকায় বাসায় আসতে দেরি হল… সেদিন আর যাওয়া হল না… অথচ তার জন্য যাওয়া জরুরী ছিল, কারণ ছুটি খুব কম ছিল।
হঠাৎ গত রাতের নিজের স্বাধীনতার মৃত্যুর কথা মনে হল… আসলে কি বিয়ের ফলে আমার স্বাধীনতার মৃত্যু হয়েছে? আমি না হয় একটু আড্ডা #গল্প গুজুব করতে যেতে পারিনি, কিন্তু সে তো তার পরিবারের সাথেই দেখা করতে যেতে পারল না!!
তিন.
দুজন মানুষ একসাথে থাকলে মতানৈক্য হবেই… তখন মনে হল, পুরুষদের বিয়ে মানে আসলে আনন্দ বা স্বাধীনতার মৃত্যু না… এটা হল মনের মৃত্যু। বিয়ে করা আসলেই ভুল!!
এরপর পরিবারের মেম্বারদের সাথে মতানৈক্য হল… এবার কিন্তু কিছুই মনে হল না!
হঠাৎ ভাবলাম, ভাই বোনের সাথে ঝগড়া হলে তো কখনো বলি না, ভাই বোনের সম্পর্ক জিনিসটাই মস্ত ভুল… কিংবা মার সাথে ঝগড়া হলে কি তখন বলি এই মা'র গর্ভে জন্মগ্রহন করে ভুল করেছি?
তাহলে বউয়ের সংগে কিছু হলেই কেন বলব, বিয়ে করাই ভুল?
মা বাবা ভাই বোন যেমন পরিবার, বউও তেমন পরিবার। তাদের সাথে মতানৈক্য যদি স্বাভাবিকভাবে নিতে পারি, স্ত্রীর সাথে মতানৈক্যগুলোও স্বাভাবিকভাবে নেওয়া উচিত।
চার.
আমি এটা বারবার বলি… মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি… একটি মেয়ে যখন স্বামীর বাড়িতে আসে, সে তার মা, বাবা, ভাই, বোন সবকিছু ছেড়ে আজীবনের জন্য আসে… এমন একজনের জন্য আসে যার সাথে তার রক্তের কোন সম্পর্ক নেই… সম্পর্ক শুধু বিয়ে নামক একটা বন্ধন…
এটা যে কত বড় একটা স্যাক্রিফাইস, যারা করে শুধু তারাই অনুভব করে… সব কিছুর মৃত্যু হলে তো তাদের হওয়ার কথা… আমাদের কেন?
আসলে, যারা নিজের পারিবারিক জীবনে ব্যর্থ, হতাশ, তারাই এসব কথা বেশি বলে "পুরুষরা বিয়ের পর মৃত"… আসলে, তারা নিজেরা মৃত, এসব কথা বলে অন্যদেরও মৃত বানাতে চায়।
নিজের পারিবারিক জীবনে অন্যদের কথা কখনো গুরুত্ব দিতে হয় না… তাদের নাক গলানোর সুযোগও দিতে হয় না। যখনই স্বামী স্ত্রীর মাঝে তৃতীয় পক্ষ ঢুকে যায়, সেই ফাঁকে শয়তানও ঢুকে যায়… অশান্তি তখনই শুরু হয়ে যায়।
আসলে, বিয়ে একজন পুরুষকে আরো জীবিত করে তুলে… তাকে দায়িত্ববান করে তুলে… নতুন করে জীবন নিয়ে ভাবতে শেখায়… যে ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু হয় স্ত্রী ও সন্তানরা, আর আমরা পুরুষরা তাদের আবর্তন করতে করতে বাকি জীবন পার করি। এটাই আমাদের দায়িত্ব, এটাই আমাদের সুখ- একজন পুরুষ হিসেবে, একজন স্বামী হিসেবে, একজন বাবা হিসেবে..
লিখেছেনঃ ডা. তারাকী হাসান মেহেদী
The post পুরুষের বিয়ে মানেই মৃত্যু নাকী উজ্জীবিত! কোনটি সত্য? appeared first on Amar Bangla Post.