বর্তমানে আমাদের আচরণ কমার্শিয়াল হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীদের মতো সব কিছুতেই আমরা লাভ খুঁজি। আমাদের সদাচরণ যেন কেবল ধনীদের জন্যই। ধনীদের সঙ্গে কথা বলার সময় আমাদের মুখ থেকে হাসি ঝরে। ধনীদের বড় বড় অন্যায়ও আমাদের দৃষ্টিতে তুচ্ছ মনে হুয় এমনকি দেখেও না দেখার ভান করি। ওভারলুক করার চেষ্টা করি।
পক্ষান্তরে গরীব লোকদের সঙ্গে আমাদের আচরণ স্বাভাবিকের চেয়ে কঠিন। তাঁদের হাসির কথা শুনলেও তা আমাদের দৃষ্টিতে অনেক বড় হয়ে ধরা দেয়। শোনামাত্রই সমালোচনার ঝড় ওঠে।
কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লমের আচরণ ধনী-গরীব সবার প্রতি ছিল একরকম।
আনাস (রাঃ) বলেন, যাহির বিন হারাম নামক জনৈক বেদুঈন সাহাবী ছিলেন। তিনি কখনো মরু এলাকা থেকে মদিনায় এলে রাসূলের জন্য পনির বা ঘি হাদিয়া নিয়ে আসতেন। ফিরে যাবার সময় রাসূলে (সাঃ) তাকে খেজুর ইত্যহাদি হাদিয়া দিয়ে দিতেন। রাসূল তাঁকে খুব ভালোবাসতেন। তাঁর সম্পর্কে বলতেন—
‘যাহির আমাদের মরুপ্রান্তর, আর আমরা তা শহর।’
যাহির (রাঃ) দেখতে তেমন সুশ্রী ছিলেন না।
একদিন তিনি মরু এলাকা থেকে রাসূলের কাছে এলেন। কিন্তু রাসূলকে বাড়িতে পেলেন না। তাঁর সঙ্গে কিছু পণ্যদ্রব্য ছিল। বিক্রির জন্য সেগুলো নিয়ে তিনি বাজারে চলে গেলেন।
এদিকে রাসূল বাড়ি ফিরে যাহিরের কথা জানতে পেরে তাঁর খোঁজে নিজেই বের হয়ে পড়লেন। বাজারে গিয়ে দেখলেন, যাহির একমনে তাঁর পণ্যদ্রব্য বিক্রি করছে। তাঁর শরীর থেকে ঘাম ঝরছে। সে ঘামে শরীরের কাপড়-চোপড় ভিজে জবজব করছে। গ্রাম্য লোকদের কাপড়-চোপড়ের মতোই তাঁর কাপড় থেকে ঘামের গন্ধ ভেসে আসছে। রাসূল তাঁকে দেখছিলেন। কিন্তু সে রাসূলকে দেখতে পেল না।
রাসূল (সাঃ) ধীরে ধীরে এগিয়ে গিওয়ে তাঁকে পেছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরলেন। যাহির চমকে ওঠলেন। তিনি বুঝতে পারলেন না, কে তাঁকে এভাবে ধরেছে।
তিনি ঘাবড়ে গিয়ে বলে উঠলেন, ‘আমাকে ছেড়ে দিন বলছি। কে আপনি?
রাসূল (সাঃ) নিশ্চুপ থাকলেন।
যাহির নিজেকে ছাড়াতে প্রাণপণ চেষ্টা করতে লাগলেন। হঠাৎ পেছনের দিকে ফিরে তাকালেন। রাসূল (সাঃ) কে একপলক দেখেই তাঁর হৃদয়রাজ্যে প্রশান্তির ঢেউ খেলে গেল।
এরপর তিনি নিজের পিঠটিকে রাসূলের পবিত্র বুকের সঙ্গে মিলিয়ে রাখলেন। রাসূল যাহিরের সঙ্গে আরেকটু রসিকতা করতে চাইলেন। তিনি জোরে জোরে বলতে লাগলেন, ‘এ গোলামটিকে কে কিনবে? কে কিনবে এ গোলামটিকে?
রাসূলের কথা শুনে যাহির নিজেকে নিয়ে একটু ভাবল। চোখ বন্ধ করে যাহির দেখতে পেল সে একজন গরীব ও গ্রাম্য বেদুঈন। ধন দৌলত বলতে কিছু নেই। চেহারায়ও নেই কোনো শ্রী। তাই নিজেকে খুব মূল্যহীন মনে হলো তাঁর।
এরপর তিনি বলে ওঠলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! এ গোলামটাকে তো অনেক সস্তায় বিক্রি করতে হবে।
রাসূল বললেন—
‘কিন্তু আল্লাহর কাছে তো তুমি সস্তা নও। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে তুমি অনেক মূল্যবান।’(ইবনে হিব্বান)
এমন আন্তরিকতাপূর্ণ আচরণ পেলে গরীব-দুঃখীদের মন রাসূলের জন্য যদি পাগল হয়ে যায় তাহলে এতে আশ্চর্যের কী আছে?
অনেক গরীব মানুষ আছেন, যারা ধনীদের কাছে টাকা পয়সা না পেলে কোনো অভিযোগ করে না। কিন্তু তাঁদের কাছে সুন্দর আচরণ ও মানবিক ব্যবহার না পেলে তাঁদের ক্ষোভের অন্ত থাকে না।
একটু চিন্তা করে দেখুন…..
কয়জন গরীব মানুষ দেখে আপনি মুচকি হেসে তাঁকে বরণ করে নিয়েছেন?
কয়জন গরীব মানুষকে মূল্যায়ন করেছেন?
তাহলে তো সে রাতের নির্জন মুহূর্তে আপনার জন্য তাঁর হাতদুটো তুলে দোয়া করত।
আপনার জন্য আসমানী রহমত কামনা করে মহান প্রভুর দরবারে রোদন করত।
এলোমেলো চুল, জীর্ণ দেহ আর ছিন্ন বস্ত্রের এমন অনেক মানুষ আছেন দুনিয়ার মানুষের কাছে তাঁদের কোনো মূল্য না থাকলেও আল্লাহর কাছে তাঁরা অনেক মূল্যবান। তাঁরা আল্লাহর নামে শপথ করে কিছু বলে ফেললে আল্লাহ অবশ্যই তা পূর্ণ করে দেন। তাই এধরনের গরীব ও দুর্বল মানুষদের সঙ্গে সবসময় হাস্যোজ্জ্বল থাকুন।
এক ঝলক…..
কোনো গরীব ব্যক্তির প্রতি আপনার এক টুকরা মধুর হাসি আল্লাহর কাছে আপনার মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
আপনি পড়ছেন >> “জীবনকে উপভোগ করুণ” বাংলা বই থেকে।
আরও পড়ুন….
০১ গৃহ জীবনে সুখী হওয়ার সাতটি সহজ উপায়
০২ স্বামীর মন জয় করার এক মর্মস্পর্শী কাহিনী।
লেখাটি পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই এটি শেয়ার করুন।
The post গরীব দুঃখীদের সঙ্গে কেমন আচরণ করবেন? appeared first on Amar Bangla Post.