পুরুষের যেমন নারীর নিকট কতকগুলি কাম্য আছে, পুরুষের নিকট নারীরও তেমনই কতকগুলি কাম্য আছে। নারীর এই মনোভাবের সম্যক জ্ঞান পুরুষের থাকা উচিৎ। অন্যথায় দাম্পত্য-জীবন সুখ-দায়ক হতে পারে না।
চিকাগোর মিঃ আর্থার স্যামন তাঁর “নারী ও পুরুষ” নামক গ্রন্থে বলেছেন যে, নারীজাতি পুরুষের চেয়ে অনেক বেশী চালাক, ধৃর্ত, ভন্ড ও কুটিল বলে পুরুষের পক্ষে নারী-চরিত্র অধ্যয়ন করা সম্ভব নয়।
আমাদের মনে হয়, মিঃ স্যামন নারীজাতির উপর সুবিচার করেন নি। নারী-চরিত্র পুরুষের কাছে দুরূহ নারীজাতির কুটিলতার জন্য নয়-পরন্ত নারী অধিকাংশস্থলে সহজাত বুদ্ধির দ্বারা পরিচালিত হয় বলে।
যৌন কার্য্যে নারীর ব্যবহার যৌন-জীবনের অনেক দুর্গতির কারণ, একথা স্বীকার করতেই হবে। কিন্তু মহিলা যৌন-বৈজ্ঞানিক ডাঃ মেরী ষ্টোপস একটি যুক্তি দ্বারা স্বীয় ভগিনীগণের পক্ষ সমর্থন করেছেন। তিনি তাঁর বিখ্যাত ‘আইডিয়াল ম্যারেজ’ নামক গ্রন্থে বলেছেন—“পুরুষের কাছে সত্যই নারী একটা হেঁয়ালী মাত্র। আজ নারী যে প্রকার আদরে একেবারে গলিয়ে গিয়ে স্বামীর কোলে মাথা রাখে পুলকে, অবসাদে এলিয়ে পড়েছে, আগামী কল্য অবিকল সেইরূপ আদরেই সে দশ হাত দূরে সরে দাঁড়াইল। আজ যে সর্বাঙ্গীন ক্ষুধা নিয়ে স্বামীকে জড়িয়ে ধরেছে, বিনা কারণে আগামী কল্য সে স্বামীকে প্রত্যাখ্যান করিবে। নারীর এই ব্যবহারে পুরুষ স্বভাবতঃই প্রাণে ব্যাথা পায়। কিন্তু দুঃখ এই যে, যে পুরুষ জ্ঞানে বিজ্ঞানে এত উন্নতি করেছেন, পতঙ্গের জীবন-চরিত্র আলোচনা করছে, সেই পুরুষ নারীর মনো-বিজ্ঞান আলোচনা করা প্রয়োজন বোধ করছে না।”
ডাঃ ষ্টোপস এই ভাবে দুঃখ প্রকাশ করে অবশেষে বলেছেন—“নারীর যৌন-জীবনের তাঁর যৌন-বোধ নৃত্যের ছন্দে তরঙ্গায়িত হচ্ছে। চান্দ্র মাসের সহিত এই তরঙ্গের ঘনিষ্ট সম্বন্ধ আছে। নারী দেহের যৌন-বৃত্তির তত্রীর যথাস্থানে আঘাত করে তাঁর যৌন-ছন্দ তরঙ্গায়িত না করে বলপূর্ব রতিক্রিয়া করতে গিয়ে পুরুষ নারীকে ভূল বুঝিয়েছেন। পুরুষ আলো, শব্দ ও পানির তরঙ্গ সম্বন্ধে গবেষণা করে সিদ্ধান্ত উপনীত হয়েছে, কিন্তু তাঁর জীবন-সঙ্গিনী নারীর যৌন-তরঙ্গ সম্বধে কোনো আগ্রহের পরিচয় দিচ্ছে না, তা কত পরিতাপের বিষয়।”
এসব তর্কিত বিষয়ে কোনও মতামত প্রকাশ না করে একথা বোধ হয় বলা যেতে পারে যে, রতি-ক্রিয়ায় নারী জাতির এই যে বাহ্য ঔদাসীন, তাঁর কারণ—
(১) নারীর স্বাভাবিক লজ্জা,
(২) রতি-ক্রিয়ায় পুলক ও পরিণামে ব্যথার মধ্যে কোনটি অধিক গ্রহণ যোগ্য সে সম্বন্ধে অব্যবস্থিতচিত্ততা, উৎপীড়িত হবার নারীর স্বাভাবিক বাসনা।
নারীর লজ্জাশীলতা
নারীর মধ্যে লজ্জাশীলতা পুরুষ অপেক্ষা অনেক তীব্র। এই কারণে রতি-ক্রিয়াতে নারীকে বিরুদ্ধে ভাবাপন্ন বলেই বোধ হয়।
নারীর ভয়
(২) রতিক্রিয়া নারীর পক্ষে পুরুষের ন্যায় নিরাপদ নয়। প্রাকৃতিক ব্যবস্থা অনুসারেই নারীকে রতি-ক্রিয়ার বিপদজ্জনক ফল ভোগ করতে হয়। নারীর এই বিপজ্জনক বিশেষ দায়িত্বের কথা সহানুভূতির সহিত বিবেচনা করলে নারীকে পুরুষ কোনও মতেই দোষ দিতে পারে না। পুরুষের একথা ভুলা উচিৎ নয় যে, পুরুষের জন্য যা পুলক-প্রদ ক্রীড়া মাত্র, নারীর জন্য সেটাই জীবন-মরণ সমস্যা। কাজেই রতিক্রিয়ায় রত হবার পূর্বে নারীকে অগ্রপশ্চাৎ অনেক ভাবতে হয়।
নারীর দ্বৈত মনোভাব
(৩) নারী তাঁর প্রিয়জনের দ্বারা উৎপীড়িত হতে ভালবাসে। এটি নারী-প্রাণের এক অদ্ভুত বিশেষত্ব। প্রিয়তম স্বামী যতই জবরদস্তী করে তাতে উপগত হবে, নারীর পুলকের মাত্রা ততই বৃদ্ধি-প্রাপ্ত হবে। তাতে পুরুষেরও উত্তেজনা তীব্রতর হয়ে থাকে। নারীর এই দ্বৈত মনোভাব পুরুষের পক্ষে একটা কঠিন সমস্যা। কারণ রতিক্রিয়ায় নারীর অসঙ্গতির কোনটা আন্তরিক আর কোনটা ক্রীড়াত্মক তা বুঝার উপরই দাম্পত্য-জীবনের সাফল্য নির্ভর করছে। যৌন-উত্তেজিত পুরুষ যদি নারীর অসম্মতি অগ্রাহ্য করে জোর করে রতিক্রিয়া করে, তবে নারী বলবে “তুমি পশু” আর যদি সহৃদয়তা বশতঃ রতিক্রিয়ায় বিরত হয়, তবে বলবে “তুমি কাপুরুষ।” পুরুষ তবে কোনটা করবে? ডাঃ মেরি ষ্টোপসের প্রস্তাবিত নারীর যৌন-তরঙ্গের নির্ভূল নির্ধারণ সম্ভব হলেই তাঁর একটা সমাধান হতে পারে। কিন্তু তৎপূর্বে পুরুষকে এসব ব্যাপারে বিশেষ সাবধানতার সহিত নারীর ভাব-বিপর্যয় লক্ষ্য রেখে সহৃদয়তা, ধৈর্য্য ও বিবেচনার সহিত কার্য্য করতে হবে। আমরা পূর্বেই বলেছি যে নারীর কাম-কেন্দ্রে বহু ও বিস্তৃত। সুতরাং নারীর যৌন-উত্তেজনা ধীরে ধীরে জাগ্রত হয়। বিভিন্ন প্রকারের শৃঙ্গারের দ্বারা নারীর রতি-বাসনা সম্পূর্ণ জাগ্রত করার পূর্বে নারীতে উপগত হওয়ার নাম রতি-ক্রিয়া নয়—বলাৎকার, পাশবিকতা। কারণ শৃঙ্গারের দ্বারা নারীর কাম-বাসনা জাগ্রত না করিলে, নারী রতিক্রিয়ায় পুলকের পরিবর্তে ব্যথা পেয়ে থাকে।
ফলতঃ নারী রতি-ক্রিয়ায় সদাজাগ্রত নয়। অন্ততঃ বাহ্যতঃ নারী রতি-ক্রিয়ায় চেষ্টা লভ্য। নারীর এই চেষ্টা-লভ্যতার কারণ যৌন বিরুদ্ধতাই হোক, আর যুগ-যুগান্তের আচার-সঞ্জাতই হোক, নারীর এই বৈশিষ্ট্যের একতা ভাল দিক আছে। নারীর এই যৌন-লজ্জা তাঁকে পুরুষের চক্ষে সুন্দর ও লোভনীয় করেছে। যৌন-পুলকের জন্য নারীর এই দির্লভতা একেবারে নিস্ফল নয়।
আর এই বৈশিষ্ট্যকে দোষাবহ স্বীকার করে নিলেও একথা স্বীকার করতেই হবে যে, নারী জাতি অতিশয় অনুকুরণ প্রিয় এবং অতি-সহজেই নিজের স্বভাবকে পরিবর্তিত করে অবস্থার সহিত খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা তাঁর আছে। সুতরাং একটু ধৈর্য্য, সহানুভূতি ও সহৃদয়তার সহিত পরিচালিত করলে নারীকে পুরুষ সম্পূর্ণ মনের-মত করে গড়ে তুলতে পারে।
নারীর কবিপ্রাণা ও কলা-প্রিয়তা
পুরুষ আর একটা ব্যাপারে নারী-মনো-ভাবকে নিষ্ঠুর-ভাবে উপেক্ষা করে থাকে। নারী স্বভাবতঃই কবিপ্রাণা, কলা-প্রিয়া এবং সৌন্দর্য্যের উপাসিকা। একথা জেনে শুনেও পুরুষ নিজের বিবাহিত স্ত্রীর নিকট সুন্দর করে নিজেকে প্রকাশের কোনও চেষ্টা করে না। অথচ পর-স্ত্রীর কাছে সুন্দর দুষ্ট হবার জন্য তাঁর চেষ্টার কোনো ক্রটি নাই। বিবাহিত স্ত্রীর প্রতি এর চেয়ে নিষ্ঠুরতা আর কি হতে পারে? পুরুষ নিজে যখন স্ত্রীকে সুন্দরী দর্শন করার জন্য এত আগ্রহশীল, তখন সে স্ত্রীরও সুন্দর স্বামী দর্শনের আকাঙ্ক্ষা থাকার সম্ভাবনাটি স্বামী ভূলে যায় কিরূপে, তা বুঝে উঠা কঠিন।
যে রতিক্রিয়ায় স্বামী-স্ত্রী আদর্শ স্বামী-স্ত্রী রূপে গণ্য হতে পারে, সে রতিক্রিয়ায় প্রেম বিদ্যমান থাকা চাই। সুতরাং বিবাহিত জীবনকে সুখময় ও আনন্দময় করতে হলে রতিক্রিয়া ও প্রেমকে কলারূপে কর্ষণ ও সাধনা করতে হবে।
এরপর পড়ুন >> কলারূপে প্রেম
আপনি পড়ছেন >> যৌন বিজ্ঞান বই থেকে।
লেখাটি পড়ে আপনার কাছে ভালো লাগলে এটি শেয়ার করুন।
The post নারীর কামনায় পুরুষের জ্ঞাতব্য ও কর্তব্য appeared first on Amar Bangla Post.