Quantcast
Channel: Amar Bangla Post
Viewing all articles
Browse latest Browse all 2081

সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেঈনদের যুগে ভারতবর্ষ মুসলমানদের আগমন ও ধর্ম প্রচার

$
0
0

islam winভারতবর্ষের মাটিতে মানুষের আদিবাস কবে থেকে শুরু হয়েছিল তা নিশ্চিত করে বলা না গেলেও সুমেটিক আর্যরা ইরান থেকে এসে এ-এলাকায় বসতি গড়ে তোললে ক্রমান্বয়ে আর্যসভ্যতাই যে এদেশের অধিবাসীদের সভ্যতায় রূপান্তরিত হয়—একথা ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত। আর্য হিন্দুদের প্রাধান্য ছিল তখন অত্র অঞ্চলে। কিন্তু যে আদর্শবাদীতার উপর হিন্দু ধর্মের গোড়াপত্তন হয়েছিল তা ক্রমান্বয়ে অবলুপ্ত হলে এবং শ্রেণী বৈষম্যের নির্মম যাতাকলে পিষ্ঠ হয়ে জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে পড়লে বৌদ্ধের সাম্যের বাণী জনগণকে আকৃষ্ট করেছিল। ক্রমান্বয়ে বৌদ্ধরাই এদেশের রাজ্যক্ষমতা দখল করে নেয়। ফলে হিন্দু ও বৌদ্ধদের মাঝে দীর্ঘ সাম্প্রদায়িক বিরোধ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। কিন্তু কৃচ্ছতার যে মহৎ শিক্ষা এক কালে হিন্দুদেরকে বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করেছিল, কালে তার আদর্শানুসারীরা স্বেচ্ছাচারিতায় লিপ্ত হয়। ফলে বৌদ্ধ ধর্ম তার আবেদন হারিয়ে ফেলে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এ সময় নেতিয়ে পড়া হিন্দু ধর্মের সংস্কার করে ব্রহ্মণ্যবাদের গোড়াপত্তন করে। এক সময় তারা বৌদ্ধদের থেকে হৃতক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়। কিন্তু ব্রহ্মণ্যবাদের আদর্শবাদীতা বিলুপ্ত হয়ে যখন ব্রাহ্মণদের ধর্মীয় শোষণের যাতাকলে পিষ্ট হল সাধারণ মানুষ, ধর্মকে পুঁজি করে যখন ব্রাহ্মণরা মানুষের উপর জুলুম ও নির্যাতনে বেপরোয়া হয়ে উঠল এবং তাদের কাজে প্রতিবাদ করলে অভিশাপ দিয়ে স্ববংশে নির্মূল করার ভয় দেখিয়ে মানুষের সর্বস্ব লুটে নিয়ে সর্বশান্ত করতে শুরু করল, তখন কৃচ্ছতাসাধনের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি করে সুখময় সমাজ গড়ে তোলার শ্রুতিমধুর শ্লোগান নিয়ে আসল যোগীবাদ। আত্মপীড়ন ও প্রবৃত্তির বিরুদ্ধাচারণ ছিল যার মূল দীক্ষা। নারী স্পর্শ মহাপাপ বলে নারীদের থেকে অনেক দূরে সরিয়ে রাখল এ আদর্শের অনুসারীরা নিজেদেরকে। কিন্তু প্রকৃতি বিরুদ্ধ বলে এই কৃচ্ছতা বেশি দিন টিকল না। ফিৎরাতের তাড়নায় কৃচ্ছতা ভঙ্গ করতে বাধ্য হল তারা। এভাবে যুগীবাদও হারালো তা আপাত মোহনীয় শ্লোগানের আবেদন। অপরদিকে হিন্দু, বৌদ্ধ, ব্রাহ্মণ ও যোগীবাদের অনুসারীদের পরস্পর বিরোধিতার ফলে গোটা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়েছিল শ্রেণীবৈষম্য ও সাম্প্রদায়িক আত্মকলহ। ফলে ভারতবর্ষ বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। উপমহাদেশের মানুষের আদর্শিক জীবনে তখন নেমে এসেছিল এক চরম হতাশা ও অস্থিরতা। ঠিক এহেন বৈষম্য ও বর্ণভেদ পীড়িত সামাজিক পটভূমিতে সাম্য ও সৌভ্রাতৃত্বের পয়গাম নিয়ে তাওহিদী আদর্শের কেতন উড়িয়ে ইসলাম এসেছিল এই ভূখন্ডে। টি,এইচ, অর্নাল্ডের মতে ইসলাম এদেশে এসেছিল যুগ যুগ ধরে লাঞ্ছিত ভাগ্যাহত মূক, মূঢ় জনগণের মুক্তির প্রতিশ্রুতি নিয়ে।

আয়তনে প্রায় ইউরোপ মহাদেশের সমান, নানাদিক থেকে আকর্ষনীয়, বিচিত্র এই ভারত উপমহাদেশ। স্মরণাতীত কাল থেকে ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা, সিন্দু ও গঙ্গা বিধৌত অববাহিকা, পলি গঠিত উর্বর ভূমি, অসংখ্য পর্বত, ভূ-প্রকৃতির বিচিত্র গঠন, অসংখ্য মূল্যবান খনিজ ও ধাতব পদার্থ, নানাবিধ উপাদেয় খাদ্য ও বহু ধরণের কৃষিজাত পণ্যের উৎপাদন ক্ষেত্র হিসাবে এদেশের প্রতি বিদেশীদের দৃষ্টি সহজেই আকৃষ্ট হত। সুপ্রাচীন কাল থেকেই আরবদের সাথে এদেশের ব্যবসায়িক যোগাযোগ ছিল। বিভিন্ন ধরণের মসল্লা, উৎকৃষ্টমানের বস্ত্র, সুগন্ধি ও কাঁচামালের জন্য তারা এদেশে আনাগোনা অহরহ।

সম্ভবত বাণিজ্যের এপথ ধরেই সর্বপ্রথম মুসলিম ধর্ম প্রচারক ও সুফী সাধকরা এদেশের মাটিতে পদার্পণ করেছিলেন। ঐতিহাসিক সূত্রে যতটুকু প্রমাণ পাওয়া যায় তাতে হযরত উমর (রাঃ) কর্তৃক পারস্য বিজয়ের পর উপমহাদেশীয় অঞ্চলের প্রতি মুসলমানদের দৃষ্টি প্রসারিত হয় এবং তখন থেকেই মুসলমানরা ভারত অভিযানের চিন্তা ভাবনা শুরু করে।

অবশ্য শাসক রূপে মুসলমানদের ভারতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগ থেকেই সুফী সাধক ও ধর্ম প্রচারকদের বদৌলতে এ উপমহাদেশের মানুষের সাথে শান্তি ও ভ্রাতৃত্বের ধর্ম ইসলামের পরিচয়  ঘটে। ইসলাম প্রচারক, মানব মাধুরী ও মানবতাবাদী কর্মকান্ডে বিমুগ্ধ হয়ে এদেশের আপামর জনসাধারণ, বিশেষ করে হিন্দুবর্ণবাদী প্রেণী এবং বৈষম্যের যাতাকলে নিস্পেষিত মানুষেরা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ঠ হয়ে পড়েছিল এবং ইসলামের মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ও অনুপম সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের সন্ধান পেয়ে যথা নিয়মে অনেকেই ইসলাম গ্রহণ না করলেও তাদের মানসিক সমর্থন ঝুঁকে পড়েছিল ইসলামের দিকেই।

এ কারণেই দেখা যায় যে, ধর্ম প্রচারকগণ শাসন ক্ষমতার অধিকারী না হয়েও একেক এলাকায় নিজেদের আদর্শিক প্রভাব বিস্তার করতঃ ক্রমান্বয়ে তারা মানুষকে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে দীক্ষিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। বিশেষ করে উপমহাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অর্থাৎ  সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় তাদের আগমন ঘটে সর্বাগ্রে। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, ঢাকার উপকূলীয় অঞ্চল, রংপুর এবং ভারতের দক্ষিণাত্যের এলাকাসমূহে, মুলতান,  আহমদাবাদ, পাঞ্জাব ও সিন্ধুতে এবং সিন্দুর নিকটবর্তী অঞ্চলসমূহে যথা দেবল, মানসুরাহ খোজ্জদার এলাকায় তাদের বসতি গড়ে উঠেছিল ব্যাপকহারে। এসকল এলাকায় ধর্মপ্রচার, মসজিদ ও খানকাহ নির্মাণ এবং ইসলামী শিক্ষাদ্বীক্ষা বিস্তারে তারা ব্যাপকহারে মনোনিবেশ করেন। তাদের খোদাভীরুতা, সৎ ও মার্জিত জীবনবোধ এবং  ন্যায়পরায়ণতায় বিমুগ্ধ হয়ে তাদের হাতে ব্যাপকহারে মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে। নবদীক্ষিত মুসলমানদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করে তারা স্থায়ীভাবে এসব এলাকায় বসবাস করতে শুরু করেন।

হযরত উমর (রাঃ) কর্তৃক নিযুক্ত বাহরাইন ও ওমানের শাসনকর্তা প্রখ্যাত সাহাবী হযরত উসমান বিন আবুল আস-আস-সাকাফী (রাঃ) স্বীয় ভ্রাতা আল-হাকামকে সিন্ধুর বরুচ অঞ্চলে এবং অপর ভ্রাতা মুগীরাহ বিন আবুল আসকে দেবল অভিযানে প্রেরণ করলে তারা তথাস্থ ক্ষমতাসীনদেরকে পরাস্ত করে ভারতের সীমানায় প্রথম ইসলামের বিজয় কেতন উড্ডীন করেছিলেন। এ সময়ে আগত সাহাবীদের মাঝে যাদের নাম জানা যায় তারা হলেন—আব্দুল্লাহ বইন ওতবান, আশইয়াম বিন আমর তামিমী, সোহার বিন আল আবদী সুহাইল বিন আদী প্রমূখ।

হযরত উসমান (রাঃ০ এর শাসনামলে তৎকর্তৃক নিযুক্ত মাকরানের শাসনকর্তা উবায়দুল্লাহ বিন মা’মার তামিমী সিন্ধুনদ পর্যন্ত ভূভাগ স্বীয় শাসনাধীন আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু ভারতের আবহাওয়া সৈন্য বাহিনীর অনুকূল হচ্ছেনা জানতে পেরে খলীফা সৈন্যদেরকে সম্মুখে অগ্রসর হতে নিষেধ করেন। এসময় আগত সাহাবীদের মাঝে হযরত আব্দুর রহমান বিন সামুরাহ (রাঃ) এর নাম ইতিহাসে উল্লেখ পাওয়া যায়। তিনি ৩১ হিজরী সনে সিজিস্তানের শাসক রূপে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং সিন্ধু অঞ্চলের বহু এলাকা নিজের অধিকারে আনতে সক্ষম হন।

হযরত আলী (রাঃ) এর খিলাফত কালে ঊনচল্লিশ হিজরীর প্রথম দিকে তার অনুমতি ক্রমে হারিস বিন মুররাহ আবদী নামে একজন বীর মুজাহিদ একদল স্বেচ্ছাসেবী সৈন্য নিয়ে ভারত আক্রমণ করেন এবং সিন্ধুর উত্তর পশ্চিম অঞ্চল উসমানী সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। কিন্তু ৪২ হিজরীতে তিনি সিন্ধু’র কিকান নামক স্থানে প্রতিপক্ষ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে সদলবলে নিহত হন।

হযরত মু’আবিয়া (রাঃ) এর যুগে প্রথমে আব্দুল্লাহ বিন সাওয়ার আবদী অতঃপর সিনান বিন সালামাহ হুযাইলী ভারত সীমান্তে আক্রমণ করেন। পরে ৪৪ হিজরীতে প্রখ্যাত তাবেয়ী মুহাম্মদ বিন আবু সুফরাহ ১২ হাজার সৈন্য নিয়ে পাঞ্জাবের লাহোর ও বান্না এলাকা পর্যন্ত অগ্রসর হয়ে ছিলেন।

হযরত মুআবিয়া (রাঃ) এর পরবর্তীকালে মুসলমানদের ঘরোয়া সমস্যার কারণে ভারতবর্ষের প্রতি খুব একটা মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু উমাইয়া বংশের আল-ওয়ালীদ সিঙ্ঘাসনে আরোহণের সঙ্গে সঙ্গেই ইসলামের ইতিহাসে আবার একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। ওয়ালীদের শাসনামলে তার প্রখ্যাত সেনাপতি মুসা বিন নুসাইর সমগ্র উত্তর আফ্রিকা অধিকার করে নেয়। অন্যতম সেনাধিপতি তারিক স্পেন জয় করে সেখানে ইসলামের বিজয় কেতন উড্ডীন করেন।

প্রাচ্যের দেশসমূহে কুতাইবা ইসলামের বিজয় পতাকা মধ্য এশিয়া পর্যন্ত বহন করে নিয়ে আসেন এবং শেষ পর্যন্ত ভারতেও মুসলমানদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। দক্ষিণ ভারতে মুসলমানদের ধর্ম প্রচার ও ইসলামী জ্ঞানচর্চার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে চতুর্থ হিজরী শতকে আগত প্রখ্যাত পর্যটক ইবনে হাওকাল উল্লেখ করেন যে, সাধারণতঃ মসজিদ ও খানকাহগুলোতে আলেম উলামা ও ফিকাহ সম্পর্কে প্রাজ্ঞ ব্যক্তিরা অবস্থান করতেন, তাদের থেকে জ্ঞান আহরণকারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও ছিল প্রচুর। যেকোন মসজিদে গেলেই দলে দলে লোকজনের আনাগোনার দৃশ্য পরিলক্ষিত হত।

পূর্ব ভারত তথা বাংলাদেশীয় অঞ্চলে মুসলমানদের শাসনক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয় কুতবুদ্দীন আইবেকের সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী কর্তৃক ১২০৩ খ্রীষ্টাব্দে। অবশ্য এর বহু পূর্বেই এদেশে মুসলমানদের তৎপরতা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল। এমনকি চট্টগ্রাম অঞ্চলে তারা একটি ক্ষুদ্র শাসন ব্যবস্থাও গড়ে তুলেছিল। পরে রোসাঙ্গরাজ সুলতৈং চন্দয়-এর অভিযানে সেটি ভেঙ্গে পড়ে। এ থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে মুসলমানদের তৎপরতা কত প্রবল ছিল তা সহজেই অনুমান করা যায়। মুসলিম ভৌগলিক ও পর্যটকরা উল্লেখ করেছেন যে, খ্রীষ্টীয় অষ্টম শতকের এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর আরব উপনিবেশে পরিণত হয় এবং আরাকান থেকে মেঘনার পূর্ববর্তী এলাকাসমূহে আরব বণিকদের কর্মতৎপরতা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পায়। রংপুরে হিজরী ২০০ সালের এদিকে মুসলিম সভ্যতার নিদর্শন  পাওয়া গেছে। রাজশাহীতে ৭৮৬-৮০৯ খ্রীষ্টাব্দের একটি মুসলিম আমলের মুদ্রা আবিস্কৃত হয়েছে, তাছাড়া বহুপ্রাচীন আউলিয়ায়ে কিরামের খানকাহ ও মাজারের নিদর্শনাবলির সেকালে এদেশে মুসলিম তৎপরতার বিষয়টিকে আরও সুস্পষ্ট করে দেয়। সে সময় মুসলমানরা সুদূর সিংহলেও তাদের কর্মতৎপরতাকে এগিয়ে নিয়ে যায় এবং একই নিয়মে তারা সেখানেও বসতি গড়ে তোলে।

বলতে গেলে মুসলিম শাসকদের আগমনের পূর্বেই সুফি সাধক ও ধর্ম প্রচারকদের তৎপরতায় এদেশে মুসলিম শাসনের অনুকূল ক্ষেত্রে তৈরি হয়েছিল।

সূত্রঃ দেওবন্দ আন্দোলনঃ ইতিহাস ঐতিহ্য অবদান বইয়ের প্রথম অধ্যায় থেকে।

The post সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেঈনদের যুগে ভারতবর্ষ মুসলমানদের আগমন ও ধর্ম প্রচার appeared first on Amar Bangla Post.


Viewing all articles
Browse latest Browse all 2081

Trending Articles