আবু হাসান বর্ণনা করেন আবেদ ইবনে আব্বাস প্রায়ই বলতেন, কখনো কখনো একেবারে সাধারণ মানুষ থেকেও অনেক বড় ধরণের উপকৃত হওয়া যায়। যা হয়তো বড় মাপের ব্যক্তি থেকেও হওয়া যায় না।
উদাহরণ দিয়ে বলেন ইসমাঈল ইবনে বুলবুল যখন আমাকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাতের মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করলেন। তখন আমার দেখাশোনা করত তারই এক বিশ্বস্ত দেহরক্ষী। সে মুক্ত স্বাধীন ছিল (গোলাম নয়) আমি তার সাথে নম্র আচরণ করতাম। সেও আমাকে যথেষ্ট সম্মান করতো। দরবারের সবাই তাকে প্রচন্ড বিশ্বাস করতো। দরবারে অনুষ্ঠিত যে কোন আলোচনা সভায় সে উপস্থিত থাকতে পারতো। কেউ বাধা দিত না।
এক রাতে সে আমার কাছে আসলো। চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ সুস্পষ্ট ছিল বললো ইসমাঈল তো ইবনুল ফোরাতের নিকট এই মর্মে পত্র লিখেছে হামিদের কাছে তার আত্মসাৎকৃত যে সরকারী সম্পদ রয়েছে তা আপনি ছাড়া আর কেউ আদায় করতে পারবে না। তাকে চাপ দিন। তাহলেই সুড়সুড় করে মুখ খুলতে বাধ্য হবে।
এ জন্য কাল তোমাকে দরবারে ডাকা হবে। সবার সম্মুখে ইবনুল ফোরাত তোমাকে জেরা করবে। তাদের মনমতো স্বীকারোক্তি প্রদান না করলে তোমার উপর নির্যাতনের স্টীমরোলার নেমে আসবে। অথচ আমি তো জানি তুমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। তোমার পরিণতির কথা ভেবে আমার খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে।
আমি তাকে বললাম, এই বিপদ থেকে বাঁচার কোন উপায় বলতে পারো?
-একটা উপায় মাথায় এসেছে। তোমার পরিচিত লোকদের মধ্যে যে সবচেয়ে কৃপণ, তার নিকট নিজের অভাবের কথা জানিয়ে চিঠি লিখ। লিখবে যে আমি অনেক অর্থনৈতিক সংকটে আছি। পরিবারের খাদ্য কেনারও টাকা নেই। এই অবস্থায় তুমি আমার পাশে না দাঁড়ালে আর কে দাঁড়াবে?
সুতরাং এই চিঠি তোমার হাতে পৌঁছা মাত্রই আমার পরিবারের খাদ্য সামগ্রী কেনার জন্য এক হাজার দিরহাম ঋণ পাঠিয়ে দিবে। আমার অবস্থা একটু ভালো হলেই তোমার ঋণ ফেরত দিব। তোমার মতামত যাই হোক আমার পত্রের উল্টোপিঠে তা লিখে দিবে। ঋণ দিতে পারলেও, না দিতে পারলেও।
এই চিঠি তোমার কৃপণ বন্ধুর হাতে পৌঁছলে স্বাভাবিক ভাবেই সে টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করবে এবং টাকা তোমার চিঠির উল্টোদিকে তা লিখে দিবে। সেটি তুমি অত্যন্ত যত্ন করে রাখবে। দরবারে তোমাকে সম্পদ ফেরত দেয়ার চাপ প্রয়োগ করলে তৎক্ষণাৎ সেই চিঠি তাদেরকে দেখিয়ে বলবে, এই দেখুন আমার অর্থনৈতিক অবস্থা কতটা শোচনীয়। পরিবারের খাবার কেনার টাকা নেই। মানুষের কাছে ঋণ চেয়ে বেড়াচ্ছি। সরকারী সম্পদ আমার কাছে থাকলে কি এই অর্থনৈতিক দৈন্যতায় পড়তে হয়?
তুমি যদি তৎক্ষণাৎ তাদেরকে এই চিরকুটটি দেখাতে পারো তাহলে তোমার প্রতি তাদের মন নরম হয়ে য আবে। নির্যাতন চালাবে না।
এভাবে সে পুরো বিষয়টি আমাকে বুঝিয়ে দিল। সত্যিই দেখা গেল তার পরামর্শ মতো কাজ করে যখন দরবারে চিরকুট উপস্থাপন করলাম সবাই বিশ্বাস করলো যে সত্যিই আমি নির্দোষ। সরকারী কোন অর্থ সম্পদ আত্মসাৎব করিনি। তারা নরম হলো এবং এটাই পরবর্তীতে মুক্তির কারণ সাব্যস্ত হলো।
সূত্রঃ প্রতিভার গল্প ২ বই থেকে।
The post সাধারণ মানুষের অসাধারণ পরামর্শ appeared first on Amar Bangla Post.